বাইরে যাওয়ার সময় সুন্দর পোশাক, মানানসই মেকআপ নিয়ে তৈরি হওয়ার পর চুল কেমন করে সাজাবেন, তাই নিয়ে অনেকেই বিরম্বনায় পড়তে হয়, তাই না? আসলে চুলের সাজ নির্ভর করে আপনার বয়স, চুলের কাট, পোশাক, সময় ও পরিবেশের উপর। তাই আজ বলব নানান বয়সী নারীদের নানান পরিবেশ ও স্থানভেদে চুলের সাজ নিয়ে কিছু টিপস নিয়ে।
স্থানভেদে চুলের সাজ
১. পার্টিতে চুলের সাজ
আপনি কোন ধরনের পার্টিতে যাচ্ছেন তার ওপর নির্ভর করবে চুলের সাজ কেমন হবে। জমকালো অথবা বিয়ের পার্টিতে আপনার পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে সাজিয়ে নিন আপনার চুল। শাড়ির সঙ্গে মানিয়ে আপনি করতে পারেন খোঁপা। চুল যে বাঁধতেই হবে, এমন কোনো কথা নেই।
সামনের দিকে হালকা ফুলিয়ে চুল পেছনে ছেড়েও দিতে পারেন। সালোয়ার-কামিজের সঙ্গেও ছেড়ে রাখতে পারেন চুল। সে ক্ষেত্রে চুলের একটি সুন্দর কাট দিয়ে নিন। আপনার চুলের সঙ্গে রঙিন হেয়ার এক্সটেনশন করে বদলে দিতে পারেন আপনার চেহারা। তবে এক্ষেত্রে পোশাকের রঙের দিকটি মাথায় রাখুন। ফতুয়া ও জিনস-এর সঙ্গে খোঁপা মানানসই হবে না। তাই পাশ্চাত্য পোশাকের সঙ্গে খুলে দিন চুল অথবা সামনের দিকে একটু পাফ করে দিতে পারেন।
বড় বা মাঝারি চুলও সম্ভব হলে ছেড়ে দিতে পারেন। চুলগুলো বেঁধে নিন হাফ নট (half knot) স্টাইল-এ। অর্ধেক চুলে হাফ নট করে তাতে শক্ত করে আটকে দিন ড্রেস-এর রঙের সঙ্গে মানানসই পাথর বসানো পাঞ্চ ক্লিপ দিয়ে। সাধারণ হাতখোঁপা করে তাতে ব্যবহার করতে পারেন রূপার তৈরি কাঁটা। এটি চুলের সাজে আভিজাত্য ফুটিয়ে তোলে। এ ছাড়া লম্বা চুলে বেণী করে তাতে লাগানো যেতে পারে বাহারি রঙের ফুল।
২. ঘরোয়া উৎসবে চুলের সাজ
ঘরোয়া কোন উৎসব থাকে তবে ছোট বা মাঝারি চুল হলে সাইড-এ সিঁথি করে বাকি চুল ছেড়ে দিন। চাইলে কানের গোড়ায় গুঁজতে পারেন পছন্দের কোনো ফুল। এ ছাড়া মাথার সামনের কিছু চুল ছোট পাঞ্চ ক্লিপ-এর সাহায্যে হালকা পাফ করে বাঁধতে পারেন। তারপর বাকি চুল একটু উঠিয়ে হাত খোঁপা করে তাতে দিতে পারেন সুদৃশ্য কোনো কাঁটা! একটু আলাদা সাজ চাইলে করতে পারেন ফ্রেঞ্চ বেণী অথবা পনিটেল।
আর যদি একটু ভিন্ন ধরনের কোনো স্টাইল করতে চান সে ক্ষেত্রে কপালের ওপর কিছু চুল ছেড়ে রেখে বাকি চুল ফুলিয়ে নিন। এবারে কপালের উপরের চুল এক সাইড করে নিয়ে দুই পাশ থেকে অল্প অল্প চুল নিয়ে ফ্রেঞ্চ বেণীর মতো করে আনুন কানের গোড়া পর্যন্ত। এবারে বাকি চুল পেছনে ক্লিপ দিয়ে আটকে নিন। চাইলে এবারে পেছনের চুলও আপনি খোঁপা বা বেণী করতে পারেন।
৩. কর্মক্ষেত্রে চুলের সাজ
আপনাকে যদি রোজ কর্মক্ষেত্রে ছুটতে হয়, তবে খুব কম সময়ে চুল সাজানোর কিছু সহজ টিপস মাথায় রাখতে হবে। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে চুলের জন্য খুব বেশি সময় দেয়ার দরকার নেই। চুলকে আপনার চেহারার আকার ও ধরন অনুযায়ী সুন্দর একটি কাট দিয়ে নিলে ব্যস্ত সময়ের অনেকটাই বেঁচে যায়। প্রায় সবাইকে লেয়ার কাট-এ মানিয়ে যায়। আপনার পছন্দ অনুযায়ী বড়-ছোট কাট দিতে পারেন। এই কাট রেখে চুলকে ব্লো-ড্রাই (blow dry) করে নিচের দিকে হালকা কোঁকড়ানো ভাব আনতে পারেন।
