মানুষের মৌলিক প্রয়োজনের প্রথমেই চলে আসে খাদ্য। এই খাদ্য গ্রহণে রয়েছে হরেক রকমফের। খাদ্যের তালিকায় রকমফের থাকলেও খাদ্য গ্রহণের সময় অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা একাত্ব হয়ে খেতেই পছন্দ করি। আর খাবারের টেবিলে অন্যদের সাথে খাদ্য গ্রহণের সময় আমাদের অনেকের রয়েছে কিছু বদভ্যাস, যা অন্যদের কাছে আমাদের ব্যক্তিসত্তার মান কমিয়ে দেয়। চলুন পাঠক, নিজেদের এসব বদঅভ্যাসগুলো চিনে নিই এবং তা দূর করার চেষ্টা করি –
০১. মুখ খোলা রেখে খাবার চিবানোঃ
যারা মুখ খোলা রেখে খাবার খেয়ে থাকেন, তারা প্রকৃতপক্ষে বুঝতেই পারেন না যে তারা এমনটি করছেন। এটি খুব দৃষ্টিকটু। এরপর থেকে খাবার সময় খেয়াল করবেন আপনি এমনটি করছেন কিনা। যদি বদভ্যাসবশত করে থাকেন, তবে এটি দূর করার চেষ্টা করবেন।
০২. খাবার চিবোনোয় আওয়াজ করাঃ
শক্ত কোন খাদ্য চিবানোর সময় অনেকে শব্দ করে তা খেয়ে থাকেন, যা পাশের জনের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পানীয় গ্রহণ করার সময়-ও অনেকে উটকো শব্দ করে থাকেন।
০৩. সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে খাবার শেষ করাঃ
নতুন কারো সাথে পরিচয়ের উদ্দেশ্যে কোন রেস্টুরেন্টে খাবার খেতে গেলে কিছুটা সময় নেয়া উচিত। কারণ, এখানে খাবার মূখ্য নয়, পরস্পরকে চেনা-জানাটাই মূখ্য। তাই সেক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করে খাবার শেষ করতে যেতে নেই।
০৪. মুখ ভর্তি খাবার নিয়ে কথা বলাঃ
খাবার খেতে খেতে দু-চারটি কথা বলা যেমন ভদ্রতা, গালভর্তি খাবার নিয়ে গোঙ্গানোর মত শব্দ করে কথা চালিয়ে যাওয়া মারাত্মক অভদ্রতা! মুখে খাবার থাকা অবস্থায় কথা না বলাই ভালো। সামনের জনকে কোন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে হলে বা তার উত্তর দিতে হলে মুখের অবশিষ্ট খাবার প্রথমে শেষ করুন, তারপর কথা চালিয়ে যান।
০৫. টেবিল থেকে উঠে গিয়ে খাবার নেয়াঃ
নিজের চেয়ার বা টেবিল থেকে উঠে গিয়ে অন্য কোন টেবিল বা নিজের টেবিলের দূরে থাকা খাবার উঠিয়ে নিয়ে আসাটা অভদ্রতার সামিল। আপনার সাথে যারা খাবার খাচ্ছে, তারা আপনাকে নেহায়েত অভদ্র এক পেটুক ছাড়া কিছু ভাববে না। যদি একান্ত প্রয়োজন হয় কোন ডিশের যেটা আপনার নাগালের মধ্যে নয়, তবে সেটার নিকটে থাকা কোন ব্যক্তিকে একটি মিষ্টি হাসি দিয়ে অনুরোধ করুন ডিশটা এগিয়ে দেয়ার জন্য।
০৬. গোগ্রাসে খাদ্য গেলাঃ
বড় বড় কামড়ে খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। নিজের মুখে জোর করে খাবার ঢোকানোর চেষ্টা করবেন না। ধীরে-সুস্থ্যে ছোট ছোট কামড়ে বা লোকমায় খাবার গ্রহণ করুন।
০৭. ঠান্ডা করার জন্য খাবারে ফুঁ দেয়াঃ
গরম খাবার সামনে এলেই তা ঠান্ডা করার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে ফুঁ দেয়া আরম্ভ করেন অনেকে। বিশেষ করে চা-কফি জাতীয় গরম পানীয় পান করার সময় এটি বেশি হয়। খাবার যদি অধিক গরম থাকে, তবে ভদ্রতার পরিচয় দিয়ে খানিকটা অপেক্ষা করে তারপর সেটা খাবেন।
০৮. চামচের খাবার অসম্পূর্ণ রেখে খাওয়াঃ
চামচে যতটুকু খাবার তুলবেন, ঠিক ততটুকুই আপনার মুখে পুরবেন। বারবার চামচে খাবার এটোঁ করে খাওয়াটা ভালো দেখায় না। আপনি নিজে সেটা না বুঝলেও আপনার বিপরীত পাশে বসে থাকা ব্যক্তির সেটা দেখতে অবশ্যই ভালো লাগবে না।
০৯. অযথা হাত-পা নাড়ানোঃ
খাবার সময় অপ্রয়োজনে হাত-পা নাড়ানো আরেকটি বদঅভ্যাস। মুদ্রাদোষের কারণে হয়তো অনেকে এটা করে থাকেন। যাদের এমন সমস্যা রয়েছে, তারা বাইরে কারো সাথে কোথাও খেতে গেলে অবশ্যই নিজেকে এ ব্যাপারে সংযত রাখবেন।
১০. খাবার টেবিলে বসে টুথপিক ব্যবহার করাঃ
খাবার শেষে দাঁতে খাবারের আঁশ লেগে থাকলে তা অবশ্যই পরিষ্কার করবেন। তবে তা খাবার টেবিলে নয়, ওয়াশরুম অথবা বাইরে কোথাও গিয়ে। টুথপিক ব্যবহারের সময় কারো সাথে কথা বলাটাও বেমানান দেখায়।
১১. খাবার টেবিলে বসে চুল আঁচড়ানোঃ
দাওয়াতে বা রেস্টুরেন্টে বসে নিজের চুল ঠিক করার জন্য আঁচড়াবেন না। টেবিলে বসার পূর্বেই সম্পূর্ণ পরিপাটি হয়ে বসবেন। আঁচড়ানোর পর খাবার সময় টেবিলে অন্যরা আপনার চুল পড়ে থাকতে দেখলে আপনিই বিব্রত হবেন।
আশা করছি এখন থেকে আপনারা আপনার বাসায়, রেস্তোরায় বা কোন অনুষ্ঠানে খাবার টেবিলের ভালো অভ্যাসগুলো মনে রাখবেন এবং আপনাদের ছোট যারা আছে তাদেরও সুঅভ্যাস গড়ে তুলবেন।
লিখেছেনঃ পলাশ
ছবিঃ টুডেজপ্যারেন্ট.কম