কোভিট-১৯ বা করোনা ভাইরাস আজকের বিশ্বের জন্য এক আতঙ্কের নাম। চীনের উহান রাজ্য থেকে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটি মোকাবেলায় যুদ্ধ চলছে প্রতিনিয়তই। কিন্তু কোনো কিছুতেই যেন বাঁধ মানছে না মরণব্যাধি এই ভাইরাসটি। নিত্যনতুন মৃত্যুর খবর অথবা নতুন কেউ আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায় রোজই। বিশেষজ্ঞদের মতে শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মাধ্যমে কিছুটা লাঘব করা যেতে পারে এই ভাইরাসটিকে। খাদ্যাভ্যাসে কিছুটা পরিবর্তনের মাধ্যমেও আক্রান্ত হওয়া থেকে বেঁচে যেতে পারেন অনেকেই। তবে যারা বৃদ্ধ ও নানান রোগ যেমন- ডায়বেটিস, হার্টের সমস্যা, কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত তাঁদের ক্ষেত্রে ঝুঁকিটা একটু বেশি। তাই তাদের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখাটা অত্যন্ত জরুরি। শিশুদের ক্ষেত্রেও বাড়তি যত্নের প্রয়োজন রয়েছে যানবাহনে করোনা প্রতিরোধ করতে। পরিষ্কার কাপড় ও পরিষ্কার খাদ্য দিতে হবে শিশুদের। ঠাণ্ডা, সর্দি, জ্বর, কাশি ও গলাব্যথা হলেই নিজেকে সেলফ আইসোলেশনে (self-isolation) রাখতে হবে যেন অন্যান্যদের মাঝে ভাইরাসটি ছড়িয়ে না যায়। তবে ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী এই সংক্রমণটি রুখতে হলে যতটা কম বাইরে যাওয়া যায় ততোটাই স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো। কিন্তু কাজের তাগিদে অনেককেই বাড়ির বাহিরে বের হতে হচ্ছে। চড়তে হচ্ছে বাস, ট্রেন, রিক্সা ইত্যাদি যানবাহনে। চলুন তবে আজ জেনে নেই যানবাহনে করোনা প্রতিরোধ সম্পর্কে।
যানবাহনে করোনা প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
আমাদের দেশে অনেক আগ থেকেই স্কুল, কলেজ সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কিছু কিছু অফিসেও ঘরে বসে কাজ করার অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ কর্মক্ষেত্রই এখনো সচল রয়েছে। তাই অফিসের উদ্দেশ্যে সকালেই বেড়িয়ে পড়েন অনেকেই। যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) থেকে বলা হয়েছে সব সময় ঘরে থাকতে ও ঘর থেকে বের না হতে, সেখানে আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষকেই বেড়িয়ে পড়তে হচ্ছে সকাল সকালই। এতে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অধিক হারে বাড়ছে।
কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য আমরা যে যাতায়াত ব্যবস্থা গ্রহণ করছি সেটাই হতে পারে আমাদের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপুর্ন। কেননা সেখানে মানুষের আনাগোনা সবচেয়ে বেশি। সকল শ্রেনীর মানুষই সেখানে থাকে এবং নিয়ম না মেনে যত্রতত্রই হাঁচি ও কাশি দিয়ে বেড়ায়। তাই যাতায়াতই আপনার জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ন। তবে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করলে আমরাও থাকতে পারি সুরক্ষিত। তাহলে চলুন জেনে নেই কী ধরনের সাবধানতা অবলম্বন করলে আমরা বাস, রিকশা, অটো, সিএনজি , ট্রেন ও অন্যন্য যাতায়াত ব্যবস্থায় ঝুঁকিমুক্ত থাকতে পারবো।
