নিখুঁত, উজ্জ্বল ও গ্লোয়িং ত্বক প্রতিটি মানুষের কাম্য। মডেল এবং অভিনেত্রীরা চাইলেই চটপট মেকআপের সাহায্যে নিখুঁত ও ঝটপট গ্লোয়িং ত্বক পেতে পারেন। কিন্তু এটাতো শুধু সাময়িক সৌন্দর্য। এছাড়াও আজকাল বিভিন্ন কোম্পানি ইন্সট্যান্ট গ্লোয়িং-এর কথা বলে বিভিন্ন ক্রিম ও লোশন বাজারে বিক্রি করছে যা ত্বকের ক্ষতি ছাড়া খুব একটা উপকার করে না। যাই হোক, প্রাকৃতিকভাবে যদি চাইলেই যখন খুশি তখন চেহারায় গ্লো নিয়ে আসা যায় তাহলে মেকআপ বা প্রসাধনীর প্রয়োজন পড়ে না। তাই চলুন দেখে নেই এমন ৫ টি হোমমেইড ফেইস প্যাক যা ন্যাচারালি ত্বককে ইন্সট্যান্ট গ্লো পেতে সাহায্য করবে।
নিমিষেই উজ্জ্বল ত্বক পেতে ফেইস প্যাক
১. পেপের ও চন্দনের ফেইস প্যাক
যা যা লাগবে –
- ১/৪ বাটি পাকা পেঁপে
- ১/২ চা চামচ চন্দনের গুঁড়া
- ১/২ চা চামচ অ্যালোভেরা জেল
- গোলাপ জল
যেভাবে তৈরি ও ব্যবহার করবেন –
পেঁপে চটকে এর সাথে অ্যালোভেরা জেল ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। তারপর এর সাথে যোগ করুন চন্দনের গুঁড়া ও পরিমাণমতো গোলাপজল। সবকিছু ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে একটি মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন। এবার এই প্যাকটি মুখে অ্যাপ্লাই করুন এবং ২০-২৫ মিনিট অপেক্ষা করুন শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত। ভালোভাবে শুকিয়ে গেলে নরমাল পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই ফেইস প্যাক সপ্তাহে ২-৩ বার প্রয়োগ করুন।
প্যাকটি যেভাবে কাজ করে –
পেঁপেতে রয়েছে পেপাইন নামক উপাদান যা ত্বককে উজ্জ্বল করে তুলতে সাহায্য করে এবং নিমিষেই উজ্জ্বল ত্বক পেতে সহায়তা করে। আর চন্দন ও অ্যালোভেরা ত্বকের মৃত কোষগুলোকে অপসারণ করে ত্বককে কোমল করে তুলে, তাই ত্বক হয়ে যায় আরো মসৃণ।
২. কলা ও টক দইয়ের ফেইস প্যাক
যা যা লাগবে –
- অর্ধেকটা পাকা কলা
- ১/২ চা চামচ মধু
- ১ চা চামচ টক দই
- গোলাপ জল
যেভাবে তৈরি ও ব্যবহার করবেন-
প্রথমে অর্ধেকটা পাকা কলা চটকে নিয়ে এর সাথে মধু এবং টক দই যোগ করুন। তারপর সবকিছু ভালো করে মিশিয়ে নিন। সবশেষে কয়েক ড্রপ গোলাপজল দিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। এবার এই প্যাকটি মুখে লাগিয়ে রাখুন প্রায় ১৫ মিনিট। ভালো মত শুকালে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রতি সপ্তাহে এটি দুইবার ব্যবহার করুন।
প্যাকটি যেভাবে কাজ করে –
কলা এবং মধু প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এর সমৃদ্ধ উৎস। এটি ফ্রি-রেডিকেলসের সাথে যুদ্ধ করে ত্বকে এনে দেয় ইন্সট্যান্ট গ্লো। এটি ত্বক ময়েশ্চারাইজ করে এবং ত্বকের রিংকেল ও বলিরেখা হ্রাস করে ত্বকের লাবণ্যতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এই প্যাকটি প্রথমবার ব্যবহারেই এর কার্যকারিতা দেখে আপনি অবাক হবেন।
৩. ওটমিল ফেইস প্যাক
যা যা লাগবে-
- ২ টেবিল চামচ ওটস গুড়া
- ১ চা চামচ চন্দন গুঁড়া
- গোলাপ জল
যেভাবে তৈরি ও ব্যবহার করবেন-
ওটস গুঁড়ো করে নিন এবং এর সাথে চন্দনের গুঁড়ো যোগ করুন। এবারে অল্প অল্প করে গোলাপ জল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। প্যাক রেডি হয়ে গেলে এটি আপনার মুখে অ্যাপ্লাই করুন এবং ১৫ মিনিটের জন্য রেখে দিন। ১৫-২০ মিনিট পর উপরের দিকে আস্তে আস্তে স্ক্রাবিং করে নরমাল পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি সপ্তাহে ১ বার ব্যবহার করুন।
প্যাকটি যেভাবে কাজ করে-
ওটস-এ আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস। তাই এটি দেহের জন্য যতটা উপকারী তেমনি ত্বকের যত্নেও সমানভাবে উপকারী। এটি ত্বকের ডেড সেলসকে তুলে ফেলে ত্বকে নিয়ে আসে ইন্সট্যান্ট গ্লো।
৪. টমেটোর ফেইস প্যাক
যা যা লাগবে –
- ১ টি ছোট পাকা টমেটো
- ১ টেবিল চামচ চিনি
প্যাকটি যেভাবে তৈরি ও ব্যবহার করবেন-
একটি ছোট পাকা টমেটো ম্যাশ করে এর রস বের করে নিন। এবার এর সাথে চিনি যোগ করে ভালো করে মিশিয়ে নিন। তারপর এই প্যাকটি আপনার মুখে ও ঘাড়ে অ্যাপ্লাই করুন। ১০-১৫ মিনিটের মতো রেখে শুকিয়ে গেলে আপনার হাত ভিজিয়ে নিয়ে আস্তে আস্তে ম্যাসাজ করে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করতে পারেন।
প্যাকটি যেভাবে কাজ করে-
টমেটোতে হালকা অ্যাসিডিক উপাদান আছে যা ত্বককে এক্সফলিয়েট করে এবং ত্বকের Ph-এর ভারসাম্য ঠিক রেখে ত্বকে এনে দেয় ইন্সট্যান্ট গ্লোয়িং। আর চিনি ও এই এক্সফলিয়েশন প্রক্রিয়াতে সাহায্য করে ত্বকের রক্ত চলাচল বাড়িয়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
৫. গোলাপের পাপড়ির ফেইস প্যাক
যা যা লাগবে-
- ২ টেবিল চামচ চন্দন গুঁড়া
- ২ টেবিল চামচ কাচা দুধ
- কিছু গোলাপের পাপড়ি
যেভাবে তৈরি ও ব্যবহার করবেন –
গোলাপের পাপড়িগুলো পেস্ট করে নিয়ে এর সাথে কাঁচা দুধ ও চন্দন গুঁড়া যোগ করুন। তারপর সব কিছু একসাথে মিশিয়ে একটি মসৃণ পেস্ট বানিয়ে নিন। এবার প্যাক-টি মুখে লাগিয়ে ২০-২৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। ভালোভাবে শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। সেরা ফলাফলের জন্য সপ্তাহে দুবার প্যাক-টি ব্যবহার করুন।
প্যাকটি যেভাবে কাজ করে –
ফুলের রাণী গোলাপের সুন্দর সুন্দর পাপড়িতে আছে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর জাদুকরী উপাদান। এটি ত্বকের দীপ্তি বাড়িয়ে তোলে অল্প কিছুক্ষণেই। এতে আছে ভিটামিন ই যা ত্বককে হাইড্রেট করে এবং গায়ের রঙ ফর্সা করে। আর দুধে আছে ল্যাকটিক অ্যাসিড যা প্রাকৃতিক টোনার হিসেবে কাজ করে ত্বককে আরো নিখুঁত করে তোলে।
উপরে উল্লেখিত প্যাকগুলোর প্রতিটি উপাদান আপনার হাতের নাগালেই কিন্তু আছে। আপনি কি উপরিউক্ত প্যাক-গুলোর একটিও ইউজ করেছেন? যদি না করে থাকেন তাহলে আজই ট্রাই করুন কারণ হাতের কাছে থাকা সাধারণ এই প্রাকৃতিক উপাদানগুলোই আপনাকে করে তুলবে অসাধারণ।
ছবি – সংগৃহীতঃ সাটারস্টক