শরীরকে রোগমুক্ত রাখতে আমাদের নিয়মিত যোগাসন করা খুবই প্রয়োজন। শুধুমাত্র শরীর নয়, যোগাসন করলে শরীর ও মন উভয়ের উপরই প্রভাব পড়ে থাকে। যোগাসন মানসিক জড়তা কাটাতে সাহায্য করে। যোগাসনকে অনেকে যোগব্যায়াম বলে থাকে। কিন্তু যোগাসন এবং যোগব্যায়াম দুটির মধ্যে পার্থক্য আছে। ব্যায়াম খালি হাতে করা হয় আবার যন্ত্রযোগেও করা হয়। খেলাধুলা, সাঁতারকাটা, হাঁটা, জগিং, সাইক্লিং, জিম ইত্যাদি ব্যায়ামের তালিকায় পড়ে। এতে শরীরের অঙ্গ সঞ্চালন হয় কিন্তু মানসিক প্রশান্তি আসে না। কিন্তু যোগাসন করলে শরীরের অঙ্গ সঞ্চালন হওয়ার পাশাপাশি মানসিক প্রশান্তিও আসে। তাই শরীরের রোগমুক্তি এবং মানসিক প্রশান্তির জন্য যোগাসন করা খুবই প্রয়োজন। আজকে আমরা জানাবো রোগব্যাধি কমাতে যোগাসন কত উপকারি। রোগব্যাধি কমাতে যোগাসন সম্পর্কে জানার পূর্বে চলুন জেনে নেই যোগাসনকে শরীরচর্চার মাধ্যম হিসেবে বেছে নেয়ার কারণ এবং এর উপকারিতা।
যোগাসনকে শরীরচর্চার মাধ্যম হিসেবে বেছে নেওয়ার কারণ
- দৈনন্দিন ভিত্তিতে যোগাসন করলে আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ক্যালোরি (calorie) ঝড়ে যায় তাই শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝেড়ে ফেলার জন্য আমাদের যোগাসন করা প্রয়োজন।
- যোগাসন করলে মনে প্রশান্তি আসে। তাই মানসিক শান্তির জন্য আমাদের প্রতিনিয়ত যোগাসন করা প্রয়োজন।
- এটি একমাত্র প্রাকৃতিক উপায় যা শারীরিক গঠন ঠিক করে।
- যোগাসন আমাদের পুরো শরীর জুড়ে কাজ করে। যোগাসন একটি মাত্র উপায় যা শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গের কাজ করে থাকে।
- নিয়মিত যোগাসন করলে শরীর ও মন নিয়ন্ত্রণে থাকে যার ফলে রোগ হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।
- যোগাসন যে কোন জায়গা এবং যেকোন সময় করা যায়। যোগাসন করতে নির্দিষ্ট কোন জায়গা বা সরঞ্জাম প্রয়োজন হয় না।
যোগাসন করার উপকারিতা
১. শরীরকে সুস্থ্য সবল রাখে।
২. মন শান্ত রাখে, অস্থিরতা কমাতে সাহায্য করে।
৩. শ্বাসকষ্ট, বুক ধরফড়ানি ও থাইরয়েড-এ বিশেষ উপকার হয়।
৪. অকাল বার্ধক্য রোধ করে।
৫. পেটের ও অন্ত্রের সব সমস্যা দূর করে।
৬. কুষ্ঠরোগের জন্য খুবই উপকারী।
৭. নারীর গর্ভাশয়ের রোগ নিরাময় করে।
বিভিন্ন ধরণের যোগাসন রয়েছে যেমন- সিদ্ধাসন, সুপ্ত বজ্রাসন, উত্থানপদাসন, ভুজঙ্গাসন, কাকাসন, চক্রাসন, পশ্চিমোত্তানাসন, কোনাসন, অর্ধকূর্মাসন ইত্যাদি। এগুলো ছাড়াও আরো অনেক ধরণের যোগাসন রয়েছে। এসব যোগাসন আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। চলুন জেনে নেই রোগব্যাধি কমাতে যোগাসন কতটা উপকারী।
রোগব্যাধি কমাতে যোগাসন
(১) হজমের সমস্যা
হজমের সমস্যা আমাদের কম বেশি সবারই হয়ে থাকে। এটি একটি কমন সমস্যা। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আমরা সুপ্ত বজ্রাসন করতে পারি। এই আসনটি খাবার হজম করতে সাহায্য করে। তাই যাদের অতিরিক্ত হজমের সমস্যা রয়েছে তারা সুপ্ত বজ্রাসনের মাধ্যমে হজমের সমস্যা দূর করতে পারেন। এর মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্যও দূর হয়।
(২) শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তি
