শ্যাম্পু-এর রিভিউ লিখি না তেমন কারণ শ্যাম্পু আসলে কার চুলে কেমন হয় সেটা লিখে বুঝানো টাফ। আবার ক্যামেরা-তে যত কসরতই করি না কেন চুল কোন শ্যাম্পু-তে কতটুকু সিল্কি হল কত ফ্রিজ কমলো কোনওভাবেই ছবি তুলে বুঝানো যায় না। আর যদি ঠিকভাবে শ্যাম্পু চুলের কি উপকারটা করল সেটা বোঝাই না যায় তবে রিভিউ পড়ে লাভটা কি হচ্ছে বলুন?
কিন্তু এরপরও ট্রাই করলাম একটা শ্যাম্পু-এর রিভিউ লেখার। এখনই বলে দেই, পড়ে আদৌ কিছু বুঝলেন কিনা অবশ্যই জানাবেন, এই লেখাটা নিয়ে বেশ টেনশনে আছি…!
[picture]
গত ৭-৮ মাস ধরে ইউজ করছি OGX Coconut water Shampoo & OGX Coconut Water Conditioner। প্রথম শ্যাম্পু- কন্ডিশনার সেট-টা মা শপ থেকে কিনে এনেছিল। ইউজ করার ইচ্ছা ছিল না বাট কেনা হয়ে গেছে কি আর করবো! ভেবে ইউজ করা স্টার্ট করেছিলাম। কিন্তু এরপর আরও ২ বোতল শ্যাম্পু আর এক বোতল কন্ডিশনার আমি শেষ করেছি। তাই ভাবলাম যা আছে কপালে, এই প্রোডাক্ট একটা রিভিউ ডিজারভ করেই!!
প্রোডাক্টের ক্লেইম
শ্যাম্পু
কোকোনাট ওয়াটার-এর পুষ্টিতে ভরা এই শ্যাম্পু ড্রাই রাফ চুলে দেয় লাইট হাইড্রেশন যা চুলকে অন্য ময়েশ্চারাইজিং শ্যাম্পু-এর মত হেভি আর তেল চিটচিটে করে না।
কন্ডিশনার
কোনও হেভি ভাব ছাড়াই কোকোনাট ওয়াটার-এর পুষ্টির মাধ্যমে চুলকে করে সিল্কি ও শাইনি।
এইতো, ডেসক্রিপশন-এ এইসব হেন তেন লেখা… সব শ্যাম্পুতে যেমন থাকে। কিন্তু, শ্যাম্পুর আসল সেলিং পয়েন্ট আমার মতে যা –
এটা সম্পূর্ণ SLS/SLES Free মাইলড শ্যাম্পু আর কন্ডিশনার!! জাস্ট এই একটা কারণে আমি এই দুই বোতল ফার্স্ট ট্রাই করেছিলাম।
দাম ও প্রাপ্তিস্থল
OGX Coconut water Shampoo– ৩৮৫ মিলির বোতলের দাম ১৩০০/- টাকা।
OGX Coconut water Conditioner– ৩৮৫ মিলির দাম সেইম ১৩০০/- টাকা।
আমার মা সাজগোজেরই শপ- ‘শপ.সাজগোজ.কম‘ থেকে কিনেছিল প্রথম শ্যাম্পু কন্ডিশনার সেট। পড়ে আমি ঝামেলা না করে ওদের অনলাইন-এই অর্ডার দিয়েছি।
আমার অভিজ্ঞতা
শ্যাম্পু
SLS/SLES Free মাইলড শ্যাম্পুর সবচেয়ে খারাপ দিক আমার মতে দুটো-
এক, এগুলোয় বেশি ফেনা হয় না, তাই তেল বা মাস্ক দেয়া থাকলে শ্যাম্পু করতে গেলে শুধুই মনে হয়, চুল বুঝি পরিষ্কার হল না!
