কফি আমাদের দৈনন্দিন জীবন যাত্রায় নিত্য সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে পা বাড়াই একে বানাতে। কাজের চাপে টেনশন কমাতে এর নেই কোন বিকল্প। কনকনে ঠাণ্ডায় রাত-দুপুরের আড্ডায় এক কাপ গরম ধোঁয়া ওঠা কফির স্বাদ! আহ! ভাবতেই কী ভালো লাগে বলুন! শুধু ঊর্ধ্ব গগনে বেয়ে চলা গরম ধোঁয়া ওঠা কফিই বা কেন?
ক্রাশড আইস দেয়া কোল্ড কফিতো তারুণ্যের ক্রাশ ড্রিঙ্ক যেন! ভাবুন তো কোনো এক সাহিত্যমাখা প্রহরে পছন্দের কোন বই হাতে কফির এক চুমুক নিলেই সময়টা কেমন পাল্টে যায় অন্যভাবে! সবকিছুই তখন অসাধারণ, অন্যরকমদ! মান্না দে-এর “কফি হাউজের সেই আড্ডা”- এখন শুধু কোলকাতায় নয়, ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকাতেই খুঁজে পাওয়া যায় আধুনিক আঙ্গিকে। আজকাল তো নানা ধরনের কফি শপের ছড়াছড়ি। আর সেখানে মিলবে হরেক রকম ক্রেতার চাহিদানুযায়ী হরেক রকম ফ্লেভারের হরেক দেশের কফি !
তবে এ পানীয় বেশি পান করে ফেলছেন না তো? চলুন জেনে নেই- এটি কী মাত্রায় খাওয়া উচিত, কখন খাওয়া উচিত, অতি মাত্রায় পানের ক্ষতিকর দিকগুলো কী কী, স্বাস্থ্যরক্ষায় কফি এবং কোন কোন অসুখের জন্য উপকারী?
বিশেষ কিছু অসুখের জন্য কফি উপকারী!
স্বাভাবিকমাত্রায় কফি পানে আমাদের শরীরের তেমন কোনও ক্ষতি হয় না। এই স্বাভাবিক মাত্রার পরিমাণ নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে রয়েছে নানা রকমের বিভ্রান্তি! দিনে কাপ দুয়েক নিমিষেই চলতে পারে।
পরিমিত পরিমাণে খেলে ক্ষতিতো নেই-ই বরং এটি পরিমিত পান টাইপ-২ ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা অনেকটাই কমে। তবে চিনিকে বলতে হবে বাই-বাই! এছাড়াও পার্কিনসন্স ও লিভারের অসুখের সম্ভাবনাও অনেকটা কমে পরিমিত কফি পানে।
তবে ক্ষতি কী?
১) অতিরিক্ত কোনকিছুই ভালো না। তেমনি মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইনেটেড ড্রিংকে অভ্যস্ত হয়ে পড়লে সমস্যা দেখা দেয়। অনবরত কফি পানে শরীরের প্রাথমিক ফাউন্ডেশনই নষ্ট হয়ে যায়। ব্যাঘাত ঘটে নিউট্রিশাস ডায়েটে। যদি পুষ্টিকর খাবার নিয়মিত গ্রহণ না করা হয়, তখন তীব্রভাবে শরীরে নানা রকম ঘাটতি দেখা দিতে পারে। ফলে হাড় ভঙ্গুর হয়ে পড়ে সহজেই।
২) দিনে ৪ কাপের বেশি কফি খেলে অ্যাংজাইটি (Anxiety), ইনসমনিয়া (Insomnia) ও নার্ভাসনেস (Nervousness) দেখা দিতে পারে। এতে সামান্য কিছু হলেই উদ্বেগে ভুগবেন, রাতে ঘুম হবে না । অল্পতেই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবেন।
৩) বিশেষজ্ঞের মতে, মেটাবলিজম একবার কফিতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে ব্লাড প্রেশারের ওপর তেমন প্রভাব ফেলতে পারে না। কিছু সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, ২-৩ কাপ কফিতে মজুত ক্যাফেইন সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক প্রেশার (Systolic and Diastolic pressure) বাড়িয়ে দেয়।
তাহলে কফি পানের অনুপযুক্ত সময় কোনটি?
সাধারণত কফি খাবার ইচ্ছে হলেই আমরা খেয়ে থাকি। সময় বুঝে কি এমন পানীয় খাওয়া যায়? হ্যাঁ রে ভাই, এখানেই তো বাঁধে যত গন্ডগোল! যারা কফিতে অনেক বেশি অভ্যস্থ তাদের হয় নানান সমস্যা। তাই, দুপুরের দিক এই পানীয় খাবেন না। তবে খেলে অ্যানার্জি পাবেন ভাবলে অবশ্যই সকালে খাবেন। কারণ, কফি খাবার পর আপনার দেহে ৩-৭ ঘণ্টা ক্যাফেইন মজুত থাকে। এখন নিশ্চয় বুঝতে পারছেন দুপুরবেলা এ পানীয় গ্রহণ রাতে আপনার ঘুমের সমস্যার কারণ হতে পারে।
ব্লাড-প্রেশার মাপার কয়েক দিন আগে থেকে কফিকে না বলাটাই শ্রেয়। তারপরও যদি দেখা যায় যে, আপনার যা প্রেশার থাকে তার থেকেও কমেছে, তাহলে অন্য কোনো ডি-ক্যাফেইনেটেড ড্রিঙ্ক-এ নিজেকে অভ্যস্ত করার চেষ্টা করুন।
কফির কথা বলতে আপনি হয়তো বলবেন যে এ আপনার ভীষণ পছন্দের। কিন্তু এর কারণে আপনার নার্ভের সমস্যা হচ্ছে! এক্ষেত্রে ডি-ক্যাফেইনেটেড কফির সঙ্গে ক্যাফেইনেটেড কফি মিশিয়ে খেতে পারেন। ধীরে ধীরে ক্যাফেইনেটেড কফির মাত্রা কমিয়ে দেবেন।
কফির জনপ্রিয়তা আসলে সবখানেই আজ অনেকটা বেশি। সারাজীবন যেন কফির স্বাদ ও ঘ্রাণ নিতে পারেন তাই এটি খাবেন পরিমিত! অনেকের কফির নেশা থাকলেও পানীয়টি অতিরিক্ত পানের অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসা কিন্তু খুব একটা কঠিন নয়। একটু চেষ্টা করলেই পারবেন অভ্যাসটি কমিয়ে ফেলতে।
সুস্থ থাকতে বিশেষ দিনগুলোতেও কফি পরিমিত পরিমাণেই পান করি। আর হ্যাঁ, কফিখোরদের জন্য থাকলো মন মাতানো কফির ঘ্রাণের শুভেচ্ছা!
ছবি- সংগৃহীত: সাটারস্টক