ঘুরে বেড়াতে সবারই ভালো লাগে। কিন্তু ব্যস্তময় জীবনে ঘুরে আসার জন্য সময়ই হয়ে উঠে না। একদিনের জন্য ঢাকার আশেপাশে কোথাও পরিবার কিংবা বন্ধুদের নিয়ে ঘুরে আসতে পারলে কিন্তু মন্দ হয় না। ঢাকার আশেপাশে একদিনের জন্য ঘুরে আসার মতো এমন অনেক স্থান আছে। আজকে আমরা জানাবো ঢাকার পাশেই নারায়ণগঞ্জের মনোরম পরিবেশে অবস্থিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর জিন্দা পার্কের গল্প। একদিনের মধ্যে পিকনিক (Picnic) কিংবা ডে আউটের (Day out) জন্য আপনি নিশ্চিন্তে বেছে নিতে পারেন জিন্দা পার্ক ।
জিন্দা পার্ক পরিচিতি
ঢাকার পাশে নারায়ণগঞ্জের দাউদপুর ইউনিয়নে প্রায় ১৫০ একর জমির উপর অবস্থিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা জিন্দা পার্ক। গাছপালা, পাখপাখালি, জলাধারে ভরপুর এই পার্কটিতে গেলে আপনার মন প্রশান্তিতে ভরে উঠবে। পার্কটি সব ধরনের উটকো ঝামেলা থেকে নিরাপদ। এটি এলাকাবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে গড়ে উঠেছে। প্রায় ৩৫ বছর পূর্বে ১৯৮০ সালে ৫০০০ জন সদস্য নিয়ে এই পার্কের যাত্রা শুরু হয়। সেই থেকে শুরু করে এলাকাবাসীর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে গড়ে উঠেছে এই পার্কটি। মাটির রাস্তা এবং চারিদিকে সবুজ আর সবুজের অরণ্য। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এর চেয়ে ভালো কিছু যেন আর হতেই পারে না। চলুন জেনে নেই কী কী সুযোগ সুবিধা আছে এই পার্কটিতে।
(১) গাছপালা
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর জিন্দা পার্কে রয়েছে অনেক গাছপালা। প্রায় ২৫০ প্রজাতির গাছ রয়েছে এইখানে। পুরো পার্ক জুড়ে প্রায় দশ হাজারের বেশি গাছ রয়েছে।
(২) পাখপাখালি
ঢাকা শহরের কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে পাখির কিচিরমিচির শোনাতো আজকাল খুবই দুষ্কর। জিন্দাপার্কে রয়েছে অসংখ্য পাখপাখালি যা আপনাকে নিয়ে যাবে প্রকৃতির খুব নিকটে। কোলাহলপূর্ণ জীবনে পাখির ডাক শুনতে চাইলে অবশ্যই ঘুরে আসবেন পাখপাখালিতে ভরপুর জিন্দা পার্কে।
(৩) জলাধার
এই পার্কে গাছপালা এবং পাখপাখালি ছাড়াও আছে বিশাল জলাধার। প্রায় ৫টি জলাধার নিয়ে ঘেড়ানো আছে এই পার্কটি।
(৫) বসার বেঞ্চ
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেড়া এই পার্কে রয়েছে বসার জন্য বেঞ্চের (Bench) ব্যবস্থা। পুরো পার্কে ঘুরে বেড়ানো ছাড়াও আপনি চাইলে গাছপালার নিচে বেঞ্চে বসে একটু রেস্ট (Rest) নিতে পারেন এবং উপভোগ করতে পারেন প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য।
(৬) নৌকা
জিন্দা পার্কে বিশাল লেকে (lake) নৌবিহারেরও ব্যবস্থা রয়েছে। লেকের পাশে ৮টি নৌকা রাখা আছে অতিথিদের জন্য। আপনি চাইলে নৌকা ভ্রমণও করতে পারবেন।
(৭) লাইব্রেরী
বইপোকাদের জন্য এই পার্কে রয়েছে বিশাল লাইব্রেরী (Library)। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা এই পার্কে বসে আপনি আপনার পছন্দের বইটিও পড়তে পারবেন।
(৮) ট্রি হাউস
মনোরম পরিবেশে অবস্থিত এই পার্কে রয়েছে ট্রি হাউস (Tree house)। গাছের উপর ছোট করে ঘর বানিয়ে রাখা হয়েছে বাচ্চাদের জন্য। ছোট ছোট বাচ্চারা এইখানে খেলাধুলা করতে পারবে।
