ত্বক সুন্দর রাখার জন্য বিভিন্ন স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার, সময়মতো ফেসিয়াল, আবার কেমিক্যাল ট্রিটমেন্টের পথেও হাঁটেন অনেকে! বেসিক স্কিনকেয়ার তো অবশ্যই করতে হবে। অযত্ন ও অবহেলায় ধীরে ধীরে ত্বকের লাবণ্য হারিয়ে থাকে আর সময়ের আগেই স্কিন বুড়িয়ে যায়। আমাদের সবারই নিজের ত্বকের প্রতি যত্নশীল হওয়া উচিত। রূপচর্চায় প্রাকৃতিক উপাদানের কার্যকারিতা অস্বীকার করার উপায় নেই। বেদানার খোসা আর রক্তচন্দন গুঁঁড়ো দিয়ে সহজেই পেতে পারেন উজ্জ্বল ও দাগহীন ত্বক। যুগ যুগ ধরে সৌন্দর্যচর্চায় ফলের খোসা, গাছের বাকল, ফুলের পাপড়ি ব্যবহার হয়ে আসছে। কিন্তু কোথায় পাবো বিশুদ্ধ ও অরগানিক ফেইসপ্যাক, সেটা নিয়েই ভাবছেন তো, তাই না? উজ্জ্বল ও দাগহীন ত্বক পাওয়ার জন্য প্রাকৃতিক উপাদানের কার্যকরী ফেইসপ্যাকগুলো সম্বন্ধে আগে জেনে নেই চলুন!
উজ্জ্বল ও দাগহীন ত্বকের জন্য ম্যাজিকাল সল্যুশন
স্কিন ও হেয়ার কেয়ারে বেদানা বা ডালিমের খোসা
বেদানা শুধুমাত্র খেতেই সুস্বাদু নয়, এর খোসাটাও কিন্তু বেশ কাজের! ঘরোয়া রূপচর্চায় বেদানা বা ডালিমের খোসার ব্যবহার খুব বেশি একটা শোনা যায় না। কিন্তু উজ্জ্বল ও দাগহীন ত্বক পাওয়ার জন্য ম্যাজিকাল সল্যুশন আছে এই উপাদানটির কাছে। কী কী উপকারিতা আছে ডালিমের খোসাতে, সেটাই এখন আপনাদের জানাবো।
- ডালিমের খোসাতে রয়েছে তিন প্রকার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। ত্বকে বয়সের ছাপ, ফাইন লাইনস, রিংকেল কমিয়ে আনতে অব্যর্থ উপাদানই বলা যায় এটাকে।
- এটি ত্বকের কোলাজেন ভাঙতে বাঁধা দেয়, ফলে ত্বকের টানটানভাব ধরে রাখে।
- ব্রণ, র্যাশের প্রকোপ কমিয়ে ফেলে ত্বককে পরিষ্কার রাখে। দাগ কমাতেও দারুণ কার্যকরী এটি।
- মাইল্ড ও ন্যাচারাল এক্সফোলিয়েটর হিসাবে কাজ করে। ত্বকে জমে থাকা ময়লা, ডেড সেলস কমিয়ে ফেলতে সাহায্য করে।
- হেয়ার প্যাক হিসাবেও বেদানার খোসা ব্যবহার করা যায়। এটি চুল পরা ও খুশকি কমিয়ে আনতে কার্যকরী ভুমিকা রাখে।
রূপচর্চায় রেড স্যান্ডালউড বা রক্তচন্দন
রেড স্যান্ডেলউড বা রক্তচন্দন বা লাল চন্দন, রূপবিশেষজ্ঞরা এটিকে সব গুণে গুণান্বিত একটি উপাদান হিসেবেই দেখে থাকেন। ভারতীয় উপমহাদেশে এই লাল চন্দন উদ্ভিদটি দেখা যায়। এটা দুর্লভ, তাই এক্সপেনসিভও বটে! নরমাল চন্দন গুঁড়ো থেকে এটি একটু আলাদা। রেড স্যান্ডেলউড বা রক্তচন্দনের গুনাগুন সম্পর্কে জেনে নেই চলুন।
- ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে। সেই সাথে ত্বকের ক্লান্তিভাবও দূর করে।
- ব্ল্যাকহেডস দূর করতে সাহায্য করে।
- বয়সের ছাপ কমিয়ে স্কিনকে কোমল ও টানটান রাখে।
- একনে, র্যাশ ও দাগ কমিয়ে ত্বককে সতেজ করে তোলে।
উজ্জ্বল ও দাগহীন ত্বক পেতে কার্যকরী দুইটি ফেইসপ্যাক
রেগ্যুলার স্কিন কেয়ারের পাশাপাশি সপ্তাহে ১ বা ২ দিন ফেইসপ্যাক দিয়ে বাড়তি যত্ন নেওয়া উচিত। ঘরোয়া উপায়ে ও ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্স দিয়েই ত্বকের যত্ন নিন। উজ্জ্বল ও দাগহীন ত্বক পেতে কার্যকরী দুইটি ফেইসপ্যাক সম্পর্কে জেনে নেই চলুন। সব ধরনের স্কিনে এই প্যাকগুলো দারুণ কাজ করে। ঘরোয়া রূপচর্চায় সপ্তাহে অন্তত ১ বার ফেইস মাস্ক বা প্যাক অ্যাপ্লাই করা উচিত।
১) রেড স্যান্ডেলউড বা রক্তচন্দন গুঁড়ো সাথে মুলতানি মাটি, রোজ ওয়াটার, শসার রস দিয়ে স্মুথ পেস্ট বানিয়ে নিন। মুখে ও গলাতে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। আপনার ত্বক যদি শুষ্ক ও পিগমেনটেড হয়ে থাকে, তাহলে টকদই বা দুধ দিয়ে প্যাক বানিয়ে নিতে হবে। সপ্তাহে ১-২ বার এভাবে প্যাকটি অ্যাপ্লাই করুন। চাইলে হাতে এবং পায়েও প্যাক লাগাতে পারেন।
২) Pomegranate peel Powder বা বেদানার খোসার গুঁড়োর সাথে অ্যালোভেরা জেল, গোলাপজল, মুলতানি মাটি ও দুধ মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে নিন। মুখে ও গলায় লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। এরপর ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ১-২ বার এভাবে প্যাকটি অ্যাপ্লাই করুন। স্ক্রাবিং করতে চাইলে এই প্যাকের সাথে মধু ও চিনি মিশিয়ে নিতে হবে। মনে রাখবেন, সপ্তাহে একবার স্ক্রাবিং করাই যথেষ্ট!
