মার্কেটে ত্বক পরিষ্কার করতে রয়েছে বিভিন্ন রকমের ক্লিঞ্জার। তবে এইসব ফেইসওয়াশ বা ক্লিঞ্জার যদি অথেনটিক না হয়ে থাকে তাহলে এগুলো ত্বকের ময়লা পরিষ্কার করার সাথে সাথে আমাদের ত্বকের ন্যাচারাল অয়েলও বের করে নিয়ে আসে। ফলে ত্বক উজ্জ্বলতা হারিয়ে মলিন ও শুষ্ক হয়ে পড়ে। তাই প্রডাক্টগুলো অথেনটিক নিশ্চিত না হলে এসব দৈনিক ব্যবহার করা অবশ্যই বুদ্ধিমানের কাজ নয়। তাহলে কি করবেন? যদি নিজের ত্বকের যত্ন আসলেই নিতে চান এবং ভেতর থেকে উজ্জ্বলতা আনতে চান তাহলে সপ্তাহে একবার সময় করে ত্বকের যত্নে অয়েল ক্লিঞ্জিং ফেসিয়াল করে নিন। সে জন্য আপনাকে কষ্ট করে পার্লারে যেতে হবে না, বাসায় বসেই খুব সহজ উপায়ে এটি করে নিতে পারেন।
ত্বকের যত্নে অয়েল ক্লিঞ্জিং ফেসিয়াল
কোন কোন তেল ব্যবহার করবেন?
ত্বকের যত্নে অয়েল ক্লিঞ্জিং ফেসিয়াল করার প্রধান উপাদানই হচ্ছে ক্যাস্টর অয়েল। এটি খুব ভালো ক্লিঞ্জিং প্রপার্টিজ বহন করে এবং ত্বকের ময়লা ও অতিরিক্ত তেল দূর করতে সাহায্য করে। ক্যাস্টর অয়েলের সাথে অন্য যে কোন অয়েল যেমন আমন্ড অয়েল/ অলিভ অয়েল/ জোজোবা অয়েল/ গ্রেপসিড অয়েল মিশাতে পারেন যা আপনার ত্বকে মানিয়ে যাবে। তবে একটি তেল অবশ্যই ব্যবহার করবেন না, সেটি হচ্ছে নারিকেল তেল। কারণ নারিকেল তেল ত্বকের লোমকূপ বন্ধ করে ফেলে যার ফলে ব্রণের সংক্রমণ হতে পারে।
ত্বকের ধরণ অনুযায়ী তেলের অনুপাত একেক রকম হবে। নিচে অনুপাতগুলো দিয়ে দেওয়া হলো –
তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে – ৩০% ক্যাস্টর অয়েল এবং ৭০% অন্যান্য অয়েল।
নরমাল এবং কম্বিনেশন ত্বকের ক্ষেত্রে – ২০% ক্যাস্টর অয়েল এবং ৮০% অন্যান্য অয়েল।
শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে – ১০% ক্যাস্টর অয়েল এবং ৯০% অন্যান্য অয়েল।
এবার অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন, ক্যাস্টর অয়েল দিলে মুখের লোম বড় হবে কিনা কারণ আমরা অনেকেই জানি ক্যাস্টর অয়েল হেয়ার গ্রোথ করতে সহায়তা করে। ভয় পাবার কিছু নেই, ক্যাস্টর অয়েল সাধারণত মুখের লোম বড় করতে সহায়তা করে না। তবে আপনার মুখের লোম বা ঠোঁটের উপরের লোম যদি কিছুটা বড় থাকে, তবে সতর্কতা হিসেবে ক্যাস্টর অয়েল না ব্যবহার করলেও চলবে বা সেসব জায়গায় ক্যাস্টর অয়েল না দিয়ে অন্য অয়েল দিবেন। এছাড়াও ক্যাস্টর অয়েলে যদি এলার্জি থাকে তাহলে এটি ছাড়াও অন্য যে কোনও তেল ব্যবহার করতে পারেন।
পদ্ধতি
- আপনার ত্বকের ধরণ অনুযায়ী উপরের অনুপাতে তেল নিয়ে একটি বাটিতে মিশান।
- একটি বাটিতে গরম পানি রাখুন।
- ভালো মতো পরিষ্কার করা একটি ছোট কাপড় বা তোয়ালে নিন।
ত্বকের যত্নে অয়েল ক্লিঞ্জিং ফেসিয়াল করার ধাপসমূহ
১. প্রথমেই মুখ ভালো মতো ধুয়ে নিন। যদিও ক্যাস্টর অয়েলের ক্লিঞ্জিং প্রপার্টিজ মুখের ময়লা এবং ধুলোবালি দূর করতে সাহায্য করবে, তারপরও মুখে মেকআপ বা ময়লা থাকলে ধুয়ে নিন।
২. এবার বাটিতে রাখা তেল পরিমাণ মতো হাতের তালুতে নিয়ে দুই হাতে একটু ঘষে নিন, এতে তেল হালকা গরম হবে। এমন অবস্থায় দুই হাত দিয়ে পুরো মুখে তেলের মিশ্রণটি ধীরে ধীরে ম্যাসাজ করতে থাকুন। তবে অবশ্যই আপওয়ার্ডস বা উপরের দিকে ম্যাসাজ করবেন এবং ত্বকে বেশি প্রেসার দিয়ে ম্যাসাজ করবেন না। এভাবে কমপক্ষে ৩-৫ মিনিট ম্যাসাজ করুন।
৩. এবার পরিষ্কার তোয়ালে নিয়ে গরম পানিতে ভিজিয়ে পানি চিপরে নিন। বিছানায় শুয়ে বা হেলান দিয়ে এই গরম তোয়ালেটি এবার পুরো মুখের উপর দিয়ে রাখুন। তবে মুখে দেওয়ার আগে অবশ্যই দেখে নেবেন ত্বক সেই গরম সহ্য করতে পারে কিনা। তোয়ালেটি রুম টেম্পারেচারে আসলে এটি আবার পানিতে ভিজিয়ে মুখের উপর রাখুন। এভাবে ৩-৪ মিনিট বা আপনার পছন্দ অনুযায়ী অথবা ত্বকের ড্যামেজ অনুযায়ী তোয়ালে ১০-১৫ মিনিট মুখের উপর রাখতে পারেন।
৪. শেষে তোয়ালে দিয়ে মুখের তেল ধীরে ধীরে উঠাতে থাকুন। তবে খুব জোরে প্রেসার দিয়ে উঠাতে যাবেন না। হালকা করে মুখের তেল উঠিয়ে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
মুখ ধোয়ার পর মুখে ময়েশ্চারাইজার দেওয়ারও কোন দরকার নেই। তবে ত্বক যদি শুষ্ক অনুভূত হয় দিতে পারেন। এই মেথড ত্বকের ইমপিউরিটিস, তেল এবং মরা কোষ বের করে আনে এবং ত্বকের রোমকূপ ছোট করতে সাহায্য করে। আপনি নিজেই ত্বকের দারুণ পরিবর্তন লক্ষ্য করবেন। ত্বক অনেক সফট এবং উজ্জ্বল হয়ে যাবে। সবচেয়ে ভালো ফলাফল পেতে সপ্তাহে ২ বার এটি করুন।
ছবি – সংগৃহীতঃ সাটারস্টক