কিছু অভ্যাসে পরিবর্তন এনে সাবধানতার মাধ্যমে ক্যান্সারের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। কখনও বা সাবধান হওয়ার মাধ্যমে ক্যান্সার হলেও সেটাকে নিয়ন্ত্রণে আনা বা কোন কোন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে প্রথম স্টেজেই সনাক্ত করে চিকিৎসার মাধ্যমে খুব খারাপ অবস্থার দিকে যাওয়ার আগেই সেটা ঠেকানো সম্ভব। এক্ষেত্রে চিকিৎসক আপনার জন্য যেটা সবচেয়ে ভালো সেটাই করবেন। তবে আপনি কোন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছেন কিনা বা কিভাবে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারবেন সেটা যেন আপনি খুব সহজেই বুঝতে পারেন সেজন্য সাজগোজে কিছু ধারণা দেয়া হল।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানোর উপায়
(১) ধূমপান ত্যাগ করুন
ধূমপান যদি একবারে ত্যাগ করা সম্ভব না হয় তাহলে একটু একটু করে কমানোর চেষ্টা করুন। অ্যামেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন এক গবেষণায় বলা হয়েছে যে কেউ যদি দিনে ২০টি সিগারেট খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে ১০টিতে নিয়ে আসেন তাহলে সেক্ষেত্রে তার ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা ২৭% কমে যায়।
এভাবেই একটু একটু করে কমিয়ে এক সময় ধূমপানের অভ্যাস যদি পুরোপুরি ছেড়ে দিতে পারেন তাহলে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাবে। যারা ধূমপান করেন তারা মুখের ভেতরের কোন পরিবর্তন দেখতে পেলে দ্রুত চিকিৎসককে দেখান কারণ জিহবায় বা মুখের ভেতর সাদা সাদা দাগ হলে সেটা ক্যান্সারের ঠিক আগের স্টেজকে ইঙ্গিত করে। এই অবস্থাকে বলে leukoplakia যা পরবর্তীতে ওরাল ক্যান্সারে পরিণত হয়।
(২) ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন
হার্টের সুস্থতার পাশাপাশি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানোর জন্যও ওজন নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। অতিরিক্ত ওজনের ফলে গল ব্লাডার ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, কিডনির ক্যান্সারের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। তাছাড়া খাদ্যনালী (esophageal), অগ্ন্যাশয়ের (pancreatic) ক্যান্সারও অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির সাথে জড়িত। তবে এটা মনে রাখবেন যে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা আর ওজন এমনি এমনি কমে যাওয়া দুইটি এক ব্যাপার নয়। ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে আপনি পরিমিত পরিমাণে খাদ্য গ্রহণ এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন কমাতে পারলে বা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলে ভালো। কিন্তু এমনি এমনি কোন কিছু না করেই যদি আপনার ওজন কমতে থাকে তখন সেটা চিন্তার বিষয়। যেমন প্রতি মাসে কোন ডায়েট প্ল্যান এবং ব্যায়াম ছাড়াই যদি আপনার ১০ পাউন্ড এর বেশি ওজন কমতে থাকে সেক্ষেত্রে আপনার চিকিৎসকের কাছে যাওয়াটা জরুরী। বিশেষ করে থাইরয়েড এর পরীক্ষা নিরীক্ষা করানোটা জরুরী।
(৩) লক্ষণ দেখে বিভিন্ন পরীক্ষা করানো
বিভিন্ন পরীক্ষা করানোর মাধ্যমে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমে যাবে এটা বলা ঠিক না। আসলে পরীক্ষা করানোর মাধ্যমে ক্যান্সার প্রাথমিক অবস্থায় সনাক্ত করে সে অনুযায়ী চিকিৎসা করে অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। যেমন –
- যদি ইউরিন বা স্টুলের সাথে রক্ত যায় সেক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান, কারণ এটি কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। Pap tests and colonoscopies এর মাধ্যমে কোলন ক্যান্সার হওয়ার মত কোন ঝুঁকি বা পরিবর্তন লক্ষ্য করা সম্ভব। তবে সব ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এটা সম্ভব নয়।
- মেন্সট্রুয়েশান ছাড়াও রক্তপাত হলে ব্লাডার এবং কিডনী পরীক্ষা করানো দরকার।
- আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির মতে কোন ইনফেকশান বা ঠান্ডা লাগা ছাড়াই দীর্ঘ দিন ধরে জ্বর থাকলে সেটা ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। যেমন প্রথম স্টেজের ব্লাড ক্যান্সার লিউকোমিয়া (leukemia) অথবা lymphoma.
- এক গবেষণায় পাওয়া গিয়েছে যে মহিলাদের বিষন্নতা এবং পেট ব্যথার সাথে অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারের সম্পর্ক থাকতে পারে তাই এক্ষেত্রেও পরীক্ষা করানো দরকার।
- কোন কারণ ছাড়াই যদি ঘনঘন বদ হজম হয়।
- কোন কারণ ছাড়া দেহের একই স্থানে সবসময় ব্যথা হলে।
- ৩/৪ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কাশি থাকলে।
- স্টুলের রঙ এর পরিবর্তন দেখা গেলে।
- স্তনে কোন পরিবর্তন দেখা দিলে।
(৪) ব্যায়াম করুন
প্রতিদিন ১৫ মিনিট করে হলেও ব্যায়াম করুন। প্রতিদিন ব্যায়াম করলে তা আপনার ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৫০% পর্যন্ত কমিয়ে আনতে পারে।
(৫) ফল ও শাক সবজি ও কিছু উপকারী খাদ্য গ্রহণ
বিভিন্ন ধরনের খাদ্য আছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। টমেটো আর তরমুজে lycopene থাকে যা মূত্রথলির ক্যান্সার (prostate cancer) এর ঝুঁকি কমায়। পাকস্থলি, ব্লাডার, স্তন, কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে ভিটামিন সি জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করুন। premenopausal নারীর জন্য বিটা ক্যারোটিন (beta-carotene) এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন মিষ্টি আলু এবং ভিটামিন সি জাতীয় খাদ্য স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। ব্রোকলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ডালিম এবং বিভিন্ন ধরনের চা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে যেমন- গ্রিন, ব্ল্যাক, হোয়াইট, উলোঙ (oolong).
(৬) স্ট্রেসমুক্ত থাকুন
আপনার স্ট্রেস যত বেশি থাকবে আপনি সেটা থেকে মুক্তি লাভের জন্য তত অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসে জড়িয়ে যাবেন যেগুলো ক্যান্সার হওয়ার জন্য দায়ী। যেমন- অতিরিক্ত খাওয়া, অতিরিক্ত ধূমপান। স্ট্রেস মুক্ত থাকার জন্য মেডিটেশান করুন, ব্যায়াম করুন।
(৭) পরিবারের সদস্যদের শারীরিক অসুস্থতার ইতিহাস জানা
বিভিন্ন আত্মীয় বা পরিবারের সদস্যদের বা পূর্ব পুরুষদের শারীরিক অসুস্থতার ইতিহাস জানা থাকলে সচেতন হওয়া সম্ভব।
ছবি – আইসিআই.রেডিওকানাডা.কা