আজকাল চুল নিয়ে কম বেশি অনেকেই বিভিন্ন সমস্যায় ভুগেন। যেমনঃ চুল ঝরে যাওয়া, রুক্ষ ও নিস্প্রাণ হয়ে যাওয়া, ফেটে যাওয়া ইত্যাদি। এই সমস্যা প্রায় সবারই। ব্যস্ত জীবনে সবাইকে তাদের প্রয়োজনে বাইরে যেতেই হয়। আর বাইরে বের হওয়া মানেই ধুলোবালি আর রোদের সংস্পর্শে আসা। এই ধুলোবালি আর সূর্যের তাপে ত্বকের পাশাপাশি আমাদের চুলও সমান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া পানি একটা বিরাট প্রভাব ফেলছে চুলের জন্য। এত কিছুর পরও আমরা যদি আমাদের চুলের সঠিক পরিচর্যা করি, তাহলে এসব বৈরি পরিস্থিতিতেও আমাদের চুল সুন্দর রাখা সম্ভব। তবে তার জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার আমাদের ধৈর্য্য আর মনোযোগ। এছাড়া প্রচুর পরিমাণে পানি পান আর খাদ্য তালিকায় শাক সবজি ও ফলমূল রাখা প্রয়োজন। আর পর্যাপ্ত ঘুম তো চাই ই। তার সাথে দরকার হলো নিয়মিত চুল পরিষ্কার রাখা। ঘরোয়া কিছু উপায় অবলম্বন করে আমরা পেতে পারি গর্জিয়াস ও সুন্দর চুল।
গর্জিয়াস চুল পেতে ৫টি টিপস
১) মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার
দিন দিন দূষণ যেভাবে বাড়ছে, তাতে প্রতিদিন শ্যাম্পু না করে উপায় নেই। কিন্তু প্রতিদিন শ্যাম্পু করাও চুলের জন্য ক্ষতিকারক। কারণ শ্যাম্পুতে প্রচুর ক্যামিকেল মিশ্রিত থাকে যা প্রতিদিন ব্যবহারে চুল তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য হারায়। এসব কথা চিন্তা করেই বিভিন্ন কোম্পানি বাজারে এনেছে আয়ুর্বেদিক বা মাইল্ড শ্যাম্পু। এসব শ্যাম্পু প্রতিদিন ব্যবহার করা যায়। প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি বলে এ শ্যাম্পু চুলের কোন ক্ষতি করে না। যেকোন ধরনের চুলেই এই শ্যাম্পু ব্যবহার করা যায়। এছাড়া ঘরোয়া উপায়েও আমরা কম খরচে প্রাকৃতিক শ্যাম্পু বানাতে পারি। তার জন্য দরকার পড়বে শিকাকাই, শুকনো আমলকী ও রিঠা। বাজারে এসব জিনিস অনায়াসেই পাওয়া যাবে। জেনে নেই ঘরে তৈরি মাইল্ড শ্যাম্পু বানানোর কৌশল।
মাইল্ড শ্যাম্পু বানানোর কৌশল
৫০ গ্রাম শিকাকাই, ৫০ গ্রাম আমলকী ও ৫০ গ্রাম রিঠা সারারাত ১ লিটার পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরদিন এই পানিসহ সব উপকরণ একসাথে সেদ্ধ করতে হবে। ৫/৭ মিনিট পর পানি ফুটে উঠলে চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করে সবগুলো উপকরণ হাত দিয়ে চটকে বিচিগুলো ফেলে দিতে হবে। এরপর একটা ছাকনি দিয়ে ছেকে পরিষ্কার বোতলে ভরে পানিটা রাখতে হবে। হয়ে গেল ঘরে তৈরি শ্যাম্পু। বাজারের অন্য সব শ্যাম্পুর মতোই ঘরে তৈরি এই শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারবেন। বরং প্রাকৃতিক এই শ্যাম্পু ব্যবহারে চুল রুক্ষ হয় না। চুল হয়ে উঠবে সিল্কি আর খুশকিমুক্ত। সেই সাথে চুলে একটা গর্জিয়াস লুকও চলে আসবে।
২) ডিম ও অলিভ অয়েল ক্লেঞ্জিং
চুলের যত্নে ডিমের ব্যবহার খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করে। কিভাবে জানেন কি? ড্যামেজ চুলকে রক্ষা করতে ডিমের জুড়ি নেই। ডিম মূলত চুলকে শুষ্ক হওয়া থেকে বাঁচায় আর চুলের আদ্রতা ধরে রাখে। এর বায়োটিন, ফলেট চুলকে বৃদ্ধি করে। ডিমের সাদা অংশ আর কুসুম দুটোই চুলের জন্য উপকারী। সবচেয়ে বেশি উপকারী হলো কুসুম। এতে যেমন আছে প্রোটিন বায়োটিন, ফলেট এবং আরও আছে ভিটামিন এ, ডি ও ই। ডিমে থাকে আয়রন যা স্ক্যাল্পে কোষের জন্ম দিবে। অর্থাৎ আপনার চুলের সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য ডিম ব্যবহার খুবই দরকার।
ডিম ও অলিভ অয়েল, এই দুটো উপাদান একসাথে ম্যাজিকের মতো কাজ করে। সপ্তাহে দুই দিন এর ব্যবহার চুলকে করে অনেক স্বাস্থোজ্জ্বল ও গর্জিয়াস!
