প্রতি বছরই স্কিন কেয়ারের জগতে আসে নতুন নতুন পরিবর্তন। আর এই বছরও এর ব্যতিক্রম নয়। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে এ বছরেও বেশ কিছু ফেসিয়াল অ্যাসিড স্কিন কেয়ারের দুনিয়া ছেয়ে যাবে। যেমন- বর্তমানে ট্রেন্ড করছে ‘হায়ালুরনিক অ্যাসিড’। তাই আজকে আমরা কথা বলবো, হায়ালুরনিক অ্যাসিড নিয়ে।
হায়ালুরনিক অ্যাসিড কী?
হায়ালুরনিক অ্যাসিড হচ্ছে সুগার মলিকিউল, যা আমাদের ত্বকে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয় এবং আমাদের ত্বককে হাইড্রেটেড, ময়েশ্চারাইজড এবং প্লাম্পি রাখতে সাহায্য করে।
কেন হায়ালুরনিক অ্যাসিড ব্যবহার করব?
আমাদের ত্বকের টেকশ্চার এবং সফটনেস নির্ভর করে আমাদের ত্বকের আর্দ্রতার ওপর। সময়ের সাথে সাথে আমাদের ত্বকের মধ্যে থাকা হায়ালুরনিক অ্যাসিড কমতে থাকে। আর ত্বকে হায়ালুরনিক অ্যাসিড কমতে থাকা মানে ত্বকে পানির পরিমাণ অর্থাৎ আর্দ্রতা কমে যাওয়া। ত্বকে পানি কমে গেলে ত্বক শুষ্ক হতে থাকে। যার ফলে চোখের নিচে ভাঁজ, ফাইন লাইনস ও রিংকেল এর মতো সমস্যা দেখা দেয়। এর সাথে ত্বক হয়ে যায় রুক্ষ এবং নিস্তেজ।
তাই ত্বককে সতেজ এবং হেলদি রাখতে হায়ালুরনিক অ্যাসিড যুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করা হয়ে থাকে।ত্বকে হাইড্রেশন সরবরাহ করে ত্বককে সুন্দর ও হাইড্রেটেড রাখাই হায়ালুরনিক অ্যাসিডের কাজ।
হায়ালুরনিক অ্যাসিডের বিভিন্ন ফর্ম
আমাদের ত্বকের জন্য উপযোগী বিভিন্ন ফর্মে হায়ালুরনিক অ্যাসিড পাওয়া যায়। যেমন- সিরাম, ময়েশ্চারাইজার এবং এসেন্স হিসেবে।
কোন ধরনের ত্বকের জন্য উপযোগী?
রুক্ষ ত্বকের জন্য হায়ালুরনিক অ্যাসিড আশীর্বাদস্বরূপ। রুক্ষ হয়ে যাওয়া নিস্তেজ ত্বককে পুনরায় সজীব করে তুলতে এর অবদান অনেক। এটি নিস্তেজ হয়ে যাওয়া সেলগুলোকে পুনরায় সতেজ করে এবং একই সাথে উজ্জীবিত করে। ত্বকে যদি একনে, র্যাশ বা কোনোরকম ইরেটেশন হয়, সেসব স্থানে হায়ালুরনিক অ্যাসিড খুব ভালো কাজ করে।
হায়ালুরনিক অ্যাসিডের উপকারিতা
১। হাইড্রেশনে সাহায্য কর
এই উপাদানটি আমাদের ত্বকে প্রবেশ করে ত্বকের সেলগুলোকে হাইড্রেটেড করে। ত্বকের প্রতিটি স্তরে গিয়ে সেলগুলোকে পুনরায় আর্দ্রতা দিয়ে থাকে এবং ত্বকে গ্লোয়িং লুক ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। এটি পরিবেশ থেকে পানি টেনে নেয় এবং ত্বকের ময়েশ্চার ধরে রেখে ত্বককে দীর্ঘস্থায়ী হাইড্রেশন সরবরাহ করবে।
২। ময়েশ্চারাইজড করে
‘শুষ্কভাব’ আমাদের ত্বককে বেশি ক্ষতি করে এবং ত্বকের ব্যারিয়ার নষ্ট করে দেয়। হায়ালুরনিক এসিড আমাদের ত্বকের ব্যারিয়ারকে করে শক্তিশালী। আর এতে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্যগুলো ত্বকের একনি, র্যাশ বা যেকোনো ইরেটেশন কমাতে সাহায্য করে।
৩। কোলাজেন প্রোডাকশন বুস্ট করে
