দক্ষিণা বায়ের আগমন টের পেয়েছেন নিশ্চয়ই? হালকা রোদের সাথে হিমহিম বাতাসের দোলায় মন-প্রাণ জুড়িয়ে যায়। চারিদিকে খুশির আমেজ। শীতের বুড়িকে ঘুম পাড়িয়ে বরণ করতে হবে ঋতুরাজ বসন্তকে। প্রকৃতি প্রস্তুতি নিচ্ছে ঋতুরাজ বসন্তকে নানান আয়োজনে বরণ করতে। বসন্ত উদযাপন আমাদের বাঙালী সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ যেন। বসন্ত মেলাকে সামনে রেখে আপনার তোরজোরও তাই কম নয়! স্নিগ্ধ সাজে নিজেকে সাজাবেন বসন্ত রানীর মতন! আপনার সাথে অনেক উচ্ছ্বাস ভরা মন নিয়ে আপনার হাত ধরে যেতে চায় বাড়ির ছোট্ট সদস্যটিও! আপনার বসন্তবরণ প্রস্তুতিতো শেষ কিন্তু বাড়ির সোনামণিদের বসন্ত সাজ দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে তো? সোনামণিদের বসন্ত সাজ হোক আপনার মতই গোছানো!
[picture]
সোনামনিদের বসন্ত সাজ ও ধরন
১) বসন্ত সাজে ছোট্ট কন্যা যেন বসন্তের ফুলের কলি!
আপনি খুব গোছানো পরিপাটি সাজে আর তাড়াহুড়ো করে আপনার কন্যাকে হলুদ কোনো ড্রেস পরিয়ে বেড়িয়ে গেলেই কি হলো? পহেলা বসন্তের মেলার ভিড়ে সবার আকর্ষণ হয়ে ওঠে আপনার ফুটফুটে মেয়েটি। কিন্তু ঠিকঠাক গোছানো না থাকলে আশেপাশের সবাই বলেই ফেলে- “কী সুন্দর বাচ্চাটা! একটু শাড়ি পরালে কী ভালই না লাগতো! বা একটু আজ সাজিয়ে দিতেন!” এমন কথা শুনে তখন আপনার মনেও আফসোস হয়। মনের আনন্দ বিলীন হয়ে ভাবতে থাকেন- “ইশ! কেন যে মেয়েটার জন্য ছোট্ট একটা শাড়ি কিনলাম না!” এবারের পহেলা ফাল্গুনে তাই মনোযোগ দিন একটু সোনামণিদের বসন্ত সাজেও!
অন্যান্য সময় মার্কেট-এ বাচ্চাদের শাড়ি না পাওয়া গেলেও আসন্ন উৎসবের সময় বাচ্চাদের শাড়ি একটু খুঁজলেই পাওয়া যায়। ছোট্ট বাচ্চাদের পহেলা ফাল্গুনে একপ্যাঁচে শাড়ি পরালেই সবার নজর বাচ্চাটির দিকেই চলে যায়। একটুখানি সাজুগুজুতো সোনামণির আজ চাই-ই চাই। ছোট্ট ছোট্ট হাতে-পায়ের আঙুলগুলো সাজিয়ে দিন লাল রঙের নেইল পেইন্ট দিয়ে। মুখে আপনার ফেইস পাউডার দিয়ে সাজাতে যাবেন না মোটেও। বাচ্চাদের ত্বক এমনিতেই অনেক সেনসিটিভ হয়। বাহিরে বের হবার আগে সোনামণির মুখে তাই বেবি সানস্ক্রীন লোশন দিতে ভুলবেন না যেন! সাথে একটু বেবি পাউডার আর মায়া-ভরা চোখে কাজল ছোঁয়া! হাতে চাই রিনিঝিনি কাঁচের চুড়ি! কাঁচের চুড়ি পরাতে না চাইলে স্টিল-এর চুড়ি পরালে ঝুঁকিমুক্ত থাকবেন। আবার দু’হাতে দু’টি বালাও পরাতে পারেন।
ছোট্ট পা-দুখানায় ছন্দ আনতে পরিয়ে দিন নুপুর। লাল জুতোই কিন্তু বাচ্চাদের ফাল্গুনের জন্য ভালো। আর মাথায় ফুলের মুকুট পরিয়ে দিবেন অবশ্যই! ঠোঁটে লিপস্টিক না লাগানোই ভালো তবে আপনি যদি খুব চান তবে একেবারে হালকা করে লাল লিপস্টিক ছোঁয়াতে পারেন। দেখুন, কী দারুণ লাগছে আপনার কন্যাকে! শাড়িতে যদি আপনার বাচ্চা অনেক বেশি অস্বস্তিবোধ করে তাহলে থ্রি-পিস পরিয়ে নিতে পারেন। তাতেও সোনামণিদের বসন্ত সাজ বেশ হবে!
