সিনেমাতে আমরা সচরাচর দেখেই থাকি যে নায়িকা একরাশ জটহীন, স্মুথ চুল নিয়ে ঘুম থেকে উঠছে। কিন্তু আমাদের বাস্তব জীবনে ঘটে কিন্তু তার উল্টোটা। চুল ছোট হোক বা বড়, ঘুম থেকে ওঠার পর চুল এলোমেলো এবং জট পাকানোই দেখতে লাগবে। আমাদের সবারই কমবেশি প্রতিদিন জট পাকানো চুলের মুখোমুখি হতে হয়। আর যদি লম্বা চুল হয়; তবে তো কথাই নেই। জট ছাড়াতে গিয়ে অনেক সময় লেগে যায়। তার উপরে আছে জট ছাড়াতে গিয়ে চুল ছিঁড়ে যাওয়ার পেইন। ড্রাই ও ড্যামেজ চুলে কিন্তু জট বেশি হয়। তাই আমাদের চুলটাকে হেলদি রাখা খুবই ইম্পরট্যান্ট। কীভাবে চুলে জট পাকানো রোধ করবেন সেটা নিয়েই আমার আজকের টপিক। তো চলুন আর কথা না বাড়িয়ে জেনে নেই, চুলে জট পাকানো রোধ করতে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস।
চুলে জট পাকানোর কারণগুলো আগে জেনে নিন
আচ্ছা, চুলে জট পাকানো রোধের আগে, চুলে জট কেন পাকায় সেটা জেনে নেওয়াটা জরুরী। চুলে জট পাকানোর কারণগুলো হচ্ছে-
চুলে হাইড্রেশনের অভাব
যখন চুলে হাইড্রেশনের অভাব থাকে, তখন আপনার চুলের ঘর্ষণ আপনার চুলে জটের সৃষ্টি করে। হাইড্রেশনের অভাবে আপনার হেয়ার শ্যাফটের আউটার লেয়ার ভেঙে যায়, যার ফলস্বরূপ চুল রুক্ষ ও ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
ভেজা চুলে ঘুমানো
চুলে জট পাকানোর অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটি হচ্ছে ভেজা চুলে ঘুমানো। কারণ, ভেজা চুল অনেক বেশি ভঙ্গুর থাকে। তাই এটা সহজেই জট পাকিয়ে যায় এবং ভেঙে যায়।
নিয়মিত চুল না আঁচড়ালে
চুলে জট পাকানোর সবথেকে বড় কারণ হচ্ছে নিয়মিত চুল না আঁচড়ানো। কারণ, নিয়মিত চুল আঁচড়ালে যেমন চুলের গোড়ায় ব্লাড সার্কুলেশন বৃদ্ধি পায়, তেমনি চুলে প্রচন্ড আকারে জট পাকানো এবং ছিঁড়ে যাওয়া রোধ হয়।
চুলের আগা ট্রিম না করলে
অনেক লম্বা সময় ধরে চুলের আগা ট্রিম না করলে চুলে এক সময় আগা ফাটা দেখা যায় এবং চুল অনেক বেশি ফ্রিজি হয়ে যায়। চুলের আগা কাটতেই হবে। কারণ আগেই বলেছি, ফ্রিজি এবং ড্রাই চুলেই জট বেশি পাকায়।
চুলের কিউটিকল ড্যামেজ হলে
টানা হিট স্টাইলিং টুলস ব্যবহারের ফলে আমাদের হেয়ার শ্যাফট ভেঙে যায় এবং চুল দূর্বল হয়ে যায়। হিট স্টাইলিং টুলস আমাদের চুলের কিউটিকলস ড্যামেজ করে দেয়। যার ফলে চুল সহজেই জট পাকিয়ে যায়।
এই তো গেল চুলে জট পাকানোর কারণ। এবার আসি কীভাবে চুলে জট পাকানো রোধ করতে পারি সে বিষয়ে।
এটি রোধ করার টিপস জেনে নিন
১. চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার
আলসেমির কারণে হোক বা সময়ের অভাবে হোক; অনেকেই দেখা যায় চুলে শ্যাম্পুর পরে কন্ডিশনার ব্যবহার করেন না। শুধুমাত্র শ্যাম্পুর ব্যবহারই চুলের জন্য যথেষ্ট নয়। কন্ডিশনার ব্যবহারের ফলে চুল অনেক বেশী স্মুথ হয়ে যায়। কন্ডিশনার চুলকে সফট আর স্মুথ বানানোর ফলে চুলে সহজেই জট পাকিয়ে যায় না। তাই অবশ্যই শ্যাম্পুর পরে কন্ডিশনার লাগাতে ভুলবেন না।
২. মোটা দাঁতের চিরুনি ব্যবহার
চিকন দাঁতের চিরুনির থেকে মোটা দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করা চুলের জন্য ভালো। কারণ, মোটা দাঁতের চিরুনিগুলো চুল না ছিঁড়েই সহজেই চুলের জট খুলে দিতে পারে। এছাড়া আজকাল চুলের জন্য হেয়ার ডিট্যাঙ্গেলার ব্রাশ কিনতে পাওয়া যায়, যেগুলা চুলের জট ছাড়ানোর জন্য খুবই ভালো কাজ করে।
৩. চুলে জট বাধায় না এমন প্রোডাক্টস ব্যবহার করা
মার্কেটে বিভিন্ন ধরনের হেয়ার সিরাম, স্প্রে, কন্ডিশনার পাওয়া যায়, যেগুলো জট পাকানো চুলের জন্য ভালো কাজ করে। এইসব প্রোডাক্টস চুলকে সফট এবং স্মুথ করে এবং জট পাকানো রোধ করে। যদি চুলে জট পাকিয়েও যায়, তবে এই ধরনের প্রোডাক্ট একটু নিয়ে চুলে লাগিয়ে ফেলুন। এরপর চিরুনি এর সাহায্যে চুল ব্রাশ করুন। দেখবেন, খুব সহজেই জট খুলে এসেছে।
৪. হেয়ার মাস্ক ব্যবহার
যতই ব্যস্ত হোন না কেন, চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সপ্তাহে একদিন অন্তত চুলে হেয়ার মাস্ক লাগাবেন। কারণ, হেয়ার মাস্ক চুলের টেক্সচার ইম্প্রুভ করতে সাহায্য করে। হেয়ার মাস্ক ব্যবহারের ফলে চুল হাইড্রেট হয় এবং ড্রাই কিউটিকেলস গুলো অনেক বেশি স্মুথ হয়ে যায়। চুলের যত্নে টকদই, ডিম, মধু, আমন্ড অয়েল মিক্স করে লাগাতে পারেন। ৪০ মিনিট রেখে চুলে শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার লাগিয়ে নিবেন। এতে চুল হবে ঝলমলে ও সুন্দর!
