বছর ঘুরে আবারো চলে এলো শীতের মৌসুম। চারদিকে এখনই হিম হিম আবহ ঘিরে ধরেছে। বাতাসে বইছে শীতের আমেজ। শেষ রাতের দিকে এখন আমাদের কাঁথার দরকার পড়ে যায়। আর যারা ভোরে হাঁটাহাঁটি করেন তারা দেখতে পান কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের স্নিগ্ধ সকাল। সেই সাথে শিশির ভেজা ঘাস, রাস্তাঘাট, গাছপালা। কুয়াশা ঘেরা ঠান্ডা আবহাওয়াই জানান দিচ্ছে যে কিছুদিনের মধ্যেই জেঁকে ধরবে শীত। কাজেই সবাই এখন আলমারি থেকে তাদের শীতের কাপড় নামানো প্রায় শুরুই করে দিয়েছেন। কিন্তু শীতের কাপড় আলমারি থেকে বের করে সরাসরি ব্যবহার করাও উচিত না। কারণ বছর ধরে আলমারি বা বক্সে পড়ে থাকা অব্যবহৃত গরম কাপড়গুলোতে ভ্যাপসা একটা ভাব থাকে। এছাড়া পোকা আক্রমণের সম্ভাবনাও থাকে আর সাথে গুমোট একটা গন্ধতো আছেই। কাজেই এসব কাপড় আলমারি থেকে বের করে সরাসরি গায়ে দেয়া মোটেও স্বাস্থ্যসম্মত না। এতে করে শরীরে অ্যালার্জিজনিত সমস্যা, র্যাশ উঠা ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। কাজেই শীতের কাপড় ব্যবহারের পূর্বে বিশেষ কিছু দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
শীতের কাপড় ব্যবহারের আগে করণীয়
শীতের কাপড় বলতে তো সোয়েটার, জ্যাকেট, মোজা, টুপি, কাঁথা, কম্বল, লেপ এসবই। সুতরাং দীর্ঘদিন বস্তাবন্দি এসব গরম কাপড়গুলো ব্যবহারের পূর্বে ভালোভাবে ২/৩ দিন কড়া রোদ লাগিয়ে ঝেড়ে পরিষ্কার করে ফেলুন। যেগুলো ধোয়ার উপযোগী সেগুলো অবশ্যই ধুয়ে ব্যবহার করতে হবে। চলুন শীতের কাপড়ের আরও কিছু যত্ন সম্পর্কে জেনে নেই-
১) সোয়েটার
সোয়েটার ব্যবহারের আগে ধুয়ে নেয়া ভালো। সোয়েটার মূলত উলেন বা পশমের হয়ে থাকে। কাজেই এটা ধুতে সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার না করে ঠান্ডা পানিতে শ্যাম্পু মিশিয়ে ধোয়া উচিত। আর সাথে অল্প পরিমাণ ভিনেগার মিশিয়ে নিলে কাপড়টা আরো ঝকঝকে থাকবে, তবে সাদা কাপড়ের বেলায় পানিতে ভিনেগার না মিশানোই ভালো। তার বদলে লেবুর রস মিশিয়ে নিলে উপকার পাওয়া যায়।
এগুলো ছাড়াও বাজারে উলেন কাপড় ধোয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের লিকুইড সামগ্রী পাওয়া যায়, যা কাপড়ের যত্নে অনেক উপকারী। সোয়েটার কখনোই ব্রাশ বা হাত দিয়ে রগরিয়ে ঘষে বা কেচে ধোয়া উচিত নয়। তাতে করে সোয়েটারের আকার নষ্ট হয়ে যাবে। যতটা সম্ভব ওয়াশিং মেশিন এড়িয়ে চলাই ভালো তবে নিতান্তই দরকার পড়লে উলেন অপশনে দিয়ে কাপড় পরিষ্কার করুন। ধোয়ার পর অন্যান্য কাপড়ের মতো না চিপে হালকাভাবে নিংড়ে নিয়ে রোদে শুকাতে দিন।
২) ফ্লানেলের কাপড় ও অন্যান্য চাদর
এসব কাপড়ের ক্ষেত্রেও সাবান ও ডিটারজেন্ট দিয়ে না ধুয়ে শ্যাম্পু দিয়ে ধুলে কাপড়ের উজ্জ্বলতা ঠিক থাকে এবং ঘন্টা খানেক ভিজিয়ে রেখে একটু কচলে নিলেই ময়লা পরিষ্কার হয়ে যায়। তবে বেশি ময়লা হলে এক্ষেত্রে হালকা গরম পানি মিশিয়ে নিয়ে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে সামান্য কচলে নিলেই ময়লা উঠে যাবে, পরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
৩) কোট বা লেদারের কাপড়
কোট আর লেদারের কাপড় ঘরে না ধুয়ে লন্ড্রিতে ড্রাই ক্লিন করিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। এসব কাপড় ব্যবহারের পর হালকাভাবে নরম ব্রাশ দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করে হ্যাংগারে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। সঠিকভাবে যত্ন নিলে এ ধরনের কাপড় অনেকদিন পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।
৪) লেপ ও কম্বল
লেপ ব্যবহারের পূর্বে কড়া রোদ লাগিয়ে কভারে ভরে গায়ে দিতে হবে। আর কম্বল ব্যবহারের আগে ড্রাই ক্লিন করিয়ে নিলে ভালো। সপ্তাহে একবার লেপ কম্বল দুটোই রোদ লাগিয়ে ঝেড়ে রাখতে হবে। কম্বলে খুব দ্রুতই ময়লা জমে আর এটা ধোয়ার মতো জিনিসও না। কাজেই কম্বলে কভার লাগিয়ে ঢেকে রাখলে ময়লা হবে না। নিয়মিত কম্বল আর লেপের কভার ধুয়ে পরিষ্কার রাখলেই হবে।
৫) কাশ্মিরী ও পশমী চাদর
শীতের সময় কাশ্মিরী ও পশমী চাদর ব্যবহার করতে অনেকেই বেশ কমফোর্ট ফিল করেন। তবে এ ধরনের চাদরের যত্ন না নিলে নষ্ট হতেও বেশি সময় লাগবে না। তাই এগুলো ব্যবহারের আগে ভালোভাবে রোদ লাগিয়ে এরপর গায়ে দিতে হবে। এমন চাদরগুলো সারাসরি পানি দিয়ে না ধুয়ে ড্রাইওয়াশ করিয়ে নিলেই অনেকদিন ভালো থাকবে।
৬) মোজা, মাফলার ও টুপি
শীতে সোয়েটার, চাদরের চেয়ে বেশি ময়লা হয় মোজা, টুপি ও মাফলার। কাজেই কয়েকদিন পরপর এগুলো সাবান অথবা ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে।
৭) কাঁথা
কাঁথার জন্য আলাদা তেমন কোনো যত্নের প্রয়োজন হয় না। ব্যবহারের আগে ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে এবং যতবার ময়লা হবে ততবারই একই পদ্ধতিতে পরিষ্কার করলেই কাঁথার যত্ন নেয়া হয়ে যায়।
এই সাধারণ বিষয়গুলো অনুসরণ করলেই শীতের কাপড় নিয়ে তেমন একটা ঝামেলায় পড়তে হবে না। সেই সাথে অ্যালার্জি ও শ্বাসকষ্টের মতো কোনো সমস্যাও হবে না। সেই সাথে শীতে সুস্থ ও নিরাপদে থাকতে পারবেন। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
ছবি: সাজগোজ; সাটারস্টক; ইন্ডিয়া মার্ট.কম