ভলিউম কাট-এর সঙ্গেও এভাবে খোলা রাখতে পারেন চুল। সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে বেশ ভালোই মানিয়ে যাবে আপনাকে। যাদের সামনে ব্যাংগস কাট, তারা সামনের দিকে কয়েকটি চুল ছড়িয়ে দিন। পেছনের দিকের চুলটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে করে নিন একটা আলতো খোঁপা। কিছুটা চুলের নিচে ছেড়ে রাখলেও ক্ষতি নেই। অফিসে ফতুয়া পরলে উঁচু করে পনিটেইল করে নিতে পারেন। এছাড়া পনিটেইল থেকে চুল নিয়ে দুটি বেণি করে কান বরাবর এনে ক্লিপ-এ আটকে নিন। কর্পোরেট লুক আনতে চুলে করতে পারেন নিচু করে পনিটেইল। একপাশে সিঁথি করে পুরো চুলটাকে চ্যাপটা করে নিতে পারেন পনিটেইল, তার পেছনে সুন্দর একটা ঝুঁটি।
৪. টিনএজ বয়সীদের চুলের সাজ
আপনার চেহারার আকার ও ধরন অনুযায়ী সুন্দর একটা কাট দিন। চুল খাটো বা ছোট করে ছাঁটা থাকলেতো কথাই নেই। নিশ্চিন্তে ছেড়ে রাখতে পারেন। আবার সামনের দিকের চুল ছোট হলে তা নানা ধরনের ক্লিপ দিয়ে আটকে দিতে পারেন।
সামনে থেকে মাথার মাঝ বরাবর কিছু চুল একসঙ্গে নিয়ে একটু বড় পাঞ্চ ক্লিপ দিয়ে বেঁধে দিন। এতে ফ্যাশনের পাশাপাশি আপনার কাজ করতেও সুবিধা হবে। মাথায় স্কার্ফ বাঁধার পুরনো ফ্যাশনটি এখন আবার ফিরে এসেছে। চুল বাঁধায় স্কার্ফ অনেক স্টাইলিশ এবং একই সঙ্গে এটি চুলকে রোদের হাত থেকেও বাঁচায়। মাঝারি কাটের চুলের জন্য হতে পারে নানা ধরনের স্টাইল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- পনিটেল ও রিবন টুইস্ট। ব্যস্ততায় যাদের দিন কাটে তাদের জন্য পনিটেল একটি সহজ ও ঝটপট চুলের ফ্যাশন। এর জন্য ছোট ক্লিপ দিয়ে সামনের কিছু চুল আঁটকে নিন। আর পেছনের চুলগুলো দিয়ে বেঁধে নিন একটি ঝুঁটি। এখন চলছে সামনের অংশের চুলগুলোকে একটু উঁচু করে আটকে পেছনে পনিটেল বাঁধার ফ্যাশন।
স্থানভেদে চুলের সাজ নিতে এক পনিটেল-এই আপনি করতে পারেন পছন্দমতো স্টাইল। রিবন টুইস্ট-এর জন্য পুরো মাথার চুল আঁচড়ে একপাশে নিয়ে আসতে হবে। যে পাশে চুল থাকবে না সেদিকটা আটকে দিতে হবে ক্লিপ দিয়ে। এবার একপাশে আনা চুলগুলোকে রাবার ব্যান্ড দিয়ে ঝুঁটি করে নিন। ঝুঁটির কিছু অংশ কালো ফিতা দিয়ে পেঁচিয়ে নিন। ঝুঁটির পরের অংশের চুলগুলো ছেড়ে রাখুন। আজকাল টিনএজ মেয়েরা বিভিন্ন ধরনের স্টোন দিয়ে ডিজাইন করা ক্লিপ পরে থাকে। যারা একটু ফ্যাশন সচেতন তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে চুল ব্লো ডাই বা স্ট্রেট করে ছেড়ে রাখতে পছন্দ করে। সে ক্ষেত্রে চুলে যে কোনো এক পাশে ছোট্ট একটা স্টোন দিয়ে ডিজাইন করা কাঁটা বা ক্লিপ লাগিয়ে নিলে মন্দ লাগবে না।
৫. সোনামোনিদের চুলের সাজ
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে চুল ছোট্ট রাখাই উত্তম। কারণ চুলে ঘাম জমে ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে। যেসব বাচ্চার ঠাণ্ডায় সমস্যা তাদের চুল কখনোই বড় রাখা উচিত নয়। অনেক বাবা-মা শখ করে বাচ্চার চুল লম্বা রাখতে চান। সে ক্ষেত্রে তার চুলের জন্য নিতে হবে বিশেষ যত্ন। চুল বড় হলে অবশ্যই বেঁধে রাখতে হবে। মেয়ে বাচ্চার জন্য ববকাট বা সামনের দিকে ব্যাঙ্গস কাট দিতে পারেন। আর ছেলেদের জন্য বাজ কাট, স্পাইক, ক্রুকাট দিতে পারেন। তবে চুল যেভাবেই কাটান না কেন তা যেন শিশুর জন্য আরামদায়ক হয়।
বাচ্চাদের জন্য এখন অনেক ধরনের কার্টুন আকৃতির ক্লিপ পাওয়া যায়। বাচ্চাদের চুলের যে কোনো এক পাশে সিঁথি করে নিয়ে এ ধরনের কার্টুন আকৃতির ক্লিপ পরিয়ে দিলে দেখতে ভালো লাগবে বাচ্চারাও খুশি হবে।
তাহলে স্থানভেদে চুলের সাজ নিয়ে আর কি কোনো চিন্তা থাকলো? এবার আপনার গেটআপ নিয়ে থাকুন কনফিডেন্ট আগের চেয়ে আরও বেশি! স্থানভেদে চুলের সাজ নিয়ে থাকুন অনন্য।
ছবি- সংগৃহীত: সাটারস্টক