রূপ চর্চায় লাক্স বিউটি সোপ ব্যবহার করেন নি – এমন মানুষ বাংলাদেশে মেলা দুরূহ! দীর্ঘদিন ধরে এদেশের হাজারো পরিবার সৌন্দর্য বর্ধণে লাক্স সাবানের উপর ভরসা রেখে আসছে। আপনার পরিবার-ও নিশ্চয়ই তার বিপরীত নয়? কিন্তু আপনি জানেন কি, আপনার প্রিয় এই সাবানের ব্র্যান্ডটির জন্ম কোথায়? আর এর নাম ‘লাক্স’-ই বা কেন?
১৯২৪ সালে শুরু হওয়া বর্তমানে বিশ্ববিখ্যাত এই সাবানের জন্ম গ্রেট ব্রিটেনে। উইলিয়াম হেসকেথ আর তার সহদর জেমস-এর শুরু করা লাক্স সাবানের ব্র্যান্ডটি মূলত ‘লিভার ব্রাদার্স’ কোম্পানিকে দিয়েছিল সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা। ল্যাটিন ভাষায় ‘লাক্স’ শব্দটির অর্থ ‘আলো’। অনেকের ধারণা, ল্যাটিন লাক্স শব্দ থেকেই ‘লাক্স’ সাবানের নামটি নেয়া হয়েছে। তবে, প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্রদের ভাষ্য অন্যযায়ী, নামটি ইংরেজি ‘লাক্সারি’(luxury) শব্দ থেকে খানিকটা ছোট করে নেয়া হয় ‘লাক্স’ হিসেবে।
এদেশের অধিকাংশ স্বাস্থ্যসচেতন পুরুষের পছন্দ ‘লাইফবয়’ সাবান। লাক্সের মত এ সাবানের জনক-ও লিভার ব্রাদার্স। ১৮৯৪ সালে বাজারে আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বের কোটি মানুষের দেহ জীবানুমুক্ত রেখে আসার পাশাপাশি বজায় রাখছে ত্বকের আর্দ্রতা। এ সাবানের নামকরণ ও লোগো নির্বাচনে মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। গ্রেট ব্রিটেনের জাহাজ গুলোতে সে সময় লাল বয়া, ইংরেজিতে Buoy, ব্যবহার করা হত। জীবন রক্ষাকারী এই Buoy-এর সাথে তুলনা করে সাবানটির নামকরণ করা হয় Lifebuoy। সেখানকার জাহাজে প্রচলিত লাল রঙ্গের বয়ার সাথে সামঞ্জস্য রেখে সাবানটির লোগো করা হয় লাল রঙের মিশেলে।
গ্রীষ্মের কাঠফাঁটা দুপুরে এক বোতল পেপসি খেয়ে প্রাণ জুড়িয়ে নেয়ার মত সুখ যেন আর হয় না! কিন্তু আপনি জানেন কি, আপনার প্রিয় এই কোমল পাণীয়টি যখন বাজারে আসে তখন এর নাম ‘পেপসি’ ছিল না? হ্যাঁ প্রিয় পাঠক, ১৮৯৮ সালে প্রথম যখন কোমল পাণীয়টি বাজারে আসে তখন তা ‘ব্র্যাডস ড্রিংক’(Brad’s Drink) হিসেবে পরিচিত হয়। পরবর্তীতে ১৯০৩ সালে এটি ‘পেপসি কোলা’ নাম ধারণ করে। যুক্তরাষ্ট্রে উদ্ভাবিত পণ্যটির জনক ক্যলেব ব্র্যাডহ্যাম। সুপেয় এই কোমল পাণীয়টিতে ‘পেপসিন’ নামক এক প্রকার হজম সহায়ক এনজাইম ব্যবহার করা হয়। মূলত, এ উপাদানের নাম থেকেই ‘পেপসি’ নামকরণ করা হয়েছে। তবে কিছুদিন আগেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে কিছু অসাধু ব্যাক্তি/প্রতিষ্ঠান গুজব ছড়ায় যে পেপসি নামকরণ করা হয়েছে ‘Pay Every Penny to Save Israel (Pepsi)’- শব্দগুচ্ছের প্রথম অক্ষরগুলো নিয়ে। বলাই বাহুল্য, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। ‘সাজগোজ’-এর সম্মানিত পাঠকগণ অনুগ্রহপূর্বক এসব তথ্য পেলে তা যথাযথ উৎস থেকে যাচাই করে নেবেন যেন আপনি এ যুগের ঠুঁনকো মৌলবাদের শিকার না হন।
পেপসির লোগো এ পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়েছে বহুবার। বর্তমানে শুধু গাঢ় নীল, সাদা ও লাল রঙের মিশ্রণে থাকলেও ১৮৯৮ সাল থেকে এখন অবধি ১১ বারের মত লোগো বদলেছে ব্র্যান্ডটি! তবে এতবার লোগো পরিবর্তনেও প্রভাব পড়েনি পেপসির জনপ্রিয়তায়; বরং তা বেড়েছে চক্রবৃদ্ধি হারে। পেপসির মূল ভোক্তা তৃতীয় প্রজন্ম যারা পরিবর্তনে বিশ্বাসী। আর তাই পেপসি যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বারবার এনেছে রঙ ও ঢঙ্গে পরিবর্তন।
আজ এ পর্যন্তই। আবার আপনাদের প্রিয় কিছু পণ্যের অজানা কিছু তথ্য আপনাদের সামনে হাজির করার প্রত্যয়ে আজ বিদায় নিচ্ছি।
লিখেছেনঃ পলাশ
ছবিঃ কুলস্পটার্স.কম, গোবাজার.কম, এইচআইডাব্লিউটিসি.কম, লাক্স.কম