আমি বিশ্বাস করি, এ যুগে যে মেয়েটির চুল বড়, সে নিঃসন্দেহে ধৈর্যশীল! আসলে দূর থেকে সবকিছু সুন্দর আর সহজ। পেছনের গল্পগুলো কিন্তু বেশ কঠিন। যেমন, আমার হাঁটু পর্যন্ত চুল শুধু জট ছাড়িয়ে একবার চিরুনি চালাতে যে কসরত করতে হয়, তা দেখেই অনেকে হায় হায় করেন । আমি শুনে হাসি, অশ্রুজলে ভাসি!! জলটা কষ্টের আবার একটু আনন্দেরও, কারণ খুব কম মানুষই এই কষ্টটা বহন করার ক্ষমতা বা ধৈর্য রাখে! তাই গুটিকয়েক মানুষের মাঝে আমার নাম আসে। নিজেকে স্পেশাল মনে হয় ভেবে। তবে এটা সত্যি, ইনহ্যারেন্ট কিছু থাকা লাগে । তারপর বাকিটা যত্ন, ধৈর্য আর ভাল লাগার জন্য কষ্ট করা।
ছোটবেলায় যখন ব্যাগ কাঁধে স্কুল যেতাম তখন থেকে শ্যাম্পু, হেয়ার অয়েল-এর মডেলিং-এর অফার আসতো । তখন আমি যত্ন করতাম না, কিছুই করতাম না, হয়ত জানতামও না আমার হেয়ার কোয়ালিটি গিফটেড। এটা বলার কারণ, জন্ম থেকে জেনেটিকালি কোন না কোনভাবে এভারেজ মানুষের চেয়ে আমার চুল আল্লাহ প্রদত্তভাবে ভাল আলহামদুলিল্লাহ!
এখন আসি, আমি বড় হওয়ার পর কী কী করি। সবাই জানতে চেয়েছেন। আমি চেষ্টা করব যা করি আর যা যা ফিল করি তা সহজে তুলে ধরার।
১) আমি সপ্তাহে অন্তত ২ বার চুলে নারকেল তেল ব্যবহার করি। ফ্রি থাকলে সপ্তাহে ৪/৫ দিনও তেল দিয়ে চিপকু হয়ে ঘুরি। দেখতে পচা লাগে কিন্তু আমার চুল শ্বাস নিতে পারছে ভেবে আমার ভালো লাগে।
২) যখনই সময় পাই, আমি নারকেল তেল দেই। তেল কিন্তু ৩০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে ফেললেই হয়! শাওয়ার-এ যাবার আগে আমি নারকেল তেল দেওয়ার চেষ্টা করি। আর সময় থাকলে সারাদিন, সারা রাত রাখি।
৩) সাধারণত আমি বিশুদ্ধ নারকেল তেল ব্যবহার করি। এক্ষেত্রে প্যারাসুট কোকোনাট অয়েল আমার মতে দারুণ একটা চয়েজ। এই তেলের সাথে ক্যাস্টর অয়েল, আমন্ড অয়েল, নীম তেল, অলিভ অয়েল- যা যা সামনে পাই মিশিয়ে দেই। আর অরগানিক তেল যে কোনোখানে পাওয়া যায়।
৪) অনেকে কমপ্লেইন করেন, তেল দিলে চুল ঝরে পড়ে আর হ্যাঁ! সেইম আমার সাথেও হয়। টেনশন-এর কিছু নাই। চুলে হাত দিলে চুল পড়বেই, এটা স্বাভাবিক ঘটনা! চুলের একমাত্র খাবার তেলই- এটা ভোলা যাবে না।
৫) যত ক্লান্তই থাকি না কেন, নিয়মিত আমি আমার চুল পরিষ্কার রাখি।
৬) ডিম, টক দই, মেয়োনেজ, প্যারাসুট কোকোনাট অয়েল- মিশিয়ে হেয়ারপ্যাক হিসেবে ব্যবহার করি। কারণ এগুলো সহজলভ্য, বানানোও সোজা এবং পরিষ্কার করাটাও ইজি।
৭) আমার অয়েলি হেয়ার, আমি মেহেদী সহজে ব্যবহার করি না। আমি কেন জানি মেহেদী দিয়ে অতো শান্তি পাই না! ঝাড়ু ঝাড়ু ফিল হয়, চুল ড্রাই করে ফেলে। তাই যাদের অয়েলি হেয়ার, তাদের স্ট্রিকটলি সাজেস্ট করবো যেন মেহেদী ব্যবহার না করে, যে যত কথাই বলুক।
৮) অয়েলি হেয়ার-এরও কম বেশী আছে। মেয়োনেজ দিলে চুল সফট আর স্মুথ হয় , তারপরও আমি রেকমেন্ড করবো , পরিমাণটা যেন খুব বেশি না হয় ! বেশি হয়ে গেলে যা হয় তা হলো, অতিরিক্ত তেল দেয়ায় চিপকু লুক নিয়ে চলতে হবে যেটা আমার অত্যন্ত অপছন্দের একটা ব্যাপার!!
৯) আমি সহজে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করি না! এই জীবনে আমি হাতে গুণে কয়েকবার শুধু বিপদে পড়লে চুল শুকাতে ব্যবহার করেছি! করেছি ।
এটা বলছি কারণ, অনেকে রেগ্যুলার হেয়ার ড্রায়ার চুল শুকাতে ব্যবহার করেন, এটা ঠিক না, বদ অভ্যাস।
চুল নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। যত্ন নিতে হবে সময় করে। চুলকে নরিশ, স্মুথ আর স্ট্রং করতে নারকেল তেলের চেয়ে বড় রেমেডি আর নেই। তাই সপ্তাহে অন্তত ২ বার চুলে নারকেল তেল দিন। সুন্দর থাকুক আপনার চুলগুলো।
ছবি- সাটারস্টক