আই মেকআপ স্টাইল হল মেকআপ-এর মধ্যে আমার সব থেকে পছন্দের পার্ট। কারণ, সুন্দর একটি আই মেকআপ পুরো লুকটাকেই চেঞ্জ করে দিতে পারে। আমারতো ভিন্ন ভিন্ন স্টাইলের আই মেকআপ ট্রাই করতে ভীষণ ভালো লাগে। আর মেকআপ লাভার-দের কিন্তু বিভিন্ন আই মেকআপ স্টাইল সম্পর্কে জানা থাকা ভালো। একঘেয়ে লুক বার বার করার থেকে ভিন্ন ভিন্ন স্টাইল-গুলো বিভিন্ন অকেশন-এ ট্রাই করলে, লুকে যেমন ভিন্নতা আসে তেমনি, ট্রেন্ডি-ও লাগে। আসলে, চোখের সাজ সুন্দর এবং পারফেক্ট-ভাবে করতে পারাটাই হচ্ছে মেইন চ্যালেঞ্জ। তো চলুন আর কথা না বাড়িয়ে জেনে নেই, ৭ ধরনের আই মেকআপ স্টাইল এবং কীভাবে সেগুলো করতে পারবেন তার সম্পর্কে।
বিভিন্ন ধরনের আই মেকআপ স্টাইল
১. নিউট্রাল আই মেকআপ
এই ধরনের আই মেকআপ নরমালি এভরি ডে বেসিস-এ করা হয়। যেমন- অফিস, কলেজ, ইউনিভারসিটি ইত্যাদিতে রেগ্যুলার মেকআপ-এর সাথে চটজলদি এবং সিম্পল-ভাবে করা যায়। নিউট্রাল বা ন্যাচারাল ধরনের আই মেকআপ করলে ১-২ টির বেশী আইশ্যাডো-এর প্রয়োজন হয় না।
একটি ফ্লাফি ব্লেন্ডিং ব্রাশের সাহায্যে পিচ, ব্রাউন, ডার্ক ব্রাউন, মভ ইত্যাদি কালার ক্রিজ-এ ব্লেন্ড করে নিন। চটজলদি চাইলে কালার-টি পুরো আইলিড-এও লাগিয়ে নিতে পারেন। এছাড়া যারা একটু শিমারি আইশ্যাডো যোগ করতে চান, তারা শ্যাম্পেইন, গোল্ডেন, রোজ গোল্ড, পিচ ইত্যাদি টাইপের শিমারি কালার আইলিড-এ লাগিয়ে নিতে পারেন। চাইলে ক্রিজ-এর কালার-টি লোয়ার ল্যাশ লাইন-এও স্মাজ করে নিতে পারেন এবং আইব্রো বোন, ইনার কর্নার হাইলাইট করতে পারেন।। এরপর লাইনার আর মাশকারা লাগিয়ে নিলেই আপনার লুক কমপ্লিট।
২. স্মোকি আই মেকআপ
যারা মেকআপ সম্পর্কে তেমন কিছুই জানেন না, তারাও স্মোকি আই মেকআপ-এর নাম শুনে থাকবেন। স্মোকি আই দিন এবং রাতের বেলায় করা যায়। এছাড়া পার্টিতেও বেশ মানিয়ে যায় এটি। তবে, এই আই মেকআপ-এর মূল শর্ত হচ্ছে ব্লেন্ডিং। যত বেশি আইশ্যাডো ব্লেন্ড করবেন, আপনার আই লুক তত সুন্দরভাবে ফুটে উঠবে।
আই লিড প্রিপেয়ার করে নিয়ে আই লিডের নিচের অংশে ডার্ক কালারের একটা আইশ্যাডো বেইজ লাগিয়ে নিন। হতে পারে একটা ডার্ক কোনো কাজল বা জেল লাইনার। এটি ভালোভাবে স্মাজ করে নিন। এর উপর পছন্দ মত ডার্ক কালার লাগিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। এরপর ডার্ক কালার -টির লাইন উপর দিকে যেখানে শেষ হয়েছে, সেখানে তার থেকে লাইট একটি কালার লাগিয়ে ব্লেন্ড করুন। এভাবে ২-৪টি কালার লাগিয়ে ব্লেন্ড করে ক্রিজ পর্যন্ত চলে যান। মূলত এটি ডার্ক থেকে লাইট কালারের দিকে যাবে। লোয়ার ল্যাশ লাইনেও সেইম কাজই করুন এবং ভালোভাবে ব্লেন্ড করে দিন। চাইলে আইলিড-এ শিমারি কালার-ও লাগাতে পারেন। এরপর লাইনার, মাশকারা এবং আইল্যাশ লাগিয়ে নিলেই হয়ে গেলো।