দুই, দাম হয় মোটামুটি আকাশ ছোঁয়া। এর আগে আমি যে মাইলড শ্যাম্পুটা ট্রাই করেছিলাম সেটা প্রায় ১৮০০ টাকা ছিল।
আমারই লেখা আমার পছন্দের মাইলড শ্যাম্পু-গুলোর একটা আর্টিকেল আছে সাজগোজে, পড়লে দেখতে পাবেন, ওগুলোর দাম কোথা থেকে শুরু হয়েছে।
সে তুলনায় এই শ্যাম্পু কন্ডিশনার-এর দাম একদম বেশি কম না হলেও মোটামুটি ৩০০-৪০০ টাকা কম। আর প্রায় ৪০০ মিলির কাছাকাছি প্রোডাক্ট পাওয়া যাচ্ছে।
আমার কোমর পর্যন্ত মোটামুটি ঘন চুলের জন্য এই শ্যাম্পু-এর বোতল শেষ হতে প্রায় ৪ মাস লেগেছে, কন্ডিশনার শেষ হয়েছে এক বোতল ৬ মাসে।
শ্যাম্পু কন্ডিশনার দুটোই একই রকম ফ্লিপ টপ ক্যাপের বোতলে থাকে। বেশ শক্ত পোক্ত বাট ট্র্যাভেল করলে অন্য ছোট বোতলে নামিয়ে নিলে বা এই বোতলের মুখ টেপ দিয়ে আটকে ট্র্যাভেল করলে ভালো হবে বলে আমার ধারণা।
শ্যাম্পু একেবারেই লাইট ট্রান্সপারেন্ট, কোনও এক্সট্রা রঙ গ্লিটার, এসব হাবিজাবি নেই (প্লাস পয়েন্ট!) । ঘ্রান বেশ মাইলড, ব্র্যান্ড ক্লেইম করে এটা নামি ডাবের পানির ঘ্রাণ! বাট আমি কোনও মিল পাই নি! যাই হোক, ঘ্রাণ চুলে থাকবে না বেশিক্ষণ। তাই বোঝা যাচ্ছে পারফিউম, অ্যালকোহল দিয়েও বোতল ভর্তি করে রাখা হয় নি।
আমার চুলে একবার শ্যাম্পু করতে প্রায় এক টেবিল চামচ শ্যাম্পু লাগে। চুলে তেল দিলে স্পেশালি ক্যাস্টর অয়েল মিক্স করে দিলে ২ বার শ্যাম্পু করি। বাট মাস্ক দিলে একবার শ্যাম্পু করলেই চলে।
আমার চুল ড্রাই কিন্তু স্ক্যাল্প অয়েলি। শ্যাম্পুর ২ দিন পরই চুল একদম তেল চিটচিটে হয়ে যায়। আবার খুব বেশি ক্লিনজিং শ্যাম্পু ইউজ করলে স্ক্যাল্প নরমাল থাকে বাট চুল কাকের বাসা হয়ে যায়!
এই শ্যাম্পু-টা ইউজ করে দেখলাম স্ক্যাল্প-এ দুদিন পর একটু তেল দেখা যাচ্ছে বাট চুল চিটচিটে হচ্ছে না। তাই আমি ৩ দিন পরপর শ্যাম্পু করতে পারছি! মাইলড শ্যাম্পু ইউজ করলে যেমন সপ্তাহে ৩-৪ বার শ্যাম্পু করেই বোতল খালি করে ফেলতে হত সেটা আর হচ্ছে না।
পারফরম্যান্স আমার কানাডিয়ান প্রি-অর্ডার করা অরগানিক শ্যাম্পুর মতই কিন্তু দাম তার চেয়ে কম আর পরিমাণে কম লাগায় আপাতত এর চেয়েও কম দামি শ্যাম্পু খুঁজে পাওয়ার আগ পর্যন্ত আমি এটাই ইউজ করব ডিসাইড করেছি।
কন্ডিশনার
শ্যাম্পু-টা আমার খুব ভালো লেগেছে কন্ডিশনার-টা নিয়েও বেশ হোপফুল ছিলাম। কন্ডিশনার-টা বেশ থিক আর এই ছবির এতটুকুই আমার চুলের জন্য যথেষ্ট। কিন্তু পরিমাণে এর চেয়ে বেশি হয়ে গেলে চুল একটু তেলতেলে হয়ে যায়। তাই এ ব্যাপারে কেয়ারফুল থাকতে হবে!
