চা পানের অভ্যাস আমাদের সবার মাঝে থাকলেও আমারা কেউ হয়তো সুন্দর ত্বকের কথা ভেবে চা পানে অভ্যস্ত না। এই প্রাকৃতিক পানীয়তে যেমন আছে অনেক স্বাস্থ্য বেনিফিট (Benefit) তেমনি আছে আমাদের ত্বকের রঙ উজ্জ্বল করার গুণাগুন। এখন বাজারে বিভিন্ন রকম ফ্লেভারের চা পাওয়া যাচ্ছে আর সেসব ফ্লেভারের মধ্যে আদা চা, গ্রিন টি, ব্ল্যাক টি (Black Tea), হোয়াইট টি বা ক্যামোমাইল টি (Camomile Tea) অন্তর্ভুক্ত আর উজ্জ্বল ত্বক পাওয়ার ক্ষেত্রে এই চা গুলোর অবদান অনস্বীকার্য। আজ আমরা বিভিন্ন চায়ের সাথে পরিচিত হব সেই সঙ্গে জানবো উজ্জ্বল ত্বক পেতে ৪ টি চা এর উপকারীতা।
সবুজ চা বা গ্রিন টি
স্টিমড (Steam) চা পাতা দিয়ে তৈরি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে (Antioxidant) ভরপুর এই চা ইতোমধ্যে আমাদের দেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কাজি, লিপ্টন কোম্পানির সবুজ চা বাংলাদেশের বাজারে অহরহ পাওয়া যাচ্ছে। প্রথমে জানা যাক সবুজ চা বা গ্রিন টি আমাদের ত্বকের জন্য কী কী ভুমিকা রাখে। এই চা প্রতিদিন পানের ফলে আমাদের ত্বক ডিটক্সিফাই হয়। বুঝতেই পারছেন ত্বকের বিষাক্ত পদার্থ নিঃসরণ হয়ে গেলে ত্বক এমনিতেই জেল্লা দেবে। সবুজ চায়ের আছে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি (Anti-inflammatory) গুণ, এই গুণের বদৌলতে ব্রণ বা রোজাসিয়া (Rojasia) থেকে হওয়া ত্বকের প্রদাহ থেকে আমরা মুক্তি পাই। কিছু বিশেষজ্ঞের মতে সবুজ চায়ে উচ্চ মাত্রার Epigallocatchin gallate থাকার কারণে কোলাজেনের (Collagen) ভাঙ্গন এবং সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির কারণে ঘটিত রিঙ্কেল বা অমসৃণ ত্বকের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
হোয়াইট টি বা ক্যামোমাইল টি
Twining নামক বিদেশি কোম্পানির তৈরি হোয়াইট টি এখন আমাদের দেশেও পাওয়া যাচ্ছে, উপরন্তু লিপ্টন কোম্পানির হোয়াইট টি পেয়ে যাবেন ডিপারটমেণ্টাল স্টোর (Departmental store) গুলোতে। চলুন জেনে নেওয়া যাক আপনার ত্বকের কী উপকারে আসতে পারে এ চা। হোয়াইট টি, কচি সবুজ চায়ের গুল্ম থেকেই সংগ্রহ করা হয়, এতে থাকা পলিফেনলের (Polyphenols) কারণে এই চা অ্যান্টি-এজিং (Anti Aging) হিসেবে কাজ করে। সাদা চায়ে থাকা অক্সিডেসনের (Oxidation) কারণে ত্বকের ক্ষতি প্রতিরোধ করে অতঃপর ত্বকের ইমিউন সিস্টেম (Immune System) শক্তিশালী করতে সক্ষম হয়। কিছু ক্ষেত্রে বলা হয়ে থাকে স্কিন প্রোটেকশনের (Protection) জন্য সাদা চা, সবুজ চায়ের চেয়েও বেশি কার্যকর। কেননা এতে অ্যান্টি-অক্সিডেণ্টের পরিমাণ একটু বেশিই থাকে আবার ক্যাফেইনের (Caffeine) পরিমাণ গ্রিন টিয়ের চেয়ে কম থাকে ফলে আমরা অতিরিক্ত ক্যাফেইন সেবন জনিত সমস্যা থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে পারি। নিয়মিত হোয়াইট টি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে আপনার যৌবনদীপ্ত রূপ ধরে রাখতে পারবেন বহুদিন যাবত।
ক্যামোমাইল চা