৩. গ্লিটারি আই মেকআপ
খুব বেশি গ্ল্যামারাস লুক যারা পছন্দ করেন, তাদের জন্য গ্লিটারি আই মেকআপ পারফেক্ট। যে কোনো পার্টির জন্যই এটি মানানসই। কিন্তু দিনের বেলায় গ্লিটারি আই মেকআপ না করাই ভালো।
প্রথমে নরমাল আই মেকআপ এর মতই সব কিছু করে নিতে হবে। যেমন- ট্রানজিশন কালার, ক্রিজ ডিফাইন, লিড-এ আইশ্যাডো, ব্রো বোন এবং ইনার কর্নার হাইলাইট ইত্যাদি। এরপর, একটি গ্লিটার গ্লু আইলিড-এর যে অংশে আপনি গ্লিটার লাগাতে চান সেখানে লাগিয়ে এর উপর লুজ গ্লিটার লাগিয়ে নিতে পারেন। অথবা, ঝামেলা এড়াতে গ্লিটার লাইনার নিয়ে যে অংশে গ্লিটার লাগাতে চান, সে অংশে লাগিয়ে নিতে পারেন। ক্রিজের উপর চিকন করে ক্রিজ লাইন টেনে গ্লিটার লাইনার লাগানোটা এখনকার মোস্ট পপুলার ট্রেন্ড। চাইলে, সেভাবেও করতে পারেন। দেখতে বেশ লাগবে।
৪. কাট ক্রিজ আই মেকআপ
কাট ক্রিজ আই মেকআপ-এর ট্রেন্ড বেশ খানিক সময় আগে এলেও এর রেশ এখনো প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। এখনো এটি বেশ জনপ্রিয়। এটি করার আগেই বলে রাখি। একবারে হয়ত আপনি এটি করতে পারবেন না। তবে ২-৪ বার চেষ্টা করলেই এটি সহজ হয়ে যাবে।
আই লিড প্রিপেয়ার করে, ক্রিজ-এ ট্রানজিশন কালার লাগিয়ে নিন। ব্লেন্ডিং ব্রাশের সাহায্যে একটা ডার্ক কালার নিয়ে ক্রিজ-টা ডিফাইন করে নিন। এবার, একটা পাতলা ব্রাশে কনসিলার নিয়ে ক্রিজ লাইন ফলো করে পুরো ক্রিজ-এ লাইন এঁকে নিন এবং ক্রিজ থেকে আইলিড-এও কনসিলার-টি লাগিয়ে নিন। এখানে চাইলে, কনসিলার দিয়ে পুরো ক্রিজ-এ লাইন আঁকতে পারেন, আবার হাফ ক্রিজ-এও আঁকতে পারেন। হাফ আঁকলে সেটাকে হাফ কাট ক্রিজ আই মেকআপ বলা হয়। এবার কনসিলার-টি পাউডার দিয়ে সেট করে নিন। এবার এর উপরে পছন্দসই ম্যাট/শিমারি আইশ্যাডো লাগাতে পারেন। চাইলে, গ্লিটারও লাগানো যাবে।
৫. ক্যাট আই মেকআপ
যারা চোখদুটো একটু টানা টানা পছন্দ করেন। তারা ক্যাট আই মেকআপ করতে পারেন। এটিরও মূল মন্ত্র কিন্তু ব্লেন্ডিং।
এজ ইউজুয়াল ক্রিজ ডিফাইন, লিড-এ আইশ্যাডো অ্যাপ্লাই করার পরে, আপার ল্যাশ লাইন ঘেষে মোটা এবং টানা করে কাজল বা জেল লাইনার লাগিয়ে নিন। গাইডলাইন হিসেবে আউটার কর্নার-এ এক টুকরা স্কচ টেপ লাগিয়ে নিতে পারেন। এতে একটা শার্প লাইন এবং উইং পাওয়া যাবে। একটি ছোট পেনসিল ব্রাশের সাহায্যে লাইনার-টিকে স্মাজ করতে থাকুন। এবার কাজলের সেইম কালারের আইশ্যাডো নিয়ে কাজলের সাথে ব্লেন্ড করুন। এরপর আবার একইভাবে কাজল বা জেল লাইনার লাগান। ব্লেন্ড করুন এবং আইশ্যাডো লাগিয়ে ব্লেন্ড করুন। এই প্রসেস-টি ২-৩ বার করুন। এরপর স্কচ টেপ-টি খুলে মাশকারা এবং আইল্যাশ পড়ে বাকি আই মেকআপ-টুকু সেরে নিন। ব্যস!
