আজকাল আমরা অনেকেই ত্বকের ব্যাপারে কমবেশি সচেতন হয়েছি। সবাই অন্তত চেহারার কিছুটা যত্ন নেওয়ার চেষ্টা করি। ত্বককে সুন্দর, ঝকঝকে ও মোলায়েম করার জন্য আমরা বুঝে না বুঝে অনেক রকমের প্রোডাক্ট ব্যবহার করে ফেলি, এটা ঠিক না। আমাদের সবার ত্বকই আলাদা, তাই সবসময় সব কিছু সবার ত্বকে কাজ করে না। মাঝে মাঝে ত্বকের উন্নতির বদলে এসব প্রোডাক্ট ব্যবহার করে ত্বকের ক্ষতিও হয়ে যায়। তাই চেহারায় কি মাখবেন না মাখবেন সে ব্যাপারে অনেক ভেবেচিন্তে, রিসার্চ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। তবে এখন যে পাঁচটি জিনিসের কথা বলবো, সেগুলো আপনি নির্দ্বিধায় এড়িয়ে যেতে পারেন। কারণ এসব ব্যবহারের কারণে আমাদের ত্বকের নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। চলুন জেনে নেই ত্বকের জন্য ক্ষতিকারক প্রোডাক্টগুলো সম্পর্কে।
ত্বকের জন্য ক্ষতিকারক ৫টি প্রোডাক্ট
১) সাবান
এটা খুবই আশ্চর্যজনক ব্যাপার যে বাজারে নানা রকমের ফেইসওয়াশ থাকার পরও অনেক মানুষ এখনো ত্বকে সাবান ব্যবহার করে। আমাদের শরীরের ত্বক সাবান সহ্য করতে পারলেও আমাদের চেহারার ত্বকের জন্য সাবান একদমই ভালো না। বাজারে কিছু হোয়াইটেনিং সাবান আছে যেগুলো মানুষ নির্দ্বিধায় ত্বকে ব্যবহার করে। কিন্তু বেশিরভাগ সাবান ব্যবহার করলে ত্বকের ময়েশ্চার চলে যায়, ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়, বলিরেখা তাড়াতাড়ি দেখা যায়। এমনকি তৈলাক্ত ত্বকেও সাবান ব্যবহার করা উচিত না। কারণ আমাদের মস্তিষ্ক তখন ত্বকে সিগন্যাল পাঠায় আরও তেল উৎপাদন করার জন্য। তখন চেহারা আরও তেলতেলে হয়ে যায়। ফলে আরও বেশি পিম্পল উঠে। আমাদের অনেকের ধারণা তৈলাক্ত ত্বক হলেই আর ত্বকে ময়েশ্চারাইজ করতে হবে না। কিন্তু তৈলাক্ত ত্বকেও ময়েশ্চারাইজেশনের প্রয়োজন আছে। ত্বককে রুক্ষ করে দেওয়ার মতো কোন রকমের প্রোডাক্ট চেহারায় ব্যবহার করা উচিত না, ত্বক যতই তৈলাক্ত হোক না কেন। তাই যেকোন ধরনের সাবানই চেহারা থেকে দূরে রাখুন। কারণ সাবান ত্বকের জন্য ক্ষতিকারক।
২) পেট্রোলিয়াম জেলি
আমরা অনেকেই ফেইসের ময়েশ্চারাইজেশন এর জন্য পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করি। মনে করি এতে চেহারার রুক্ষতা দূর হবে। কিন্তু আসলে এতে ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। পেট্রোলিয়াম জেলি চেহারায় ব্যবহার করলে ত্বকের লোমকূপ গুলো বন্ধ হয়ে যায়। সেজন্য ত্বকে ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি বেড়ে যায়।
৩) অ্যালকোহল সমৃদ্ধ প্রোডাক্ট
