সবার জন্য নিয়ম মাফিক ত্বকের গভীর থেকে পরিষ্কার করা জরুরী। ত্বকের পুরনো লাবণ্য, উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে নিয়মিত মাস্ক ব্যবহারের কোন বিকল্প নেই। কিছু প্রাকৃতিক উপাদান আছে যা সব ধরনের ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। এই প্রাকৃতিক উপাদানগুলো ত্বকে লুকিয়ে থাকা ধূলো ময়লা, বিষাক্ত পদার্থ বের করে আনার ক্ষমতা রাখে। ত্বকের গ্রন্থির অস্বাভাবিক কার্যকারিতার জন্য ব্ল্যাকহেডস, ব্রণ হতে পারে। সেবাসিস গ্ল্যান্ড অনেক সময় অতিরিক্ত সেবাম এবং অন্যান্য তেল উৎপন্ন করে। লোমকূপের লোমগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত অতিরিক্ত তেল এবং তরল লোমকূপগুলো বন্ধ করে দেয়। এসব সমস্যার সমাধানে তথা ত্বকের যত্নে ডিপ ক্লিঞ্জিং বেশ কার্যকরী।
দিনের পর দিন পরিবেশ থেকে আসা ধূলো ময়লা আমাদের ত্বকে এক ময়লার আবরণ তৈরি করে আর এই কারণেই অনেক সময় লোমকূপ বন্ধ হয়ে যায়। ৩০ দিন পর পর আমাদের দেহে নতুন কোষ জন্মায়। তখন যদি পুরানো মৃত কোষগুলো পরিষ্কার করা না হয় তাহলে এগুলো ত্বকের ওপর জমে লোমগ্রন্থি বন্ধ করে দেয়। এইসব কারণে আমাদের উচিত সপ্তাহে অন্তপক্ষে ২ বার ত্বকের পোর থেকে ধূলো ময়লা, বিষাক্ত পদার্থ বের করে আনা। দীপ্তিময় দাগহীন ত্বকের জন্য প্রাত্যহিক যত্নের পাশাপাশি মাঝে মাঝে ত্বকের গভীরের ময়লা দূর করা খুব জরুরী এবং সেই ত্বক রাখুন এক্সসেস সেবাম ফ্রি। আমি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে খুব কম খরচে কয়েক ধরনের উপাদান ব্যবহার করে ত্বকের যত্নে ডিপ ক্লিঞ্জিং এর প্রক্রিয়া বলে দিবো।
আজকের রেসিপিগুলো সব বয়সে সব ধরনের ত্বকের জন্যই উপকারী। যারা সবে মাত্র ২০ এ পা রেখেছেন বা ২০+ হয়েছে তারা হয়ত ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলা করছেন কিন্তু বুঝতে পারছেন না কীভাবে ত্বকের যত্ন নিবেন। তাদের জন্যও এই রেসিপিগুলো প্রযোজ্য। এই মাস্কগুলোর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই, যদি না কোন নির্দিষ্ট উপাদানের প্রতি আপনি সংবেদনশীল হয়ে থাকেন।
ত্বকের যত্নে ডিপ ক্লিঞ্জিং
০১. হলুদ গুঁড়া ও কমলার রসের মাস্ক
এই সহজ ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে আপনার ত্বকের রন্ধ্রের গভীর থেকে মৃত কোষ পরিষ্কার করতে পারবেন। একটি বাটিতে ২ টেবিল চামচ হলুদ গুঁড়া এবং ১ টেবিল চামচ কমলার রস মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। তারপর ৪-৫ মিনিট মিশ্রণটি দিয়ে ত্বক ম্যাসেজ করুন। ১০ মিনিট মুখের উপর লাগিয়ে রাখুন তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