৬. হ্যালো আই মেকআপ
যাদের চোখ ছোট তারা এই আই মেকআপ-টি ট্রাই করুন। এছাড়া বিভিন্ন পার্টি বা দাওয়াতেও বেশ মানিয়ে যায় এই আই লুকটি।
প্রথমে আইলিড প্রিপেয়ার করে, ক্রিজের একটু উপরে ট্রানজিশন কালার লাগিয়ে নিন। এরপর ক্রিজ-টা ডিফাইন করে নিন। এরপর একটা ডার্ক কালার নিয়ে আপনার পুরো আইলিড-এই লাগাবেন শুধুমাত্র আইলিডের মাঝের অংশটুকু বাদ দিয়ে। এরপর কালার-টা ব্লেন্ড করে নিবেন। এরপর মাঝখানের খালি অংশে শিমারি, গ্লিটারি, মেটালিক আইশ্যাডো লাগিয়ে ডার্ক কালার-টির সাথে ব্লেন্ড করে নিন। মাঝের কালার-টা লাইট টাইপের হলে বেশ ভালো ফুটবে। ব্যস!! এরপর আই মেকআপ-এর বাকি কাজগুলো সেরে নিন।
৭. স্পটলাইট আই মেকআপ
৭ ধরনের আই মেকআপ এর মধ্যে স্পটলাইট আই মেকআপ বেশ জনপ্রিয়। দেখতেও দারুণ লাগে। পারফেক্ট-ভাবে করতে পারলে আপনি এর প্রশংসা পাবেনই। তবে, এটা করা একটু ট্রিকি। কিন্তু চেষ্টা করলে কি না হয় বলুন?
হ্যালো আই মেকআপ-এর মতই প্রথমটুকু করে নিন। আইলিড-এর মাঝখান বাদে পুরো আইলিড-এ ডার্ক একটা ম্যাট কালার লাগিয়ে নিন। এরপর একটা পাতলা ব্রাশ-এ কনসিলার লাগিয়ে ক্রিজের মাঝের অংশে ক্রিজ-টাকে ফলো করেই ইউ শেইপ এঁকে নিন এবং কনসিলার-টা নিচের দিকে নিয়ে এসে ব্লেন্ড করে ফেলুন। কনসিলার-টা সাবধানে পাউডার দিয়ে সেট করে নিন। এবার একটা লাইট শিমারি কালার যেমন- গোল্ডেন, শ্যাম্পেইন, রোজ গোল্ড, কোরাল ইত্যাদি কালার নিয়ে কনসিলার যেখানে লাগিয়েছেন, ঠিক সেই খানে সাবধানে লাগান। এবার, ডার্ক কালার এবং শিমারি কালার-এর দুই পাশের গ্যাপে দুই কালার-এর মাঝামাঝি ধরনের একটা কালার নিয়ে ব্লেন্ড করে দিন। এই কালার-গুলো ব্লেন্ড করার কারনে আই মেকআপ-এ একটা স্পটলাইট ইফেক্ট আসবে। চাইলে ক্রিজের লাইনের উপর গ্লিটার লাইনার লাগাতে পারেন। এরপর বাকি আই মেকআপ সেরে নিন।
এত ট্রিকি দেখে পালিয়ে যাবেন না যেন! কয়েকদিন প্রাকটিস করলেই হাত চলে আসবে।
মোটামুটি ভাবে এই তো জেনে নিলেন, ৭ ধরনের আই মেকআপ স্টাইল সম্পর্কে। আমি চেষ্টা করেছি আপনাদের আইডিয়া দিতে। আমি এখানে কী কী কালার ব্যবহার করবেন তা নিয়ে খুব একটা বলি নি। কারন, সেটা আপনাদের ইচ্ছা অনু্যায়ী এবং ড্রেসের সাথে মিলিয়ে ব্যবহার করবেন।
আশা করছি, একটু হলেও আপনাদের ধারণা দিতে পেরেছি।
ছবি- সংগৃহীত: সাজগোজ; সাটারস্টক