যত্নে বেড়ে উঠুক সোনামণি - Shajgoj

যত্নে বেড়ে উঠুক সোনামণি

1517411_10201219916684910_872959095_n

গর্ভধারণ থেকে শুরু করে ১৮ বছর বয়সের নিচের সবাইকে শিশু কিশোর বলা হয়। এর ভেতর ১ বছরের নিচে যাদের বয়স তারা ইনফ্যান্ট, ১ থেকে ৩ বছর পর্যন্ত টোডলার বেবি (toddler), ৩ থেকে ৫ বছর প্রি স্কুল চাইল্ড এভাবে ভাগ করা হয়। চলুন আজ জেনে নিই ১ থেকে ৩ বছর বয়সের শিশুদের বেড়ে ওঠা নিয়ে। তাদের কথা বলা শেখা, আদব কেতা শেখা, তাদের খাদ্যাভাস গড়ে তোলা এবং মা বাবার করনীয় সম্পর্কে।

শিশুর কথা বলা শেখাঃ

Sale • Baby Care, Bath Time, Creams, Lotions & Oils

    ৭ থেকে ১২ মাস বয়সেই শিশু ধ্বণি উচ্চারণ করতে শেখে। এই ধ্বণি অর্থবোধক হয় না। একে বলা হয় আধো আধো বোল। যেমন – মম্, আম্, তা এই রকমের হয়ে থাকে। যদি আপনার বাবুটি বলতে না পারে, ভয়ের কোন কারণ নেই। এজন্য কতোগুলো পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারেন। যেমন-

    ০১. শিশুর সাথে কথা বলাঃ

    আপনার শিশুর সাথে কথা বলুন। কথা যদি না শোনে তবে সে বলবে কিভাবে? যখন-ই সুযোগ পান কথা বলুন। একই কথা বারবার বলুন।

    ০২. শিশুকে পড়ে শোনানঃ

    ছোট ছোট ছড়া বা গল্প পড়ে শোনান শিশুকে। ছড়ার ছন্দ যখন তার কানে বাজবে, সে কথা বলতেও উৎসাহী হবে।

    ০৩. ছবির খেলাঃ

    ছবি সংবলিত বই বা স্টিকার বা কার্ড রাখুন। পশু, পাখি, ফুল ইত্যাদির ছবি দেখিয়ে তাকে বলতে বলুন এগুলো কি। প্রথমে আপনি বলুন, তারপর তাকে জিজ্ঞাসা করুন।

    ০৪. পরিবেশ সৃষ্টিঃ

    শিশুর চারপাশে কথা শেখার পরিবেশ তৈরি করে দিন। তার ঘরে অনেক ছবি রাখুন। পরিবারের সবাইকে তার সাথে কথা বলতে বলুন। যখন-ই সময় পান, পড়ে শোনান। আজকাল বাচ্চারা টিভির বিজ্ঞাপন দেখেও কথা বলতে শেখে।

    ০৫. শিশুকে সুস্থ রাখুনঃ

    স্বাস্থ্যকর এবং সুষম খাবার দিন আপনার শিশুকে। অন্যান্য পরিচ্ছন্নতা-ও মেনে চলুন। যদি আপনার শিশু সুস্থ এবং সবল থাকে, তবে সে স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলা শিখবে।

    ০৬. পেডিয়াট্রিকস এর পরামর্শঃ

    যদি ১৮ মাস হওয়ার পরেও আপনার শিশুটি কথা বলতে না পারে তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তার কানে, জিহবায় বা অন্য কোথাও সমস্যা রয়েছে কিনা।

    শিশুর আদব কায়দা শেখাঃ

    অনেক ছোট বেলা থেকেই শিশুকে আদব কায়দা শেখাতে হয়। ছোটবেলা থেকেই এই অভ্যাসগুলো গড়ে না তুললে পরবর্তীতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। অন্য লোকজনের কাছেও ব্যাপারটা বিব্রতকর হয়ে ওঠে। আর ঘর থেকেই তা শেখা উচিত। ৩ বছর বয়স থেকেই শেখানো শুরু করুন। এক্ষেত্রে-

    ০১. আপনার বাবুকে বলুন, সে যেন অন্যের কথা বলার মাঝে কথা না বলে এবং অপেক্ষা করে তার কথা বলার পালা আসা পর্যন্ত এবং যখন সে কথা বলবে তখন তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন।

    ০২. শিশুকে টেবিল ম্যানার শিখিয়ে দিন। যখন সে খাবে, ডান হাত দিয়ে খাবে, খাবার টেবিলে অন্য হাত উপরে রাখবে না, মুখ খুলে খাবার খাবে না ইত্যাদি।

    ০৩. তাকে বলুন যখন সে অন্যের সাথে কথা বলবে, প্রথমে দেখা হলে সালাম দিবে, কিছু চাওয়ার সময় প্লিজ বলবে, নেওয়ার সময় ধন্যবাদ বা থ্যাঙ্ক ইউ বলবে।

