মেয়নিজের সাথে আমরা সবাই পরিচিত। এটি যেমন দেহের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো তেমনি চুলের সাস্থের জন্যও ভালো। এটি ড্যামেজড চুলেকে মোলায়েম, মসৃণ আর রিজুভিনেট করে। সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব, পল্যুশনের কারণে চুল ফ্রিজি হয়ে যায়। আপনার এ সকল সমস্যার সমাধান আপনার ফ্রিজেই আছে। চুলের সব ধরনের সমস্যা ফিক্স করার কাজে মেয়নিজের জুড়ি নেই। কথা হবে চুলের যত্নে মেয়নিজ নিয়ে।
মেয়নিজ তৈরি হয় ডিম, তেল আর ভিনেগারের সংমিশ্রণে। এ উপাদানগুলো রুক্ষ চুলের জন্য খুবই উপকারী। মেয়নিজে থাকা ভিনেগার চুলের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে, তেল চুলের স্ক্যাল্প-কে কন্ডিশন করে আর ডিমে থাকে বায়োটিন নামের এক ধরনের নিউট্রিয়েন্ট, যা চুলের গোড়া মজবুত করে। আজ মেয়নিজ দিয়ে ৮ ধরনের চুলের মাস্ক বানানো শিখবো আমরা। বাজারের মেয়নিজ দিয়েই যে কেশ চর্চা করতে হবে এমন কোন কথা নেই। তাই সবার আগে আমরা জানবো বাসায় কিভাবে মেয়নিজ তৈরি করা যায়। যে রেসিপিটি বলবো সেটি আপনি চুলের যত্নের কাজে ব্যবহার করতে পারবেন সেই সাথে খাদ্য হিসেবেও গ্রহণ করতে পারবেন।
চুলের যত্নে মেয়নিজ ও তা বানানোর পদ্ধতি
ডিমের কুসুম ২টি, ৩/৪ চা চামচ লবণ, ১/৪ চা চামচ চিনি, ৪-৫ চা চামচ লেবুর রস বা ভিনেগার, ১/২ কাপ অলিভ অয়েল, গরম পানি। প্রথমে ডিমের কুসুম, লবণ, চিনি আর ১ চামচ লেবুর রস ভালো ভাবে বিট করতে হবে। তারপর ১/২ কাপ তেল ফোঁটা ফোঁটা দিতে হবে। তারপর জোরে জোরে বিট করে আরও ২ চামচ লেবুর রস আর পানি দিতে হবে। এভাবে বিট করতে করতে ঘন ক্রিম পেলে বুঝবেন আপনার মেয়নিজ রেডি। এটি ফ্রিজে ১ সপ্তাহ সংরক্ষণ করতে পারবেন।
চুলের যত্নে মেয়নিজ দিয়ে বানানো মাস্ক
১. অতিরিক্ত শুষ্ক চুলে পাকা কলা ও মেয়নিজের মাস্ক লাগালে বেশ ভালো উপকার পাবেন। এমন কলা নিবেন যেটি অনেক বেশি পেকে গেছে, এর সাথে মিশান ২-৩ টেবিল চামচ মেয়োনিজ সেই সঙ্গে দিন ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল। উপাদানগুলো এক সাথে খুব ভালোভাবে মিশান। তারপর চুলে লাগিয়ে শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে আধা ঘণ্টা থেকে ১ ঘণ্টা রাখুন। এবার কোন মাইলড শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
২. আসুন এবার একটি হারবাল মেয়নিজ হেয়ার মাস্ক বানানো যাক। একটি বড় ডিমের কুসুম, ১ টেবিল চামচ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার, ২ টেবিল চামচ মেয়নিজ, ৩ টেবিল চামচ লেবুর রস, ১ টেবিল চামচ রোজ মেরি পাউডার ( যদি পাওয়া যায়), ১ টেবিল চামচ নারকেলের তেল, ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল, ৮ ফোঁটা ভিটামিন ই অয়েল। সবগুলো উপাদান খুব ভালোভাবে মেশান। তারপর চুলে লাগিয়ে ১ ঘণ্টা রাখুন। প্রত্যেক মাসে ২ বার করে এই মাস্কটি লাগান। দেখবেন চুল অনেকটাই ম্যানেজেবল হয়ে এসেছে।
