একনে বা ব্রণ বা পিম্পল মানেই একটা বিরক্তিকর অনুভূতি, সেটা যেখানেই হোক না কেন। যদিও বা টিন-এজ সময়েই সবচেয়ে বেশি একনের সমস্যা দেখা দেয়, কিন্তু অনেকেই আছেন, যাদের এই বয়স পার হয়ে যাওয়ার পরেও ব্রণের সমস্যা থেকেই যায়। ঠিক তেমনি একনে যে কেবল মুখে বা গালে সীমাবদ্ধ থাকবে, তেমনটাও নয়। অনেকের পিঠে বা শরীরের অন্যান্য জায়গাতেও ব্রণ হতে পারে। আর ব্রণ মানেই র্যাশ, দাগ। তার মানে পিঠ খোলা ব্লাউজ বা সুন্দর ডিজাইন করা জামার নকশাও অনেক সময় বাদ দিতে হয় এই পিঠের ব্রণ হবার কারণে। অনেকে আবার এখন একটুখানি অফ শোলডার গাউন পড়তে চান, সেখানেও বিপত্তি হয়ে দাঁড়ায় এই পিঠের ব্রণ। আজকে তাহলে জেনে নেয়া যাক, পিঠের ব্রণ আসলে কেন হয় এবং দূর করতে হলে আপনাকে কী কী করতে হবে!
পিঠের ব্রণ নিয়ে যত কথা
কারণঃ
১) জিম করে কাপড় না বদলালে
যারা জিম করেন, তারা জিমের কাপড় প্রতিদিন না বদলালে এবং জিমের পর শাওয়ার না নিয়ে অন্য কাপড় পড়ে ফেললে পিঠের ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাহলে পিঠের একনে ঠেকাতে হলে প্রথমেই এই জিনিসগুলো মাথায় রাখতে হবে।
২) স্ক্রাবিং না করা
আরেকটা জিনিস হলো, পিঠে নিয়মিত স্ক্রাবিং না করা। পিঠে নিজে নিজে স্ক্রাবিং করাটা একটু ঝামেলা বলে এই কাজটা অনেকেই করেন না। এটাও পিঠে একনে হওয়ার আরেকটি কারণ। এখন বাজারে লম্বা স্টিকের মাথায় লুফা লাগানো থাকে, এমন স্ক্রাবার পাওয়া যায় যেটা দিয়ে নিজেই স্ক্রাবিং করা যায়। তাই পিঠে একনির সমস্যা থাকলে একনের সাথে লড়াই করতে পারে, এমন কোন বডি ওয়াশ দিয়ে রোজ গোসলের সময় পিঠে স্ক্রাবিং করুন। আর যতদিন না পর্যন্ত পিঠের একনে পুরোপুরি ভালো হচ্ছে, ততদিন যতটা সমভব চুল বেঁধে রাখুন। পিঠের ওপর ছেড়ে রাখবেন না।
৩) কিছু সাধারণ বিষয়
প্রথমেই কিছু বেসিক জিনিস মাথায় রাখতে হবে। পিঠে যদি একনে হয়ে থাকে তাহলে অনেকগুলো জিনিস এখানে ভূমিকা রাখতে পারে। যেমনঃ আপনি কী শ্যাম্পু ব্যবহার করছেন, কী বডি ওয়াশ বা বডি সোপ লাগাচ্ছেন শরীরে, কী ধরনের বডি লোশন লাগাচ্ছেন, কী ধরনের কাপড় নিয়মিত পড়ছেন, এই জিনিসগুলো পিঠের ব্রণ হওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে। তাই পিঠে ব্রণ হলে এই জিনিসগুলো বদলে ফেলতে হবে, তবে সবগুলো একসাথে নয়। একটা একটা করে প্রোডাক্ট বদলে দেখুন ঠিক কোনটায় আপনার পিঠের ব্রণ কমছে বা বাড়ছে। এরপর আসে কাপড়ের কথায়। সবসময় খুব বডি ফিটিং ড্রেস পড়া, যেক্ষেত্রে ঘেমে গেলে পিঠ চিটচিটে হয়ে থাকে, সেসব ক্ষেত্রেও পিঠের একনি হতে পারে।
পিঠের ব্রণ এবং ব্রণের দাগ দূরীকরণের উপায়
১) কাঁচা হলুদ
