হুটহাট প্ল্যান বা আর্জেন্ট সিচ্যুয়েশনে আমাদের সকলেরই কমবেশি পড়তে হয়। আর বরাবরই নিজেকে একটু প্রেজেন্টেবলভাবে উপস্থাপন করতেই আমরা পছন্দ করি। কিন্তু হাতে সময় নেই, তাহলে অল্প সময়ে কীভাবে সাজবো? এমন জরুরি মুহূর্তে ঘন্টার পর ঘন্টা আয়নার সামনে বসে থেকে মেকআপ করা সম্ভব হয় না। এই রকম সিচ্যুয়েশনে কিছু মেকআপ হ্যাকসই আপনাকে বাঁচিয়ে দিতে পারে। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে জরুরি মুহূর্তের প্রয়োজনীয় ১০টি মেকআপ হ্যাকস সম্পর্কে জেনে নেই।
হাতে সময় নেই? ফলো করুন এই হ্যাকসগুলো!
১) ময়েশ্চারাইজিং ফাউন্ডেশন এর ব্যবহার
মেকআপের আগে ফেইসে ময়েশ্চারাইজার লাগানো তো অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। আর নিজেকে সাজিয়ে পারফেক্ট লুক ক্রিয়েট করার জন্য ফাউন্ডেশনের জুড়ি নেই। কিন্তু মেকআপের আগে ময়েশ্চারাইজার লাগানো আবার এরপর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ব্রাশ বা ভেজা স্পঞ্জের সাহায্যে ব্লেন্ড করে ফাউন্ডেশন লাগানো অনেক সময়ের ব্যাপার, তাই না?
সময় বাঁচাতে ফাউন্ডেশন ও ময়েশ্চারাইজার দুটো একসাথে মিক্স করে বানিয়ে নিতে পারেন ময়েশ্চারাইজিং ফাউন্ডেশন। এটা ব্রাশ কিংবা বিউটি ব্লেন্ডারের সাহায্য ছাড়াই হাতের সাহায্যে সহজেই ব্লেন্ড করে নিতে পারবেন।
২) পাউডার ফাউন্ডেশনের ব্যবহার
পাউডার ফাউন্ডেশনগুলো একটু হেভি কভারেজের হয়ে থাকে, যার কারণে এটা একই সাথে ফাউন্ডেশন ও কমপ্যাক্ট পাউডারের কাজ করে। আর এর ফলে আপনার ফাউন্ডেশন ও কমপ্যাক্ট পাউডার আলাদা করে লাগানোর প্রয়োজন পড়বে না। তবে ফেইসে বেশি দাগ থাকলে প্রথমে একটু কনসিলার দাগের উপরে লাগিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। এরপর পাউডার ফাউন্ডেশন লাগান। শেষে সেটিং স্প্রে দিয়ে পুরো ফেইসে স্প্রে করে নিন, যাতে পাউডারি লুকটা চলে যায়।
৩) লিপস্টিককে ব্লাশ হিসেবে ব্যবহার
হঠাৎ কোথাও যেতে হলে হাতের কাছে ব্লাশ নাও পেতে পারেন। এমন জরুরি মুহূর্তে যখন রেডি হচ্ছেন তখন ব্লাশ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন লিপস্টিক। আপনি আপনার ঠোঁটে যে লিপস্টিকটি ব্যবহার করে থাকেন, সেটাই আপনি গালে ব্লাশ হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে পিংক, পিচ, মভ, কোরাল ইত্যাদি রঙের লিপস্টিক হতে হবে। সামান্য একটু লিপস্টিক আপনি আপনার ব্লাশ এরিয়াতে লাগিয়ে নিন এবং আঙুলের সাহায্যে ব্লেন্ড করুন। এতে আপনার এক্সট্রা করে ব্লাশ লাগানোর ঝামেলা থাকবে না।
৪) আইব্রোতে মাশকারার ব্যবহার
সুন্দরভাবে আইব্রো আঁকতে পারলে আমাদের ফেইসের লুকটাই চেঞ্জ হয়ে যায়। তবে সুন্দর করে আইব্রো আঁকতে কিন্তু বেশ সময় লাগে। ঝটপট যখন রেডি হতে হয়, তখন এত সময় নিয়ে আইব্রো আঁকা আমাদের পক্ষে পসিবল হয় না। এ সময় আপনি ব্যবহার করতে পারেন আপনার আইল্যাশে ব্যবহৃত মাশকারাটাই। হালকা করে মাশকারাটি আইব্রোতে ব্রাশ করে নিন। এতে করে আইব্রোগুলো দেখতে ভালো লাগবে এবং আইব্রোর ভেতরে থাকা গ্যাপগুলো ফিলআপ হয়ে যাবে।
৫) আইশ্যাডো হিসেবে লিপস্টিকের ব্যবহার
চোখ সাজাতে আইশ্যাডোর জুড়ি নেই। কিন্তু আইশ্যাডো লাগাতে এবং ব্লেন্ড করতে অনেকটা সময় লেগে যায়। আর জরুরি মুহূর্তে আইশ্যাডো লাগানো কিংবা ব্লেন্ড করা সম্ভব হয়না। এক্ষেত্রে আপনি আপনার লিকুইড লিপস্টিক টি নিয়ে আইলিডে লাগিয়ে নিন এবং আঙুলের সাহায্যে ব্লেন্ড করে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে পিংক, ব্রাউন, ন্যুড, পার্পল ইত্যাদি কালার ব্যবহার করতে পারবেন। এতে করে ঝটপট চোখটা সাজানো হয়ে যাবে এবং দেখতেও সুন্দর লাগবে।
