মায়েরা স্বাভাবিকভাবেই চান সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় সন্তান জন্ম দিতে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় জটিলতা দেখা দিতে পারে যা মা ও গর্ভস্থ শিশুর জন্য বিপদের কারণ হয়। তাই মায়েদের উচিত গর্ভাবস্থায় এই সব বিপদচিহ্নগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা। চলুন তবে গর্ভাবস্থায় মায়ের ৮টি বিপদ চিহ্ন নিয়ে জেনে নেই বিস্তারিত।
গর্ভাবস্থায় মায়ের ৮টি বিপদ চিহ্ন
১) অধিক মাত্রায় বমি হওয়া
গর্ভের প্রথম তিন মাসে সব মায়েদেরই কম বেশি বমি হয়ে থাকে। কিন্তু অতিরিক্ত বমি মায়ের জন্য ক্ষতিকর, কারণ এটি মায়ের দেহে পানি শূন্যতা, শরীরে সোডিয়াম-পটাসিয়ামের ভারসম্যহীনতা, কিডনি ফেইলর, জন্ডিস, খিচুনিসহ অনেক জটিলতার কারণ হতে পারে।
২) রক্ত স্রাব
গর্ভধারণের পর বিভিন্ন কারণে রক্তস্রাব হতে পারে। গর্ভের প্রথম তিন মাসে এটি সাধারণত গর্ভপাতের লক্ষণ নির্দেশ করে। এছাড়া একটোপিক প্রেগনেন্সি-তেও (জরায়ুর বাইরে গর্ভধারণ) রক্তস্রাব হতে পারে, যা গর্ভাবস্থায় একটি জরুরী অবস্থা। রক্তপাতের সাথে তীব্র পেটে ব্যথা ও রোগীর অচেতন হয়ে যাওয়া একটোপিক প্রেগনেন্সি-এর লক্ষণ প্রেগনেন্সি-এর শেষ দিকে প্লাসেন্টা নিচে থাকলে (প্লাসেন্টা প্রিভিয়া) বা প্লাসেন্টা সেপারেশন হয়ে রক্তপাতের কারণ ঘটায়।
৩) উচ্চ রক্তচাপ
গর্ভবতী মায়ের উচ্চ রক্তচাপ মা ও গর্ভস্থ শিশুর জন্য একটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা। কম ওজনের শিশু জন্মদান, অপরিণত অবস্থায় শিশুর জন্ম, সিজার-এর সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়াসহ নানা ধরনের জটিলতা হতে পারে। গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপের সাথে ইউরিন-এ প্রোটিন/এলবুমিন পাওয়া গেলে বুঝতে হবে তিনি প্রি-এক্লাম্পসিয়া-তে ভুগছেন। এর জটিলতা থেকে খিচুনি বা এক্লাম্পসিয়া হতে পারে যা মা ও শিশু মৃত্যুর একটি বড় কারণ।
৪) তীব্র মাথাব্যথা ও চোখে ঝাপসা দেখা
গর্ভাবস্থায় যারা প্রি-এক্লাম্পসিয়া ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে এই ধরনের জটিলতা এক্লাম্পসিয়া হবার পূর্বলক্ষণ নির্দেশ করে। কাজেই এই লক্ষণ দেখা দিলে অতিসত্বর নিকটস্থ হাসপাতালে যেতে হবে।
৫) পেটে ব্যথা
গর্ভাবস্থায় পেটে ব্যথার নানাবিধ কারণ রয়েছে,তবে ব্যথা তীব্র হলে তা মায়ের জন্য একটি বিপদ সংকেত। গর্ভের প্রথম দিকে গর্ভপাত বা একটোপিক প্রেগনেন্সি-এর কারণে ব্যথা হয়। গর্ভের শেষের দিকে প্রি-মেচিওর লেবার পেইন পেটে ব্যথার একটি বড় কারণ,যা থেকে অপরিনত অবস্থায় শিশুর জন্ম হতে পারে।
৬) পেটের আকার স্বাভাবিকের চেয়ে বড় বা ছোট হলে
পেটের আকার স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হবার কারণগুলো হল একের অধিক বাচ্চা গর্ভধারণ, পলি-হাইড্রামনিওস (অ্যামনিওটিক ফ্লুইড স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হওয়া)। তেমনি ওলিগোহাইড্রামনিওস(অ্যামনিওটিক ফ্লুইড স্বাভাবিকের চেয়ে কম হওয়া), গর্ভে বাচ্চার সঠিক গ্রোথ না হলে (Intra uterine growth retardation) পেটের আকার স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট হবে।
৭) দীর্ঘ সময় লেবার পেইন থাকলে
লেবার পেইন ১৮ ঘন্টার বেশি থাকলে তাকে প্রলং লেবার বলে। লেবার প্রক্রিয়া স্বাভাবিক না হলেই লেবার প্রলং বা দীর্ঘ হয়। কাজেই ১২ ঘণ্টার মধ্যে বাচ্চা প্রসব না হলে অভিজ্ঞ গাইনী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
৮) বাচ্চার নড়া চড়া কম মনে হলে
গর্ভের শেষ দিকে একটি সুস্থ স্বাভাবিক বাচ্চা দিনে কমপক্ষে দশ বা এর অধিক বার নড়া চড়া করবে। বাচ্চার নড়া চড়া এর কম মনে হলে তা চিকিৎসককে জানানো উচিত।
গর্ভাবস্থায় মায়ের ৮টি বিপদ চিহ্ন নিয়ে তো জেনে নিলেন। এখন গর্ভাবস্থায় যদি এমন কোন বিপদ চিহ্ন দেখে থাকেন তবে উদ্বিগ্ন না হয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
লিখেছেন- ডাঃ নুসরাত জাহান
সহযোগী অধ্যাপক(অবস-গাইনি)
ডেলটা মেডিকেল কলেজ,মিরপুর ১,ঢাকা।
চেম্বার: ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টা: মেডিকেল কলেজ, শ্যামলী।
ছবি – সংগৃহীতঃ সাটারস্টক