আমাদের ছোট এই প্রাণের শহর ঢাকা। ব্যস্ততায় শুরু হয় প্রতিটা সকাল। আমার এই প্রাণের শহর আর আমার প্রিয় বাংলাদেশ আজ ভালো নেই। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো মরণঘাতী করোনার অশুভ ছায়া পড়েছে আমাদের দেশেও।ভালো নেই দেশের মানুষগুলো, ভালো নেই আমাদের আশেপাশের পোষা প্রাণীগুলোও, যারা আমার আপনার মন ভালো করে দেবার অসাধারণ একটা ক্ষমতা রাখে। আমি আপনি হয়তোবা আমাদের চাহিদার জানান দিতে পারছি আবার হয়তোবা সাধ্যমতো সাহায্যও পাচ্ছি, কিন্তু এই প্রাণীগুলোর কথা মাথায় আছে তো? আজ তাই লকডাউনে পোষা প্রাণী নিয়ে কথা বলবো। চলুন তবে জেনে নেই পোষা প্রাণীর খাবার শেষ হয়ে গেলে আমরা কী করতে পারি? আর যদি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পরে, তখন আমাদের করণীয় কী?
লকডাউনে পোষা প্রাণী নিয়ে যত কথা
লকডাউনে পোষা প্রাণী বাড়ির যেসব খাবার খেতে পারে
১) ধরুন হুট করে যদি আপনার প্রিয় পোষাটির জন্য সংগ্রহের পেট ফুড শেষ হয়ে যায়, তখন কী করবো? অবশ্যই অভূক্ত রাখবো না! প্রতিদিন আমাদের বাসায় কিছু না কিছু খাবার অতিরিক্ত থেকেই যায়। আমরা অল্প পরিমাণে ভাত, আর তার সাথে একটু রান্না করা তরকারির একটু অংশ দিয়ে আমাদের পোষা কুকুরটিকে দিতে পারি।
২) মাছের কিছু অংশ যদি সম্ভব হয়, নয়তোবা কিছু মাছের কাঁটার সাথে অল্প কিছু ভাত মিশিয়ে দিতে পারি বাঘের মাসি বিড়ালের জন্য।
৩) আর যদি বাড়ির অন্যান্য খাবার খেয়ে অভ্যস্ত থাকে, যেমন- রুটি কিংবা আলু তাহলে তাও দিতে পারি।
৪) পাখি থাকলে চাল আর ভাত দিতে পারি। সেই সাথে বাসার ছাদ অথবা বারান্দায় উড়ে আসা পাখিদের জন্যও একটু পানির ব্যবস্থা করতে পারি চাল সহ। কারণ, যেহেতু গরমকাল চলছে, এখন প্রাণীগুলো তৃষ্ণায় কাতর হয়ে থাকবে। আমাদের বাসায় ছোটখাট কৌটা জাতীয় জিনিস হাতের নাগালেই থাকে যদি সম্ভব হয় সেগুলোতে করে আমরা পানির একটু ব্যবস্থা ওদের জন্য করে রাখতে পারি।
লকডাউনে পোষা প্রাণী অসুস্থ হলে ফার্স্ট এইড কেমন হতে পারে?