১) যানবাহনে করোনা প্রতিরোধে বাসে কিংবা ট্রেনে যদি আপনার সহযাত্রীটি প্রবল বেগে হাঁচি কাশি দিতে থাকে তাহলে সেটা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর। তাই আপনি তখনই সেই ব্যক্তি থেকে দূরত্ব বজার রাখুন। সম্ভব হলে চালক কিংবা কন্টাক্টরকে অবগতি করেন। অন্যান্য যাত্রীদেরও সাবধান করে দিন। এতে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পরবে না।
২) রাস্তাঘাটে চলাচল করার সময় সর্দি কাশি কিংবা জ্বরে আক্রান্ত কোন ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে রুমাল দিয়ে জোরে নিজের নাক ও মুখ চেপে রাখুন। রোগীর গায়ে ভুলেও স্পর্শ করবেন না। পর্যাপ্ত পরিমাণে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করুন। পারলে দ্রুত সেই স্থানটি ত্যাগ করুন।
৩) আমাদের দেশে সকালে ও সন্ধ্যায় এই দুইটি সময়ে ভীড় বেশি হয়। তাই চেষ্টা করুন এই দুই সময়ে আপনাকে যেন বের হতে না হয়। যানবাহনে করোনা প্রতিরোধে ভীড় এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। অফিস থাকলে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তারপর অফিস থেকে বের হন। বাস কিংবা অন্যান্য যানবাহন এড়িয়ে চললে আপনি অনেকটাই সুরক্ষিত থাকতে পারবেন। যদি সম্ভব হয়, তাহলে
৪) ট্যাক্সি, সিএনজি, উবার কিংবা ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করলে অবশ্যই গাড়ির জানালা খোলা রাখার চেষ্টা করুন। গাড়িতে যথেষ্ট পরিমাণে আলো বাতাস প্রবেশ করতে দিন। কেননা বদ্ধ জায়গায় ভাইরাস খুব দ্রুত ছড়ায়। আর গাড়িতে ঘেঁষাঘেঁষি করে বসবেন না। এতে ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা খুব কম থাকে।
৫) বাড়ি থেকে অফিসে গিয়ে কিংবা অফিস থেকে বাড়ি ফিরে সাবান পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করে ধুয়ে নিন। কেননা যাতায়াতের জন্য আমরা যে বাহনটি ব্যবহার করছি সেটা যথেষ্ট অপরিষ্কার ও জীবাণুযুক্ত। আমরা বাসে উঠার সময় এবং বাস থেকে নামার সময় সব সময়ই বাসের হাতলে হাত রাখছি যা ক্ষতিকর ভাইরাসের আখড়া। তাই চেষ্টা করবেন টিস্যু অথবা রুমাল দিয়ে বাস কিংবা অন্যান্য যানবাহন ধরতে। সেটা সম্ভব না হলে ব্যাগে স্যানিটাইজার রাখুন। যদি সেটাও সম্ভব না হয় তাহলে বাসায় ফিরে কিংবা অফিসে পৌঁছে ভালোভাবে হাত ধুয়ে ফেলুন।
৬) বাইরে থাকাকালীন সময়টুকু চেষ্টা করবেন নাক, মুখ ও চোখে হাত না দিতে। সবসময় হাত পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করুন। অপরিষ্কার হাতে নাক মুখ স্পর্শ করলে জীবাণু শরীরের ভিতরে প্রবেশ করে ফেলার সম্ভাবনা থাকে। তাই হাত পরিষ্কার রাখাটা অত্যন্ত জরুরি।
৭) মোটর সাইকেল অথবা উবার শেয়ার না করাই ভালো এখন। কেননা মানুষের সংস্পর্শেই বেশির ভাগ ভাইরাস ছড়ায়।
করোনা ভাইরাস মোকাবেলা করার চেষ্টা করছে সারা বিশ্ব। আপনিও চেষ্টা করুন উপরোক্ত নিয়মগুলো মেনে চলতে। তাহলে ভাইরাসটি দমনে সফল হবো আমরা সকলেই। আপনার সামান্য সাবধানতা হয়তো ভাইরাসটি থেকে মুক্ত রাখতে পারে আপনাকে, আপনার পরিবারকে ও সমাজকে। সচেতন হোন, ভালো থাকুন ও সুস্থ থাকুন।
ছবি সংগৃহীত- ডেইলি এক্সপ্রেস.ইউকে.কো; সাটারস্টক, সাজগোজ