ভাড়া বাসা সাজানো ও এর টিপস লেখার সময়ই কথা দিয়েছিলাম খুব সহজে অ্যাভেইলেবল লাইট ফিক্সচার, সফট ফারনিশিং– এসব নিয়ে আলাদা করে লিখবো। যাতে নতুন ভাড়াটিয়ারা তাদের অপশন-গুলো চিনে নিতে পারেন। সেই সূত্রেই আজ লিখছি বিভিন্ন ধরনের লাইট ফিক্সচার-এর মাধ্যমে ভাড়া বাসা সাজানো নিয়ে।
‘সুন্দর লাইটিং’ বলতেই মাথায় প্রথমে কি আসে? লাখ লাখ টাকা দিয়ে নিজের কেনা ফ্ল্যাট-এ করানো লাক্সারি ‘ইনটেরিওর ডিজাইন’? নাকি বাংলা সিনেমার ‘চৌধুরী সাহেব’ মার্কা বিকট একটা ঝাড়বাতি? তাহলে বলবো আরেকটু ‘আউট অফ দা বক্স’ চিন্তা করতে। ভাড়া বাসায় বাড়িওয়ালাকে না বলে একটা পেরেক পুঁতলেও জবাবদিহির অন্ত থাকে না সেখানে ঝুলাবেন ঝাড়বাতি? পাগল নাকি??!!
ভাড়া বাসা সাজানো – সুন্দর লাইট ফিক্সচার
বাসার সব ঘরে কম করে হলেও দুটো লাইট থাকে, একটি হল টিউবলাইট আর একটা বাল্ব। এছাড়া থাকবে এক্সট্রা ওয়ালমাউন্টেড পাওয়ার সকেট। আপনার এসবকিছু ঠিকভাবে কাজ করছে তো? নতুন লাইট কিনতে যাওয়ার আগে যে ঘরে যেখানে সেটা বসাবেন তার কাছের পাওয়ার সকেট-এর হাল চেক করে নিন।
তাই কোথায় একটা সুন্দর লাইট বসাবেন ঠিক করেছেন, এবার দেখি আমাদের অপশনগুলো কী কী?
১. টেবিল ল্যাম্প
রুচিশীল বিভিন্ন ধরনের ল্যাম্প শেড রুমের আবহাওয়া চেঞ্জ করতে ইউজ করা যায়। খুব কারুকার্যময় শেড থেকে শুরু করে একেবারে সিম্পল, আবার মডার্ন মিনিমালিস্ট টাইপ শেড-ও ঢাকার বিভিন্ন দোকানে খুঁজে পাবেন।
একটু কমন আর কমদামী প্রোডাক্টস পাবেন চাঁদনীচকে, দেশীয় স্টাইল-এ আনকমন মিডিয়াম রেঞ্জ-এর ল্যাম্প শেড পাবেন আড়ং, যাত্রা- এসব ডিজাইন হাউজ-এ। এছাড়াও আমদানিকৃত মডার্ন টেবিল ল্যাম্প আর ল্যাম্প শেড পাবেন গুলশান-২, মহাখালি ফ্লাইওভার- এলাকায় অবস্থিত ইনটেরিওর ডেকোরেশন শপ আর লাইট শপ-গুলোয়।
কোথায় বসাবেন?
ল্যাম্প শেড হাঁটুর লেভেল-এর ছোট কর্নার টেবিলে ভালো লাগে। টেবিল ল্যাম্প নাম বলে পড়ার টেবিলে ঝালর দেয়া রঙবেরঙের ল্যাম্প শেড বসাবেন না! ড্রয়িং রুম-এর সোফার পাশে একটা, আবার মাস্টার বেড-এর সাইড টেবিলে একটা এভাবে রাখবেন। চেষ্টা করবেন খুব জবরজং ডিজাইন অ্যাভয়েড করতে।
ছবি: ল্যাম্প শেডের কিছু টাইপ
- উপরের ল্যাম্পশেড-গুলো একটু গর্জিয়াস শেপের। এ ধরনের শেড গর্জিয়াস সোফা সেট, গর্জিয়াস কাঠের বেড সেটের সাথে চমৎকার মানায়।
- আবার খুব মিনিমালিস্ট শেড চাইলে বেসিক শেপ যেমন স্কয়ার, রাউন্ড শেড বেঁছে নিতে পারেন। রুমে আলো হবে, রুচি প্রকাশ পাবে আবার রুমের মেইন ফোকাস থেকে চোখ সরে যাবে না। ফলে জিনিস কিনে কিনে ঘর সারকাস বানিয়েছেন এমনটা মনে হবে না।
ছবি: বেসিক শেপ-এর মিনিমালিস্ট ল্যাম্প শেড
২. ফ্লোর ল্যাম্প
ইনটেরিওর ডেকোরেশনে অসাধারণ এক সংযোজন। ঘরের প্রধান আকর্ষণকে ফোকাস করতে ফ্লোর ল্যাম্প-এর মতো কার্যকরী জিনিস খুব কম আছে। এটা কি তাই বুঝতে পাড়ছেন না? জিনিসটা টেবিলল্যাম্পের মতই জাস্ট স্ট্যান্ড-টা লম্বা, ফ্লোরে দাড়া করিয়ে রাখা যায়।
ছবি: ফ্লোর ল্যাম্প
কোথায় পাবেন? -আড়ং যাত্রা আর ঐ ডেকোরেশন শপ গুলোয়!
