আমাদের মাথার চুলের মতই আইল্যাশও একটি নির্দিষ্ট নিয়মে ও হারে বেড়ে থাকে। মাশকারা, কাজল, আইলাইনার ইত্যাদি ব্যবহারের কারণে আইল্যাশ পড়ে যেতে থাকলে তা পুনরায় গজানোর অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। আমাদের আইল্যাশ এর দৈর্ঘ্য ও স্বাস্থ্য যদিও জেনেটিক্স (Genetics) দ্বারা নির্ধারিত হয়ে থাকে। তবুও আইল্যাশ গজানো ও বৃদ্ধির জন্য আছে কিছু প্রাকৃতিক উপায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক কী উপায়ে আইল্যাশ গজানো ও বৃদ্ধি করা যাবে!
আইল্যাশ গজানো ও বৃদ্ধির প্রাকৃতিক উপায়
১. ভিটামিন এইচ (বায়োটিন)
ভিটামিন এইচ (বায়োটিন) চুলকে স্ট্রেইট রাখতে ও চুলের দ্রুত বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ভিটামিন এইচ একটি বি-কমপ্লেক্স ভিটামিন যা অনেক কসমেটিকস প্রোডাক্ট ও খাদ্যেও পাওয়া যায়। পানিতে দ্রবণীয় এই ভিটামিনটি বাদাম, কলা, ডিমের কুসুমে পাওয়া যায়। ডিমের সাদা অংশে থাকে এভিডিন (Avedin) নামক প্রোটিন যা ভিটামিন এইচ শোষণে সাহায্য করে।
২. অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট
দুটি অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট (Anti-Oxidant) ভিটামিন ‘সি’ ও ‘ই’ স্বাভাবিক হেয়ার গ্রোথ এর জন্য অনেক প্রয়োজন। ভিটামিন ‘সি’ এর অভাবে চুল রুক্ষ হয়ে যায় ও চুলের আগা ফেটে যায়। এছাড়াও ভিটামিন ‘সি’, ফ্রি র্যাডিকেল (Free Radicals) এর আক্রমণ থেকে চুলকে রক্ষা করে। ভিটামিন ‘ই’ স্ক্যাল্প সার্কুলেশন বাড়ায়। সবুজ শাক-সবজিতে এই ভিটামিনগুলো থেকে থাকে।
৩. অলিভ অয়েল/ক্যাস্টর অয়েল
ঘন ও দীর্ঘ ল্যাশ পেতে প্রতি রাতে অল্প পরিমাণে অলিভ অয়েল বা ক্যাস্টর অয়েল আইল্যাশ এর গোঁড়ায় লাগিয়ে রাখুন। দেখবেন ১ অথবা ২ মাসের মধ্যেই নতুন আইল্যাশ গজাতে আরম্ভ করবে। এছাড়াও অলিভ অয়েল আপনার আইল্যাশ এর জন্য কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করবে।
৪. ভ্যাসলিন
অলিভ অয়েল/ক্যাস্টর অয়েল এর বদলে প্রতি রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে আইল্যাশ এর গোঁড়ায় ভ্যাসলিন লাগিয়ে নিতে পারেন। সারারাত এভাবে রাখতে পারেন অথবা আপনি চাইলে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে পারেন। কিছু সপ্তাহের মধ্যেই ফল পাবেন।
৫. ডায়েট
প্রোটিন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার আইল্যাশ এর বৃদ্ধির জন্য অত্যাবশ্যকীয় সহায়ক যেমন মাছ, ডিম, শিম ইত্যাদি।
আইল্যাশ কিছু ঘরোয়া পদ্ধতিতে চোখের যত্ন
১. টি-ব্যাগ
একটি বাটিতে ঠাণ্ডা পানি নিয়ে তাতে কয়েক মিনিটের জন্য টি-ব্যাগ ভিজিয়ে নিন। এবার টি-ব্যাগটি আপনার চোখের
উপর দিয়ে রাখুন এবং উষ্ণ না হওয়া পর্যন্ত রিল্যাক্স করুন। এটি আপনার চোখে সতেজ ভাব আনবে।
২. আইল্যাশ আমন্ড অয়েল
রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে চোখের চারিদিকে ধীরে ধীরে আমন্ড অয়েল ম্যাসাজ করুন। সকালে স্কিনের সফটনেস নিজেই উপলব্ধি করতে পারবেন।
৩. গোলাপ জল
আপনার সাথে সবসময় গোলাপ জলের স্প্রে রাখতে পারেন। চেহারার ক্লান্তি ভাব কাটাতে আপনার মুখে গোলাপ জল
স্প্রে করতে পারেন। এতে করে ক্লান্তি ভাব অনেকটাই কমে যাবে অথবা গোলাপ জলে তুলো ভিজিয়ে আপনার চোখের চারপাশে অ্যাপ্লাই করতে পারেন।
৪. আমলা
আমলাতে থাকে ভিটামিন ‘সি’ যা চোখের জন্য উপকারী। আপনার খাদ্য তালিকায় আমলা অন্তর্ভুক্ত করুন অথবা পানিতে আমলা ভিজিয়ে রেখে ঐ পানি চোখ ক্লিনজিং এ ব্যবহার করতে পারেন।
আইল্যাশ প্রতিদিনের করণীয় কিছু টিপস
১.পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো।
২. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত খাবার (যেমন গাজর, পেঁপে, আমন্ড, মাছ ইত্যাদি) প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখুন।
৩. বেশি বেশি পানি পান করুন।
৪. চোখ কখনও আঙ্গুল দিয়ে ঘষবেন বা চুলকাবেন না। এক্ষেত্রে পাতলা ও নরম কাপড় ব্যবহার করতে পারেন।
৫. আমাদের চোখ এবং চোখের চারপাশের স্কিন অনেক ডেলিগেট (Delegate), তাই সবসময় ভালোভাবে জেনে ও সতর্কতার সাথে চোখের জন্য প্রোডাক্ট বাছাই করুন।
৬. চোখে মেকআপ লাগানো অবস্থায় কখনও ঘুমাবেন না। চোখে ইনফেকশন হতে পারে।
৭. একাধারে অনেকক্ষণ ধরে কম্পিউটার স্ক্রিন এর সামনে থাকা চোখের জন্য ক্ষতিকর। তারপরও যাদেরকে থাকতে হয় তারা আই স্পেশালিষ্ট এর পরামর্শ নিয়ে আই ড্রপ সাথে রাখতে পারেন যাতে পরবর্তীতে চোখ শুকিয়ে যাওয়া, চোখে লালচে ভাব আসা ও চোখে চুলকানি হওয়ার মত সমস্যা না হয়।
ছবি – সংগৃহীত: ওকতানুর.কম, দ্যা৯৬১.কম, ফেমিনা.এইচইউ