আমাদের দেশে স্যুট-বুট-টাই-এর ট্রেন্ড-টার আবির্ভাব হয়েছে গ্রেট ব্রিটেন থেকে। তাদের পোশাক পরা অনুসরণ করেই আমরা স্যুটেড-বুটেড হয়ে যাই। তবে এই পোশাক পরার যে কিছু নিয়ম আছে তার খবরতো জানি না। তাই দেশের গন্ডি পেড়িয়ে যখন বিদেশে পা দেয়া হয় তখন স্যুট রুলস মেনে চলা অনেকেরই সেই ভুলগুলো দিকে বারবার চোখ পড়ে যায়। আর তখন স্বাভাবিকভাবেই আপনার বিব্রতবোধ হবে। মেয়েদের চেয়ে ছেলেরা স্যুট বেশি পরলেও ছেলেদেরকেও স্যুট পরিধান করার ক্ষেত্রে ভুল করতে দেখা যায়। যেহেতু স্যুটকে একটি ফরমাল ড্রেস হিসেবে ধরা হয়, তাই সঠিকভাবে স্যুট রুলস মেনে চলাই স্মার্ট পারসোনালিটি প্রকাশ করবে। স্যুট বলতে আসলে শার্ট, প্যান্ট, কোট, ওয়েইস্ট কোট, টাই/ বো-টাই এই ৫ টি অংশকে একত্রে বুঝায়। তবে অনেকেই ওয়েইস্ট কোট পরেন না। আসুন স্যুট পরার ভুল এড়াতে জেনে নেই স্যুট রুলস!
১. শার্ট
ফরমাল শার্ট হিসেবে সাধারণত হালকা রঙের শার্ট পরতে হয়। সাদারণত ড্রেস শার্টকেই ফরমাল শার্ট বলে। ক্যাজুয়াল শার্ট কোনোভাবেই স্যুটের সাথে পরা যাবে না। আরও জানিয়ে রাখি শার্টের কলার কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শার্টের বিভিন্ন ধরনের কলার রয়েছে। কিন্তু ফরমাল গেটআপ-এ স্প্রেড কলার শার্ট ও পয়েন্ট কলার শার্ট পরাই ভালো।
স্প্রেড কলার শার্ট বিভিন্ন মিটিং-এর জন্য পারফেক্ট। আর বিভিন্ন পার্টিতে বা ডিনার স্যুট পরার ক্ষেত্রে পয়েন্ট কলার শার্ট-কে প্রাধান্য দেয়া উচিত। উল্লেখ্য যে স্প্রেড কলারে টাই সব সময় পরা হয়। আর পয়েন্ট কলার শার্ট-এর সাথে চাইলে ইনফরমাল প্রোগ্রামে টাই ছাড়াও পরতে পারেন। কখনোই বাটন-ডাউন শার্ট-এর সাথে স্যুট পরতে হয় না।
২. প্যান্ট
ফরমাল প্যান্টের ধরন হল- এর ফিটিংস ভালো হবে। অর্থাৎ, স্ট্রেইট প্যান্ট হবে আর প্যান্টের লেন্থ এমন হতে হবে যেন প্যান্ট পায়ের পাতায় এসে ভাঁজ না হয়ে যেন শুধু ভাঁজের মত হেলে থাকে। স্যুটের প্যান্টের রঙও কোট, ওয়েইস্ট কোট- এর মতই হয়।
৩. কোট
আপনার কোট ভালো ফিটিং হয়েছে। এতেই কি আপনি খুশি? ইচ্ছেমতন সবগুলো বোতাম খুলে বা লাগিয়ে পরবেন? মোটেও এই কাজ করবেন না!