আমরা অনেকেই প্রোডাক্টের গায়ে উপাদান না দেখে আমাদের ত্বকে ব্যবহার করি। অনেক সময় আরেকজন চেহারায় কি ব্যবহার করে উপকার পেয়েছে সেটা দেখে হুট করে সেটাই ব্যবহার করে ফেলি, এটা দেখি না আমাদের ফেইসের ত্বকের ধরণ কেমন। কিন্তু আমাদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে ত্বকের জন্য কোন উপাদানগুলো ক্ষতিকর। রাবিং অ্যালকোহল (Rubbing alcohol) সব ধরণের ত্বকের জন্য খুব খারাপ। কারণ রাবিং অ্যালকোহল ব্যবহার করলে ত্বক রুক্ষ হয়ে যায়, বয়স তাড়াতাড়ি বেড়ে যায়। অনেক মেকআপ রিমুভার, টোনার আমরা ত্বক পরিষ্কার করতে ব্যবহার করি কিন্তু সেগুলোতে অ্যালকোহল থাকে।
আমরা অনেক ধরনের মেকআপ রিমুভিং ফেস ওয়াইপ ব্যবহার করি মেকআপ তুলতে যাতে অ্যালকোহল থাকে। এমন ওয়াইপ কেনা উচিত যেটা অ্যালকোহল ফ্রি। মেকআপ তোলার জন্য সবচেয়ে কার্যকরী ও সাশ্রয়ী একটি পণ্য হলো নারিকেল তেল। নারিকেল তেল দিয়ে আলতো করে চেহারা ম্যাসাজ করে কটন প্যাড বা টিস্যু দিয়ে মুছে ফেললে ত্বকের ক্ষতি হয় না, ত্বক মোলায়েম ও হয়। এছাড়াও আরেকটা প্রোডাক্ট আছে যেটা আমরা না বুঝেই চেহারার কাছাকাছি, ঘাড়ে, হাতে স্প্রে করি। সেটা হলো পারফিউম। আমাদের পারফিউমে প্রচুর পরিমাণ অ্যালকোহল থাকে যা ত্বকে কখনোই সরাসরি স্প্রে করা উচিত না, আর চেহারার কাছে তো অবশ্যই না। পারফিউম শুধু কাপড়ের উপর দিয়ে স্প্রে করা উচিত। এছাড়া শরীরের কোথাও মাখা উচিত না।
৪) শ্যাম্পু
অনেকেই গোসল করার সময় ইচ্ছাকৃত কিংবা অনিচ্ছাকৃতভাবে চেহারায়ও শ্যাম্পু লাগিয়ে ফেলে। আমাদের সচেতনভাবে এই কাজটি থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ আমাদের ত্বক চুলের চেয়ে আরও অনেক সেনসিটিভ। শ্যাম্পুর কেমিক্যাল আমাদের ত্বকের জন্য ক্ষতিকর।
৫) বডি লোশন
আমাদের শরীরের ত্বক আর চেহারার ত্বকে অনেক পার্থক্য রয়েছে। যেসব প্রোডাক্ট বাকি শরীরে ব্যবহার করার জন্য তৈরি করা সেগুলো কখনোই ফেইসে ব্যবহার করা ঠিক না। এরকম হলে খুবই সহজ হতো যদি আমরা গায়ে লোশন মেখে সেই একই লোশন চেহারায়ও মেখে ফেলতে পারতাম। কিন্তু এরকম কখনোই করা উচিত না। কারণ বডি লোশন আমাদের চেহারার ক্রিমের চেয়ে আরও অনেক ঘন। তাই আমাদের ফেইসে ব্যবহার করলে লোমকূপ বন্ধ করে ফেলতে পারে। বেশিরভাগ লোশনেই সুগন্ধি যোগ করা থাকে যা আমাদের চেহারার ত্বকে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করতে পারে। ত্বকের জন্য ক্ষতিকারক প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে বডি লোশন উল্লেখযোগ্য।
ত্বকের যত্ন অবশ্যই করবেন, কিন্তু লক্ষ্য রাখবেন যত্ন করতে গিয়ে ত্বকের ক্ষতি করে ফেলছেন না তো!! ত্বকের জন্য ক্ষতিকারক প্রোডাক্টগুলো সম্পর্কে জেনে নিয়ে সঠিক যত্ন নিন। সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন।
ছবি- সংগৃহীত: সাটারস্টক