কর্মব্যস্ত জীবনে ব্যায়াম বা মেডিটেশন হচ্ছে শান্তির উৎস। একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন কমপক্ষে আধা ঘণ্টা সম্ভব হলে এক ঘণ্টা ব্যায়াম কিংবা মেডিটেশ জন্য রাখা উচিত। এতে শরীর যেমন থাকবে সুস্থ, কর্মক্ষম তেমনি মনও থাকবে প্রশান্ত। আজকে আমি মেডিটেশন-এর একটি বিশেষ ধরন নিয়ে আলোচনা করবো যার নাম প্রাণায়াম। চলুন তবে জেনে নেই প্রাণায়াম আসনের উপকারিতা সম্পর্কে ও কিভাবে সহজে এই ব্যায়াম করা করা যায়!
প্রাণায়াম আসনের উপকারিতা নিয়ে কিছু কথা
প্রাণায়াম কী?
প্রাণায়ামহল মেডিটেশন-এর একটি বিশেষ ধরন যেটি শুধু মাত্র শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে করা হয়। একটি সুনির্দিষ্ট এবং নিয়ন্ত্রিত উপায়ে শ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগের প্রক্রিয়াকে প্রাণায়াম বলা হয়। সঠিকভাবে প্রাণায়াম তিনটি বিষয় সম্পর্কে জানা থাকা জরুরী। মূলত এই তিনটি কাজের সঠিক সমন্বয়েই প্রাণায়াম করা হয়ে থাকে-
১) রেচক
২) পূরক ও
৩) কুম্ভক
এবার এই তিনটি কাজের ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত একটু ধারণা দেই। এতে করে সঠিক উপায়ে প্রাণায়াম করাটা আপনাদের জন্য সহজ হয়ে যাবে।
রেচক
প্রাণায়াম-এর ক্ষেত্রে একটি নির্ধারিত পদ্ধতিতে শ্বাস গ্রহণকে বলে পূরক।
পূরক
প্রাণায়াম-এর ভাষায় সঠিক নিয়ম মেনে শ্বাসত্যাগ করাকে বলে রেচক।
কুম্ভক
প্রাণায়াম-এর পদ্ধতি অবলম্বন করে একটি নির্দিষ্ট নিয়মে শ্বাস ধারণকে বলে কুম্ভক।
প্রাণায়াম-এর আসন করার নিয়ম (স্টেপ বাই স্টেপ) বর্ণনাঃ
প্রাণায়াম-এর খুব সহজ কিছু আসন করার নিয়ম স্টেপ বাই স্টেপ বর্ণনা করা হলো যেগুলো আপনি বাসায়, এমনকি অফিসে কাজের ফাঁকেও করে ফেলতে পারবেন। দরকার শুধু একটু সদিচ্ছা আর মানসিক দৃঢ়তা।
প্রাণায়াম আসন
১) প্রথমে সোজা হয়ে দাঁড়ান কিংবা ধ্যান করার মত করে আসন করে বসুন।
২) ধীরে ধীরে নাক দিয়ে যতটা সম্ভব নিঃশ্বাস নিন। বুক ভরে শ্বাস গ্রহণ বলতে আমরা যেমনটা বুঝি।
৩) যেমন করে ধীরে ধীরে নিঃশ্বাস নিয়েছেন তেমনি ধীরে ধীরে মুখ দিয়ে (হা করে) নিঃশ্বাস ছাড়ুন।
৪) এইভাবে দিনে তিন মিনিট/পাঁচ মিনিেট যতবার পারেন নিঃশ্বাস নিন এবং ছাড়ুন।
এক্ষেত্রে মনে রাখার মতো বিষয় হলো-
- নিঃশ্বাস নিতে হবে নাক দিয়ে কিন্তু নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে হবে মুখ দিয়ে।
- যতটা সময় ধরে নিঃশ্বাস নিয়েছেন চেষ্টা করবেন ততটা সময় ধরে নিঃশ্বাস ছাড়তে।
প্রাণায়াম-এর উপকারিতা
প্রাণায়াম যেহেতু মেডিটেশন-এরই একটি বিশেষ ধরন, তাই এর নানাবিধ উপকারিতা বিদ্যমান। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যায়াম বা মেডিটেশন-এর উপকারিতা সম্পর্কে আমরা কম বেশি সবাই জানি। কিন্তু বিশেষভাবে প্রাণায়াম-এর উপকারিতাও অপরিসীম।
স্বাভাবিকভাবে আমরা যখন শ্বাস ত্যাগ করার পর শ্বাস গ্রহণ করি, তখন ফুসফুসে যে পরিমান বাতাস প্রবেশ করে, তাতে ফুসফুস মাত্র দুই-তৃতীয়াংশ প্রসারিত হয়। কিন্তু প্রাণায়াম করার মাধ্যমে ফুসফুস সম্পূর্ণভাবে প্রসারিত করা যায়। শরীরে প্রচুর পরিমান বাতাস প্রবেশের ফলেই ফুসফুস প্রসারিত হয়। ফলে শরীর পর্যাপ্ত পরিমান অক্সিজেন পায়। আর আমাদের দেহে অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি পেলে রক্ত চলাচল সঠিকভাবে হয়, হৃদযন্ত্র ভালোভাবে কাজ করতে পারে, এমন আরও বহু ধরনের উপকার হয়ে থাকে। এক কথায় শরীরের যন্ত্রাংশ যখন ভালোভাবে কাজ করে তখন শরীরের অনেক রোগ, সমস্যা দূর হয়ে যায়। তাই প্রাণায়াম-এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ এবং উল্লেখযোগ্য উপকারিতা নীচে সংক্ষিপ্ত আকারে দিয়ে দিলাম-
১) শারীরিক ও মানসিক শান্তি লাভ করা যায়।
২) স্নায়বিক দুর্বলতা বা চাপ হ্রাস পাওয়া যায়।
৩) রক্তে অক্সিজেন-এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
৪) শরীরে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়।
৫) হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুস সতেজ ও সবল হয় ইত্যাদি।
প্রাণায়াম অত্যন্ত সহজ একটি মেডিটেশন যেটি আমাদের দেহের জন্য অত্যাধিক উপকারি। প্রতিদিন একটু সময় করে যদি ৩-৫ মিনিটও ব্যয় করি ছোট্ট এই একটি কাজ করতে, তাহলে প্রাণায়াম-এর সুফল যেমনি ভোগ করতে পারবো তেমনি অনেক ছোট বড় শারীরিক সমস্যাকেও জয় করতে পারবো ওষুধ কিংবা ডাক্তারের সাহায্য ছাড়া।
আশা করছি আমার আজকের লেখায় প্রাণায়াম-এর আসন এবং উপকারিতা সম্পর্কে আপনাদেরকে সুস্পষ্ট একটা ধারণা দিতে পেরেছি। তাহলে আপনার দৈনন্দিন কাজের তালিকায় আজ থেকেই নিশ্চয়ই প্রাণায়ামকে যোগ করে নিবেন!
ভালো থাকবেন সবাই। সবার প্রতিটা দিন হোক সুস্থ আর সুন্দর!
ছবি- সংগৃহীত: সাটারস্টক