(৯) পরিবেশবান্ধব সাঁকো
জলাধারের ভেতর ঘুরে বেড়ানোর জন্য এই পার্কে আছে পরিবেশবান্ধব সাঁকো। বিশাল জলাধারে ঘুরে বেড়াতে চাইলে আপনি এই সাঁকো ব্যবহার করতে পারেন।
(৯) খাবারের ব্যবস্থা
জিন্দাপার্কের ভিতরে খাবারের সুব্যবস্থা রয়েছে। পার্কের ভিতরেই রয়েছে রেস্টুরেন্ট(Restaurant)। এই রেস্টুরেন্টে আছে বিভিন্ন প্যাকেজের (package) ব্যবস্থা। কম খরচে এইসব প্যাকেজগুলোতে আপনি ভাত, ডাল, সবজি, মুরগি, গরু, খাসি ইত্যাদি পাবেন। আপনি চাইলে বাহির থেকেও খাবার নিয়ে আসতে পারেন। এজন্য আপনাকে ২৫ টাকা ফী দিতে হবে।
জিন্দা পার্কের প্রবেশমূল্য
জিন্দাপার্কে প্রবেশ করতে বড়দের লাগবে ১০০ টাকা এবং বাচ্চাদের লাগবে ৫০ টাকা করে। এছাড়া পার্কিং (parking)-এর ব্যবস্থাও আছে এই পার্কে। পার্কিং এর জন্য ৫০ টাকা করে দিতে হবে।
কিভাবে যাবেন জিন্দা পার্ক
মাত্র ৩৭ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত জিন্দা পার্ক যাওয়ার সবচেয়ে সহজ এবং সুন্দর রাস্তা হলো কুড়িল বিশ্বরোডে পুর্বাচল হাইওয়ে। অর্থাৎ ৩০০ ফিট রোড দিয়ে গেলে সবচেয়ে সহজ উপায়ে যেতে পারবেন এই পার্কে। প্রথমে কুড়িল বিশ্বরোড চলে আসুন। ৩০০ ফিট রাস্তার মাথায় লোকাল প্রাইভেট কার (privet car), সি এন জি (C.N.G) বা লেগুনা দিয়ে কাঞ্চন ব্রিজ যাবেন। কাঞ্চন ব্রিজের আগে বাইপাস মোড়ে গিয়ে লোকাল অটোতে করে জিন্দাপার্ক যেতে ৫ থেকে ১০ মিনিট লাগবে। এছাড়াও কুড়িল ৩০০ ফিট রাস্তা থেকে সি এন জি কিংবা অটোরিক্সা রিজার্ভ করে নিয়েও একেবারে যেতে পারেন। সি এন জি কিংবা অটোরিক্সায় গেলে একটু সময় নিলেও চারপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করে যেতে পারবেন।
টঙ্গী থেকে জিন্দা পার্কের দূরত্ব ২৮ কিলোমিটার। আপনি চাইলে ঢাকা থেকে টঙ্গী মীরেরবাজার গিয়ে বাইপাস রাস্তা দিয়েও জিন্দা পার্ক যেতে পারেন।
এছাড়াও চাইলে ঢাকা থেকে কাঁচপুর ব্রীজ পাড় হয়ে ভুলতা যাবেন তারপর বাইপাস হয়ে জিন্দা পার্ক যেতে পারেন। ভুলতা থেকে জিন্দা পার্কের দূরত্ব ১২ কিলোমিটার। এইখানে লোকাল কার (Local car), সি এন জি এবং অটো (Auto) আছে। আপনি চাইলে রিজার্ভ নিয়ে একেবারে পার্কে যেতে পারেন।
প্রতিদিন সকাল ৯টায় খোলা হয় এই পার্ক এবং সপ্তাহে প্রতিদিনই খোলা থাকে।
আপনি চাইলে আপনার পছন্দমতো সানস্ক্রিন কিনতে পারেন অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে। আবার যমুনা ফিউচার পার্ক ও সীমান্ত স্কয়ার এ অবস্থিত সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ থেকেও কিনতে পারেন আপনার পছন্দের সানস্ক্রিনটি !
ব্যস্ততাপূর্ণ জীবন থেকে একটু স্বস্তি পেতে পরিবার নিয়ে যেতে পারেন এই পার্কটিতে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা এই জিন্দা পার্কে পায়ের নিচে মাটির ছোঁয়া এবং সবুজের সমারোহে আপনাদের মনে আনবে এক অদ্ভূত প্রশান্তি। একদিনের মধ্যে ঘুরে আসার জন্য আপনি নিশ্চিন্তে বেছে নিতে পারেন মনোরম পরিবেশে অবস্থিত পার্কটি। তো ছুটির দিনটিতে পরিবারকে নিয়ে ঘুরে আসুন জিন্দা পার্ক! আর হ্যাঁ, বেড়াতে যাওয়ার সময় সানস্ক্রিন এবং ছাতা নিতে ভুলবেন না যেন!
ছবি- সংগৃহীত: নতুনবার্তা.কম