ত্বকের কোলাজেন ধরে রাখতে সহায়তা করে হায়ালুরনিক অ্যাসিড। এর কাজই হচ্ছে কোলাজেন প্রোডাকশন বুস্ট করা। আর এর ফলে ফাইন লাইনস বা চোখের নিচে ভাঁজ পড়ার মতো সমস্যা কমে যায়।
৪। ত্বককে ভেতর থেকে রিপেয়ার করে
ত্বকের বিভিন্ন ড্যামেজ থেকে রক্ষা করে হায়ালুরনিক অ্যাসিড থাকে। এটি ব্যবহারে যেহেতু ত্বকের ব্যারিয়ার স্ট্রং হয় সেহেতু ত্বকের জন্য ক্ষতিকারক উপাদান থেকে ত্বককে ভালো রাখে। যেমন- রোদে পোড়া ত্বককে ভেতর থেকে মেরামত করে। আর ত্বকে যে ফ্রি রেডিকেলস তৈরি হয় তা থেকে ত্বককে রক্ষা করে। আর পিগমেন্টেশন কমাতে দারুণ কার্যকরী এই উপাদানটি।
হায়ালুরনিক অ্যাসিড যদিও নতুন সেল গঠন করে না কিন্তু পুরাতন সেলকে হায়ালুরনিক অ্যাসিড উজ্জীবিত করতে সাহায্য করে। আর স্বাভাবিকভাবে সেলগুলোকে করে হেলদি এবং আরও প্রাণবন্ত।
৫। পোরস টাইট করতে সাহায্য করে
বয়সের সাথে আমাদের ত্বক একটু ঝুলে পড়ছে। আর এর সাথে আমাদের ফেইসের পোরসগুলো আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। এই বড় হয়ে যাওয়া পোরসগুলোকে টাইট করতে হায়ালুরনিক অ্যাসিড ভালো কাজ করে।
৬। ত্বকের টেক্সশ্চার স্মুদ করে
ত্বককে হাইড্রেটেড করে হায়ালুরনিক অ্যাসিড ত্বকের টেকশ্চার স্মুদ করে। আর ত্বকের টোন ইভেন করতে সাহায্য করে।
৭। রিংকেল এবং ফাইনলাইনস কমাতে সাহায্য করে
রুক্ষ ত্বক অর্থাৎ ড্রাই স্কিনে খুব তাড়াতাড়ি চোখের নিচে ভাঁজ, ফাইন লাইনস পড়ে যায়। ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় হাইড্রেশন ব্যালেন্স করে ত্বকের ভাঁজ এবং ফাইনলাইনস স্মুদ করতে সাহায্য করে হায়ালুরনিক এসিড।
হায়ালুরনিক অ্যাসিড নিয়ে ভুল ধারণা
আমরা অনেকই মনে করি, তৈলাক্ত ত্বকের জন্য আলাদা করে হাইড্রেশনের দরকার পড়ে না। কিন্তু এই ধারণাটি একদম ভুল। আসলে তৈলাক্ত ত্বকেও হাইড্রেশন কমতে থাকে এবং অতিরিক্ত তেল উৎপাদন করে ত্বকের হাইড্রেশন কমিয়ে আনে। তাই মাইল্ড কোনো হায়ালুরনিক অ্যাসিড যুক্ত প্রোডাক্ট হতে পারে তৈলাক্ত ত্বকের জন্য বেস্ট সলিউশন।
কীভাবে ব্যবহার করবেন?
হায়ালুরনিক অ্যাসিড ব্যবহারের সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে হালকা ভেজা ত্বকে টোনার বা এসেন্স এপ্লাই করা। তারপর ময়েশ্চারাইজার দিয়ে লক করে দিতে হবে।
কখন ব্যবহার করবেন?
প্রতিদিনের ত্বকের যত্নে রাখতে পারেন হায়ালুরনিক অ্যাসিড। দিনে বা রাতে যেকোনো সময় ব্যবহার করতে পারেন এটি। আর বাহিরে যাওয়ার সময় অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।
আশা করি বুঝতে পেরেছেন, স্কিনকেয়ার রুটিনে কেন ট্রেন্ড করছে ‘হায়ালুরনিক অ্যাসিড’।
স্কিন ও হেয়ার কেয়ারের জন্য অথেনক্টিক প্রোডাক্ট কিনতে চাইলে আপনারা সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ ভিজিট করতে পারেন, যার একটি যমুনা ফিউচার পার্ক ও অপরটি সীমান্ত স্কয়ারে অবস্থিত। আর অনলাইনে কিনতে চাইলে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, সুন্দর থাকবেন।