কোথায় বসাবেন?
কয়েকটা ভিন্ন সাইজের একই ডিজাইনের ল্যাম্প সেট হিসেবে কিনে ঘরের একটা অংশে সাজিয়ে রেখেও ‘ফোকাস’ তৈরি করতে পারেন। দিনে শোপিস, রাতে লাইট ইন্সটলেশনের ইফেক্ট পাবেন।
ছবি: সিঙ্গল আর সেট ফ্লোর ল্যাম্প
আবার ড্রয়িং রুমে সুন্দর একটা আসবাব/ভিনটেজ কিছু থাকলে সেটার উপর ফোকাস তৈরিতেও নিচের স্টাইলে একটা মিনিমাল ফ্লোর ল্যাম্প ইউজ করতে পারেন।
তাই বুঝতেই পাড়ছেন, আকারে একটু বড় হওয়ায় আর গরজিয়াস, সিম্পল/সেট অথবা একটা সিঙ্গেল এভাবে ইউজ করার সুবিধা থাকায় ফ্লোর ল্যাম্প নিজেও ‘ফোকাস’-এ থাকতে পারে আবার অন্যকেও ফোকাসে আনতে পারে।
সাধারনত ড্রয়িং/লিভিং রুমেই ফ্লোর ল্যাম্প বেস্ট স্যুটেড। এলোমেলো আনফরমাল রুমে অতটা মানাবে না।
৩. নিওন সাইন
বাংলাদেশে এই নিওন সাইন লাইট ফিক্সচার একেবারেই নতুন। কিন্তু অনেকেই নিজের পার্সোনাল স্পেস-এ একটু ফাঙ্কি মডার্ন লুক দিতে এটা ইউজ স্টার্ট করেছেন দেখছি। খুব ইউটিউব ভিডিও যারা দেখেন তারা জানেন ইউটিউবাররা কিভাবে নিজের ফিল্মিং স্পেস-টায় নিওন সাইন ইউজ করেন! তাই না?
দেশে তেমন পাওয়া যায় না এই লাইট। আমাজন থেকে প্রি অর্ডার করে নিজের নামের অদ্যক্ষর বা ইন্সপায়ারিং কোটের নিওন সাইন ল্যাম্প ফিক্সচার কিনতে পারেন। সাইজ ভেদে দাম আলাদা হবে।
কিভাবে বসাবেন?
নিওন সবচেয়ে ভালো মানায় নিজের বেড রুম বা এধরনের পার্সোনাল স্পেস-এ। ফ্রেম করা সাইন-গুলো দেয়াল থেকে ঝুলাতে পারেন না বেড-এর হেডস্ট্যান্ড-এর উপরে রাখতে পারেন।
নাম বা অক্ষরের ছোট সাইন বেডসাইড টেবিল বা ভ্যানিটি টেবিলে বেশি মানায়।
ছবি: নিওন ওয়াল লাইট
৪. ফেয়ারি লাইট
কিছুদিন আগ পর্যন্ত ফেয়ারি লাইট বা ছোট এলইডি লাইটের ছড়া বিয়ে বাড়ি আর গেটেই ইউজড হতো। কিন্তু খুবি বাজেট এই লাইট এখন ঘর সাজাতেও ব্যবহার হচ্ছে অনেক! ৩০০-৪০০ টাকার লাইটের ছড়া একটু রুচিশীল ভাবে ইউজ করলে নিওন সাইন লাইটের সাথে মিলিয়ে মডার্ন, ইনফরমাল ঘরের সাজ নিয়ে আপনাকে আর ভাবতেই হবে না!
তবে, এক্ষেত্রে যা মনে রাখবেন – ফেয়ারি লাইট ওয়ার্ম হোয়াইট হওয়াটাই ভালো, রঙবেরঙের ফেয়ারি লাইট খুব কুৎসিত ইফেক্ট দেবে। আবার বিয়ে বাড়ির মতো জ্বলে নেভে এমন লাইট-ও বেড রুমে ইউজ না করাটাই বেস্ট (বাসাতেই ঢুকাবেন না)। সিম্পল এক-দুই ছড়া লাইট রুমের ফোকাস পয়েন্ট-এ ইউজ করুন।
আবার জবরজং ফুল-ফল-লতা-পাতা ঝুলানো ফেয়ারি লাইটও কিনবেন না কিন্তু! ওগুলোও রুচির পরিচয় দেয় না। নিওন লাইট, ফেয়ারি লাইট খুবই মডার্ন খুবই ইনফরমাল। তাই দামি ফার্নিচার-এর সাথে ঝুলাবেন না বা ‘ড্রয়িং’, ‘ডাইনিং’- এর মতো ফরমাল স্পেস-এ লাগিয়ে-‘আমিও ইন্টারনেট-এর মতো ঘর সাজাইসি’ ভাব নেবেন না। ওসব জায়গার জন্য ফ্লোর, টেবিল ল্যাম্প বা এধরনের ফরমাল সেটআপ-ই ইউজ করুন!
ইয়াং বা টিনএজার-দের রুম-এ ইনফরমাল লাইট-গুলো সবচেয়ে ভালো মানাবে।
নেক্সট-এ সফট ফারনিশিং নিয়ে লিখবো। আজ ভাড়া বাসা সাজানো নিয়ে এটুকুই।
ছবি- সংগৃহীত: সাজগোজ