আপনি কি জানেন, চারশত পঞ্চাশ খ্রিস্টাব্দের সময়কালে হিপোক্রেটিস বিভিন্ন ক্ষত সারাতে অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার-এর ব্যবহার করেছিলেন? খুবই আশ্চর্যজনক তাই না? এটি বহুকালব্যাপী মেডিসিন হিসেবে এবং ত্বকের যত্নেও ব্যবহৃত হয়ে আসছে। রোমানরা ফেইস টোনার হিসেবে, ক্লিওপেট্রা তার সৌন্দর্যচর্চায় ফেইসওয়াশ হিসেবে এটি ব্যবহার করতেন।
অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার বা ACV-কে আপনি অনায়াসে আপনার বিউটি রুটিনে যোগ করতে পারেন। কারণ সুন্দর ত্বকের জন্য এর রয়েছে অনেক উপকারিতা। চলুন দেখে নেয়া যাক অ্যাপেল সাইডার ভিনেগারের যত গুণ।
(১) অ্যাপেল সাইডার ভিনেগারে হয়েছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল (Antimicrobial) বৈশিষ্ট্য যা ব্যাকটেরিয়ার বিভিন্ন প্রজাতির বৃদ্ধি রোধ করতে খুবই কার্যকর। এটা অত্যন্ত শক্তিশালী একটি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল। একটি গবেষণায় পাওয়া যায় যে এটি ই-কোলাই (Escherichia coli) এবং এস.অরেনাস (Staphylococcus aureus) ব্যাকটেরিয়া যা ব্রণ হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচিত এই ব্যাকটেরিয়াগুলো রোধ করতে ACV বিশেষভাবে কার্যকর। তৈলাক্ত ত্বকে বেশি ব্রণ হতে দেখা যায় তাই অয়েলি স্কিন-এর জন্য এটি বিশেষভাবে কার্যকর।
(২) অ্যাপেল সাইডার ভিনেগারে রয়েছে সাইট্রিক অ্যাসিড, সুসিনিক (succinic) অ্যাসিড এবং ল্যাকটিক অ্যাসিড যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্কিন থেকে একনে দূর করতে সহায়তা করে।
(৩) ACV- তে রয়েছে অ্যান্টিফাঙ্গাল (antifungal) বৈশিষ্ট্য যা ক্যান্ডিডা (Candida) প্রজাতির বৃদ্ধি প্রতিরোধে কার্যকর, বিশেষ করে Candida Albicans ছত্রাক ত্বককে চরম শুষ্ক করে দেয়। তাই সেনসিটিভ এবং ড্রাই স্কিন-এর জন্য অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার খুবই কার্যকর।
(৪) AVC শুধুমাত্র ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক তৈরিতে বাধা প্রদানই করে থাকে না, এছাড়াও এটি ত্বকে Ph-এর ভারসাম্য ঠিক রাখে তাই ত্বকের আদ্রতা বজায় থাকে।
এবার তাহলে চলুন সুন্দর ত্বক পেতে অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার টোনার কিভাবে তৈরি করতে হবে দেখে নেই।
প্রয়োজনীয় উপকরণ-
- ১ চা চামচ আপেল সাইডার ভিনেগার
- ৪ চা চামচ বিশুদ্ধ পানি
- কয়েক ফোটা এসেনশিয়াল তেল
টোনার তৈরির পদ্ধতি-
একটি পরিষ্কার বাটিতে অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার এবং বিশুদ্ধ পানি ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। তারপর এর সাথে কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল তেল যোগ করুন। এবার মিশ্রণটি ভালো করে মিশিয়ে একটি নরমাল বা স্প্রে বোতলে স্থানান্তর করুন। মিশ্রণটি রেফ্রিজারেটর-এ সংরক্ষণ করুন।
টোনার ব্যবহারের পদ্ধতি
প্রথমে একটি তুলোর প্যাড নিন এবং এর উপর টোনার-টি অল্প স্প্রে করে নিন বা ফোঁটায় ফোঁটায় ঢেলে নিন।
তারপর চোখের এড়িয়া বাদ দিয়ে তুলার বলটি আপনার মুখে আলতোভাবে চেপে চেপে লাগান। আপনি চাইলে টোনার-টি সরাসরি আপনার মুখে স্প্রে করতে পারেন। তারপর টোনার-টি মুখে শুকিয়ে যেতে দিন। এটি মুছে বা ধুয়ে ফেলবেন না। ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য প্রতিবার মুখ ধোয়ার পর এটি ব্যবহার করুন।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস যা মনে রাখা জরুরী
টোনার হিসেবে ব্যবহার করার জন্য অর্গানিক অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার ব্যবহার করা উচিত কিন্তু মনে রাখবেন এতে এনজাইম, প্রোটিন এবং স্কিন ফ্রেন্ডলি ব্যাকটেরিয়া রয়েছে কিনা তা দেখে নেয়া আবশ্যক। চলুন এ নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা জেনে রাখুন-
১) আপেল সাইডার ভিনেগার প্রথমবার যারা ব্যবহার করছেন তাদের কাছে এর গন্ধটা কিছুটা বিরক্তিকর লাগতে পারে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর গন্ধটা মিলিয়ে যায়।
২) মনে রাখবেন, ব্রোকেন স্কিন-এ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার ব্যবহার করা উচিত নয়। আপনার ত্বকে যদি স্ক্র্যাচ বা ক্ষত থাকে তাহলে এটি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
৩) প্রথমবার ব্যবহার করার সময় অল্প একটু ভিনেগার আপনার ত্বকে লাগিয়ে দেখে নিন এটি আপনার ত্বকে মানিয়ে যায় কিনা। যদি এটি ত্বকে মানিয়ে যায় তাহলে পরবর্তীতে ব্যবহারের মাত্রা বাড়াতে পারেন।
সুতরাং দেখতেই পাচ্ছেন যে অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার শুধুমাত্র একটি রান্নাঘর উপাদানই নয়, এটি আপনার ত্বককে সুস্থ এবং প্রদীপ্ত রাখতেও যথেষ্ট সহায়তা করে। সুতরাং সুন্দর, ব্রণমুক্ত এবং ফ্রেশ স্কিন পেতে রোজকার বিউটি রুটিনে আজই যোগ করুন অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার।
ছবি- সাটারস্টক, ফ্যাবহাউ.কম, পিন্টারেস্ট.কম