“ঘন কালো চুলে হারিয়ে যায় মন”- জনপ্রিয় বিজ্ঞাপনের বেশ পরিচিত একটি ডায়লগ এটি। ঘন কালো চুল সব মেয়েদের পছন্দ। মূলত চুলকে ধরা হয় নারী সৌন্দর্যের অন্যতন একটি অংশ। কিন্তু বর্তমান সময়ে স্ট্রেস, পল্যুশন, লাইফ স্টাইল বিভিন্ন কারণে চুল পড়া সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় কম বেশি সবাইকে। কী করলে চুল পড়া কমবে, কী করলে নতুন চুল গজাবে, এই চিন্তা করতে করতে দিনরাত এক হয়ে যায়। কিন্তু তাও চুল পড়া বন্ধের কোনো উপায় খুঁজে পাওয়া যায় না। চুল পড়তে পড়তে মাথায় টাকও দেখা দিয়েছে। এইভাবে আর কত দিন? তাই টাক হওয়া রোধ করতে ট্রাই দেখতে পারেন কিছু ঘরোয়া উপায়। চলুন তবে দেখে নেই!
টাক হওয়া রোধ নিয়ে যত কথা
চুল পড়ার কারণ
সাধারণত দৈনিক ১০০টা চুল পড়া স্বাভাবিক ধরা হয়ে থাকে। কিন্তু এর বেশি পড়া শুরু করলে সেটি চিন্তার বিষয়। সাধারণত বেশ কিছু কারণে চুল পড়া বেড়ে যেতে পারে। কারণগুলো হলো-
১) বংশগত
২) অতিরিক্ত স্ট্রেস
৩) অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
৪) অতিরিক্ত হেয়ার স্টাইল
৫) ভেজা চুল আঁচড়ানো
৬) অতিরিক্ত শ্যাম্পু করা
৭) শক্ত করে চুল বাঁধা
৮) গরম পানির ব্যবহার
প্রাকৃতিক কিছু উপায়ে টাক পড়া রোধ করতে পারেন। আজকে এই জাদুকরী উপায়গুলোর সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিব।
যেভাবে টাক হওয়া রোধ করতে পারেন
১) ভিটামিন ই ক্যাপসুল
যা যা লাগবে:
১. ভিটামিন ই ক্যাপসুল- ৭-৮টি
২. নারকেল তেল অথবা অলিভ অয়েল
যেভাবে ব্যবহার করবেন:
১) একটি ছোট পাত্রে নারকেল তেল অথবা অলিভ অয়েল নিন। এর সাথে ই ক্যাপসুল মিশিয়ে নিন।
২) এই মিশ্রণটি চুলে ম্যাসাজ করে লাগান।
৩) এটি নিয়ে সারারাত থাকুন।
৪) পরের দিন চুলে শ্যাম্পু করে ফেলুন।
৫) এটি সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করুন।
কার্যকারিতা
ভিটামিন ই তে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে যা ফ্রি রেডিক্যালের (free radical) সাথে লড়াই করে। এটি মাথার তালুর রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে। নিয়মিত ব্যবহারের চুল পড়া রোধ করে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
২) রোজমেরি অয়েল
যা যা লাগবে
১. রোজমেরি অয়েল- ২ ফোটা
২. অলিভ অয়েল অথবা নারকেল তেল– ২ টেবিল চামচ
যেভাবে ব্যবহার করবেন
১) রেগ্যুলার অয়েল যেমন নারকেল তেল অথবা অলিভ অয়েল অথবা আমন্ড অয়েলের সাথে রোজমেরি অ্যাসেনসিয়াল অয়েল মিশিয়ে নিন।
২) এটি মাথার তালু এবং চুলে ম্যাসাজ করে ব্যবহার করুন।
৩) এটি চুলে ৩০ মিনিট রাখুন। তারপর শ্যাম্পু করে ফেলুন।
৪) সপ্তাহে দুইবার এটি ব্যবহার করুন।
কার্যকারিতা
রোজমেরি অয়েল রোজমেরি হার্ব থেকে তৈরি হয়। এই অয়েল মাথার কোষের বিভাজন করে, রক্তনালী প্রসারিত করে এবং রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। যা চুল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
৩) ডিম
যা যা লাগবে
১. ডিমের কুসুম- ২টি
২. অলিভ অয়েল- পরিমাণমতো
৩. টকদই- ১/৪ কাপ
৪. মেয়নেজ- পরিমাণমতো
যেভাবে তৈরি করবেন
১) দুটি ডিমের কুসুম ভালো করে বিট করে নিন। তারপর এতে পরিমাণমতো অলিভ অয়েল দিয়ে ভালো করে মেশান।
২) এটি মাথাসহ সম্পূর্ণ চুলে ব্যবহার করুন। চুলে রাখুন ১৫ থেকে ২০ মিনিট।
৩) তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে চুল শ্যাম্পু করে ফেলুন।