৫. হেয়ার অয়েলিং
চুলে পর্যাপ্ত পরিমাণে ময়েশ্চার যোগাতে নিয়মিত চুলে তেল লাগানো খুবই জরুরী। কারণ, হেলদি হেয়ারে সহজে জট পাকাবে না। আপনি আপনার পছন্দের যে কোনো হেয়ার অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। আবার চাইলে কয়েকটি অয়েল যেমন কোকোনাট অয়েল, অলিভ অয়েল, জোজোবা অয়েল, আমন্ড অয়েল ইত্যাদি মিক্স করেও লাগাতে পারেন।
৬. ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল ধোয়া
এই স্টেপটা খুবই সিম্পল বাট এফেক্টিভ। গোসলের শেষে চুল ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুবেন। এতে করে চুলের কিউটিকলসগুলো ক্লোজ হয়ে যাবে এবং চুল ভাঙা রোধ হবে। কখনোই চুলে হট ওয়াটার ব্যবহার করবেন না। এতে চুল ড্রাই এবং ড্যামেজ হয়ে যায়।
৭. হিট স্টাইলিং টুলস এভয়েড করুন
স্টাইল করতে গিয়ে আমরা তো চুলে অহরহ হিট ব্যবহার করেই থাকি। এতে চুল ড্যামেজ হয়ে যেতে থাকে। হিট স্টাইলিং টুলস ব্যবহারের আগে অবশ্যই চুলে হিট প্রোটেকশন স্প্রে লাগিয়ে নিবেন। এছাড়া চাইলে অল্প করে অ্যালোভেরা জেল বা আর্গান অয়েলও পুরো চুলে লাগাতে পারেন।
৮. ভেজা চুলের উপর টর্চার বন্ধ করুন
অনেককেই দেখি, গোসলের পর তোয়ালে দিয়ে ভেজা চুলগুলোকে প্রচুর ঘষাঘষি করতে থাকেন। বিশেষ করে গ্রামে অনেককেই দেখেছি ভেজা চুলে তোয়ালে দিয়ে বারি মেরে মেরে চুল মুছতে! এতে চুলের কত ক্ষতি হচ্ছে তা কি জানেন? এর ফলে চুল ড্যামেজ হয়ে যায় এবং চুলের আগা ফেটে যায়। তাই সবসময় ভেজা চুল মাইক্রোফাইবার টাওয়েল দিয়ে মুছতে হবে। মাইক্রোফাইবার টাওয়েল না থাকলে পুরোনো সফট টিশার্টও ব্যবহার করা যাবে। আস্তে ধীরে হালকা হাতে চুলের এক্সট্রা পানিটুকু শুষে নিয়ে চুল এয়ার ড্রাই করতে হবে।
৯. ঘুমানোর সময়েও চুল প্রোটেক্ট করুন
ঘুমানোর আগে অবশ্যই চুল সফট হেয়ার ব্যান্ড দিয়ে বেঁধে নিবেন। আর বালিশের কভার ব্যবহারেও সচেতন হতে হবে। সিল্কের বালিশের কভার ব্যবহার করা সবথেকে ভালো অপশন।
১০. অ্যালকোহলযুক্ত প্রোডাক্ট এভয়েড করা
অ্যালকোহল আমাদের চুলকে ড্রাই বানিয়ে দেয় এবং চুলের কিউটিকলগুলোর টেক্সচার নষ্ট করে দেয়। তাই যে কোনো হেয়ার প্রোডাক্টস কেনার আগে অবশ্যই সালফেটস এবং অ্যালকোহলমুক্ত প্রোডাক্ট বাছাই করতে হবে।
এই তো জেনে নিলেন, চুলে জট পাকানো রোধে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস। আশা করছি আপনাদের অনেক বেশি হেল্প হবে। অথেনটিক হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট কিনতে পারেন সাজগোজ থেকে। সাজগোজের চারটি ফিজিক্যাল শপ রয়েছে। শপগুলো যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার এবং উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) এ অবস্থিত। এছাড়া অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকেও কিনতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি।
ছবি- সাজগোজ, সাটারস্টক