রোজার সময়টাতে ত্বকের যত্ন তেমন একটা করা হয়ে উঠে না। কিন্তু এই সময়টাতে ত্বকের বেশি যত্নের প্রয়োজন পড়ে। রোজার সময় অনেক দীর্ঘ সময় পানি খাওয়া হয় না বিধায় শরীরে পানির চাহিদা সবসময় পূরণ করা সম্ভব হয় না। আর এর প্রভাব পড়ে ত্বকে। পানি শূন্যতায় ত্বকের আর্দ্রতা কমে গিয়ে ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে। এইসময় ত্বক হয়ে পড়ে পানিশূন্য নির্জীব। আবার গরমকালে রোজা থাকা এবং প্রচুর পরিমাণে ভাজাপোড়া খাওয়ায় ত্বকে ব্রণ দেখা দেয়। তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও একটু সময় বের করুন ত্বকের জন্য। ত্বক থাকবে সুস্থ এবং উজ্জ্বল। কয়েকটি প্যাক রোজাতে নির্জীব ত্বক করে তুলবে প্রাণবন্ত। আসুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক রোজাতে নির্জীব ত্বক সজীব করে তুলবে এমন ৬টি প্যাক সম্পর্কে।
রোজাতে নির্জীব ত্বক সজীব করে তুলতে প্যাক
১. পেঁপে
ইফতারে টেবিলে ফল হিসাবে একটা খাবার দেখা যায়, তা হলো পেঁপে। পেঁপে যে শুধু স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী তা কিন্তু নয়, এটি আপনার ত্বকের মলিনতা দূর করতেও সাহায্য করবে।
যা যা লাগবে-
– ২ চা চামচ পেঁপের পেস্ট
– ২ চা চামচ মধু
পেঁপের পেস্ট এবং মধু একসাথে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এই পেস্টটি ত্বকে ১৫ মিনিট চক্রাকারে ম্যাসাজ করুন। ৫ মিনিট পর প্যাকটি শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। পেঁপেতে রয়েছে হাইড্রোক্সি অ্যাসিড যা প্রাকৃতিক স্ক্রাব হিসেবে কাজ করবে। এটি ত্বককে প্রাকৃতিকভাবে গ্লোয়ি করে থাকে।
২. শসা
শসাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পানি যা আপনার ত্বককে নারিশ এবং হাইড্রেটেড করে। ব্রণ-প্রবণ ত্বক এবং রোদেপোড়া ত্বকের জন্য শসা অনেক বেশি কার্যকর।
যা যা লাগবে-
– ২ চা চামচ শসার কুচি
– ১/২ কাপ টক দই
শসা এবং টক দই একসাথে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিন। এই প্যাকটি ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিট রাখুন। কিছুটা শুকিয়ে গেলে কুসুম গরম পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করুন। এটি ত্বকে একটি শীতল অনুভব দিবে।
৩. লেবুর রস
রোজাতে নির্জীব ত্বক উজ্জীবিত করে তুলতে লেবু বেশ কার্যকর। লেবুর রস ত্বকের কালো দাগ দূর করার সাথে সাথে ত্বকের মলিনতা দূর করতে সাহায্য করবে।
যা যা লাগবে-
– এক চা চামচ লেবুর রস
– ডিমের সাদা অংশ
– ১/২ চা চামচ দুধের সর
লেবুর রস, ডিমের সাদা অংশ এবং দুধের সর মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই মিশ্রণটি ত্বকে ১৫ মিনিট রাখুন। শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি সপ্তাহে এক বা দুইবার ব্যবহার করুন।
এছাড়া ১/২ চা চামচ লেবুর রসের সাথে এক ফোঁটা মধু মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি ত্বকে ম্যাসাজ করুন। ১০ মিনিট ত্বকে রেখে দিন মিশ্রণটি। তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে এক বা দুইবার ব্যবহার করুন।
৪. টকদই
টক দইয়ে রয়েছে ল্যাকটি অ্যাসিড যা প্রাকৃতিক ক্লিনজার, এক্সফলিয়েটর এবং ময়েশ্চারাইজার হিসাবে কাজ করে।
যা যা লাগবে-
– ২ টেবিল চামচ টক দই
– ১/২ চা চামচ হলুদের গুঁড়ো
– ১/২ চা চামচ বেসন
টক দই, হলুদের গুঁড়ো এবং বেসন একসাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। পেস্টটি মুখ এবং ঘাড়ে ব্যবহার করুন। শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি সপ্তাহে এক বা দুইবার ব্যবহার করতে পারেন।
এছাড়া দুই চা চামচ মধু, দুই টেবিল চামচ টক দই একসাথে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি ত্বককে ১৫ মিনিট রাখুন। তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
৫. অ্যাভোকাডো
অ্যাভোকাডো ফলটি বিদেশি হলেও আমাদের দেশের বাজারে এটি প্রায় দেখা যায়। বিদেশি এই ফলটি ত্বককে প্রাকৃতিকভাবে ময়েশ্চারাইজড করে, সানবার্ন, বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে। অ্যাভোকাডোতে রয়েছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যা ত্বকের নমনীয়তা ধরে রাখে দীর্ঘদিন।
যা যা লাগবে-
– ১ টেবিল চামচ অ্যাভোকাডোর পেস্ট
– ৩ টেবিল চামচ দুধের সর
– ১ টেবিল চামচ মধু
অ্যাভোকাডো, দুধের সর এবং মধু একসাথে ব্লেন্ড করে পেস্ট করুন। পেস্টটি ত্বকে ব্যবহার করুন। ত্বকে ৩০ মিনিট রাখুন। শুকিয়ে গেলে কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। নিজেই নিজের ত্বকের পার্থক্য বুঝতে পারবেন।
৬. টমেটো
ত্বকে পুরাতন উজ্জ্বলতা ফিরে আনতে টমেটোর জুড়ি নেই। টমেটোতে ত্বকের বলিরেখা দূর করার উপাদান লাইকোপিন রয়েছে যা রোদেপোড়া ত্বক সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।
যা যা লাগবে-
– ৩ টেবিল চামচ টমেটোর রস
– ১ টেবিল চামচ লেবুর রস
– ২ টেবিল চামচ দুধের সর
টমেটোর রস, লেবুর রস এবং দুধের সর ভালো করে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিন। প্যাকটি ত্বকে ব্যবহার করুন। ১৫ মিনিট পর প্যাকটি ত্বকে শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করতে পারবেন।
রোজায় ত্বক সুস্থ রাখতে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। ইফতারিতে ভাজাপোড়া খাওয়ার পরিবর্তে ফল খাওয়ার চেষ্টা করুন। এটি আপনাকে সুস্থ রাখার সাথে সাথে ত্বকও সুস্থ রাখবে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে হাত-পা ধুয়ে ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করুন। ভারী লোশন হলে তার সাথে পানি মিশিয়ে হালকা করে তারপর ব্যবহার করুন। এতে হাত-পায়ের স্কিন শুষ্কতা থেকে রক্ষা পাবে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে হাত-পায়ে লোশন লাগাতে ভুলবেন না। এটি ত্বককে শুষ্ক হওয়া থেকে রক্ষা পাবে।
ছবি- সংগৃহীত: সাজগোজ; সাটারস্টক