নেইল পলিশ তো আমরা সবাইই লাগাই কিন্তু নেইল পলিশ লাগানোরও যে কিছু পদ্ধতি আছে সেগুলো কয়জনই বা জানি? সুন্দর করে সাজগোজের পরে যদি দেখা যায় হাতের নেইল পলিশ টাই হয়ে আছে এবড়ো- থেবড়ো তাহলে তো পুরো সাজটাই মাটি। তাছাড়া সুন্দর করে নেইল পলিশ দেয়াটাও কিন্তু একটি গুণের মধ্যে পড়ে, আর যারা নিজের সাজগোজ নিয়ে একটু খুঁতখুঁতে তাদের তো একটি পারফেক্ট ম্যানিকিউর দরকারই। এছাড়াও সব সাজগোজের জিনিসেই কিছু না কিছু কেমিকেল থাকে সেই মতে নেইল পলিশেও কিছু কেমিকেলের উপস্থিতি রয়েছে। সঠিক ভাবে এর প্রয়োগ না করলে সেটা আপনার নখকে ক্ষতিগ্রস্থ করে তুলতে পারে। তাই আসুন জেনে নেই নেইল পলিশ দেওয়ার সঠিক পদ্ধতি এবং কিছু এক্সট্রা টিপস –
০১. পুরনো পলিশ রিমুভার দিয়ে উঠিয়ে ফেলুন। নখের শেপ ঠিক না থাকলে ফাইলার দিয়ে ঘষে ফাইল করুন। এক্ষেত্রে কাগজের ফাইলার ব্যবহার করা উত্তম।
০২. ক্লিপার দিয়ে নখের চারপাশের বাড়তি চামড়া কেটে নিন এবং কিউটিকল পুশার দিয়ে নখের কিউটিকল গুলো ঠেলে ভেতরে ঢুকিয়ে দিন। চাইলে এই স্টেপে নখের একটু যত্ন নিয়ে ফেলতে পারেন। হালকা গরম পানিতে একটু শ্যাম্পু আর লবণ দিয়ে ৫ মিনিট ভিজিয়ে ব্রাশ দিয়ে ঘষলেই নখটা বেশ পরিষ্কার হয়ে যাবে অথবা হাতটা ধুয়ে একটু লেবু ঘষে নিতে পারেন।
০৩. হাত ভালো করে শুকিয়ে গেলে যে কোন জীবাণুনাশক লাগিয়ে নিন একটু তুলোতে করে। আমি লাগাই হেক্সাসল। এতে করে নখের বাড়তি তেলও চলে যাবে।
০৪. ভালো মানের একটি বেইস কোট থাকতে হবে। আমরা অনেকেই বেইস কোটের প্রয়োজনীয়তা জানি না বা জানলেও ব্যবহার করি না। নিয়মিত নেইল পলিশ ব্যবহারের ফলে আমাদের নখে হলুদাভ একটি বর্ণ ধারন করে। বেইস কোটের একটি প্রলেপ থাকলে কিন্তু সেই সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। এছাড়া পলিশের কেমিকেলটাও সরাসরি নখে লাগে না। তাই ১ পরত বেইস কোট লাগান এবং ভালো ভাবে শুকান।
০৫. বেইস কোটের পরে পাতলা করে ২ কোট পছন্দের কালারের পলিশ লাগাবেন। ছবির মত করে প্রথমে ব্রাশে পলিশ নিয়ে নখের মাঝ বরাবর স্থাপন করে একটি স্ট্রোক টানুন এবং পর্যায়ক্রমে ডানে ও বামে দুইটা স্ট্রোক দিয়ে পলিশ দেয়া শেষ করুন। এক-ই পদ্ধতিতে ২ বার লাগান। খেয়াল রাখবেন খুব বেশি ঘন করে যেন পলিশ লাগানো না হয় তাতে করে পলিশ শুকাতে সময় লাগবে এবং স্মাজ হয়ে যেতে পারে।
০৬. নেইল পলিশ দেওয়ার পরে নখের প্রান্তটি পলিশ দিয়ে লক করে দিন (দেখে নিন ছবিতে) তাতে করে পলিশ সুরক্ষিত থাকবে অনেকদিন।
