অতিরিক্ত জনসংখ্যা আমাদের এই দরিদ্র দেশের অন্যতম প্রধান একটি সমস্যা। আর জন্ম নিয়ন্ত্রণ এই সমস্যার একমাত্র সমাধান। আজকে আমরা জন্ম নিয়ন্ত্রণের একটি পদ্ধতি নিয়ে কথা বলব। “ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপ্টিভ পিল”- যেটি জন্ম নিয়ন্ত্রণের প্রচলিত পদ্ধতি নয়। শুধু মাত্র ইমার্জেন্সি-তেই এটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই পিল কিভাবে কাজ করে, কারা গ্রহণ করতে পারবে, কিভাবেই বা গ্রহণ করবে ও এর কেমন পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে, চলুন তবে জেনে নেই!
ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপ্টিভ পিল সম্পর্কে যত কথা
ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপ্টিভ পিল আসলে কী?
ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপ্টিভ পিল (Emergency Contraceptive Pill) মূলত অনিরাপদ শারীরিক সম্পর্কের পরে ব্যবহার উপযোগী একটি পিল। কিন্তু এটি নিয়মিত ব্যবহারের জন্য নয়। জরুরী অবস্থা যেমন- দুই দিন বা তার বেশি জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি না নেওয়া বা নিতে ভুলে যাওয়া, শারীরিক সম্পর্কের সময় কনডম (condom) ছিঁড়ে যাওয়া বা ফেটে যাওয়া, অপরিকল্পিত শারীরিক সম্পর্ক, রেপ (rape) এসব ক্ষেত্রে সাধারণত জরুরী জন্ম নিয়ন্ত্রণ ট্যাবলেট (Tablet) ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপ্টিভ পিল কিভাবে কাজ করে?
ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপ্টিভ পিল গর্ভধারণকে প্রতিরোধ করে। এটি ডিম্বাশয় (Ovary) থেকে সাময়িকভাবে ডিম্বানু নিঃসরনে বাঁধা দেয়, ডিম্বানু নিষিক্ত হতে দেয় না বা নিষিক্ত ডিম্বানু জরায়ুতে প্রতিস্থাপিত হতে বাঁধা দিয়ে, গর্ভধারণ প্রতিরোধ করে। এর কার্যকারিতা নির্ভর করে কত দ্রুত আপনি এটি গ্রহণ করছেন। সাধারণত অনিরাপদ শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত এটি গ্রহণ করা যায়। তবে সবচেয়ে ভালো কাজ করে যদি ২৪ ঘন্টার মধ্যে এটি গ্রহণ করা হয়। জরুরী জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি গর্ভধারণ প্রতিরোধে প্রায় ৯০% কার্যকর।
কীভাবে গ্রহণ করবেন?
দুই ধরনের ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপ্টিভ পিল বাজারে পাওয়া যায়। একটি হলো- প্রজেস্টেরন অনলি পিল (progesterone only pill) এবং আরেকটি হলো- লেভোনরজেস্ট্রল (levonorgestrel)। প্রজেস্টেরন অনলি পিল ৩-১২ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবহার করতে হয়, শুধুমাত্র একটি ডোজ (dose)। লেভোনরজেস্ট্রল অনিরাপদ শারীরিক সম্পর্কের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গ্রহণ করতে হয়। এক্ষেত্রে প্রথম ডোজ গ্রহনের ১২ ঘণ্টা পর ২য় ডোজ গ্রহণ করতে হবে।
বাজারে কী নামে পাওয়া যায়?
ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপ্টিভ পিল বাজারে বিভিন্ন নামে পাওয়া যায়। যেমন – নোরিস্ক (No Risk), নোকন (NoCon), আই-পিল (i-pill)
কারা ব্যবহার করবেন না?
যারা ইতোমধ্যে গর্ভবতী হয়েছেন তাদের জন্য এই পিল (pill) কার্যকর নয়। যারা শীঘ্রই গর্ভধারণ করতে ইচ্ছুক বা গর্ভধারণ করেছেন তারা এই পিল গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন। তা না হলে গর্ভস্থ ভ্রুনের ক্ষতি হতে পারে। যারা রক্তরোগের সমস্যায় ভুগছেন যেমন – ক্লটিং ডিসওর্ডার (clotting disorder) বা ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস (deep vein thrombosis) -এর মতো জটিল সমস্যায় ভুগছেন, তারা এই পিল গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন বা পিল গ্রহণের পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কী কী?
- বমিভাব
- মাথা ব্যথা
- পেট ব্যথা
- অনিয়মিত মাসিক
ইমার্জেন্সী কন্ট্রসেপ্টিভ পিল নিয়ে ৫টি সতর্কতা
১) জরুরী জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি শুধুমাত্র জরুরী অবস্থার জন্যই ব্যবহার করবেন। সব সময়ের জন্য নয়।
২) প্রতি ঋতুচক্রে মাত্র একবারই ব্যবহার করতে পারবেন এটি।
৩) ইমার্জেন্সী কন্ট্রসেপ্টিভ পিল গর্ভধারণে বাঁধা দেয়, গর্ভপাতের জন্য এটি কার্যকর নয়।
৪) এইডস, সিফিলিস, গনোরিয়ার মত সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড রোগ প্রতিরোধে এটি কার্যকর নয়।
৫) পিল ব্যবহারের পর অনিয়মিত মাসিক যেমন অতিরিক্ত রক্তপাত, একই চক্রে একাধিক বার মাসিক,স্পটিং বা ফোটায় ফোটায় বার বার রক্ত যাওয়া নানা সমস্যা হতে পারে।
তাহলে গর্ভধারণ নিয়ন্ত্রণ করা নিয়ে আর চিন্তা কী? বার্থ কন্ট্রোল পিল খান উপরের সব তথ্য জেনে! আর ডাক্তারের সাথে যোগাযোগতো অবশ্যই করবেন! ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন!
ছবি- সংগৃহীত: cdnparenting.com