স্বাস্থ্যকর, সুন্দর ঝলমলে চুলের জন্য আমাদের শরীরের প্রয়োজন প্রোটিন, কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, মিনারেল এবং ভিটামিন। অপর্যাপ্ত পুষ্টি বা অতিরিক্ত ডায়েট চুল পড়ার জন্য দায়ী। আর এভাবেই এক সময়কার ঘন চুল কোথায় যেন হারিয়ে যায়। আমরা যত খাদ্য গ্রহণ করি তার মিনারেল ও ভিটামিন প্রথমে কাজে লাগায় শরীরের ভাইটাল অরগানগুলো, তারপর হেয়ার ফলিকল ও নখ বাদ বাকি নিউট্রিয়েন্ট গ্রহণ করে। তাহলে বুঝতেই পারছেন, গ্রহণকৃত পুষ্টি চুলের গোড়ায় অনেক পরে গিয়ে পৌঁছে। তাই যথেষ্ট পরিমাণে প্রোটিন, কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, মিনারেল ও ভিটামিন গ্রহণ করা খুব জরুরী। আজ কিছু জুসের কথা বলবো যেগুলো আপনার চুলে পুষ্টি যোগাবে। কিছু কিছু খাদ্য আছে যা সবজি বা ফল আকারে আমাদের খেতে ইচ্ছা করে না, কিন্তু জুস করে খেলে বারবার খেতে ইচ্ছা করবে। জুস আকারে যে কোন জিনিস আমাদের শরীর খুব তাড়াতাড়ি শোষণ করে, ফলে ফলাফলও খুব তাড়াতাড়ি উপভোগ করা যায়। যাই হোক, চলুন জেনে নেওয়া যাক ঘন চুল পেতে ৭টি সবজির পানীয় নিয়ে বিস্তারিত।
ঘন চুল পেতে ৭টি সবজির জুস
(১) গাজর
গাজরে আছে ভিটামিন এ যা মাথার স্কাল্পকে স্বাস্থ্যকর রাখে, চুলকে উজ্জ্বল করে তোলে। গাজর সেবাম উৎপন্নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। স্বাস্থ্যকর সেবাম উৎপন্নের মাধ্যমে গাজর দ্রুত চুল গজাতে সাহায্য করে। এখন স্বাস্থ্যকর, উপাদেয় গাজরের জুস কীভাবে বানাবেন তা বলে দিচ্ছি –
২টি খোসা ছাড়ানো গাজর টুকরো করে কেটে নিন। এর সাথে আধা কাপ টক বা মিষ্টি দই নিন। যদি টক দই দেন তাহলে অল্প কাঁচা মরিচ আর লবন যোগ করবেন। কিন্তু মিষ্টি দই দিলে এগুলো কিছুই লাগবে না। এবার ভালো করে ব্লেণ্ড করে প্রতিদিন সকালের নাস্তার সাথে পান করুন এই মজাদার জুস।
(২) পাকা টমেটো
টমেটোতে আছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা মাথার স্কাল্পের ব্লাড ফ্লো বাড়িয়ে দেয়। এই ফ্লো এর কারণে চুলের ফলিকল স্টিমুলেট হয় আর আপনার ঘুমন্ত চুলের রুটকে জাগিয়ে তোলে। একটি পাকা টমেটো টুকরো করে কেটে নিন। এর সাথে অল্প ধনে পাতা, অল্প কাঁচা মরিচ, লবণ দিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। চাইলে ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে পরিবেশন করুন।
(৩) আমলকী
আমরা সবাই চুলের যত্নে আমলকীর গুঁড়ো লাগিয়ে থাকি। তবে লবণ মাখানো ৪/৫ টি আমলকী চিবিয়ে খেলেও চুল পড়া অনেকাংশে রোধ হবে। আমলকীতে আছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, যা নতুন চুল গজাতে যেমন সাহায্য করে তেমনি সাহায্য করে চুল পড়া রোধে। আর এভাবে আপনার চুল ঘন হয়ে ওঠে।
(৪) কিউই
এটি আমাদের দেশে পাওয়া যায় না আবার অনেকেই আমরা এটার সাথে পরিচিত না। কিন্তু আমাদের মধ্যে যারা বাংলাদেশের বাইরে থাকি তাদের কাছে তো খুবই সহজলভ্য। এতে আছে ভিটামিন সি এমনকি একটি কমলার চেয়ে ২ গুন বেশি ভিটামিন সি তে ভরপুর। এই ভিটামিন সি চুলের ঝলমলে স্বাস্থ্যজ্জল চুলের জন্য যেমন উপকারী তেমনি উপকারী চুল গজানোর জন্যও। আবার কিউই তে থাকা ভিটামিন ই মাথার তালুর টিস্যু রিপেয়ার এবং রিবিল্ড করে আবার ড্যামেজড হেয়ার ফলিকল রিপেয়ার করে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। এবার কিউই দিয়ে দ্রুত চুল গজানোর জন্য একটি স্মুদির রেসিপি জানাবো।