একনের সমস্যা সমাধানে হলুদের জুড়ি মেলা ভার। তাই পিঠের ব্রণ সারাতে প্রথমেই এটি ব্যবহার করে দেখতে পারেন। কাঁচা হলুদ বেটে বেশ ভালো করে সারা পিঠে লাগিয়ে রাখুন বিশ মিনিট। এরপরে হালকা গরম পানি দিয়ে গা ধুয়ে ফেলুন। হলুদের অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান দ্রুত একনে সারায়। এটি প্রতিদিন একবার করে করুন। টানা দুই সপ্তাহ করলে বেশ উপকার পাবেন।
২) অ্যাপল সাইডার ভিনেগার
এক কাপ পানিতে, এক টেবিল চামচ অ্যাপল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে নিয়ে, তুলোর বলের সাহায্যে পিঠের যেসব জায়গায় একনে রয়েছে, সেসব জায়গা মুছে নিতে হবে ভালো করে। এটা প্রতিদিন তিন থেকে চারবার করতে পারেন।
৩) টক দই
একটি বাটিতে টক দই নিন। তা ফেটিয়ে নিয়ে পিঠে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। কী শুনতে অদ্ভুত লাগছে? অদ্ভুত হলেও এটা ঠিক যে, দইতে আছে প্রচুর পরিমাণে প্রোবায়োটিক যেগুলো স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো এবং একনি সৃষ্টিকারি ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে কাজ করে।
৪) টি ট্রি অয়েল
টি ট্রি অয়েল একনে দূর করতে বেশ ভালো কাজ দেয়। সাত ফোঁটা টি ট্রি অয়েল যেকোন একটা ক্যারিআর অয়েল যেমনঃ এক চা চামচ নারকেল তেলের সাথে মিশিয়ে নিয়ে পিঠে ম্যাসাজ করে নিন। সারারাত রেখে সকালে ধুয়ে ফেলুন। এটা সপ্তাহে কমপক্ষে একবার করতে হবে।
৫) অ্যালোভেরা জেল
টাটকা এক টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল নিয়ে পিঠের ব্রণ আক্রান্ত অংশে লাগিয়ে রাখুন বিশ থেকে ত্রিশ মিনিট। এরপরে ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে নিন বা ধুয়ে ফেলুন। এটা দিনে তিন থেকে চারবার করা যেতে পারে।
৬) গ্রিন টি
গ্রিন টি ছেঁকে নিয়ে ঠাণ্ডা করে তুলোর বলের সাহায্যে পিম্পলের ওপর লাগান দিনে দুই-তিন বার। গ্রিন টি সরাসরি পিঠে লাগানোর পাশাপাশি প্রতিদিন গ্রিন টি পান করুন। এর মধ্যে থাকা পলিফেনল (polyphenol) সেবাম নিঃসরণ কমিয়ে একনে প্রতিরোধে সাহায্য করে।
এই ছিল, পিঠের ব্রণ প্রতিরোধের সাধারণ ঘরোয়া উপায়। তবে একনে যদি পরিমাণে বেশি বা সিসটিক একনে হয়ে থাকে তবে সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেয়াই শ্রেয়। আপনার স্কিন কেয়ারের জন্য যদি অথেনটিক প্রোডাক্ট খুঁজে থাকেন, তাহলে সাজগোজ হতে পারে আস্থার জায়গা। সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ রয়েছে যার একটি সীমান্ত স্কয়ারে ও অপরটি যমুনা স্কয়ারে অবস্থিত। আর যদি অনলাইন থেকে কিনতে চান, তবে শপ.সাজগোজ.কম থেকে বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি। ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন!
ছবি- সংগৃহীত: ডার্মস্টোর.কম; ভেরি ওয়েল হেলথ.কম; টুইটার.কম; শাটারস্টক.কম