মেনোপজ হল স্থায়ীভাবে মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া। কখন বুঝবেন আপনি মেনোপজে পৌঁছেছেন? অন্তত এক বছর যদি টানা আপনার মাসিক বন্ধ থাকে তবে বুঝবেন আপনার মেনোপজ হয়েছে। সাধারণত ৪০-৫০ এর মধ্যে এই শারীরিক পরিবর্তন হয়ে থাকে। ৪০ বা এর আগে হলে তাকে প্রিম্যাচুর মেনোপজ বলে। ৫৫ এর পরেও না হলে তাকে ডিলেইড মেনোপজ বলে। মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া নিয়ে চলুন জেনে নিই বিস্তারিত।
মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া বা মেনোপজের কারণ
– ওভারিয়ান ফলিকুলার একটিভিটি কমে গেলে অর্থাৎ মেনোপজের কয়েক বছর আগে থেকেই ওভারিয়ান ফলিকল কমে যেতে থাকে এবং পিটুইটারি গোনাডোট্রোপিনের প্রতি অসংবেদনশীল হয়ে যেতে থাকে। ওভারি থেকে হরমোন নিঃসরণ বন্ধের ফলই মেনোপজ।
– ওভারিয়ান ফেইলিউর হলে।
– কোনো কারণে দুইটি ওভারি ফেলে দিলে স্বাভাবিক ভাবেই মেনোপজ হয়ে যায় (অনেক রোগেরই চিকিৎসার জন্যে ওভারি ফেলে দিতে হতে পারে)।
– ল্যাকটেশনের (বাচ্চাকে দুধ পান করানো) সময় ঘন ঘন চক্র ধরে প্রচুর প্রোলাক্টিন নিঃসরণ হয় যা গোনাডোট্রোপিন এর নিঃসরণকে বন্ধ করিয়ে ওভারি থেকে স্টেরয়েড হরমোন তৈরি বন্ধ করে দিতে পারে।
– গোনাডোট্রোপিন রিলিজিং হরমোন এগোনিস্ট ফাইব্রোয়েড বা এন্ডোমেট্রিওসিস চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়, যা ওভারি থেকে স্টেরয়েড হরমোন নিঃসরণ বন্ধ করে চিরদিনের মত মাসিক হওয়া বন্ধ করে দিতে পারে।
মেনোপজের লক্ষণ সমূহ
০১. ভেসোমোটর – হাত পা জ্বালা করা, রাতে ঘেমে ওঠা, বুক ধড় ফড় করা, ক্লান্ত লাগা, রাতে ঘুম না হওয়া।
০২. ইউরোজেনিটাল – প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারা, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, হাঁচি-কাশিতে প্রস্রাব পড়ে যাওয়া। যোনিপথে রক্তপাত, যোনি শুষ্কতা, যৌন মিলনে কষ্ট হওয়া, যোনিতে ইনফেকশন, চুলকানি, সাদা স্রাব যাওয়া, যৌন চাহিদা কমে যাওয়া।
০৩. চামড়া ও চুল – চামড়ার স্থিতিস্থাপকতা কমে যায়। সিবাম ও ঘাম নিঃসরণ কমে যায়, চামড়ার নীচের ফ্যাট কমে যায়।
০৪. মানসিক পরিবর্তন – মাথা ব্যথা, অস্থির লাগা, হতাশ লাগা, হুটহাট রেগে যাওয়া, ঝিমানি ভাব।
০৫. অষ্টিওপোরোসিস, হাড় ব্যথা , হাড় ভেঙ্গে যাওয়া।
০৬. করোনারি হার্ট ডিজিজ, ইশকেমিক হার্ট ডিজিজ, স্ট্রোক হতে পারে।
মেনোপজ একটি স্বাভাবিক ঘটনা। এতে খুব বেশি সমস্যায় পরার কথা নয়। কিন্তু মেনোপজের প্রভাবে অনেক সময় লক্ষণ সমূহ ভয়াবহ আকার ধারন করতে পারে। যদি হরমোন বন্ধের ফলে মেনোপজে পৌঁছানো মহিলা কষ্টের মুখোমুখি হয় তবে তারও কিছু চিকিৎসা আছে। কিন্তু এটি নির্ণয় করা অর্থাৎ আসলেই মেনোপজের জন্যে হয়েছে কিনা তাও জানা দরকার।
মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া নির্ণয়
১. ১ বছরেরও বেশি সময় মাসিক বন্ধ থাকা।
২. ভেজাইনাল সাইটোলজি- ম্যাচুরেশন ইনডেক্স যদি কমপক্ষে ১০/৮৫/৫ হয়।
৩. সিরাম ইস্ট্রাডিওলঃ ২০ পিকোগ্রাম/মিলিলিটারের কম হলে।
৪. সিরাম এফ এস এইচ ও এল এইচঃ ৪০ মিলি আই ইউ/ মিলি লিটারের কম হলে।
মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া বা মেনোপজে চিকিৎসা
কাউন্সেলিং এ রোগীকে বোঝাতে হবে যে এটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় কারণে হচ্ছে এবং আস্থা দিতে হবে যে সেরে যাবে।
নন-হরমোনাল ট্রিটমেন্ট
– পুষ্টিদায়ক খাবার দেওয়া।
– ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, ফ্লুওরাইড, বাইফস্ফনেট, ক্যালসিটনিন, থায়াজাইড, পেরোক্সেটাইন, ক্লোনিডিন, ইস্ট্রোজেন রিসেপ্টর মওডুলেটর, গাবাপেন্টাইন ব্যবহার করলে ফল পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু কার কোনটা লাগবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে জানা যাবে। কারণ এক এক সমস্যার জন্য এক এক ওষুধ লাগবে, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া খেলে স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষতি হবে।
– বিড়ি সিগারেট ও মদ জাতীয় কিছু থাকলে খাওয়া ছেড়ে দিতে হবে।
হরমোনাল ট্রিটমেন্ট
hormone replacement therapy সংক্ষেপে HRT। হরমোনগুলো হচ্ছে, ইস্ট্রোজেন, ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন প্রিপারেশন একত্রে বা ইস্ট্রোজেন ও এন্ড্রোজেন প্রিপারেশন। হরমোন তিনটি ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
০১. লক্ষণসমূহ প্রতিকারে।
০২. অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধে।
০৩. মেনোপজের বছর গুলোতে জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে।
ছবিঃ সংগৃহীত – আকাশান্যাচারালস.কম, netdna-ssl.com