আমদের শখের পোষা প্রাণীগুলো কিন্তু কারণে অকারণে বিভিন্ন সময়ে অসুস্থ হতে পারে। দেখা গেলো শখের কুকুর অথবা বিড়ালটাই হয়তোবা কোথাও খেলা করতে যেয়ে আঘাত পেয়ে এসেছে। আঘাতজনিত কারণে প্রাণীটা অসুস্থ হলে আগে আঘাতের মাত্রাটা পরিমাপ করতে হবে। সেক্ষেত্রে আঘাত গুরুতর হলে অবশ্যই পশু ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। তবে লকডাউনে পোষা প্রাণী নিয়ে একটুতেই বের হবার চেয়ে নিজেই বাড়িতে ফার্স্ট এইড এর ব্যবস্থা করাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। তাই চলুন দেখি কী কী করতে পারি-
১) কাঁটা-ছেড়ায়
আঘাতের পরিমাণ কম হলে, যেমন ধরুন, যদি কাটা-ছেঁড়া থাকে সেক্ষেত্রে আমরা আক্রান্ত স্থানটি জীবাণুনাশক দিয়ে আগে পরিষ্কার করে নিবো। তারপর আক্রান্ত জায়গাটি পরিষ্কার করে কাটা-ছেড়া যদি বেশি থাকে তাহলে সেখানে ব্যান্ডেজ দিয়ে আটকে দিতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে, বেশি সময় এক ব্যান্ডেজ যাতে না থাকে। কাটা-ছেড়ার জন্য নেবানল নামে একটি পাউডার আছে, ক্ষত নিরাময়ে যা খুবই কার্যকরী। তাই ঘরে নেবানল পাউডার এনে রাখুন।
২) জ্বর-ঠান্ডায়
অনেক সময় পোষা প্রানীগুলোর জ্বরে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। জ্বরে আক্রান্ত হলে প্যারাসিটামল জাতীয় মেডিসিন একটি নির্দিষ্ট মাত্রা অনুযায়ী খাইয়ে দেখতে পারেন এবং তা অবশ্যই পশু চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। পেটের বিভিন্ন সমস্যা, যেমন- বদহজম হলে প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়াতে হবে। এছাড়া রোগ প্রতিরোধের জন্য পশু চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিভিন্ন রোগের ভ্যাকসিন এবং ভিটামিন জাতীয় মেডিসিন দেওয়া যেতে পারে।
৩) পেট হাউজ পরিষ্কার রাখুন
করোনার এই সময় নিজের ঘর পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি আমাদের আদরের পোষাটির যদি পেট হাউজ থাকে, তাহলে সেটা স্যানিটাইজ করার চেষ্টা করবো।
লকডাউনে পোষা প্রাণী বাদে রাস্তার বোবা প্রাণী
শহরের অলিতে গলিতে হেটে বেড়ানো বোবা প্রাণীগুলোর অসহায় চাহনি জানান দিচ্ছে আর্তনাদের ভাষা। ডুকরে ডুকরে কান্না করার শব্দ পাওয়া যায় কাটাবনের পাশ দিয়ে হেটে গেলে। রাজশাহীর চিড়িয়াখানাতে ক্ষুধার্ত কুকুর হামলে পড়েছে হরিণের উপড়ে। আমরা চাইলে কিন্তু এই লকডাউনে প্রিয় পোষা প্রাণী দেখভাল করার সাথে সাথে অলি-গলির কুকুর আর বিড়ালগুলোরও খানিকটা খেয়াল রাখতে পারি। একেবারে সাধ্যের মধ্যেই এই অসহায় প্রাণীগুলোর সাহায্যে আসতে পারি। কিভাবে? চলুন তবে দেখে নেই!
১) খেয়াল করলে দেখবো আমাদের বাসার আশেপাশেই অসহায় এই প্রাণীগুলো একটু খাবারের আশায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমরা চাইলেই আমাদের খুব সাধ্যের মধ্যে এদের সাহায্য করতে পারি। বাসার সামনেই এক টুকরো কাগজের ওপরে দিতে পারি ফেলে দেয়া হাড়গুলো। আর এই হাড় ভাতের সাথেও দিতে পারি রাস্তার কুকুরদের।
২) এছাড়া বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আছে, যারা এই প্রাণীদের নিয়ে কাজ করছে। এদের আর্থিক সাহায্য করেও আমরা এগিয়ে আসতে পারি।
ভালো থাকুক আমাদের প্রিয় পোষা প্রাণীটি। ভালো থাকুক বাড়ির বাহিরের কুকুর-বিড়ালও। তবে অসুস্থতায় ফার্স্ট এইডে কাজ না হলে অবশ্যই আপনার পরিচিত পশু ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। খুব কি কষ্ট হবে আমাদের? একটু ইচ্ছা করলেই কিন্তু এই অসহায় প্রাণীদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারি। সুস্থ থাকুক জগতের সমস্ত প্রাণীকুল, করোনার বিরুদ্ধে জয় হোক এই পৃথিবীর।
ছবি সংগৃহীতঃ সাজগোজ; শ্রেষ্ঠা; অনিক; ওয়াজিহ