“রাজকন্যা” ও আমার এক্সপেরিয়েন্স
এই যুগে বিশুদ্ধ ও অরগানিক ফেইসপ্যাক খুঁজে পাওয়াটা একটু কঠিনই। সাজগোজ থেকে পেয়ে গেলাম রাজকন্যা ব্র্যান্ডের Pomegranate peel Powder ও Red Sandalwood Powder। ব্যবহার করার সময়ই বুঝতে পেরেছি উপাদানগুলো কতটা পিউর। সরাসরি ভারত থেকে সংগৃহীত লাল চন্দনের কাঠ নিয়ে এসে এখানেই গুঁড়ো করা হয়েছে যাতে এতে কোনো ভেজাল মিশ্রিত হতে না পারে। পয়সা উসুল একটি প্রোডাক্ট এটি! লাল চন্দন সচরাচর পাওয়া যায় না, পাওয়া গেলেও অন্যান্য জায়গায় প্রাইস অনেক বেশি। সেই তুলনায় রাজকন্যার রেড স্যান্ডালউড পাউডার আমার কাছে সাশ্রয়ী বলে মনে হয়েছে। আর বেদানার খোসার প্যাকটাও বেশ ভালো লেগেছে। স্কিনে খুব সুন্দর টানটান ও সতেজ ভাব নিয়ে আসে মুহূর্তেই! যেহেতু রোদে খোসাটা শুকিয়ে গুঁড়ো করা হয়, তাই কালারটা হলদেটে বাদামি বর্ণ হয় আর এই রংটি কিন্তু চেঞ্জও হতে পারে।
গাছের বাকল ও ফলের খোসা যেহেতু এই প্যাকে আছে, তাই আমি মুলতানি মাটি আর গোলাপজল মিশিয়ে আলাদা আলাদা প্যাক তৈরি করি। একদিনে দুই ধরণের প্যাক লাগানোর দরকার নেই, অল্টারনেট করে ইউজ করতে পারেন। মুখ ধোয়ার পর ফিল করতে পারবেন যে স্কিন কতটা ফ্রেশ ও সফট লাগছে। দুইটা প্যাকই আমাকে দারুনভাবে স্যুট করেছে, আমার স্কিন অয়েলি ও সেনসিটিভ। আমার সাপ্তাহিক স্কিনকেয়ার রুটিনের পার্ট হয়ে গিয়েছে এই প্রোডাক্টগুলো! হেয়ার প্যাকেও বেদানার খোসার গুঁড়ো ব্যবহার করতে পারবেন। যেকোনো হেয়ার অয়েলের সাথে মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে রাখি। ২ ঘণ্টা পর চুল শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেললেই হবে।
প্রাকৃতিক উপাদানের কোনো সাইড ইফেক্ট নেই। তারপরও আপনার অ্যালার্জি থাকলে সেই উপাদানটি অবশ্যই বাদ দিতে হবে। যেমন অনেকেরই অ্যালোভেরাতে অ্যালার্জি থাকে, সেক্ষেত্রে ফেইসপ্যাকে অ্যালোভেরা ইউজ করবেন না! এটা একটি উদাহরন মাত্র। আপনার ত্বক কোন উপাদানে সেনসিটিভ, সেটাও কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে।
তাহলে জানা হয়ে গেলো, উজ্জ্বল ও দাগহীন ত্বক পেতে কোন কোন প্রাকৃতিক উপাদানের ফেইসপ্যাক সত্যিকারে কাজ করবে। আপনি চাইলে অনলাইনে অথেনটিক স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে। তাছাড়া, সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপে নিজে গিয়েও কিনতে পারেন, যা যমুনা ফিউচার পার্ক ও সীমান্ত স্কয়ারে অবস্থিত।
ছবি- সাজগোজ