১টি কিউই ফল, ২ টেবিল চামচ দই, কয়েকটি বাদাম আর আধা কাপ পাকা আম। সব একসাথে ব্লেণ্ড করে সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশন করুন।
(৫) পালং শাক
নামটি শুনেই হয়ত আঁতকে উঠছেন। কিন্তু একবার ভেবে দেখুন তো যে ব্যক্তি বাধ্যতামূলক ভাবে প্রতিদিন করলার জুস খাচ্ছেন, তার জুসের চেয়ে তো আপনার জুসটি অতটা ভয়ঙ্কর নয়। কয়েকটি দিন কষ্ট করুন আর তার পরবর্তী কয়েক দিনের মধ্যেই এর ফলাফল দেখতে পাবেন। পালং শাক চুলের বৃদ্ধি জন্য অনেক উপকারী কেননা এতে আছে ভিটামিন এ, সি এবং প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন। এই নিউট্রিয়েণ্ট গুলো চুলের স্কাল্পে তেল উৎপন্ন করে যা চুলের গ্রোথ বাড়িয়ে দেয় হাজার গুনে। ভিটামিন এ, সি এর অভাবে চুলের গ্রোথ যেমন ব্যাহত হয় তেমনি ব্যাহত হয় স্বাস্থ্যজ্জ্বল চুল। এতে আছে ক্যালসিয়াম এবং আয়রন। এই ২ টি উপাদানও চুলের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয়। এগুলোর অভাবে চুল হয়ে ওঠে পাতলা, ভঙ্গুর্, নিষ্প্রাণ। মনে রাখবেন পাতলা চুলের গ্রোথ খুব ধীর গতিতে চলে।
(৬) অ্যালোভেরা
ফুটপাথে আসা যাওয়ার পথে হয়ত দেখেছেন অ্যালোভেরার জুস বিক্রি হচ্ছে। হয়ত রাস্তার পাশের দোকানেরটা খেতে আপনার স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রশ্ন আসবে তাই খুব সহজে বাসায় বানিয়েও খেতে পারবেন এটি। অ্যালোভেরাতে থাকা এমাইনো এসিড, প্রোটিন, মিনারেল এবং ভিটামিন বিশেষত এ, সি, ই ড্যামেজড চুলের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এমনকি নতুন চুল গজাতে এর ভূমিকাও অসীম। চলুন অ্যালোভেরা জুস বানানোর প্রণালীটি জেনে নিই।
একটি অ্যালোভেরা পাতা নিন। এর জেল চামচ দিয়ে বের করে আনুন। এক গ্লাস পানির সাথে একটু বিট লবণ, কাঁচা মরিচ মিশিয়ে ব্লেড করতে পারেন আবার চামচ দিয়ে ভালো করে নেড়ে পানির সাথে মিশিয়েও নিতে পারেন। এবার পান করুন আর হয়ে গেল আপনার চুলের সম্পূর্ণ ট্রিটমেন্ট।
(৭) শসা
শসাতে আছে যথেষ্ট পরিমাণে সিলিকা, সালফার এবং ভিটামিন এ। এই উপাদান গুলো চুলের গ্রোথ এবং চুল পড়া প্রতিরোধের জন্য অনেক উপকারী। কাঁচা শসার জুস স্ট্রং, স্বাস্থ্যকর চুল গজাতে সাহায্য করে। কেননা, শসা চুল পড়ার কমন কিছু উপসর্গের সাথে মোকাবেলা করে। প্রতিদিন খোসা সহ একটি করে কচি শসা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। ১ মাস পর থেকে দেখবেন আপনার মাথায় নতুন চুল উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে।
আমরা সবাই খাবার না খেয়ে তা বাইরে থেকে লাগিয়ে উপকার পাওয়ার আশা করে থাকি। কিন্তু বাইরে থেকে লাগিয়ে সাময়িক সৌন্দর্য উপলব্ধ হয়। স্থায়ী ভাবে উপকারিতার জন্য পুষ্টি ভেতর থেকে আসা দরকার। তাই খাদ্য গুলো বাইরে থেকে চুলে না লাগিয়ে পরিমিত ভাবে খাওয়ার চেষ্টা করুন তাতেই আপনার চুল ফিরে পাবে প্রাণ, হয়ে উঠবে সিল্কি ঝলমলে। আপনারই মন চাইবে ঘন চুল গুলো বারবার ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখতে।
ছবি – Shutterstock