রমজানে আমাদেরকে একেবারেই নতুন রুটিনে খাবার খেতে হয়। মেনুতেও চলে আসে বৈচিত্র্য। অনেক সময় এই নতুন খাদ্যাভ্যাসে শরীরের উপর বিরুপ প্রভাব পড়ে। এতে অনেকে অসুস্থ হয়ে গিয়ে আর বাকি রোজাগুলো ঠিকমত পালন করতে পারেন না। এর মূলে আছে ভুলভাল খাওয়া। আসুন আজকে জেনে নিই রমজানে আমাদের খাদ্যাভ্যাস কেমন হওয়া উচিত এবং কী উপায়ে আমরা রমজানের কিছু সাধারন শারীরিক সমস্যা থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখতে পারি।
যেসব সমস্যা হতে পারেঃ
১।কোষ্ঠ কাঠিন্য
কারণঃ অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাওয়া, পানি কম খাওয়া এবং মেনুতে আঁশযুক্ত খাবার না রাখা।
২।হজমে সমস্যা এবং পেট ফাঁপা
কারণঃ অতিরিক্ত খাদ্যগ্রহণ, বেশি ভাজা পোড়া, মশলাযুক্ত এবং চর্বিযুক্ত খাদ্যগ্রহন, সফট ড্রিঙ্কস পান করা।
৩।লো ব্লাড প্রেশার
কারণঃ তরল খাবার কম গ্রহন করা।
৪।মাথাব্যাথাঃ
কারণঃ যাদের কফি এবং ধূমপানের অভ্যাস আছে তারা অনেকসময় সারাদিনের রোজায় মাথাব্যাথায় আক্রান্ত হতে পারেন। সেইসাথে পরিমিত ঘুম না হলে এবং ক্ষুধায় কাতর হয়েও মাথাব্যাথায় আক্রান্ত হতে পারেন।
এর থেকে প্রতিকারের জন্য রোজার এক-দুই সপ্তাহ আগে থেকেই কফি পানের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে। আর এই সুযোগে যদি সম্পূর্ণভাবে ধূমপান ত্যাগ করা যায় তাহলেই সবচেয়ে ভালো হয়।
৫।পেপটিক আলসার, গ্যাস্ট্রিক, বুকজ্বালাঃ
সারাদিন অভুক্ত থাকার ফলে অনেকের এসিডিটি হয়ে এই সমস্যাগুলো হতে পারে। অতিরিক্ত তেল মশলা যুক্ত খাবার, কফি এবং সফট ড্রিঙ্কস এই অবস্থাকে আরো বাড়িয়ে দেয়।
পাকস্থলীর এসিড নিয়ন্ত্রণের জন্য অনেক ওষুধ আছে। যারা এসিডিটির সমস্যায় ভুগছেন এবং পেপটিক আলসারের রোগীরা অবশ্যই রমযানের আগে ডক্টরের পরামর্শ নিবেন।
খাদ্যাভ্যাস কেমন হওয়া উচিতঃ
– সারাদিন রোজা রেখে ইফতারিতে অনেকেই অতিরিক্ত খেয়ে ফেলেন। মানছি সারাদিন অভুক্ত থাকার পরে খাদ্যগ্রহণে নিয়ন্ত্রণ আনাটা অনেকের জন্যই কষ্টকর। তবুও নিজের স্বাস্থ্যের ক্ষতি এড়ানোর জন্যই আপনাকে ইফতারিতে অতিরিক্ত খাদ্যগ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ সারাদিন অভুক্ত থাকার পর হঠাৎ করে অনেক খাবার একসাথে গ্রহণ করলে তাতে আপনার পরিপাকযন্ত্রে গোলমাল দেখা দিতে পারে।
– ইফতারিতে অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার এবং ভাজাপোড়া খাবার কম গ্রহণ করুন। এতে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এছাড়াও ইফতারিতে এই ধরনের খাদ্যগ্রহণ স্বাস্থ্যসম্মত নয়।
– রোজায় লবণ পরিমাণ মত খেতে চেষ্টা করবেন, কারণ লবণ বেশি খেলে আপনার পানির তৃষ্ণা বেশি লাগবে। আর সারাদিনে যেহেতু আপনি পানি পান করতে পারবেন না, তাই আপনার শরীরে পানিশূন্যতা বেড়ে যেতে পারে।
– সারাদিন রোজা রাখার কারণে আপনার অতিরিক্ত পানির চাহিদা মেটাতে কখনোই চিনি দিয়ে গোলানো শরবত অথবা সফট ড্রিঙ্কসের উপর বেশি নির্ভর করবেন না। ঘরে তৈরী শরবত এবং ফলের রস পরিমাণ মত গ্রহন করুন, তবে সফট ড্রিঙ্কস আর কৃত্রিম জুস না খাওয়ার সর্বোত্তম চেষ্টা করবেন।
– প্রতি ইফতারে এবং সেহরিতে যথেষ্ট ফল এবং শাক সবজি যাতে থাকে সেই দিকে লক্ষ্য রাখুন।
– সারাদিনের রোজায় শরীরে পানির যে অভাব তৈরী হয় তা থেকে বের হয়ে আসার জন্য প্রতি রাতে অন্তত ছয় থেকে আট গ্লাস পানি পান করার চেষ্টা করুন।
– অনেকেই অলসতা করে সেহরি না খেয়েই রোজা রাখেন। এটি কখনোই করবেন না। সেহরি না খেয়ে রোজা রাখতে গেলে আপনি যথেষ্ট দুর্বল হয়ে পড়বেন যা কখনোই কাম্য নয়।
দূরে থাকুনঃ
• অত্যধিক খাদ্যগ্রহণ থেকে
• ভাজাপোড়া খাবার থেকে
• অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার থেকে
• মাত্রাতিরিক্ত চা পান থেকে
• সফট ড্রিঙ্কস থেকে
যা খাবেনঃ
• আঁশ যুক্ত খাবার
• কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার
• ফল, শাকসবজি
• যেসব খাবার পরিপাকে সময় নেয় অনেক
• প্রচুর পরিমাণে পানি
রোজায় প্রতিদিনই দুটি গুরুত্বপূর্ণ ফল আপনার মেনুতে রাখতে পারেন। ফল দুটি হল কলা আর খেঁজুর। খেঁজুরের মত অলরাউন্ডার ফল খুব কমই আছে। এই ফলটি এক-ই সাথে আঁশযুক্ত এবং চিনি, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ খেজুর খান। কলাতে আছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম আর কার্বোহাইড্রেট। মনে রাখবেন পুরো রোজায় সুস্থ থাকতে পারলে আপনার ঈদ-ও হবে অনেক আনন্দময়।
লিখেছেনঃ জান্নাতুল মাওয়া
ছবিঃ মুসলিমমিডিয়ানেটওয়ার্ক.কম