৩. চুল ডিপ কন্ডিশন করার কাজে মেয়নিজের চেয়ে সস্তা আর উপকারী উপাদান আর কিছুই নেই। ১ কাপ মেয়নিজ ( চুলের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী ), ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল, ১ টেবিল চামচ বাদামের তেল নিন। তারপর ভালোভাবে মিশিয়ে মিশ্রণটিকে ১৫ মিনিট এভাবেই রেখে দিন। উপাদানগুলো যেন আরও ভালোভাবে মিশে যায়। এরপর চুলের গোড়ায় ম্যাসেজ করে লাগিয়ে নিন।
৪. আপনার যদি চুল সোজা করার আকাঙ্ক্ষা থাকে তাহলে মেয়নিজ আপনার খুব কাছের বন্ধু। ২দিন অন্তর অন্তর শুধু মেয়নিজ দিয়ে চুল আঁচড়ে নিন। এভাবে কিছুক্ষণ আঁচড়ানোর পর চুল ঐভাবেই রেখে দিন আধা ঘণ্টা। তারপর যদি আপনার চুল অয়েলি হয়ে থাকে তাহলে শ্যাম্পু আর যদি ড্রাই হয়ে থাকে তাহলে শুধু মাত্র পানি দিয়ে চুল রিন্স করে নিন। উপকার অবশ্যই পাবেন।
৫. হেয়ার প্রোটিন ট্রিটমেন্ট করতে আমরা সবাই পার্লারে দৌড়াই অথচ বাসায় বসেই অনায়াসে কম খরচে আমরা তা করতে পারি। মেয়নিজ হবে প্রধান উপাদান। প্রথমে ডিম ভালো করে ফেটিয়ে নিন। এর সাথে একে একে মিশান মেয়নিজ, টক দই, অল্প হেনা আর নারকেলের তেল। সবগুলো উপাদান আপনার চুলের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী নিবেন। তারপর হেয়ার প্যাকটি চুলে লাগিয়ে রাখুন ঘণ্টা খানেক। হারবাল কোন শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
৬. অ্যাভোকাডোর সাথে মেয়নিজের সংমিশ্রণ আপনার চুলকে করবে সুপার সফট।
৭. ১ কাপ মেয়নিজ নিন এর সাথে মিশান ১ টেবিল চামচ জবা ফুলের গুঁড়া, ১ টেবিল চামচ আমলকীর গুঁড়া, ২ টেবিল চামচ তিলের তেল। এই মিশ্রণটি আপনার রুক্ষ ড্যামেজড চুলে আর্দ্রতা বজায় রাখবে।
৮. চুল যদি অনেক রাফ হয়ে যায় তাহলে ২ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেলের সাথে ১ টেবিল চামচ মধু আর আধা কাপ মেয়নিজ মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে রাখুন আধা ঘণ্টা। তারপর নরমাল পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। যদি ১দিন শুধু পানি দিয়ে ধুয়েই রাখতে পারেন তাহলে খুব ভালো আর না হলে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
চুল সবার কাছেই অনেক মূল্যবান। কারণ একবার চুলে সমস্যা দেখা দিলে তা সহজে ঠিক হতে চায় না। তাই সময় থাকতেই এর যত্ন নিন। চুলের যত্নে মেয়নিজ ব্যবহার করুন। আর চুল রাফ হলেই যে শুধু এই মাস্কগুলো ব্যবহার করবেন তা কিন্তু নয় বরং সমস্যা দেখা দেয়ার আগে থেকেই রেসিপিগুলো ট্রাই করুন।
ছবি- সংগৃহীত: সাজগোজ