০৭. এখন চাইলে আপনি করতে পারেন সুন্দর একটি নেইল আর্ট, না করলেও সমস্যা নেই।
০৮. ২ পরতের পলিশ ভালো ভাবে শুকানোর পরে একটি ভালো মানের টপ কোট লাগান। অনেকেই মনে করেন শুধু নেইল আর্ট করলেই টপ কোট লাগাতে হয়। আসলে নেইল পলিশ দেওয়ার ফিনিসিং টাই হোল টপ কোট। এতে আপনার নেইল পলিশ হাতে টিকবে বেশিদিন আর পারফেক্ট ম্যানিকিউরের উজ্জ্বলতা পাবেন। ছবিতে টপ কোট দেয়ার আগের এবং পরের ছবি দেয়া হলো –
০৯. নখের চারপাশে পলিশ লেগে গেলে সেগুলো কটন বাড দিয়ে রিমুভারের সাহায্যে তুলে ফেলুন।
১০. এবার নখ শুকানোর পালা। মোটামুটি ৪ পরত পলিশ আপনার হাতে। এখন এটা কিন্তু এত সহজে শুকাবেনা। শুকানোর জন্য আপনি নিচের পদ্ধতি গুলো চেষ্টা করে দেখতে পারেনঃ
ক) পলিশ দেয়ার ৫ মিনিট পরে নখটা যখন হাত দিয়ে ধরার উপযোগী হবে তখন বরফ ঠাণ্ডা পানিতে কিছুক্ষণ নখ ডুবিয়ে রাখুন। দ্রুত পলিশ শক্ত হয়ে যাবে।
খ) ব্লো ড্রায়ার যেটাতে ঠাণ্ডা বাতাসের অপশন আছে সেটা ব্যবহার করতে পারেন, তবে গরম বাতাসে নয় তাতে পলিশে বাবল হতে পারে অথবা উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
১১. ব্যস হয়ে গেলো একটি পারফেক্ট ম্যানি। এবার বেড়িয়ে পড়তে পারেন মনের আনন্দে যেখানে খুশি।
তবে তার আগে আপনাদের জন্য রয়েছে আরও কিছু টিপসঃ
• নেইল পলিশ কখনই ফ্রিজে রাখবেন না তাতে পলিশে কেমিকেল গুলো আলাদা হয়ে যায়। আলো ছাড়া ঠাণ্ডা জায়গায় রাখুন, পলিশ অনেকদিন ভালো থাকবে।
• পলিশ দেওয়ার আগে ঝাঁকাবেন না । দুই হাতের তালুর মধ্যে নিয়ে রোল করে ওয়ার্ম আপ করুন। তাতে করে পলিশে বাবল হবে না এবং মসৃন হবে।
• পলিশ দেওয়ার সময় তাড়াহুড়ো করবেন না, হাতে ৩০ মিনিট সময় নিয়ে পলিশ দিতে বসুন।
• যারা নিয়মিত পলিশ লাগান তাদের জন্য ৭ দিনের বেশি এক পলিশ নখে না থাকাই ভালো। সপ্তাহে এক বার চেঞ্জ করুন। মাঝে মাঝে নেইল আর্ট করলে সেটা চাইলে ২ সপ্তাহ রাখা যায়।
• পলিশের গন্ধটা কিন্তু শরীরের জন্য ভালো না তাই দেয়ার সময় দরজা-জানালা খুলে বা খোলা কোন জায়গায় দেয়া ভালো।
• যাদের পলিশ দিতে গেলে হাত কাঁপে এবং ম্যাসি হয়ে যায় তারা পলিশ দেওয়ার আগে একটু ভ্যাসলিন লাগিয়ে পলিশ দেয়া শুরু করুন তবে নখে যেন না লাগে লক্ষ্য রাখতে হবে। এতে করে পলিশ লেগে গেলেও ভ্যাসলিনের কারণে চামড়ায় লাগবে না।
আশা করি পলিশ দেয়ার পদ্ধতি ও টিপস গুলো আপনাদের ভালো লেগেছে।
লিখেছেনঃ ফোয়ারা ফেরদৌস
ছবিঃ ম্যাগাজিন.লিকুইডাইট, এলসিবিনেইলঅ্যাকয়ার.ওয়ার্ডপ্রেস.কম, ক্লাসিপিওয়াইটি.ব্লগস্পট.কম