০২. ঘৃতকুমারী এবং টি ট্রি অয়েল
গরম পানির ভাপ নিয়ে ত্বকের পোর ওপেন করে নিন। এরপর ১ চা চামচ অ্যালোভেরা জেল এবং ২ ফোঁটা টি ট্রি অয়েল একটি কটন প্যাডে নিয়ে ত্বকে বুলিয়ে নিন, ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখটি ধুয়ে ওপেন পোর বন্ধ করে ফেলুন। ফ্লোলেস কমপ্লেক্সসনের জন্য এই মাস্কটি নিয়মিত ব্যবহার করুন।
০৩. আমন্ড এবং শুকনো লেবুর খোসার মাস্ক
আপনার ত্বককে ব্ল্যাকহেডস এবং পিমপেল থেকে রক্ষা করার জন্য এই প্যাকটি নিয়মিত ব্যবহার করুন। একটি বাটিতে ১ টেবিল চামচ শুকনো লেবুর খোসার সঙ্গে ২ টেবিল চামচ আমন্ড গুঁড়া এবং সামান্য পরিমাণ দুধ মিশিয়ে নিন। তারপর ১৫ মিনিটের জন্য মাস্কটি মুখে লাগিয়ে রাখুন একটি রেভিটালাইজিং এফেক্টের জন্য। তবে ব্রণের যন্ত্রণায় আপনি যদি খুবই অতিষ্ঠ হয়ে থাকেন তবে কয়েক টুকরা পাকা কলার খোসার পেস্টের সঙ্গে ওটমিল এবং দারুচিনি গুঁড়ার মাস্ক বানিয়ে মুখে লাগান। যদি ত্বক শুষ্ক হয়ে থাকে তবে মাস্কে ভিটামিন ই অয়েলও মিশাতে পারেন। বেশ উপকার পাবেন। এই মাস্কের মাধ্যমে ত্বকের গভীরে লুকিয়ে থাকা দূষিত পদার্থ দূর হবে ফলশ্রুতিতে ত্বক হবে ব্ল্যাকহেডস এবং পিমপেল ফ্রি।
০৪. কোকো পাউডার এবং জলপাই তেলের মাস্ক
এটি এমন এক রেসিপি যার ফলে আপনার ত্বক ডিপ ক্লিন তো হবেই সঙ্গে ডিপ কন্ডিশনও হবে। একটি বাটিতে ১টি ডিমের সাদা অংশ, ১ টেবিল চামচ কোকো পাউডার, মধু ১ চা চামচ এবং কয়েক ড্রপ জলপাই তেল এক সঙ্গে মিশিয়ে একটি নরম পেস্ট তৈরি করুন। তারপর ২০ মিনিটের জন্য মুখে লাগিয়ে রাখুন যেন এর সকল পুষ্টি উপাদান ত্বকের গভীর স্তরে পৌঁছে যায়। এখন ঠান্ডা পানি এবং একটি ভেজা কাপড় দিয়ে আপনার সৌন্দর্য সেশন এর ট্রেস মুছে ফেলুন।
০৫. টক দই এবং মূলার মাস্ক
আমার পাঠিকাদের বলছি যদি আপনার ত্বক অত্যন্ত সংবেদনশীল না হয়ে থাকে তবেই এই মাস্কটি ব্যবহার করুন। একটি বাটিতে ২ টেবিল চামচ টক দই এবং একই পরিমাণে গ্রেটেড মূলা এক সঙ্গে মিশিয়ে রাখুন। এবার গরম পানির ভাপ দিয়ে ত্বকের রন্ধ্র ওপেন করুন। তারপর ৪-৫ মিনিটের জন্য আপনার রন্ধ্রে আলতো করে পেস্ট ম্যাসেজ করে ৫ মিনিটের জন্য এইভাবেই রাখুন। অবশেষে ঠান্ডা জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন এতে পোর বন্ধও হয়ে যাবে। ত্বকের উপরিভাগ থেকে মৃত কোষ পরিষ্কার করার জন্য এটি ভীষণ পাওয়ারফুল একটি রেমেডি।
০৬. লেবুর রস এবং আপেল সিডার ভিনেগার মাস্ক
