সেহরিশ আজ সকাল থেকেই খুব খুশি। কারণটা কি জানেন? আমাদের ছোট্ট মামনিটা এবার প্রথম বৈশাখী মেলায় যাবে! বাংলার নতুন বছর বরণ করতে, রমনার বটমূলে সাধারণত ঝামেলা মনে করে কিংবা ভীড়ের ভয়ে ছোট্ট বাচ্চাদের বাবা-মায়েরা নিয়ে যেতে চান না। কিন্তু টেলিভিশনের পর্দায় যখন অন্য কোনো বাচ্চাকে মেলার ভীড়ে তার বাবা-মায়ের হাত ধরে ঘুরতে দেখে, তখন- “মেলায় যাব… কেন মেলায় নিলে না… আমিও যাব…” এমন অনেক কথার কান্নায় ভেঙ্গে লুটোপুটি খেতে থাকে সেহরিশ। আগের বৈশাখগুলোতে রমনা আর মঙ্গল শোভা যাত্রা দেখার সুযোগ না পেলেও, এবার তার বৈশাখ বরণ হবে ঘটা করে! তারজন্য সেহরিশের প্রস্তুতির শেষ নাই। তাহলে দেখে নিন কিভাবে আপনার ছোট্ট মেয়ের বৈশাখ বরণটাকেও খুব সুন্দর করে সাজাতে পারেন সেহরিশের মত!
[picture]
ছোট্ট মেয়ের বৈশাখ স্পেশাল সাজ
১. বৈশাখী শাড়িতে
সকালবেলা আদরের কন্যাকে সাজাতে পারেন লাল-সাদা বৈশাখী সুতি শাড়িতে! আর যদি ছোট বলে সাদা রঙ এড়িয়ে চলতে চান, তবে লাল টুকটুকে রানীর মতন লাল শাড়ি পরিয়ে দিতে পারেন। ছোট্ট সোনামনিকে শাড়িতে চমৎকার লাগবে! মেয়ে যেহেতু, একটুখানি সাজগোজতো করতে হবে! কানে দুল চাই, হাতে চুড়ি চাই আর গলায় চাই মালা! মুখে ভারি মেকআপ একদম না কিন্তু! এতে বাচ্চাদের কখনো ভালো লাগে না। তবে ঠোটে বৈশাখী রঙ ধারণ করে একটু হালকা লাল লিপস্টিক-এর ছোঁয়া লাগিয়ে নিতে পারেন। পায়ে লাল আলতা রাঙ্গিয়ে দিলে যেন দেখা যায় একটা পুতুল বউ! বাহ! কী সুন্দরই না লাগবে আপনার মেয়েটিকে!
২. সালোয়ার-কামিজে
আমাদের সেহরিশতো বাহিরে বের হলে এতই খুশি থাকে যে, সে আনন্দে এদিক-সেদিক দৌড় দেয়া শুরু করে। তাই শাড়ি পরে সকাল পার করলেও দুপুরে কাহিল হয়ে পড়বে একদম। এই ব্যাপারটা মাথায় রেখে একসেট সালোয়ার-কামিজ রেডি রাখতে পারেন। বৈশাখ বলে আবারও যে লাল-সাদা কিংবা লাল সালোয়ার-কামিজই লাগবে তা কিন্তু নয়। বৈশাখ মানেই রঙের খেলা! আর রঙ মানেই আনন্দ। আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারেন নানান রঙে! যেমন, সেহরিশের পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে ওর মা লাল, কমলা আর হলুদ রঙের সালোয়ার কামিজ বানিয়ে দিয়েছে। আপনি চাইলে মার্কেট থেকে কিনেও নিতে পারেন! আর হাতে চুড়ি পরিয়ে দিলে খারাপ লাগবে না কিন্তু!
৩. ফ্রক
বৈশাখে যেহেতু অনেক বেশি গরম থাকে, তাই সালোয়ার-কামিজ পরেও বাচ্চারা অস্বস্তিবোধ করতে পারে। আর সকাল-বিকাল পর্যন্ত বাহিরে থাকার প্রোগ্রাম থাকলে, নরম-সূতি কাপড়ের বা লিনেন-এর ফ্রক পরালে অনেক বেশি আরাম পাবে। শাড়ি ও সালোয়ার-কামিজ পরে সারাদিন কাটানোর কথা চিন্তা করলে বাচ্চারা কাহিল হয়ে যাবে। একদিনের আনন্দ করতে গিয়ে তিন দিন অসুস্থ হবার কোনো কারণ নেই। এতে উল্টা বাচ্চা ও বাচ্চার পরিবারের সবারই কষ্ট হবে। তাই বাহিরে বের হবার সময় আপনার বাচ্চাকে ফ্রক না পরালেও সাথে করে একটি ফ্রক নিয়ে বের হওয়াটাই বুদ্ধিমতীর কাজ হবে। আর সাজাবেন কিভাবে? কিচ্ছু না, হাতে ব্রেসলেট পরিয়ে দিতে পারেন উৎসব উপলক্ষে। আর বেশির ভাগ বাচ্চাদের ব্যাগ নেয়ার প্রতি খুব আকর্ষণ থাকে। পহেলা বৈশাখের দিন একটু না হয় ক্রস শোল্ডার স্টাইল-এর ব্যাগ ঝুলিয়ে দিন! তাতে একটি টিস্যু ব্যাগ ও চ্যাপস্টিক দিয়ে এই সুযোগে গড়ে তুলতে পারেন আপনার মেয়ের একটি ভালো অভ্যাস!
বাঙালী প্রাণের উৎসব বৈশাখ। চৈত্রের খড় রৌদ্র তাপের আভাস পহেলা বৈশাখেও থাকে বৈশাখী ঝড়ের সাথে। বৈশাখ বরণের আনন্দে গনগনে রৌদ্রতাপে আর কাল বৈশাখীর কবলে পরে যেন আপনার সোনামনি অসুস্থ না হয়, সে জন্য বাহিরে বের হবার আগে, সাথে রাখুন ছাতা, স্যালাইনযুক্ত পানি ও ছোট্ট তোয়ালে। আর হ্যাঁ! বাহিরে বের হবার আগে মেয়েকে অবশ্যই বেবি সানস্ক্রিন ক্রিম লাগিয়ে দিবেন!আপনার ছোট্ট মেয়ের বৈশাখ দারুণ হোক। সবার জন্য রইলো অগ্রিম পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা!
এদিকে আমাদের সেহরিশ বৈশাখের গান গেয়ে সারা বাড়ি মাথায় তুলছে…
“এসো হে বৈশাখ, এসো এসো
এসো হে বৈশাখ, এসো এসো
তাপস নিঃশ্বাস বায়ে,
মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে…।।”
মডেল- সেহরিশ
ছবি- দিতি আহমেদ