কাজল নারীর সাজসজ্জার জন্য যেন এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। শুধু মাত্র একটু কাজলের ছোঁয়ায় বাঙালি নারীরা হয়ে ওঠেন আরও মায়াবী। কাজল এমনই এক প্রসাধনী যা আধুনিক বাঙালি ললনাদের মন জয় করে আজ বিদেশীদেরও মনের দুয়ারে স্থান করে নিয়েছে। বিদেশিরা এখন ট্যাটুর মাধ্যমে স্থায়ীভাবে কাজল লাগিয়ে নিচ্ছেন তাদের আঁখি যুগলে। বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির কাজলের ছড়াছড়ি। বিশ্ব সেরা ব্র্যান্ড থেকে শুরু করে নাম না জানা হাজার হাজার কোম্পানির কাজলে বাজার সয়লাব হয়ে আছে। কিন্তু আমরা জানি না এই কাজলে কি মেশানো হচ্ছে বা কতটা নিরাপদ আমাদের জন্য। যেহেতু কাজল সরাসরি আমাদের চোখের সংস্পর্শে যাচ্ছে তাই এ ব্যাপারে আমাদের সচেতন হতে হবে সর্বপ্রথম। কমার্শিয়াল কাজলে চারকোল আর সিলভার নাইট্রেট মেশানো হয়, যা ২% এর বেশি মেশানো হলে চোখে যন্ত্রণা হয় বা চোখ লাল হয়ে যায়। এমনকি যে পাত্রে কাজল থাকে সেটাও হাইজেনিক হয়না। সেদিন নিজের ছোটবেলার ছবিগুলো দেখছিলাম। প্রায় সবগুলো ছবিতে দেখলাম আমার চোখে কাজল। মা কে বললাম এত ছোট একটা বাচ্চার চোখে কেমিক্যাল ব্যবহার করলে? মা যা বললেন তাতে খুব অবাক হলাম! কাজল নাকি ঘরে নিজের হাতে বানাতেন এবং কয়েক ধরণের তেল ব্যবহার করে কাজল বানাতেন। তাহলে আজ কেন কেমিক্যালের আশ্রয় নেবো? আজও নিজের হাতেই বানাবো কাজল। তাই তখনই ঠিক করলাম আমার পাঠকদেরও জানাবো ঘরে কীভাবে কাজল বানাবেন সেই পদ্ধতি।
উপকরণ
– ৫০ মি.লি. গরুর দুধের খাঁটি ঘি / বাদামের তেল /তিলের তেল
– একটি বার্নার
– একটি ম্যাচ বক্স
– একটি কপারের প্লেট
– একটি চামচ
প্রণালী
আধা চা চামচ ঘি রেখে বাকিটুকু বার্নারে দিন আগুন জ্বলার জন্য। এবার কপারের প্লেটটি বার্নারের উপর এমনভাবে সেট করুন যেন আগুন ঐ প্লেটকে স্পর্শ করে। কোন রকম বাতাসের সংস্পর্শ ছাড়াই সারারাত এভাবে রাখুন। আনুমানিক ১০ ঘণ্টা লাগবে এই প্রসেস সম্পন্ন হতে।
১০ ঘণ্টা পর দেখবেন কপারের প্লেটের ওপর কালো পাউডারের স্তুপ জমা হয়েছে। এই কালো বস্তুই আপনার আকাংক্ষিত কাজল। পূর্বের রেখে দেয়া ঘি ফোঁটা ফোঁটা করে ওই কাজলের উপর ফেলুন। এবার একটি চামচের সাহায্যে প্লেটের ওপর থেকে ঘষে ঘষে কাজলের গুঁড়ো তুলতে থাকুন।
মাখনের মত ঘনত্ব থাকতে হবে ঘরোয়া উপায়ে বানানো এই কাজলের। বেশি পাতলা হলে চোখে দিলে তা ছড়িয়ে যাবে। এখন একটি পরিস্কার পাত্রে আপনার বানানো কাজল সংরক্ষণ করুন।
প্রথমবার ব্যবহার করার আগে ২-৪ ঘণ্টা ফ্রিজে রাখুন। এরপর রুম টেম্পারেচারে রাখুন আর ব্যবহার করুন আপনার যখন ইচ্ছা তখন।
কীভাবে লাগাবেন কাজল?
প্রথমে হাত এবং মুখ ভালোভাবে ধুয়ে নিন। এরপর আঙ্গুলের ডগায় অথবা ম্যাচের কাঠিতে অথবা চিকন কোন ব্রাশে কাজল লাগিয়ে নিন। তারপর আলতো হাতে চোখে কাজলের প্রলেপ দিন। ঘরে বানানো কাজল খুব ঘন হয় তাই কাজল লাগানোর আরেকটি পদ্ধতি হল রাতে ঘুমানোর আগে খুব ঘন করে চোখে কাজল লাগান সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ ধোয়ার পর চোখে কাজলের যে আবরণ থাকবে সেইটায় আপনাকে অনেক ন্যাচারাল লুক দিবে।
ঘরোয়া কাজলের কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা –
০১. অনেকদিন পর্যন্ত ভালো থাকে।
০২. হাইজেনিক, মেডিসিনাল কাজেও ব্যবহার করা যায়।
০৩. যেহেতু ঘন কালো রঙ তাই অনেকক্ষণ লাগিয়ে রাখার পরেও রঙের কোন পরিবর্তন আসে না।
০৪. কাজল ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, এটা একটা সমস্যা।
০৫. যেহেতু খুব গাঢ় রঙ সেহেতু সহজে চোখ থেকে যেতে চায় না।
মেডিসিনাল ব্যবহার:
যদি কোন ময়লা অথবা ধুলোবালি পড়ার কারণে আপনার চোখ জ্বালা পোড়া করে তাহলে আলতো করে কাজল ছুঁয়ে দিন আপনার চোখে দেখবেন নিমিষেই যন্ত্রণা কমে যাবে। তাছাড়া এটা বলা হয়ে থাকে যে কাজল চোখের দৃষ্টি বৃদ্ধির জন্য উপকারী। যখন আপনি চোখে কাজল দেন তখন আইবলের নীচে ম্যাসাজ করা হয় ফলশ্রুতিতে রক্ত চলাচল বেড়ে যায় এবং দৃষ্টিশক্তিও বাড়ে।
সতর্কতা:
যখন চোখে এই ঘরোয়া কাজল লাগানো হবে তখন চোখ একটু জ্বলতে পারে আর চোখে পানিও আসতে পারে। কিন্তু ভয়ের কোন কারণ নেই। চোখ জ্বলাটা খারাপ কিছু না বরং এতে আপনার চোখে থাকা ময়লা বা ধূলো পানির সাথে বের হয়ে আসবে।
দেখলেন তো কাজল বানানো কতোটা সহজ তাই আর দেরি না করে নিজের হাতে কাজল বানিয়ে মাতোয়ারা চোখের চমকে তাক লাগিয়ে দিন সবাইকে।
লিখেছেন – রোজেন
মডেল – জেবুন নাহার যূথি
ছবি – লাইফমার্টিনি ডট কম, পেটালডিউ ডট ব্লগস্পট ডট কম