কিন্তু যেহেতু পরিমাণে খুবই কম লাগে! (বুঝতেই পারছেন আমার কোমর সমান চুলে এইটুকু লাগলে মিডিয়াম লেন্থ চুলে আরও কম লাগবে) তাই কন্ডিশনার অনেক অনেক দিন ধরে চলবে। বারবার কিনতে হবে না।
চুল অনেক বেশি রাফ আর ড্রাই হলে পরিমাণ বাড়িয়ে দিলেই ঠিক অ্যাডজাস্ট হয়ে যাবে বলে আমার ধারণা।
প্রোডাক্ট দুটির কিছু ভালো দিক-
- শ্যাম্পু কন্ডিশনার দুটোই ভ্যাল্যু ফর মানি মনে হয়েছে আমার কাছে অন্তত। আমি মাইলড শ্যাম্পু-এর জন্য আরও বেশি খরচ করি সাধারণত!
- অল্প শ্যাম্পু-তে চুল থেকে তেল ময়লা দূর হয়। তেল দূর করতে ৩-৪ বার শ্যাম্পু করার দরকার নেই। যেটা মাইলড শ্যাম্পু-এর বড় একটা প্রবলেম।
- শ্যাম্পু-তে এক্সসেস কালার, পারফিউম নেই!
- কন্ডিশনার-টা প্রায় ২ দিন পর্যন্ত চুলের ফ্রিজিনেস কনট্রোল করে।
- বাংলাদেশে ইজিলি অ্যাভেইলেবল (মানে প্রি-অর্ডার করে আমার একগাদা ওয়েট চার্জ দিতে হবে না,আবার স্টক শেষ হলে “কই পাবো, কই পাবো” বলে কান্নাও জুড়তে হবে না।
- সপ্তাহে ২ বার শ্যাম্পু করলেই চলে। আমি ডেইলি বাইরে যাই, সে হিসেবে বেশ কম। সাধারনত ৪-৫ বার শ্যাম্পু করতে হত খুব মাইলড শ্যাম্পু দিয়ে। চুলের ড্যামেজ কম হবে ইন দ্য লং রান।
কিছু খারাপ দিক-
- যাদের চুল খুবই পাতলা আর তেলতেলে স্ক্যাল্প তাদেরকে আমি এই শ্যাম্পু কন্ডিশনার ডুয়ো সাজেস্ট করব না।
- খুব বাজেটে যারা থাকেন, তাদের কাছে প্রাইস একটু বেশি মনে হতে পারে।
- চুলে ক্যাস্টর অয়েল দেয়া থাকে ২ বার খুব ভালোভাবে শ্যাম্পু করতেই হবে। এটা অনেকের কাছে বিরক্তিকর মনে হতে পারে।
ওভারঅল, আমি শ্যাম্পু-টা অবশ্যই রিপারচেজ করবো। আর এর চেয়ে ভালো কন্ডিশনার না পেলে হয়ত কন্ডিশনার-টা আবার কিনতেও পারি।
আমার রেটিং
শ্যাম্পুর জন্য আমার রেটিংঃ ৮.৫/১০, মাস্ট ট্রাই একটা জিনিস!
কন্ডিশনারের জন্য আমার রেটিংঃ ৭/১০, এর চেয়েও ভালো কিছু খোঁজার ট্রাই করবো।
আশা করি হেল্প করতে পারলাম। জানি অনেকেই মাইলড শ্যাম্পু দেশের বাজারে খুঁজে খুঁজে ফেড আপ হচ্ছেন। তারা অবশ্যই OGX Coconut water Shampoo & OGX Coconut Water Conditioner ট্রাই করবেন। আর অবশ্যই আমাদের জানাবেন আপনার কেমন লাগলো, ওকে? আজ এটুকুই…।
ছবি- দ্যপার্কসঅফমলিকোয়ার্ক.ব্লগস্পট.কম