নীলার আজ মন খুব খারাপ। গতকাল রাতে রাকিবের বন্ধুর বিয়েতে যাবে বলে শখের জামাটা পরতে গিয়েই দেখলো কিছুতেই জামাটা আর ফিট হচ্ছে না নীলার। এতোদিন লক্ষ্যই করেনি, সে যে অনেকটাই মুটিয়ে গিয়েছে। সংসারের সামলাতে গিয়ে নিজের যত্ন একেবারেই নেয়া হচ্ছে না। কিন্তু ঘরে বসে কিভাবে নিজেকে ফিট রাখবে তা নিয়েই নীলার যত চিন্তা। সারাদিন বাসায় থেকে গৃহিণীদের ফিট থাকা কিছুটা কঠিনই বটে। কেননা রান্নাঘর সামলানো থেকে শুরু করে বাসার কমবেশি সবকিছুই একজন গৃহিণীকেই দেখতে হয়। সংসার সামলাতে গিয়ে নিজের দিকে খেয়াল রাখা কিংবা নিজেকে ফিট রাখা একেবারেই হয়ে উঠে না। গৃহিণীদের ফিট এবং সুস্থ থাকার উপায়গুলো অনেকেরই অজানা থাকে।
নীলার মতো এমন হাজারো গৃহিণী রয়েছে যারা ঘরে বসে থেকেই হারাচ্ছে নিজেদের ফিটনেস। অনেকেই ভেবে থাকেন গৃহিণী হওয়াটা অনেক সহজ। কিন্তু একজনই গৃহিণীই ভালো করে জানেন সংসার সামলিয়ে নিজেকে ফিট রাখা এবং নিজের খাদ্যাভাস বজায় রাখা কতোটা কঠিন। কিন্তু ঘরে বসে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে ও ডায়েট প্ল্যান ফলো করেও কিন্তু আপনি পেতে পারেন ঝরঝরে ও মেদহিন একটি শরীর। কীভাবে? আমরা আজকে আপনাদের জানাবো গৃহিণীদের ফিট এবং সুস্থ থাকার কার্যকরী পদ্ধতি সম্পর্কে।
গৃহিণীদের ফিট এবং সুস্থ থাকার পদ্ধতি
ডায়েট প্ল্যানের প্রয়োজনীয়তা
যেকোন গৃহিণীরই উচিত নিজেদের সুস্থ ভালো রাখার দিকটিতে খুব বেশি লক্ষ্য রাখা। কেননা একজন গৃহিণীকে অনন্ত দায়-দায়িত্ব পালন করতে হয়। তাছাড়া সংসার সামলিয়ে নিজের যত্ন নেওয়া ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই কষ্টসাধ্য। কিন্তু একজন গৃহিণীর সঠিক ডায়েট ও পুষ্টি খুবই প্রয়োজনীয়। চলুন জেনে নেই কিছু সহজ পদ্ধতি যার সাহায্যে একজন গৃহিণী পেতে পারেন ঝরঝরে ও মেদহিন একটি শরীর।
১) প্রতিবেলা খাবারের পরিকল্পনা
প্রতিবেলার খাবার দিনের প্রথমেই প্ল্যান করে ফেলুন। সারাদিনের খাবারের ক্ষেত্রে ব্যালেন্স রাখতে চেষ্টা করুন। সকালে ভারি খাবার খেলে দুপুরে তার থেকে একটু কম রাতে একেবারেই কম খাবেন। আপনাকে নিজের ঠিক করে নিতে হবে সারাদিন কত ক্যালোরি খাবেন। সেই অনুযায়ী সকালে, দুপুরে এবং রাতের ক্যালোরি এবং ডায়েট চার্ট গুছিয়ে নিবেন। খুব সতর্কতার সাথে খাবার গ্রহণ করবেন যেন ওজন বৃদ্ধি না পায়।
২) পরিমাণমতো ক্যালোরি গ্রহণ
শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী ক্যালোরি খাবেন। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ক্যালোরি শরীর মুটিয়ে ফেলবে।তাই ক্যালোরি খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যালেন্স রাখার চেষ্টা করবেন।
৩) বেশি বেশি পানি পান করা
প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। সকালে নাস্তা করার আগেই দুই গ্লাস পানি পান করুন। দুপুরের খাবার এবং রাতের খাবারের পরও পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন। তেষ্টা পেলেই পানি বেশি করে পান করবেন। এতে অতিরিক্ত খাবার খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারবেন। তবে ঘুমানোর আধা ঘন্টা আগে থেকে কিছু খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। সে সময় পানি পান থেকেও বিরত থাকার চেষ্টা করুন।
৪) একঘেঁয়েমি কাটাতে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করবেন না
বাসায় সারাদিন একা থেকে অনেকেই একঘেঁয়েমিতে আক্রান্ত হয়ে থাকে আর এই কারণে প্রচুর পরিমাণে খাবার খেতে থাকে। গৃহিণীদের ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম কারণ এটি। এই অভ্যেস দূর করতে হবে। ক্ষুধা লাগলে সবজি, ফলমূল কিংবা চর্বিহীন প্রোটিনযুক্ত খাবার খেতে পারেন।
৫) শরীরচর্চা করুন
সারাদিন বাসায় থাকার কারণে শরীর তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলে। কিন্তু আপনি চাইলেই ঘরে বসে কিছু ক্যালোরি পোড়াতে পারেন। আপনি বাড়িতে বসেই ফ্রি হ্যান্ড এক্সসারসাইজ কিংবা ইয়োগা করতে পারেন। এছাড়াও চাইলে আপনি গান লাগিয়ে নাচের মতো করেও শরীরচর্চা করতে পারেন। বিকেলে একটু পার্কে হেঁটে আসুন। দুপুরে না ঘুমানোর চেষ্টা করবেন। খাওয়ার পর হালকা একটু বিশ্রাম নিতে পারেন।
৬) রান্নার তালিকায় রাখুন নিজের পছন্দের খাবার
গৃহিণীরা সাধারণত স্বামি, সন্তান কিংবা পরিবারের অন্যদের পছন্দের খাবারই রান্নার তালিকায় রেখে থাকেন। তারা কখনোই নিজেদের পছন্দ কিংবা অপছন্দের ব্যাপারে তেমন একটা গুরুত্ব দেয় না। কিন্তু ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের জন্য গৃহিণীদের নিজেদের জন্যও রান্না করতে হবে। এতে করে নিজের যত্ন নেওয়াও হবে।
৭) পর্যাপ্ত ঘুম
একজন গৃহিণীর সুস্থতা বজায় রাখতে দরকার পর্যাপ্ত ঘুম। ঘুম ঠিকভাবে না হলেও ওজন বৃদ্ধি পায়। তাই প্রতিদিনের ঘুম যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে হয় সেদিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন।
ব্যস এই কয়েকটি পন্থা অবলম্বন করলেই গৃহিণীদের ফিট এবং সুস্থ থাকা সম্ভব। গৃহিণীদের নিজের প্রতি হতে হবে যত্নশীল। পরিবারের পাশাপাশি নিজেকেও রাখুন সুন্দর এবং স্বাস্থ্যোজ্জ্বল। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
ছবি- সংগৃহীত: সাটারস্টক