কোটের বোতাম খোলা আর লাগিয়ে রাখারও নিয়ম আছে। স্যুটে যদি ৩টি বোতাম থাকে তাহলে, মাঝের বোতাম সব সময় লাগানো থাকতে হবে। নিচের বোতাম সব সময় খোলা রাখতে হবে। আর উপরে বোতাম আপনার খেয়ালমত লাগাতেও পারেন আবার নাও লাগাতে পারেন। আর যদি ২ বোতামের কোট হয়? হ্যাঁ, ২ বোতামের কোট হলে, উপরের বোতাম সব সময় লাগিয়ে রাখতে হবে আর নিচের বোতাম সব সময় খোলা রাখতে হবে।
স্যুটের হাতার লেন্থ-এর কথা ভাবুন এবার। এই ভুলটি খুব বেশি হয়। স্যুটের হাতা এমন হতে হবে যেন তা শার্ট-এর হাতা একদম ঢেকে না ফেলে বা শার্ট-এর হাতার অনেক অংশ বের হয়ে থাকে। ফ্যাশন বিশেষজ্ঞদের মতে, কোট-এর হাতা এমন হবে যেন শার্ট-এর হাতার ঠিক ১/৪ ইঞ্চি পর্যন্ত দেখা যায়।
৪. টাই/বো-টাই
স্যুটের সাথে টাই পরার ক্ষেত্রে প্রথম রুলস হলো- টাই-এর রঙ শার্টের চেয়ে গাঢ় রঙের হবে। কোনোভাবেই শার্ট-এর চেয়ে হালকা রঙের টাই পরা উচিত না। টাই-এর লেন্থ হবে ঠিক প্যান্টের বেল্ট ছোঁয়া পর্যন্ত।
এর উপরে বা নিচে টাই পরলে তা নিয়ম বহির্ভূততো হয়ই সেইসাথে দেখতেও বেমানান লাগে। ও আচ্ছা! ভাবছেন চিকন টাই পরতে হয় নাকি মোটা টাই? দুটোই পরতে পারবেন। মোটা টাই-কেই সাধারণত ফরমাল টাই বলে। আর চিকন টাই-কে পার্টি টাই বলা হয়। তবে আপনি যদি রোগা গড়নের হন, তবে সেক্ষেত্রে মোটা টাই-এর জায়গায় চিকন টাই পরতে পারেন। চাইলে বো-টাইও বেছে নিতে পারেন!
এই তো গেলো টাই-এর মূল কথা। এবার আসুক তার অনুষঙ্গ বা এক্সেসরিজ। অনেকেই টাই এক্সেসরিজ পরতে পছন্দ করেন। কিন্তু সঠিক নিয়ম না জানায় ভুল করেন সেখানেও। তাই এখন টাই-এক্সেসরিজ নিয়ে বলব। টাই অনুষঙ্গ হিসেবে টাই পিন ও টাই বার ব্যবহার করা হয়।
তবে টাই পিন-এর চেয়ে টাই বার পরাই ভালো। তাই বলে যেখানে খুশি সেখানে টাই বার পরবেন না যেন! শার্টের ৩ ও ৪ নম্বর বোতামের ঠিক মাঝে টাই বার আটকে নিতে হয়। সৌখিনতা ছাড়াও টাই বার পরার মূল কারণটি হলো- বাতাসে বা অন্য কোনো কারণে যেন টাই উড়ে না যায় বা বাঁকা না হয়ে যায়।
৫. জুতা, মোজা, বেল্ট ও ঘড়ি
আপনি ফরমালি বেশ স্যুটেড হয়েছেন, কিন্তু ফরমালি বুটেড না হলে কি হবে? শুনতেই কী হাসি পাচ্ছে? তাহলে দেখতে কেমন উদ্ভট লাগে ভাবুন! অবশ্যই স্যুটের রঙের সাথে জুতার রং মিলিয়ে পরতে হবে।
ফরমাল লেদারের শু-এর সাথে মোজার দিকেও একটু খেয়াল করুন! যে কোনো রঙের মোজা পরলেই হবে এমনটা ভাবতে যাবেন না।
মোজা পরুন আপনার প্যান্টের রঙের সাথে মিলিয়ে। আর বেল্ট কেমন পরবেন? বাকলে বাঘ, সিংহ বা ইচ্ছেমত যে কোনো বড় বাকলের? ভুলেও না! আপনার সুরুচির পরিচয় দিবে সাধারণ লেদারের বেল্ট পরলেই।
ও হ্যাঁ, বেল্ট আর জুতার রঙ কিন্তু অবশ্যই এক হতে হবে। স্যুটেড-বুটেড হয়ে ফিটফাট? বেশ, এবার চেইন বা লেদারের যেমন ফরমাল ঘড়ি আছে তা পরে চুল আঁচড়িয়ে আয়নায় নিজেকে একবার দেখে নিন তো!
তাই বলছি, ২০১৯ সালে দাঁড়িয়ে যেকোনো এক রকম পোশাক পরলেই হয়- এমন চিন্তা করা মানে নিজের বোকামির পরিচয় দেয়া। আবার বিদেশী সংস্কৃতি অনুসরণ করে যে কোনো পোশাক নিজের মনমত পরা ঠিক নয়। বিদেশী পোশাক পরার আগে এখন থেকে তার নিয়ম-কানুন জেনে পরিধান করাই বুদ্ধিমান ও বুদ্ধিমতীর কাজ হবে। তাই, স্যুট পরুন স্যুট রুলস মেনে। আর নিজেকে আরও স্মার্ট ও কনফিডেন্ট হিসেবে প্রকাশ করুন!
ছবি- সাটারস্টক