৪) এছাড়া একটি ডিম এবং কোয়াটার কাপ টকদই এবং ১ টেবিল চামচ মেয়নেজ একসাথে ভালো করে মিশিয়ে নিন।
৫) এই মিশ্রণটি মাথার তালুসহ সম্পূর্ণ চুলে ব্যবহার করুন।
৬) এক ঘণ্টার পর শ্যাম্পু করে ফেলুন।
কার্যকারিতা
এই প্যাক কার্যকারিতা হলো এটি কেরাটিন প্রোটিন দিয়ে চুল গজাতে সক্ষম। ডিম হলো প্রোটিনের অন্যতম একটি উৎস। যা চুলে পুষ্টি যুগিয়ে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
৫) আমলকী
যা যা লাগবে
১. নারকেল তেল
২. আমলকী
যেভাবে তৈরি করবেন
১) একটি পাত্রে কিছু পরিমাণ তেল গরম করুন। তেলের সাথে কিছু পরিমাণ ড্রাই আমলকী দিয়ে দিন।
২) আমলকীসহ তেল জ্বাল দিতে থাকুন।
৩) কিছুটা জ্বাল হয়ে এলে ঠাণ্ডা করে ছেঁকে নিয়ে তেল মাথার তালুতে ম্যাসাজ করে ব্যবহার করুন।
৪) ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে ফেলুন।
কার্যকারিতা
চুল পড়া রোধে আমলকী বেশ কার্যকর। এটি চুল পড়া রোধ করতে সাহায্য করবে। এমনকি অল্প বয়সে চুল পাকা রোধ করবে আমলকী তেল।
৫) মেথি
যা যা লাগবে
১. মেথি- ১ কাপ
২. নারকেল তেল- পরিমাণমতো
যেভাবে তৈরি করবেন
১) এক কাপ মেথি সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সারা রাত ভেজানো সম্ভব না হলে চার ঘন্টা মেথি ভিজিয়ে রাখুন।
২) মেথি পানিতে তুলে রাখুন, তারপর পেস্ট করে নিন।
৩) প্যাকটি চুলে দেওয়ার পর চুলে তেল দিয়ে নিন। তারপর মেথির প্যাকটি ব্যবহার করুন।
৪) এক ঘন্টার পর শ্যাম্পু করে ফেলুন।
৫) এই প্যাকটি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করতে পারবেন।
কার্যকারিতা
নতুন চুল গজাতে মেথি বেশ কার্যকর। এতে প্রোটিন রয়েছে। এছাড়া এতে লেসিথিন উপাদান রয়েছে, যা চুলের ময়েশ্চার ধরে রাখে এবং চুলকে মজবুত করে তোলে।
৬) লেবুর রস
যা যা লাগবে
১. লেবু- ১টি
২. নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল- ২ টেবিল চামচ
যেভাবে ব্যবহার করবেন
১) একটি পাত্রে দুই টেবিল চামচ নারকেল অথবা অলিভ অয়েলের সাথে এক টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নিন।
২) এই মিশ্রণটি মাথার তালু এবং চুলে ব্যবহার করুন। এটি চুলে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট রেখে দিন।
৩) এরপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন!
কার্যকারিতা
লেবুর রসে রয়েছে ভিটামিন সি এবং ভিটামিন বি১, বি২, বি৩, বি৫, বি৬, বি১৩, ফলিক এসিড এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। লেবুর রস খুশকি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া এটি মাথার তালুতে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে!
নিয়মিত এই প্যাকগুলো চুলে ব্যবহার করলে অকালে টাক হওয়া রোধ করতে পারবেন। উপরের যে পদ্ধতিটি আপনার পছন্দ তেমন একটি প্যাক বেছে নিন এবং নিয়মিত চুলের যত্ন নিন! তবে যদি প্রাকৃতিক উপাদানসমূহ রেডি করতে সমস্যা হয়, তবে আপনি সাজগোজ থেকে চুলের যত্নে প্রোডাক্ট নিতে পারেন। আপনি অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে প্রোডাক্ট অর্ডার করতে পারেন। তাছাড়া সাজগোজের দু’টি ফিজিক্যাল শপ যা যমুনা ফিউচার পার্ক ও সীমান্ত স্কয়ার-এ অবস্থিত, সেখান থেকেও নিজে গিয়ে কিনতে পারেন।
তো আজ আর কথা না বাড়াই। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আপনার চুল হোক আরও সুন্দর!
ছবি- সংগৃহীত: সাজগোজ; হেলথলাইন.কম