ব্রণ থেকে দূরে থাকার জন্য এটি সবচেয়ে সহজ সমাধান। ২ ফোঁটা লেবুর রস এবং একই পরিমাণ আপেল সাইডার ভিনেগার তুলোর প্যাডের উপর নিন তারপর এই মিশ্রণ দিয়ে আপনার মুখটি পরিষ্কার করুন। ১৫ মিনিটের জন্য সলিউশনটি মুখে রেখে দিন, অবশেষে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। বিস্ময়কর ফলাফলের জন্য এই সৌন্দর্য চর্চাটি প্রতি সপ্তাহে অন্তত ৩ বার করুন।
০৭. মুলতানি মাটি এবং ওটমিলের মাস্ক
মুলতানি মাটির নাম তো রূপ সচেতন সব নারীই শুনেছেন। এই মুলতানি মাটি পোরে আটকে থাকা সব ময়লা টেনে বের করে আনে। এক টেবিল চামচ মুলতানি মাটির সাথে এক টেবিল চামচ পানি, এক টেবিল চামচ ওটমিল মিশান। তারপর মুখে লাগিয়ে রাখুন ১০মিনিট। যখন দেখবেন মুখটা টান টান হয়ে আসছে তখন বুঝবেন মুলতানি মাটি তার কাজ শুরু করে দিয়েছে মানে পোর থেকে সব ময়লা বের করা শুরু করেছে। পুরো মুখ শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
০৮. মধু এবং অলিভ অয়েলের মাস্ক
২ টেবিল চামচ টক দইয়ের সাথে ১ চা চামচ মধু, ১ চা চামচ অলিভ অয়েল ভালোভাবে মেশান। পুরো মুখে এই মিশ্রণটি দিয়ে ২০ মিনিট রাখুন। তারপর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই সিম্পল মাস্ক পোরের গভীরে পৌঁছে সব দূষিত পদার্থ বের করে আনবে, একই সাথে ত্বকে পুষ্টি যুগিয়ে নরম কোমল করে তোলে।
প্রতিদিন শুধু পানি বা ফেইসওয়াস দিয়ে মুখ পরিষ্কার করলে চলবে না। কেননা এগুলো শুধু ত্বকের উপরিভাগ পরিষ্কার করে। আপনার ব্ল্যাকহেডস থাকুক আর না থাকুক ত্বকের অভ্যন্তরে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করার জন্য সঠিক যত্ন দরকার। তবে একটা কথা মনে রাখবেন যখন আপনার ত্বকে ব্ল্যাকহেডস দেখা দেবে বুঝবেন যে আপনার পোরগুলো আংশিকভাবে ব্লক হয়েছে আর হোয়াইটহেডস দেখলে বুঝবেন পুরোটায় ময়লা দ্বারা ক্লগ হয়েছে। আমার পরামর্শ, যাদের এখনও ব্রণ, ব্ল্যাকহেডস্ বা হোয়েটহেডস হয় নি তারাও আগে থেকে ত্বকের যত্ন নিন। আর যাদের ব্ল্যাকহেডস হয়ে গেছে তারা আর অপেক্ষা না করে এর থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজে বের করুন। এখানে আমি সব ঘরোয়া উপায় বলেছি আশা করছি এগুলোতেই ধীরে ধীরে আপনার ত্বকের স্তরে জমে থাকা ধূলো ময়লা, বিষাক্ত পদার্থ পরিষ্কার হয়ে যাবে।
এই তো জেনে নিলেন ত্বকের যত্নে ডিপ ক্লিঞ্জিং করার কিছু উপায়। এখন থেকে ত্বকের যত্ন হোক ঘরোয়া এই উপাদানগুলো দিয়ে। আর ব্ল্যাকহেডস, ব্রণ, হোয়াইটহেডস এমন সমস্যাগুলোর সমাধানে যদি অথেনটিক প্রোডাক্টস খুঁজে থাকেন তবে তো শপ সাজগোজ আছেই। চলুন দেখে নেই ত্বকের যত্নে শপ সাজগোজের কিছু প্রোডাক্টস…
ছবি – সংগৃহীতঃ বিকামগর্জাস.কম, খুশিহামেশা.কম