শরীর এবং মনকে প্রশান্ত করার মত সুগন্ধিযুক্ত এই চা সাধারণত রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে পান করা হয়ে থাকে। কেননা এটি রিলাক্সজেসনের জন্য সহায়ক, অন্যদিকে শান্তির ঘুম এনে দেয় দুই চোখ জুড়ে আর এই দুটি উপাদানকে গায়ের রঙ বজায় রাখার জন্য বা বাড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রয়োজনীয় উপকরণ হিসেবে গণনা করা হয়। সঠিক ঘুম ছাড়া চেহারায় বিবর্ণতা, রুক্ষতা,প্রিম্যাচিউর এজিং দেখা দেয়। এছাড়াও ক্যামোমাইল চা ক্ষত নিরাময়েও দক্ষতার স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম। আপনি যদি কোন থেরাপিউটিক স্কিনকেয়ার ট্রিটমেন্ট থেকে রিকভার করার পর্যায়ে থাকেন অথবা কোন সার্জারি, ব্রণের দাগ থেকে মুক্তি পেতে চান তবে নিয়ম করে ক্যামোমাইল চা খাওয়া শুরু করুন। আমাদের দেশে শুধু লিপ্টন কোম্পানির ক্যামোমাইল চা পাওয়া যায়।
জিঞ্জার টি
আদাতে আছে gingerol আর এই পটেণ্ট অ্যান্টি-অক্সিডেণ্ট উপাদানের মাধ্যমে আমাদের ত্বকের গভীরে অ্যান্টি-অক্সিডেণ্টের সুফল আমরা ভোগ করতে পারি। ফ্রি রেডিক্যালের ক্ষতিকর প্রভাবের কথা কার না জানা আছে? কিন্তু এর থেকে পরিত্রানের উপায় আমাদের অনেকের জানা নেই। তাই আজ জেনে নিন ফ্রি রেডিক্যালের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে আমাদের ত্বককে সুরক্ষা করার জন্য অ্যান্টি-অক্সিডেণ্ট খুবই প্রয়োজনীয়। এই ফ্রি রেডিক্যাল প্রি ম্যাচিউর এজিং, কোলাজেন উৎপন্নের গতি কমিয়ে দেয়া ও আনইভেন স্কিন টোনের জন্য অনেকাংশে দায়ী। নিয়মিত আদা চা পানের ফলে আপনার মলিন ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল।
এগুলো ছাড়াও আরও কিছু চা আছে যেমন হিবিস্কাস টি, Echinacea টি, Rooibos টি। কিন্তু এগুলো আমাদের দেশে খুব একটা প্রচলিত নয় তাই আর এগুলো নিয়ে আলোচনা করলাম না।
চা দ্বারা কিছু ঘরোয়া চর্চা
০১. আপনি যদি শুষ্ক ত্বকের অধিকারী হয়ে থাকেন তবে নিয়মিত কিছু সবুজ চায়ের লিকার মুখে স্প্রে করবেন। এতে আপনার শুষ্ক ত্বক আর্দ্রতা ফিরে পাবে আর নিমিষেই প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে আপনার রুক্ষ শুষ্ক ত্বক।
০২. আমাদের অনেকেরই চোখের নীচের ভাগ ফোলা থাকে যা দেখতে অনেকটা পুটলির মত। যেকোনো ফ্লেভারের একটি টি ব্যাগ চোখের ওপর দিয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিন। চায়ে থাকা ক্যাফেইন ব্লাড ভেসেল সঙ্কুচিত করে ফলশ্রুতিতে চোখের ফোলা ভাব কমে যায়।
০৩. এই চর্চাটি আমাদের মধ্যে খুবই প্রচলিত। তাও আরেকবার বলি। কালো চা বা সবুজ চা দিয়ে চুল ধুয়ে নিলে চুলে সাথে সাথে চকচকে ভাব চলে আসে।
০৪. পায়ে ঘামের দুর্গন্ধ রোধ করার জন্যও চায়ে থাকা ট্যানিক এসিড অনেক বেশি কার্যকর। পা দুটিকে চায়ে ভেজা পানিতে ডুবিয়ে নিন। দেখবেন দূর্গন্ধ অনেকটাই কমে গিয়েছে।
এসব চা গুলো বিভিন্ন গাছের ফল, মূল, পাতা বা ফুল থেকে প্রসেস করা হয়, তাই এর কোন ক্ষতিকারক দিক নেই বললেই চলে। বিভিন্ন গবেষণায় এসব চায়ের হেলথ বেনিফিটের ব্যাপারেও বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে এবং রিসার্চের ফলাফল স্বরূপ নিয়মিত এই বিভিন্ন ফ্লেভারের চাগুলো পানের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তাহলে বলার আর অপেক্ষা রাখে না ত্বক এবং স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য এই প্রাকৃতিক চায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে আমি বিশেষ ভাবে অনুরোধ করবো স্লিমিং টি জাতীয় কিছু পান না করার জন্য। কেননা FDA এতে থাকা senna, aloe, buckthorn এবং অন্যান্য উদ্ভিদ থেকে ডেরাইভড ল্যাক্সাটিভের ব্যাপারে সতর্কবানী জারি করেছে।
লিখেছেন – রোজেন
ছবি – হেলথমিআপ ডট কম