এইতো সেদিন সাফা ১৬ বছর বয়সে পা দিলো। কিন্তু বয়স কম হলে কী হবে, ফ্যাশনে সে অনেক বেশি এগিয়ে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সেও মেকআপ আর হেয়ার স্টাইলিং করছে। চুল নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে তো তার দারুণ লাগে। তার মা মাঝে মধ্যে রেগে বলেন, ‘এই বয়সেই চুলগুলোকে সব নষ্ট করে ফেলবি!‘ প্রথম প্রথম পাত্তা না দিলেও পরে সেও বুঝতে পারে, চুলগুলো কেমন যেন আগের মতো সুন্দর নেই। কারণ, সে হেয়ার নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করে ঠিকই, কিন্তু যত্নটা সেভাবে তার নেওয়া হয় না। সে ভাবতে লাগলো, এই টিনেজ হেয়ার কেয়ার কীভাবে নেওয়া উচিত!
আপনার সন্তান কি টিনেজার? বা আপনি নিজেই কি এই স্টেজে আছেন? চিন্তায় আছেন যে কীভাবে চুলের যত্ন নিলে চুল হেলদি থাকবে এবং ভবিষ্যৎ এ চুলের ক্ষতি হবে না! তাহলে আজকের এই আর্টিকেল আপনার জন্যেই। কারণ, আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো কীভাবে টিনেজে চুলের যত্ন নেওয়া যায়।
টিনেজে রেগুলার হেয়ার কেয়ারের গুরুত্ব
চুলের যত্ন নেওয়া সকলের জন্যেই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। টিনেজারদের জন্য তো আরো বেশি জরুরি। কারণ আপনি যদি আপনার চুলের যত্ন না নেন, তবে একটা বয়সের পরে চুল পড়া, ড্রাইনেস, চুলের গ্রোথ সঠিক ভাবে না হওয়া, খুশকি, ইচি স্ক্যাল্প, চুলের আগা ফাটা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই চুল যেমনই হোক ড্রাই বা অয়েলি, স্ট্রেইট বা কার্লি, টিনেজারদের অবশ্যই চুলের যত্নের দিকে নজর দিতে হবে। আগে নিজের চুলের ধরন বুঝতে হবে এবং সেই অনুযায়ী কেয়ার নিলে তবেই কাজে আসবে।
চুলের ধরন বুঝে টিনেজ হেয়ার কেয়ার
প্রত্যেকের চুলের ধরন আলাদা, সে টিনেজার হোক বা এডাল্ট। আর আমাদের উচিত চুলের ধরন বুঝে যত্ন নেওয়া। তাহলে সেটা অনেক বেশি ইফেক্টিভ হবে।
১. শুষ্ক চুলের যত্ন
ড্রাই হেয়ার বলতে নরমালি আমরা রুক্ষ, শুষ্ক, সহজে জট বাঁধে এমন চুলকেই বুঝি। টিনেজারদের এই ধরনের হেয়ার হলে, হেয়ার কেয়ারে অবশ্যই একটু বেশি খেয়াল দিতে হবে! কারণ, এই ধরনের চুলে সহজেই জট বাঁধে এবং ব্রেকেজ প্রবলেম দেখা দেয়।
ড্রাই হেয়ার হলে শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনার অ্যাপ্লাই করতে ভুলবেন না। এতে চুল অনেকটা ম্যানেজেবল এবং স্মুথ মনে হবে। ১২-১৪ বছর থেকেই হেয়ার কন্ডিশনার ইউজ করা যেতে পারে। ড্রাই হেয়ারে হিট স্টাইলিং টুলস ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে। এই বয়সে হিট স্টাইলিং টুলস ব্যবহার না করাই ভালো। তবে মাঝে মধ্যে যদি হিট স্টাইলিং করতে হয় তাহলে আগে হিট প্রোটেকটর স্প্রে অ্যাপ্লাই করে নিন, এতে চুল সুরক্ষিত থাকবে। সপ্তাহে একদিন ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্টস দিয়ে তৈরি হেয়ার প্যাক ব্যবহার করতে পারেন।
ড্রাই হেয়ারের জন্য স্পেশাল প্যাক
- একটি পাকা কলা, ১ টি ডিমের কুসুম, ১ টেবিল চামচ কোকোনাট মিল্ক অথবা টকদই ও ১ চামচ মধু ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিন।
- এবার পুরো চুলে সিঁথি কেটে কেটে প্যাক অ্যাপ্লাই করতে হবে। ৩০ মিনিট পর ভালোভাবে শ্যাম্পু করে কন্ডিশনার অ্যাপ্লাই করুন।
২. তৈলাক্ত চুলের যত্ন
যাদের হেয়ার টাইপ অয়েলি, তাদের নরমালি স্ক্যাল্প তেলতেলে বা চিটচিটে হয়ে যেতে দেখা যায়। যেমন, আপনি আজ শ্যাম্পু করলেন, কাল দেখলেন চুল অনেক বেশি গ্রিজি লাগছে। বেশ কমন প্রবলেম, তাই না?
