শীতে পাওয়া অনেক গুলো সবজির মধ্যে বাঁধাকপি একটি। এই সাধারন সবজিটির অসাধারণ গুণাগুনের কথা আমদের অনেকেরই অজানা। তাই আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে বাঁধাকপির উপকারী দিক গুলো আপনাদের কাছে তুলে ধরবো।
বাঁধাকপির হেলথ বেনিফিট:
আপনি যদি আপনার স্বাস্থ্যের পরম যত্ন নিতে চান, তবে বাঁধাকপির চেয়ে ভালো আর কিছুই হতে পারে না। এটি তার আশ্চর্যজনক ঔষধি গুনের জন্য সুপারফুড হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
-কাঁচা বাঁধাকপিকে ক্যান্সারবিরোধী হিসেবে বিবেচনা হয়। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, কাঁচা সবুজ বাঁধাকপির রসে আইসোসায়ানেট নামক রাসায়নিক যৌগ রয়েছে যা আপনার শরীরের ইস্ট্রোজেন বিপাক প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত এবং আপনাকে স্তন ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার, প্রস্টেট ক্যান্সার, পাকস্থলীর ক্যান্সার এবং কোলন ক্যান্সার থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে। এমন কি এটি ক্যান্সার রোগীদের ক্ষেত্রে নিরাময় প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করে।
– এছাড়াও বাঁধাকপির রস দিয়ে আলসারের চিকিত্সাও করা যাবে। এটা আপনার অন্ত্র এবং উপরের পেট ডিটক্সিফাই করে। একই সাথে এটি প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ইউ (‘cabbagen’ নামে পরিচিত) সরবরাহ করে। সেটি আপনার পাকস্থলীর ভিতরের স্তর শক্তিশালীকরণ এবং আলসার প্রতিরোধী হিসেবে কাজ করে।
[picture]
– বাঁধাকপির রস প্রদাহ বিরোধী হিসেবে খুব উপকারী। কাঁচা বাঁধাকপিতে কিছু অপরিহার্য অ্যামিনো অ্যাসিড আছে যা ত্বকের প্রদাহের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
-বাঁধাকপির রসে বিদ্যমান অনেক গুলো উপাদানের মধ্যে ফলিক অ্যাসিড একটি। রক্তাল্পতার চিকিত্সায় ফলিক অ্যাসিড একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যেহেতু এটি নতুন রক্ত কোষ গড়ে তুলতে সাহায্য করে। এই কারণে বাঁধাকপির রস রক্তস্বল্পতা আরোগ্যকরণের জন্য ব্যবহার করা হয়।
ত্বকের জন্য বাঁধাকপি রসের উপকারিতা:
আপনার ত্বক যতোই ক্ষতিগ্রস্ত হোক না কেন আপনি সবসময় তার পুরনো উজ্জ্বলতা পুনরূদ্ধার করার জন্য বাঁধাকপি রসের উপর নির্ভর করতে পারেন।
– অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইটোকেমিক্যালপূর্ণ একটি উদ্ভিজ্জ হচ্ছে,বাঁধাকপি । যা আপনার ত্বকের জন্য আশ্চর্যজনক কিছু করতে পারে। এই দুটি উপাদান ফ্রি রেডিক্যাল থেকে উদ্ভুত ব্রণ, ব্ল্যাকহেডসের মত অনেক স্কিন ডিজিজের সাথে লড়াই করে। কয়েক চামচ কাঁচা বাঁধাকপির রস নিন এর সাথে ২ টেবিল চামচ বেসন যোগ করে ঘন পেস্ট তৈরী করুন। এর সাথে আরও দিন কয়েক ফোঁটা টি ট্রি অয়েল, লেবুর রস। এক চিমটি কাঁচা হলুদ। মুখ এবং গলায় এই মাস্ক প্রয়োগ করুন এবং ২৫ মিনিট পর গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তাছাড়া,এতে থাকা ভিটামিন সি, স্কিন রিপেয়ার করার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে।
– এই রসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কন্টেন্ট ত্বকের শুষ্কতা রোধ করে সেই সাথে ত্বকের অকালবার্ধক্য প্রতিরোধ করতে খুবই সহায়ক। আপনি দুধের মধ্যে কিছু বাঁধাকপি সিদ্ধ করুন তারপর এটি সম্পূর্ণভাবে ঠান্ডা করে ব্লেন্ডারে একটি মসৃণ এবং ঘন পেস্ট তৈরী করুন। ইচ্ছা হলে, কয়েক ড্রপ বাদামের তেল যোগ করুন। পুরো মুখ এবং ঘাড় এই মাস্ক প্রয়োগ করুন এবং প্রায় ২৫-৩০ মিনিটের জন্য রেখে গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দ্রুত ফলাফলের জন্য সপ্তাহে অন্তত তিনবার এই মাস্ক প্রয়োগ করুন। আপনার মুখে নিয়মিত এই মাস্ক ব্যবহারের ফলে আপনার বলিরেখা কীভাবে দ্রুত অদৃশ্য হয় দেখুন।
এছাড়াও স্কিনের টেক্সচার আরও উন্নত করার জন্য ব্যবহার করা হয় বাঁধাকপির রস। এতে থাকা ভিটামিন এ ও ই টিস্যু পুনর্যৌবন এবং ত্বক পরিষ্কার নরম এবং নমনীয় করতে সাহায্য করে।
চুলের জন্য বাঁধাকপি রসঃ
আপনি কি জানেন আপনার চুলের যত্নের জন্যও বাঁধাকপির রস ব্যবহার করতে পারেন? এই রসে বেশ কিছু উপাদান উপস্থিত আছে যেগুলো আপনার চুলে সঠিক পুষ্টি প্রদান করতে পারে।
-বাঁধাকপিতে থাকা সালফার আপনার চুল মজবুত করে এবং চুল পড়া রোধে সত্যিই সহায়ক। এটা চুল পড়া বন্ধ এবং দুর্বল চুল মোকাবেলা করার সবচেয়ে কার্যকর উপায়। ২ মুঠ কাঁচা মেহেদি বেটে নিন এর সাথে আধা কাপ বাঁধাকপির রস, ২ চামচ টক দই যোগ করুন। হয়ে গেল আপনার চুলের জন্য মাস্ক। এছাড়াও এতে ভিটামিন ই এবং সিলিকন রয়েছে, তাই এই রস নিয়মিত সেবনে আপনি ঘন, কালো চুলের অধিকারী হতে পারেন।
আমরা অনেকেই হয়ত বাঁধাকপিকে হেলাফেলা করতাম। তবে আজ থেকে আর নয় হেলাফেলা, কারণ উপরের আলোচনা থেকে জানা গেল আমাদের স্বাস্থ্য, ত্বক, চুলসহ সর্বাঙ্গীণ উন্নতির জন্য এর জুড়ি নেই।
লিখছেনঃ রোজেন
ছবিঃক্যাবেইজরেসিপিস.কো.ইউকে