সকালে ঘুম থেকে উঠে কিংবা বাইরে থেকে এসে মুখখানিতো ধুয়ে নিতেই হয়। আজকাল অনেকেই প্রাকৃতিক জিনিসগুলোর দিকে ঝুঁকছেন। আমাদের হাতের কাছে যে জিনিসগুলো আছে তা দিয়েই তৈরী করা যায় ত্বকের যত্নে ক্লেনজার (facial cleanser)। এতে আপনি সাশ্রয়ীও হতে পারবেন কিছুটা হলেও। বাজারে অনেক রকমের ক্লেনজার আছে, সেগুলোর বেশিরভাগেরই উপাদান হল সারফেকট্যান্ট (surfactant), যা আসলে আপনার ত্বক থেকে লিপিড (lipid) শুষে নেয়। ফলে ত্বকের রক্ষাকারী আবরণ নষ্ট হয়ে যায়। অবশ্যই ভালো মানের প্রোডাক্ট ইউজ করতে হবে স্কিন কেয়ারে। শুনে মনে হতে পারে যে ক্লিনজার তৈরী করা হয়তো অনেক ঝামেলার ব্যাপার হবে! আসলে তা নয়, অনেক ক্লেনজার শুধুমাত্র একটি উপকরণ দিয়েও তৈরী করা যায়। আসুন জেনে নেই ঘরেই কিভাবে ত্বকের যত্নে ৭টি ক্লেনজার তৈরি করা যায়!
ত্বকের যত্নে ৭ টি ক্লেনজার তৈরি করার নিয়ম
১. মধু
মধু দিয়ে ক্লেনজার বানাতে কিছু না মেশালেও হবে। এক বোতল মধু আপনার বাথরুমে রেখে দিন আর নিয়মিত ব্যবহার করুন। এটি হলো সবচেয়ে সহজ ন্যাচারাল ক্লেনজার। মধুর একটি গুণ হলো ময়েশ্চার (moisture)। যার কারণে আপনার ত্বক হয়ে উঠবে নরম এবং কোমল।
ব্যবহারবিধি
আপনার ত্বকে মেকআপ করা না থাকলে প্রথমে অল্প একটু মধু, আধা চামচের মতো, আপনার হাতের তালুতে নিয়ে ধীরে ধীরে মুখে লাগিয়ে নিন। কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করার পর উষ্ণ গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। যদি মেকআপ করা থাকে তাহলে প্রথমে একটি ভেজা নরম তোয়ালে
নিয়ে তাতে মধু ঢেলে নিন। তার উপর বেকিং সোডা খানিকটা ছিটিয়ে নিয়ে মুখ পরিষ্কার করে ফেলুন। তারপর উষ্ণ গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এরপর টোনার লাগিয়ে নিন।
ত্বকের ধরণ অনুযায়ী
স্বাভাবিক ত্বকের জন্য মধুর সাথে কিছু মেশানোর প্রয়োজন নেই। যাদের ত্বক শুষ্ক তারা একটু দুধ বা দুধের সর মিশিয়ে নিন। আর যাদের ত্বক তৈলাক্ত তারা কয়েক ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে নিন।
২. ত্বকের যত্নে ৭টি ক্লিনজার তেল
অবাক লাগতে পারে তেল দিয়ে ক্লেনজার! কিন্তু গত কয়েক বছরে এই পদ্ধতিটিই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়েছে। কেননা তেল ব্যবহারে আপনার মুখ হয়ে ওঠে নরম এবং দ্যুতিময়। সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় ক্যাস্টর অয়েল, অলিভ অয়েল এবং বাদাম তেল। এগুলো আলাদা আলাদা বা মিক্স করে লাগাতে পারেন।
ব্যবহারবিধি
প্রথমে হাতের তালুতে কয়েক ফোটা তেল নিয়ে চক্রাকারে মুখে লাগিয়ে নিন। ম্যাসাজ করা হয়ে গেলে উষ্ণ গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। যারা মুখের পোর খুলতে চান তারা একটি তোয়ালে গরম পানিতে ভিজিয়ে মুখে চেপে রাখুন। এক্ষেত্রে সহনীয় মাত্রার গরম পানি ব্যবহার করুন।
ত্বকভেদে
সব ত্বকেই ব্যবহার করতে পারবেন কিন্তু যাদের অনেক ব্রণ হয়, তাদের মুখে তেল না দেয়াই ভালো হবে।
৩. ত্বকের যত্নে ৭টি ক্লিনজার টকদই
দই-এর গুনের কথা জানেন না, এমন কেউ নেই। শুধু দই-ই ন্যাচারাল ক্লেনজার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এতে থাকে প্রোটিন (protein), ল্যাকটিক এসিড (lactic acid) এবং ফ্যাট (fat), যা আপনার ত্বককে ডিটক্সিফাই(detoxify) এবং মসৃণ করে তোলে।
ব্যবহারবিধি
হাতের আঙ্গুলে অল্প করে দই নিয়ে মুখে লাগিয়ে নিন। তারপর ৪/৫ মিনিট মুখে রেখে দিন এবং অপেক্ষা করুন। সবশেষে উষ্ণ গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
ত্বকভেদে
শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে কয়েক ফোটা তেল মিশিয়ে নিন আর তৈলাক্ত ত্বকের জন্য কয়েক ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এইতো হয়ে গেল ঝটপট দই ক্লেনজার।
৪. ত্বকের যত্নে ৭টি ক্লিনজার দানাযুক্ত ক্লেনজার
অনেকে মুখে স্ক্রাবের মতো ক্লেনজার ব্যবহার করতে চান। এক্ষেত্রে আপনি ঘরে বসে বানাতে পারেন, তবে আপনার লাগবে দানাযুক্ত দ্রব্য। যেমন–আমন্ড বাদাম বা ওটমিল। এগুলো গুঁড়ো করে নিতে হবে। এছাড়া শস্যদানা, চালের গুঁড়ো, সূর্যমুখীর দানা, বেকিং সোডা, সুজি ব্যবহার করতে পারেন।
ব্যবহারবিধি
এই দানাযুক্ত দ্রব্যগুলোর সাথে আপনাকে তরল মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরী করে মুখে লাগাতে হবে। এজন্য পানি, মধু, লেবুর রস, দুধ ব্যবহার করতে পারেন। পেস্ট তৈরী হয়ে গেলে মুখে লাগিয়ে নিন কিন্তু চোখের চারপাশে লাগাবেন না। এরপর উষ্ণ গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।
ত্বকভেদে
(১) শুষ্ক ত্বকের জন্য দুধ, দুধের সর এবং দই ব্যবহার করুন
(২) তৈলাক্ত ত্বকের জন্য লেবুর রস অথবা শুধু পানি মিশিয়ে নিন
(৩) স্বাভাবিক ত্বকের জন্য পানি, মধু বা গ্লিসারিন মিশিয়ে নিন
৫. ফ্রুট ক্লেনজার
ফ্রুট ক্লিনজার তৈরী করতে লাগবে ১/৩ কাপ গাজরের রস, অর্ধেক কমলা, মধু ১ টেবিল চামচ। সবগুলো উপকরণ একসাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরী করুন। যদি অনেক পাতলা মনে হয়, ১ চা চামচ ময়দা মিশিয়ে নিতে পারেন। গাজর আপনার ত্বকের কোলাজেন এবং ইলাস্টিন ফাইবার তৈরী করতে সহায়তা করবে। আপনার ত্বক হয়ে উঠবে আরও মসৃণ এবং ইলাস্টিক।
ব্যবহারবিধি
পেস্ট তৈরী হয়ে গেলে আপনার মুখে লাগিয়ে ৫ মিনিট অপেক্ষা করুন এবং হালকা গরম পানিতে মুখ ধুয়ে নিন।
ত্বকভেদে
এই ক্লেনজার সব ধরনের ত্বকেই ব্যবহার করা যাবে।
৬. টমেটো-আপেল ক্লেনজার
টমেটো এবং আপেল ত্বকের জন্য খুব ভালো ক্লেনজার হিসেবে কাজ করে। টমেটো এবং আপেল একসাথে অথবা আলাদা করে ব্যবহার করতে পারেন।
ব্যবহারবিধি
টমেটো ব্লেন্ড করে মুখে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। তারপর মুখ ধুয়ে ফেলুন। আপেলও ব্লেন্ড করে এতে খানিকটা মধু মিশিয়ে লাগাতে পারেন।
ত্বকভেদে
সেনসিটিভ ত্বকের ক্ষেত্রে টমেটো নাও মানাতে পারে। অনেকেরই টমেটো ব্যবহারে অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে।
৭. দারুচিনি ক্লেনজার
এবার আসুন রান্নাঘর থেকেই ক্লেনজার তৈরী করি। দারুচিনি তো রান্না ঘরে আছেই, দারুচিনি বেটে অথবা ব্লেন্ড করে তাতে মধু মিশিয়ে পেস্ট তৈরী করুন। ত্বকের মৃত কোষ তুলতে এই ক্লেনজার খুবই কার্যকরী।
ব্যবহারবিধি
এই পেস্ট মুখে লাগান এবং কিছুক্ষণ পর উষ্ণ পানিতে ধুয়ে ফেলুন।
ত্বকভেদে
এই ক্লেনজার সব ধরনের ত্বকেই ব্যবহার করা যাবে।
আপনি যদি রেগ্যুলার স্কিন কেয়ারে অথেনটিক প্রোডাক্ট খুঁজে থাকেন, তবে সাজগোজ হতে পারে আপনার জন্য নির্ভরযোগ্য জায়গা। সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ রয়েছে যার একটি সীমান্ত স্কয়ার ও অপরটি যমুনা ফিউচার পার্কে অবস্থিত। আর অনলাইনে প্রোডাক্ট কিনতে চাইলে কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে।
এভাবে ঘরে বসে স্বল্প সময়ে ত্বকের যত্নে ৭টি ক্লেনজার তৈরী করে ব্যবহার করে বাজারের ক্ষতিকর কেমিক্যাল থেকে আপনার ত্বককে সুরক্ষা করুন। এই আর্টিকেলে ত্বকের যত্নে ৭টি ক্লেনজার তৈরি ও ব্যবহার নিয়ে তুলে ধরা হলো। আশা করি আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসবে। সবাই সুস্থ থাকবেন।
ছবি- সাটারস্টক