    ০৪. তাকে শেখাতে হবে টেবিলে বা অন্য কোথাও সাজিয়ে রাখা জিনিসপত্র ধরবে না, হোক সেটা নিজের বাসায় অথবা অন্যের বাসায় বেড়াতে গিয়ে।

    ০৫. অন্যের সাথে ভদ্রভাবে কথা বলা শেখাতে হবে। নম্র এবং ভদ্র স্বরে প্রথমে আপনি দেখিয়ে দিন, তারপর তাকে কথা বলতে দিন।

    ০৬. কোন কাজ করতে চাওয়ার আগে তার অনুমতি নিতে শেখান। কারো মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাইলে এক্সকিউজ মি বলতে শেখান।

    ০৭. ফোনে কথা বলতে প্রথমে নিজের পরিচয় দিতে হবে এবং ভদ্রভাবে অপেক্ষা করে কথা শুনতে হবে।

    ০৮. হাঁচি বা কাশি দেয়ার সময় রুমাল ব্যবহার করতে শেখাতে হবে।

    ০৯. শিশুকে শেখানোর সময় আপনাকে ধৈর্য্য ধরে শেখাতে হবে। যতবার আপনি বিচলিত হবেন, ততবার সে আপনাকে না মানার চেষ্টা করবে।

    ১০. শিশুকে ভালোবাসার মাধ্যমে শেখাতে হবে। রেগে বললে সে আপনার কথা শুনতে চাইবে না।

    ১১. প্রতিটি কাজের জন্য তাকে প্রশংসা করুন। এতে সে উৎসাহী হবে নিজের আচরণ সুন্দর করতে।

    শিশুর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুনঃ

    বাচ্চাদের বেড়ে ওঠার জন্য খাদ্যের দিকে বিশেষ নজর দিতে হয়। ১ থেকে ৩ বছর বয়স তো বেড়ে ওঠার জন্য আদর্শ সময়। এ সময় তাকে দিতে হবে সুষম খাবার। শিশুটি হয়তো সব খাবার খেতে চাইবে না। তাই পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস ছোটবেলা থেকেই গড়ে তুলতে হবে। যেমন-

    ০১. ডিমঃ

    প্রোটিন, আয়রন, ভিটামিন এবং মিনারেল এর উৎস। এটি ওদের বেড়ে ওঠার জন্য খুব-ই দরকার।

    ০২. দুধঃ

    ২ বছর পর্যন্ত সাধারণত মায়ের বুকের দুধ-ই খায়। এরপর তাকে গরুর দুধ দিতে পারেন। দুধ একটি সুষম খাদ্য। এটি ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি এর উৎস।

    ০৩. শাকসবজিঃ

    আপনার শিশুকে ছোটবেলা থেকেই লাল এবং সবুজ শাক, বিভিন্ন রকম সবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এগুলো তার বেড়ে ওঠার জন্য খুব-ই প্রয়োজনীয়।

    ০৪. মাছ এবং মাংসঃ

    মাছ বা মাংস হল প্রানিজ আমিষের উৎস। শিশুর পেশী গঠন, লম্বা হওয়া, বেড়ে উঠতে এগুলো প্রয়োজন।

    ০৫. ফলমূলঃ

    যখন যে ঋতু, সেই অনুযায়ী মৌসুমি ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। বেড়ে উঠতে এবং বুদ্ধির বিকাশে এগুলো সহায়ক।

    ০৬. অন্যান্য খাবারঃ

    দই, বাদাম, কর্ণ এই খাবারগুলো ও শিশুর বুদ্ধির বিকাশ এবং বেড়ে উঠার জন্য জরুরী। এছাড়া ঘরে যাই রান্না করা হোক না কেন শিশুকে তা পরিমিত পরিমাণে দিতে হবে।

    1075172_10200248386957274_346842616_n

    মা বাবার করণীয়ঃ

    মা বাবাই একটি শিশুর সব।  শিশুর বেড়ে ওঠা বাবা এবং মায়ের তত্ত্বাবধানে ও নিবিড় সান্নিধ্যে গড়ে ওঠে। তাই বাবা মা কেই সামগ্রিক কাজ করতে হয়। তার যত্ন, খাওয়া দাওয়া, তার আদব কায়দা সব কিছু বাবা মায়ের উপর-ই বর্তায়। বাবা মায়ের- ই সব কিছুতে তাই খেয়াল রাখতে হবে। আপনার শিশুটি ঠিকমতো কথা বলছে কিনা, সব পুষ্টি পাচ্ছে কিনা, আদব কায়দা শিখছে কিনা, সে ঠিক মত বেড়ে উঠছে কিনা এগুলো সব-ই খেয়াল করতে হবে। প্রয়োজনবোধে পরামর্শ-ও নিতে হবে। তবেই আপনার শিশু সুস্থভাবে বেড়ে উঠবে।

    লিখেছেনঃ সানিয়া

    মডেলঃ জান্নাত ও ফয়সাল

    2 I like it
    0 I don't like it
    পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

    escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort