একনে বা ব্রণ আমাদের অতিপরিচিত একটি সমস্যার নাম। ব্রণের সাথে পরিচিতি নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কমবেশী আমরা সকলেই একনে প্রন স্কিনের সমস্যার মুখোমুখি হই। বিশেষ করে যেদিন কোন অনুষ্ঠান থাকে যেখানে আপনাকে সুন্দর না লাগলেই না, সেইদিনই মুখের বিশেষ বিশেষ স্থানে গুটিকয়েক ব্রণের দেখা মিলবেই। ব্রণ বা একনে থেকে প্রতীকার পেতে চাই আমরা সকলেই। তাই আজকে আপনাদের একনে প্রন স্কিনের যত্নে তিনটি ফেইসপ্যাক সম্পর্কে জানাবো।
একনে প্রন স্কিনের যত্নে ৩টি প্যাক
ব্রণ বা একনে হওয়ার কারণ
অধিকাংশ মানুষের যেকোন বয়সেই ব্রণ হলেও, বয়সন্ধিকালে প্রায় সকলেরই ব্রণের সমস্যা দেখা দেয়। বিভিন্ন কারণেই ব্রণ বা একনে কিংবা পিম্পলের সৃষ্টি হতে পারে। ত্বকের লোমকূপের নিচে রয়েছে তেল নিঃসরণ গ্রন্থি। এই তেল নিঃসরণ গ্রন্থির আশেপাশেই রয়েছে হাজার হাজার মৃতকোষ। মৃতকোষের সাথে ত্বকের দূষিত তেল মিলে ব্রণের সৃষ্টি করে। আবার বাইরের ধূলাবালি ত্বক থেকে বের হওয়া তেলের উপর প্রলেপের সৃষ্টি করে। তখন সেই তেল আর বের হতে পারে না ফলে ব্রণের সৃষ্টি হয়। ত্বকের দূষিত তেল বের হতে না পারলে বিভিন্ন জায়গায়ই ব্রণের সৃষ্টি হতে পারে, যেমনঃ মুখমণ্ডল, পিঠ, কাঁধ ও বুক। সব জায়গার ব্রণ ঢাকা গেলেও মুখের ব্রণ খুব সহজেই লোকচোখে পরে যায়। তাই অনেকেই বিভিন্ন ক্রিম ব্যবহার করে এর থেকে মুক্তি পেতে চায়। আবার অনেকে পার্লারে কিংবা চিকিৎসকের কাছে গিয়েও ব্রণ থেকে প্রতিকার পেতে চায়।
কিন্তু এত ঝামেলার পরও জিদ্দি ব্রণ যেতেই চায় না কিছুতেই! কিন্তু সামান্য কিছু উপকরণ দিয়ে খুব সহজ পদ্ধতিতেই তৈরি করা যায় কিছু ফেইস মাস্ক, যা খুব সহজেই আপনাকে ব্রণ থেকে পরিত্রাণ দিবে এবং আপনি হয়ে উঠবেন উজ্জ্বল ও ঝকঝকে ত্বকের অধিকারী। তাহলে চলুন জেনে নিই ঘরোয়া পদ্ধতিতে কীভাবে তৈরি করবেন এই ফেইস মাস্কগুলো।
১) চন্দনের গুঁড়া ও গোলাপজল
একনে-প্রন ত্বকের জন্য চন্দনের গুঁড়া খুবই উপকারী একটি উপাদান। এটি খুব দ্রুত ব্রণের উপর কাজ করে। শুধু ব্রণই নয় বরং ব্রণের কালো দাগ দূর করতেও চন্দনের গুঁড়া বেশ কার্যকরী। তাহলে চলুন জেনে নেই কীভাবে তৈরি করবেন এই মাস্কটি।
উপকরণ
- এক টেবিল চামচ চন্দনের গুঁড়া
- প্রয়োজনমতো গোলাপজল
তৈরি করার পদ্ধতি
- প্রথমে একটি পরিষ্কার বাটিতে চন্দনের গুঁড়া নিয়ে নিন।
- তারপর এর সাথে প্রয়োজনমতো গোলাপজল মিশিয়ে নিয়ে পেস্ট তৈরি করুন।
- এবার আপনার মুখমণ্ডলটি হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিন এবং পাতলা ও নরম একটি কাপড় দিয়ে আলতোভাবে ভেজা মুখটি শুকিয়ে নিন।
- এখন তৈরি করে রাখা বেকিং সোডার মাস্কটি ব্রাশের সাহায্যে পুরো মুখে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন এবং না শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
- এবার মাস্কটি শুকিয়ে গেলে আবারও হালকা গরম পানি দিয়ে মুখটি ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
দ্রুত ব্রণ থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রতিদিন ব্যবহার করুন এই মাস্কটি। নিয়মিত ব্যবহারে অনেক তাড়াতাড়ি আপনার ব্রণের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
২) কাঁচা হলুদের তৈরি ফেইস মাস্ক
কাঁচা হলুদের নির্যাস খুব দ্রুত ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে। ব্রণ দূর করার পাশাপাশি এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। কমবেশী প্রায় সকলের ঘরেই কাঁচা হলুদ থাকে। কাঁচা হলুদের বদলে গুঁড়া হলুদ দিয়েও এই মাস্কটি তৈরি করা যায়। চলুন জেনে নেই কীভাবে তৈরি করবেন কার্যকরী এই ফেইস মাস্কটি।
উপকরণ
- ২ টেবিল চামচ টকদই
- ১/২ চামচ কাঁচা হলুদ বাটা অথবা হলুদ গুঁড়া
তৈরি করার পদ্ধতি
- প্রথমে একটি বাটিতে টকদই নিয়ে নিন এবং এর সাথে হলুদ বাটা দিয়ে খুব ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
- এখন এই মিশ্রণটি পরিষ্কার মুখমণ্ডলে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ভালোভাবে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
এই মাস্কটি প্রতিদিন ব্যবহারে আপনি পেতে পারেন ব্রণমুক্ত উজ্জ্বল ত্বক।
৩) লেবু ও মধুর তৈরি ফেইস মাস্ক
লেবুর রস মুখের মৃতকোষ দূর করে ত্বককে পরিষ্কার ও উজ্জ্বল করে। লেবুর রসে উচ্চমাত্রায় ভিটামিন সি থাকার কারণে এটি ব্যবহারে ত্বকের উজ্জ্বলতা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়। আর মধু ত্বককে কোমল ও মোলায়েম করতে সাহায্য করে। এই প্রাকৃতিক উপাদান দু’টি প্রায় বার মাসই বাজারে পাওয়া যায়। তাহলে চলুন জেনে নেই সহজলভ্য এই উপাদান দুইটি দিয়ে কীভাবে তৈরি করবেন ফেইস মাস্কটি।
উপকরণ
- একটি মাঝারী সাইজের আস্ত লেবুর রস
- দুই টেবিল চামচ খাঁটি মধু
তৈরি করার পদ্ধতি
- প্রথমে একটি বাটিতে একটি মাঝারী সাইজের লেবুর রস বের করে নিয়ে নিন।
- তারপর এর সাথে মধু দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
- এখন এই মিশ্রণটি পুরো মুখে লাগিয়ে নিন এবং ২০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ভালোভাবে মুখ ধুয়ে নিন।
প্রতিদিন অন্তত একবার ব্যবহার করুন এই মাস্কটি। অবশ্যই আপনার ব্রণ দূর হবে।
আপনি চাইলে আপনার পছন্দমতো প্রোডাক্ট কিনতে পারেন অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে। আবার যমুনা ফিউচার পার্ক ও সীমান্ত স্কয়ারে অবস্থিত সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ থেকেও কিনতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি!
ঘরোয়া পদ্ধতিতে তৈরি এই মাস্কগুলো খুবই কার্যকরী। নিয়মিত ব্যবহারে আপনার ত্বক হবে মোলায়েম ও ব্রণমুক্ত। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদান হওয়ার ফলে এর কোন পার্শ্বপতিক্রিয়াও নেই। তাহলে আজই ব্যবহার করা শুরু করে দিন এই মাস্কগুলো এবং ফিরে পান ঝকঝকে ত্বক।
ছবি- সংগৃহীত: বাংলাট্রিবিউন.কম;উইমেন্সকর্নার.কম;মেডিকেলনিউজ.কম + সাজগোজ