একবার চিন্তা করে দেখুন সকাল থেকে রাত, আমরা প্রতিদিন কত কেমিকেল মুখে, হাতে বা পায়ে দেই। কিন্তু একটু চেষ্টা করলেই আমরা আশেপাশের প্রাকৃতিক জিনিস থেকে রূপসজ্জার অনুষঙ্গ নিতে পারি। পৃথিবীতে ৩ স্টেপ-এ স্কিন কেয়ার খুব প্রচলিত। প্রথমে মুখ ধুবেন, টোনিং করবেন, তারপর স্কিন-এর ধরন অনুযায়ী ক্রিম লাগাবেন। মুখে ফেইস ওয়াশ না ব্যবহার করে আমরা চালের গুঁড়ো, বেসন দিয়ে মুখ ধুতে পারি। আজকাল ক্রিম-এর সাথে মুখ টোনিং করা খুব গুরুত্বর সাথে দেখা হচ্ছে। বাজারে এখন অনেক ভালো টোনার পাওয়া যায়। তবে ত্বকের ধরন অনুযায়ী টোনার কিনা উচিত। আবার আমরা কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে হোমমেইড ফেসিয়াল টোনার বানাতে পারি। চলুন তাই দেখা যাক এবার!
হোমমেইড ফেসিয়াল টোনার বানানোর নিয়ম
টোনার বানানোর আগে চলুন জেনে নেই, টোনার আসলে কী!
টোনার মুখের একাধিক কাজ করে। মুখের লোমগন্থি ছোট করতে সাহায্য করে, স্কিন টাইট করে, তেল মুখ থেকে নিঃসৃত হয় না, আর্দ্রতা ধরে রাখে, লাবণ্য ফিরিয়ে আনে, ময়লা পরিষ্কার হয়।
১. গ্রিন টি টোনার
হোমমেইড ফেসিয়াল টোনার বানানোর ক্ষেত্রে এই টোনার খুব সোজা বানানো। পানি গরম করে গ্রিন টি ঢেলে দিন। ২ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। চা-এর পাতা উঠিয়ে ঠাণ্ডা করে তুলোর বল দিয়ে মুখে লাগান। এই টোনার মূলত স্কিন-এর ইরিটেশন এবং সানবার্ন দূর করে।
২. কমলা লেবু টোনার
১ চামচ বাদাম তেল আর ৩ চামচ কমলা লেবু রস ভালোভাবে মিশিয়ে পরিষ্কার বোতলে রেখে দিন ফ্রিজ-এ। একবার বানালে এক সপ্তাহ পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবেন। এই হোমমেইড ফেসিয়াল টোনার বলিরেখা দূর করবে, স্কিন-কে সানবার্ন থেকে রক্ষা করবে, ত্বক উজ্জ্বল হবে, ত্বকের স্পট কমাবে।
৩. পুদিনা এবং ভিনেগার টোনার
হোমমেইড ফেসিয়াল টোনার হিসেবে এই টোনার আমার বেশ পছন্দের। এর জন্য ১ টেবিল চামচ শুকনো পুদিনা পাতা, ২ টেবিল চামচ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার, ১ কাপ বিশুদ্ধ পানি মিশিয়ে ৩ দিনের জন্য রেখে দিন। ৩ দিন হলে পরিষ্কার বোতলে টোনার ভরে ফ্রিজ-এ রেখে ব্যবহার করুন।
৪. নারিকেল পানির টোনার
খুব সহজেই এই হোমমেইড ফেসিয়াল টোনার বানানো যায়। ১ কাপ নারিকেল পানিতে ২ চামচ লেবুর রস দিয়ে ফ্রিজ-এ রেখে ব্যবহার করুন। মুখের দাগ চলে যাবে, আর্দ্রতা বজায় রাখবে মুখের। জলবসন্তের দাগ যাবে নারিকেল পানির টোনার প্রতিদিন ব্যবহার করলে। সব ধরনের স্কিন-এর জন্য এই টোনার ভালো।
৫. গোলাপ জলের টোনার
১০টি গোলাপ ফুল কিনে এনে ভালো করে ধুয়ে, ২ লিটার পানি দিয়ে সেদ্ধ করতে হবে। পানি যখন অর্ধেক হয়ে যাবে তখন নামিয়ে ঠাণ্ডা করে ছাঁকনি দিয়ে ভালো করে ছেঁকে ফ্রিজ-এ রেখে দিবেন। সাধারণত ১ সপ্তাহ, চাইলে ডিপ ফ্রিজ-এও রেখে দিতে পারেন। এই টোনার ফেইস প্যাক-এ দিয়েও ব্যবহার করা যাবে।
৬. গাজর এবং শসার টোনার
এই হোমমেইড ফেসিয়াল টোনার বানাতে প্রথমে গাজর এবং শসা ভালো করে গ্রেট করে রস বার করে নিতে হবে। তারপর বোতলে ভরে ফ্রিজ-এ রেখে দিন। এই টোনার-টি অয়েলি স্কিন এবং ব্রণ যুক্ত ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। চাইলে কোন ফেইস প্যাক-এর সাথেও ব্যবহার করতে পারেন।
৭. টমেটো টোনার
টমেটো রস ১০ চামচ, প্রাকৃতিক মধু ১ চামচ ভালোভাবে মিশিয়ে ফ্রিজ-এ রেখে দিন। প্রতি রাতে ব্যবহার করুন।
৮. অ্যালোভেরা টোনার
অ্যালোভেরা জেল ৪ চামচ, মধু ১ চামচ, পানি ৫ চামচ, বাদাম তেল ১ চামচ পরিষ্কার বোতলে মিশিয়ে রেখে দিন। এটি মুখে এবং চুলে ব্যবহার করতে পারবেন।
বিঃদ্রঃ যেহেতু এসব টোনার সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে তৈরি এবং কোন প্রিজারভেটিভ দেয়া নেই তাই এগুলো ফ্রিজ-এ রেখে ব্যবহার করতে হবে। আর কোনভাবেই ১ সপ্তাহের বেশি ব্যবহার করা যাবে না। টোনার সব সময় ক্রিম লাগানোর আগে ব্যবহার করতে হয়। সময় স্বল্পতার কারণে সব সময় সম্ভব না হলে , রাতে সবার আগে টোনার ব্যবহার করবেন।
কিভাবে টোনার ব্যবহার করবেন ??
মুখে মেকআপ থাকলে, ভালো করে ক্লিনজার দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে, উষ্ণ পানিতে মুখ ধুয়ে নিবেন। তারপর তুলো দিয়ে মুখে টোনার লাগাবেন।এছাড়া বাজারে স্প্রে বোতল কিনতে পাওয়া যায়। স্প্রে বোতলে টোনার ভরে নিবেন। তারপর চোখকে সাবধানে রেখে মুখে আপনার হোমমেইড ফেসিয়াল টোনার ৪/৫ বার স্প্রে করবেন।
সবশেষে ছোট টিপস বলি, অয়েলি স্কিন-এর জন্য অ্যাসট্রিঞ্জেন্ট (Astringent) টোনার খুব ভালো। যাদের মেকআপ ঘামে, তারা মেকআপ করার আগে এই টোনার দিয়ে মেকআপ করতে পারেন।
আশা করি পোস্টটি ভালো লাগবে। ধন্যবাদ সবাইকে।
ছবি- সাটারস্টক