শ্বাসকষ্ট (Asthma) থেকে মুক্তি পেতে আমরা কত কিছুই করে থাকি। কখনো উপকৃত হচ্ছি আবার কখনো এই সমস্যা থেকেই যাচ্ছে। এই সমস্যা থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি পেতে আমরা সিদ্ধাসন করতে পারি। এই আসনটি আমাদের শ্বাসনালী পরিষ্কার করতে সাহায্য করে যার ফলে খুব সহজেই শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
(৩) বুক ধরফড়ানির
যাদের বুক ধরফড়ানির সমস্যা আছে তারা এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে যোগাসন করতে পারেন। বুক ধরফড়ানির সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আমরা সিদ্ধাসন করতে পারি। এই আসনটি মনকে স্থির করবে অস্থিরতা কাটাবে যার ফলে আপনার বুক ধরফড়ানির সমস্যা দূর হবে।
(৩) ঘাড়, চোখ, গলা, নাক, এবং কানের সমস্যা
আমরা ঘাড়, চোখ, গলা, নাক, এবং কানের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকি। এ সমস্যাগুলো থেকে পরিত্রাণ পেতে সিংহাসন করতে পারি। সিংহাসন আমাদের ঘাড়, চোখ, গলা, নাক, এবং কানের প্রতিটি অংশ জুড়েই কাজ করে থাকে যার ফলে ছোট থেকে শুরু করে বড় ধরণের যে কোন সমস্যা দূর করা সম্ভব।
(৪) হার্টের সমস্যা
যাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে তারা কোনাসন করতে পারেন। এই আসনটি আপনার হার্টবিট (Heartbeat) স্বাভাবিক রাখবে। হার্টকে উত্তেজিত করবে না। যারা দৈনন্দিন ভিত্তিতে এই আসনটি করে থাকে তাদের হার্টে তেমন কোন প্রবলেম দেখা দেয় না। তাই হার্ট সুস্থ রাখার জন্য আমরা নিয়মিত কোনাসন করতে পারি।
(৫) হাঁটু ব্যথা
হাঁটুতে ব্যথা আজকাল কমবেশি সবারই হয়ে থাকে। হাঁটু ব্যথা থেকে রক্ষা পেতে আমরা কত কিছুই করে থাকি। এই সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে আমরা উত্থানপদাসন করতে পারি। এই আসনটি করলে থাইয়ের পেশি সংকুচিত বা প্রসারিত হয়। ফলে হাঁটুতে ব্যথা থেকে থাকলে খুব সহজে তা কমে যাবে।
(৬) মাথাব্যথা
মাথাব্যথার জন্য পশ্চিমোত্তানাসন করতে পারেন। এই আসনটি শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি আনবে। মানসিক অস্থিরতার জন্য অনেকসময় মাথাব্যথা হয়ে থাকে। এই আসনটি করলে মনে প্রশান্তি আসে এবং মাথাধরা কিংবা মাথাব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
(৭) মেরুদণ্ডের ব্যথা
মেরুদণ্ডের ব্যথার জন্য সবচেয়ে ভালো যে আসনটি আছে সেটি হচ্ছে কটি চক্রাসন। এই আসনটি মেরুদণ্ডের কোষগুলোকে সংকুচিত করে যার ফলে অভ্যন্তরীণ সব সমস্যা দূর হয়। তাই নিয়মিত কটি চক্রাসন করলে খুব জলদি মেরুদণ্ডের ব্যথা কমে যায়।
(৮) কোষ্ঠকাঠিন্য
এই সমস্যাটি দূর করতে মন্ডুকাসন করতে পারেন। এই আসনটি করলে কোষ্ঠকাঠিন্য খুব সহজে দূরীভূত হবে। তাই যাদের এই সমস্যা আছে তারা নিয়মিত মন্ডুকাসন করলে এই সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
এছাড়াও আরো অনেক সমস্যা দূরীকরণে আমরা যোগাসন করতে পারি। ব্রঙ্কাইটিস, বহুমুত্র, গোড়ালি ব্যথা, পিঠের ব্যথা, পলিপাস ইত্যাদি সমস্যাগুলোও যোগাসনের মাধ্যমে দূর করা সম্ভব। এছাড়াও শরীরের উচ্চতা বৃদ্ধিতেও যোগাসন অনেক উপকারী। এই তো জেনে নিলেন রোগব্যাধি কমাতে যোগাসন এর উপকারিতা। নিয়মিত যোগাসন করুন, সুস্থ থাকুন।
ছবি – সংগৃহীত: সাটারস্টক