এক্ষেত্রে রেগুলার শ্যাম্পু করার প্রয়োজন হলে মাইল্ড শ্যাম্পু সিলেক্ট করুন, সপ্তাহে ১ দিন ক্ল্যারিফায়িং বা সালফেট বেইজড শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন। এতে স্ক্যাল্পের ডিপ ক্লিনিংয়ের কাজটা হয়ে যাবে। অয়েলি হেয়ারেও কন্ডিশনিং প্রয়োজন। সপ্তাহে ১ দিন ন্যাচারাল হেয়ার প্যাক অ্যাপ্লাই করতে পারেন। চলুন জেনে নেই তাহলে।
অয়েলি হেয়ারের জন্য স্পেশাল প্যাক
- হাফ কাপ টকদই, ১ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল, ২ চা চামচ লেবুর রস ও ১ টেবিল চামচ মুলতানি মাটি নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। হেয়ার ফলের প্রবলেম থাকলে আমলা পাউডারও দিয়ে দিতে পারেন।
- এবার এই হেয়ার প্যাক পুরো চুলে অ্যাপ্লাই করুন। ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে কন্ডিশনার ব্যবহার করবেন।
টিনেজে বেসিক হেয়ার কেয়ার
অয়েল ম্যাসাজ
এই বয়সে তো শুধু চুল নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করলেই হবে না, চুলের যত্নে অয়েলিংও করতে হবে। অয়েল ম্যাসাজ কেবল চুলে নিউট্রিয়েন্টস প্রোভাইড করে না, বরং সেই সাথে চুলের ড্রাইনেস কমিয়ে সফট ও ময়েশ্চারাইজডও রাখে। হেয়ার অয়েলিং চুলের টেক্সচারকে স্মুথ করতে সহায়তা করে এবং হেয়ার ফলিকলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। এক কথায়, হেলদি হেয়ার পেতে উইকলি হেয়ার কেয়ারে অয়েল ম্যাসাজ মাস্ট। টিনেজাররা চুলের যত্নে কোকোনাট অয়েল, আমন্ড অয়েল, অলিভ অয়েল অয়েল ব্যবহার করতে পারবে।
চুলের জন্য সঠিক শ্যাম্পু বেছে নেওয়া
শ্যাম্পু নির্বাচনে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। সবসময় পিএইচ ব্যালেন্সড শ্যাম্পু ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন। মাইল্ড শ্যাম্পুতে হার্শ কেমিক্যাল থাকে না। রেগুলার ব্যবহারের জন্য এই ধরনের শ্যাম্পু সাজেস্ট করবো। আর ৭-১০ বছর পর্যন্ত বেবিদের জন্য ফরমুলেটেড শ্যাম্পুও ভালো অপশন।
হেয়ার কেয়ারের বেসিক কিছু টিপস
১. চুল সব সময় অবশ্যই পরিষ্কার রাখতে হবে।
২. চুলে পুষ্টি যোগাতে সপ্তাহে ২-১ দিন চুলে অয়েল ম্যাসাজ মাস্ট।
৩. এই বয়সে চুলে হেয়ার ড্রাইয়ার ব্যবহার না করে স্বাভাবিকভাবে চুল শুকিয়ে নেওয়া ভালো। চুল আঁচড়ানোর জন্য অবশ্যই মোটা দাঁতের চিরুনি বা কাঠের চিরুনি ব্যবহার করবেন।
৪. হিট স্টাইলিং টুলগুলো থেকে যতসম্ভব দূরে থাকতে হবে। ইন্টারনেট ঘাটলেই হিট স্টাইলিং টুলস ছাড়া হেয়ার স্টাইলিং করার অনেক উপায় দেখতে পাবেন, সেগুলো ট্রাই করুন। আর হিট স্টাইলিং করতে হলে আগে হিট প্রোটেকশন (স্প্রে বা সিরাম) অ্যাপ্লাই করতে হবে, এতে হেয়ার ড্যামেজ কম হবে।
৫. প্রতি ২-৩ মাস পর পর চুলের আগা ট্রিম করুন।
৬. অবশ্যই আপনাকে প্রচুর পরিমানে পানি পান করতে হবে। ফাস্টফুড, বাইরের খাবার কম খেয়ে হেলদি ও ব্যালেন্সড ডায়েটের মধ্যে থাকা কিন্তু চুলের সুস্বাস্থের জন্য খুবই জরুরী। এছাড়া, এক্সেস হেয়ার ফল বা অন্য কোনো মেজর প্রবলেম দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না।
এই তো জেনে নিলেন, টিনেজ হেয়ার কেয়ার সম্পর্কে। আশা করছি, আপনারা এ সময়ে চুলের যত্ন সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা পেলেন। অথেনটিক হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্টগুলো সাজগোজেই পেয়ে যাবেন। অনলাইনে কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে অথবা সাজগোজের ফিজিক্যাল শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, মিরপুরের কিংশুক টাওয়ার, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট, ইস্টার্ন মল্লিকা, বসুন্ধরা সিটি, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), সীমান্ত সম্ভার, চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টার থেকেও বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি।
ছবি- সাজগোজ, সাটারস্টক