তৈরির পদ্ধতি
একটি বাটিতে ১টা ডিম ও এক চামচ অলিভ অয়েল দিয়ে ভালো করে মেশান। চুলের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী তেলের পরিমাণ বাড়াতে পারেন। যখন এটি মসৃণ পেষ্টের আকার ধারণ করবে তখন এটা মাথার ত্বকে ভালোভাবে লাগান। ৪০/৪৫ মিনিট পর মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই মিশ্রণ ব্যবহারে আপনার চুল আর স্ক্যাল্প শুষ্ক হবে না। সেই সাথে চুল হয়ে উঠবে গর্জিয়াস।
৩) ডিমের হেয়ার কন্ডিশনার
ডিম দিয়ে ভালো কন্ডিশনারও বানানো যায়। তবে চলুন দেখে নেই!
কন্ডিশনার তৈরির পদ্ধতি
২টি ডিম, ২ টেবিল চামচ টকদই একসাথে মিশিয়ে আপনার পুরো চুলে লাগান। স্ক্যাল্পে লাগানোর কোন দরকার নেই। এভাবে ৩০ মিনিট রেখে দিন। ৩০ মিনিট পর মাইল্ড শ্যাম্পু আর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। পার্থক্যটা সাথে সাথেই বুঝতে পারবেন। আপনার চুল হয়ে উঠবে অনেক সিল্কি আর শাইনি।
৪) মধু ও অলিভ অয়েল মিশ্রণ
ঝরঝরে শাইনি চুল পেতে এই ট্রিটমেন্ট দারুন কাজের।
তৈরির পদ্ধতি
১/২ কাপ অর্গানিক মধু , ১/৪ কাপ অলিভ অয়েল এক সাথে মিশিয়ে হাল্কা গরম করে নিন। এরপর মিশ্রণটি ভালোভাবে চুলে লাগিয়ে ২৫/৩০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে ফেলুন। সপ্তাহে একদিন এই মিশ্রণ ব্যবহার করুন। দেখবেন শুষ্ক চুলের সমস্যা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে আর চুল হয়ে উঠছে গর্জিয়াস।
৫) অ্যালোভেরা জেল ও লেবুর রস
চুল পড়া বন্ধে আর নিস্প্রাণ চুলকে প্রাণবন্ত করতে অ্যালোভেরা ও লেবুর রসের মিশ্রণ খুব উপকারী। তার আগে জেনে নেই এমন কী উপাদান আছে এই অ্যালোভেরা জেল আর লেবুর রসে যা চুলের জন্যে উপকারী। অ্যালোভেরাতে আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, প্রোটিন ও নানা মিনারেলস যা চুলের পুষ্টির যোগান দেয়, চুল পড়া বন্ধ করে আর চুলকে করে ঘন, সিল্কি, শাইনি। এর প্রোটিওলাইটিক এনজাইম আপনার স্ক্যাল্পের ড্যামেজকে সারিয়ে তুলতে পারে। ফলে আপনার চুলের পুষ্টির পাশাপাশি চুল পড়া বন্ধ করে আর চুল বাড়েও তাড়াতাড়ি। চুলকে খুব সুন্দরভাবে কন্ডিশন করে আর খুশকির সমস্যা দূর করে। অ্যালোভেরায় থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান স্ক্যাল্পের ইনফেকশনের সম্ভাবনাকে কমায় আর স্ক্যাল্পের প্রদাহ বন্ধ করে। আর লেবুতে আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি যা চুলে থাকা কোলাজেনের সিন্থেসিসে দারুন সাহায্য করে। আর খুশকি সমস্যা মোকাবেলায় দারুন কাজ করে।
অ্যালোভেরা আর লেবুর রস দিয়ে মিশ্রণ তৈরির পদ্ধতি
চুলের দৈর্ঘ্য বুঝে অ্যলোভেরা জেল ও একটা আস্ত লেবুর রস নিন। এগুলো একসাথে ভালো করে মিশিয়ে চুলের গোড়াসহ সমস্ত চুলে লাগান। আধা ঘন্টা পর শ্যাম্পু করে নিন। সপ্তাহে একদিন এই মিশ্রণ ব্যবহারে আপনার চুল পড়া বন্ধ হবে, খুশকি দূর হবে আর চুল হবে অনেক ঝরঝরে সুন্দর।
আপনি চাইলে আপনার পছন্দমতো প্রোডাক্ট কিনতে পারেন অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে। আবার যমুনা ফিউচার পার্ক ও সীমান্ত স্কয়ার এ অবস্থিত সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ থেকেও কিনতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি!
ঘরোয়া এই পদ্ধতিগুলো অবলম্বণ করলেই আপনি হতে পারেন সুন্দর আর গর্জিয়াস চুলের অধিকারিণী!
ছবি- সংগৃহীত: সাজগোজ