৭ জানুয়ারি, ২০১১: শীতের সকাল। কুয়াশাভোরের কুঁড়িগ্রাম। ফুলবাড়ী সীমান্তের মানুষের সকাল হলো কাঁটাতারে ঝোলানো ১৫ বছরের কিশোরী ফেলানীর লাশ দেখে।মনে পড়লো? দুঃখ হয়? ক্ষোভ হয়? চোখ ভেজে এখনো? জানি কারো হয়, কারো হয় না। আমাদের সয়ে গেছে। আমাদের আর গায়ে লাগে না। তিন সীমান্তে থাকা আয়তনে বহুগুণ বড় প্রতিবেশী রাষ্ট্রের এসব ছোটখাটো অনাচার আমাদের সয়ে গেছে। প্রতিদিন কারণে অকারণে মৃত্যু দেখা এই দেশের মানুষের উপর এক ফেলানীর লাশ আর কতই বা প্রভাব ফেলবে?তাই ২ বছর ৮ মাস বাদে এই ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ভারত বিচার নামের এই প্রহসনের স্পর্ধা করার সাহস পায়, রায় দিয়ে দেয় “The trial court found the accused Ct Amiya Ghosh ‘Not Guilty’ ”
আমাদের ভারত-প্রীতি, আমাদের “বাংলাদেশী” বোধের অভাব, মাথা উঁচু করে শক্ত গলায় কথা বলার সাহসের অভাব প্রতিদিন ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ সীমান্তে জন্ম দিচ্ছে নতুন ট্রাজেডীর। আপনাদের ২৪ জুলাই, ২০১১ এর কথা মনে পড়ে? বুড়িমারী সীমান্তে এক বাংলাদেশিকে হত্যা করে তার লাশ নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছিলো ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ। পরিচয়পত্রঃ
দুই সন্তানের পিতা এই রফিকুল ইসলামকে বেদম প্রহার ও কপালে ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে বিএসএফ। পরে লাশটি সীমান্তের সানিয়াজান নদীতে ভাসিয়ে দেয় তারা। অথচ তার কিছুদিন আগেই সীমান্তে বৈঠক করে বিএসএফ বিজিবিকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো “to hold fire.”
ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত সাক্ষী হয়ে আছে এমন হাজার লাশের, সীমান্তের হাজার পরিবার বয়ে বেড়াচ্ছে এই সীমান্ত হত্যার ট্রাজেডীর গল্প। ৭১ এর ঋণের বোঝা টেনে চলব আমরা, আর সেই বোঝার নীচে , ভারতের শক্তি আর মনিবসুলভ অনাচারের বলি হবে ফেলানীরা। ভারতের জন্য আমাদের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির সামনে ফেলানী, রফিকদের জীবন ভীষণ সস্তা।
স্পষ্টত ভারত কি রায় দেবে শেষ পর্যন্ত সেটা আমাদের এখতিয়ারে নাই, দুই বছর ধরে ফেলানীর হত্যার বিচার দাবি করার পর যখন এমন রায় আসে তখন রিভাইজ রায় কি হবে সেই আশায় থাকার কোন মানে হয় না। এই হত্যার বিচার চেয়ে আমাদের সরকার কি করতে পারত, বা কি করেছে বা কি করবে এসব আলো চনা করার ইচ্ছা হচ্ছে না আজ। আমাদের মত চুনো পুঁটিরা সেসব নিয়ে কথা বললেও কখনো সেগুলো “যথাযথ কর্তৃপক্ষ” এর কানে গিয়ে পৌঁছায় না। তাই কারো “অফিসিয়াল ফেইসবুক টাইমলাইন” থেকে ফেলানী নামক ১৫ বছরের কিশোরীর জন্য দুঃখ জানানো হয় না।
আজ তাই রাজাদের কথা থাক, আজ আমাদের কথা হোক। গত ৪০ বছরে ভারতের যেই একটা একটা করে আঘাতের পর আঘাত বাংলাদেশ শরীরে ধারণ করেছে, আসুন সেই লজ্জাগুলোর হাজার ভাগের একভাগ হলেও আজ ভারতকে ফিরিয়ে দেই। গুগল ম্যাপে বদলে গেছে ঢাকার ভারতীয় হাই কমিশনের সামনের রাস্তার নাম। গুলশান সার্কেল-১ এর ১৪২ নম্বর এই সড়কটি এখন চিহ্নত হচ্ছে ‘ফেলানী রোড’ নামে। প্রাতিষ্ঠানিক কোনো স্বীকৃতি না থাকলেও শুক্রবার দুপুর থেকে গুগল ম্যাপে যুক্ত হয়েছে নতুন এই সড়কের নাম। গুগল আর্থ থেকেও এই সড়কটির নাম দেখানো হচ্ছে- ‘ফেলানী রোড’ হিসেবে। বাংলা অক্ষরেই তেজগাঁও-গুলশান সংযোগ সড়কের পাশের সড়কটিকে ‘ফেলানী রোড’ নামে চিহ্নত করা হয়েছে।ফেসবুকসহ অনলাইনে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ব্লগে নেটিজেনদের অব্যাহত দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে গুগল ম্যাপস বাংলাদেশ টিম এই গুগলম্যাপস-এ এই নামটি যুক্ত করে নিয়েছে । আপনাদের কাজটি খুব সহজ।আপনার ফেইসবুক একাউন্টে একটি পাব্লিক চেক-ইন দিন ফেলানী সড়কে। স্ট্যাটাস আপডেটের অপশনে “add your location to post” এ ক্লিক করে যুক্ত করুন ফেলানী রোড। অনলাইনে অফলাইনে, রিক্সাওয়ালা, সিএনজি চালকদের মুখে ছড়িয়ে দিন ফেলানী রোডের নাম। মনুষ্যত্ব বিবেকবোধের মত কঠিন শব্দে যাবো না, শুধু বিধাতা প্রদত্ত নিজের শিরদাঁড়ার প্রতি সম্মান রেখে আসুন এই কাজটা করি। বিশ্বকে জানিয়ে দিন আমাদের শক্তি খুব সামান্য হলেও আমরা সামান্য নই, আমাদের জাতীয়তাবোধ সামান্য নয়।
ফেলানীর বিচার হবে কি হবে না জানি না, ভারত ফেলানীর বিচার করুক বা না করুক, আসুন আজকে একটি আন্দোলনের অংশ হই আমরা। ভারতকে মনে করিয়ে দেই ভারত স্বাধীন করা ক্ষুদিরাম, প্রীতিলতা, ঘাঁটি চিটাগং সব কিছু কিন্তু আজকের ভুখন্ড বাংলাদেশের অবদান। শুধু একটা মৃত্যুদন্ড নয়, ভারতকে সারাজীবনের জন্য ফেলানী ট্রাজেডির কথা মনে রাখতে হবে। আমাদের স্বপ্নটা খুব সোজা-সাপ্টা, বাংলাদেশে ভারতীয় হাই কমিশনে যত চিঠি আসবে সব চিঠিতে লেখা থাকবে এই ঠিকানাঃ
“ফেলানী রোড,
গুলশান সার্কেল-১, ঢাকা, বাংলাদেশ”
লিখেছেনঃ তাসিয়া নাজিন
ছবিঃইন্টারনেট