২) ছোট্ট ছেলের বসন্ত সাজ
অনেকেই বলেন-“ছেলে মানুষের আবার কিসের সাজ?” বাহ্ রে! ছেলে বলে কি সাজতে নেই? সাজ মানেই কি মেকআপ দেয়া? না! সাজ মানে হলো নিজেকে গুছিয়ে চলা। তো বাড়ির আঙ্গিনা মাতিয়ে রাখা চঞ্চল রাজপুত্রের সাজ নিয়ে কেন এত অবহেলা? বসন্তরাজের সাথে পাল্লা দিয়েই সোনামণিদের বসন্ত সাজ। বাসন্তী রঙা পাঞ্জাবি বা ফতুয়াকে সাদা রঙের ধুতি কিংবা পায়জামা দিয়ে পরিয়ে সাজিয়ে ফেলুন আপনার রাজপুত্রকে।
চাইলে গলায় ওড়নাও ঝুলিয়ে দিতে পারেন। বাদামি, চকোলেট বা তা না হলে কালো জুতা বেছে নিতে পারেন আপনার সন্তানের জন্য। বাহিরে বের হবার আগে ছেলে বাচ্চাদেরও বেবি সানস্ক্রীন লোশন ব্যবহার করান। তারপর বেবি পাউডার দিয়ে চুল আঁচড়ে নিলেও কেমন যেন জমছে না! তাহলে রাজপুত্রের গলায় গাঁদা ফুলের মালা পরিয়ে দিয়েই দেখুন একবার! বাহ্! প্রকৃতির কোলে আপনার পুত্রই যেন স্বয়ং বসন্তরাজ!
চোখ বন্ধ করে বসন্ত উৎসবের হাসি-খুশি বাচ্চাদের মুখ কল্পনা করতেই মাথায় বসন্তের গান ঘুরছে- “আজি কোমল কুসুমদল খু্লিলো, আজি কোমল কুসুমদল খুলিলো… দুলিলো রে দুলিলো…..” সে কী! আপনারাও বসন্তের কল্পনায় হারিয়ে গেলেন নাকি! হাতে যে সময় নেই একদমই! শেষবেলায় সোনামণিদের বসন্ত সাজ যেন আর অসম্পূর্ণ না থাকে! পহেলা ফাল্গুনে সকালের কাঁচা সোনা ঝরা রোদের হাসি ছাপিয়ে দেখতে চাই আপনার কোমলমতি শিশুর মুখে আলো ঝলমলে নির্মল হাসি! বসন্তের সাজে বসন্ত ঋতুকে বরণে মেতে উঠুক আপনার সন্তান। আর হ্যাঁ, সাথে পানি রাখবেন অবশ্যই। তার সাথে ছোট ফার্স্ট এইড কিট, ডায়াপার আর বাচ্চার জন্য এক সেট বাড়তি জামা রাখতে ভুলবেন না যেন!
সবাইকে শুভ পহেলা ফাল্গুনের শুভেচ্ছা! গানটা দেখি মাথায় গেঁথে গিয়েছে!
“আজি কোমল মুকুলদল খুলিলো, আজি কোমল মুকুলদল খুলিলো…..
দুলিলো রে দুলিলো………………..!”
ছবি- সংগৃহীত: সাজগোজ