৬) কাজলের সাহায্যে স্মোকি আই লুক ক্রিয়েট করা
একটি পারফেক্ট স্মোকি আই মেকআপ আপনার লুকটাকেই গর্জিয়াস করে তুলতে পারে। আর সহজেই যদি ঝটপট স্মোকি আই মেকআপ ক্রিয়েট করা যায় তাহলে কেমন হয়? আপনার ব্যবহৃত কাজলের সাহায্যেই আপনি স্মোকি আই লুক ক্রিয়েট করতে পারবেন। এর জন্য আপনি আপনার চোখের আইলিডে ল্যাশ লাইনের কাছ থেকে কাজল লাগিয়ে নিন এবং ব্লেন্ড করে নিন। এতে করে সুন্দর একটা স্মোকি ইফেক্ট ক্রিয়েট হবে এবং দেখতেও দারুণ লাগবে।
৭) আইশ্যাডো হিসেবে হাইলাইটারের ব্যবহার
ফেইসে সুন্দর গ্লো পেতে হলে হাইলাইটার ব্যবহার আবশ্যক। তবে হাইলাইটার শুধু ফেইস গ্লো করার কাজে ব্যবহার করলেও জরুরি মুহূর্তে হাইলাইটারকে আপনি আইশ্যাডো হিসেবেও ব্যবহার করতে পারবেন। ফেইসে হাইলাইটার ব্যবহারের সময় অল্প একটু হাইলাইটার নিয়ে আপনার আই লিডে লাগিয়ে নিন। আর আগের হ্যাকটি ফলো করলে সেই লিকুইড লিপস্টিক এর উপরেও সামান্য হাইলাইটার ব্যবহার করতে পারবেন। এতে করে লুকটা অনেক সুন্দরভাবে ফুটে উঠবে।
৮) ইজি উইং লাইনার পেতে আইলাইনার স্ট্যাম্প
উইংড লাইনার তো আমাদের সকলেরই পছন্দ। কিন্তু হাতে সময় নেই, তাহলে? পারফেক্ট উইংড লাইনার করাটা তাড়াহুড়ার সময়ে খুবই চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। আবার অনেক সময় দেখা যায়, উইংড আইলাইনার করতে গেলে দুই চোখের উইং দুই রকমের হয়ে যায়। এই সমস্যা থেকে বাঁচতে আইলাইনার স্ট্যাম্প ব্যবহার করতে পারেন। এটার সাহায্যে ঝটপট উইং করে ফেলা যায়। তাই একটি আইলাইনার স্ট্যাম্প কিনে রাখলে জরুরি মুহূর্তে বেশ কাজে দিবে।
৯) ঘন আইল্যাশ পেতে বেবি পাউডার
ঘন ও কার্লি আইল্যাশ আমাদের সকলেরই পছন্দ। কিন্তু ন্যাচারালভাবে আমাদের আইল্যাশ সেরকম সুন্দর হয় না। তাই ফলস আইল্যাশই ভরসা। কিন্তু জরুরি মুহূর্তে ফলস আইল্যাশ লাগানোর মতো সময় সবার থাকে না। তো তখন কী করবেন?
এক্ষেত্রে বেবি পাউডার আপনার জন্য একটি সহজ সমাধান। মাশকারা লাগানোর আগে একটি ব্রাশের সাহায্যে আপনার আইল্যাশে একটু বেবি পাউডার লাগিয়ে নিন। এরপর আপনার পছন্দের মাশকারা ব্যবহার করুন। দেখবেন আপনার আইল্যাশগুলো ফলস আইল্যাশের থেকে কোনো অংশে কম মনে হচ্ছে না।
১০) লিপ গ্লস এর ব্যবহার
সুন্দর করে লিপস্টিক অ্যাপ্লাই করাটাও কিন্তু সময়ের ব্যাপার। জরুরি মুহূর্তে লিপস্টিক সুন্দর করে আঁকতে গেলে অনেক সময়ের প্রয়োজন পড়ে। আর তাড়াহুড়ো করতে গেলে সেটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে বা লিপস্টিক ছড়িয়ে যেতে পারে। তাই ঠোঁটে ঝটপট লিপ গ্লস লাগিয়ে নিতে পারেন।
হাতে সময় নেই, কীভাবে অল্প সময়ে সাজবো- এমন চিন্তা আমাদের অনেকেরই থাকে। সময় বাঁচিয়ে কীভাবে ফুল মেকআপ করবেন সেটা আজ জানিয়ে দিলাম। এখন নিশ্চয়ই এ নিয়ে আর কনফিউশন থাকবে না। স্কিন ও হেয়ার কেয়ারের জন্য অথেনটিক প্রোডাক্ট কিনতে চাইলে আপনারা সাজগোজের চারটি ফিজিক্যাল শপ ভিজিট করতে পারেন। শপগুলো যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার এবং উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) এ অবস্থিত। আর অনলাইনে কিনতে চাইলে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, সুন্দর থাকুন।
ছবিঃ সাজগোজ