বয়স বাড়ার সাথে সাথে কিন্তু আমাদের স্কিনে আমরা বেশ পরিবর্তন দেখতে পাই। বিশেষ করে আমাদের ফেইসে ও হাতে এটা বেশি প্রকাশ পায়। ত্বকে রিংকেল পড়ে যাওয়া এর মধ্যে অন্যতম একটি এজিং সাইন! কিন্তু অ্যান্টি এজিং ট্রিটমেন্ট বলতে আমরা কেবল মুখের ত্বকের পরিচর্যাকেই যেন বুঝি! আর বডি স্কিনের যত্ন নেয়ার বিষয়টিকে আমরা প্রায়ই অবহেলা করে থাকি। বয়সের সাথে সাথে যেটি আমাদের খুব বেশি নজরে আসে, তা হলো হাতে রিংকেল পড়ে যাওয়া। রিংকেল বলতে কী বুঝি আমরা? বলিরেখা, চামড়া কুঁচকে যাওয়া বা ভাজ পড়াই মূলত রিংকেল। যখন হাতের টানটান স্কিনের পরিবর্তে হাতের ত্বকে রিংকেল দেখা যায়, তখন সৌন্দর্যে তো অবশ্যই কিছুটা হলেও ভাটা পড়ে, তাই না?
রিংকেল পড়া বা চামড়া পাতলা হয়ে যাওয়া তো আমরা একেবারে দূর করতে পারবো না। তবে যেটা পারবো তা হলো, এই প্রসেসটাকে স্লো করে দিতে। ঠিকভাবে যত্ন নিলে এবং রুটিন মেনে চললে বয়সের আগে হাতের ত্বকে রিংকেল পড়া প্রতিরোধ হবে। তো চলুন আর কথা না বাড়িয়ে জেনে নেই, কীভাবে হাতের ত্বকে রিংকেল পড়া প্রতিরোধ করবেন খুব সহজেই।
হাতের ত্বকে রিংকেল পড়ার কারণ কী?
হাতের ত্বকে রিংকেল পড়া প্রতিরোধ করার আগে তো আমাদেরকে রিংকেল পড়ার কারণগুলো জানা জরুরি। আমরা দৈনন্দিন জীবনে আমাদের হাতকে নানা কাজে ব্যবহার করে থাকি। বলতে গেলে, আমাদের হাত-ই সব থেকে বেশি ইউজ করা হয়। আর আমাদের হাতের স্কিনের খুব দ্রুত ইলাস্টিসিটি লুজ করার এবং ভাঁজ পড়ে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। এছাড়াও আরো কিছু কারণ রয়েছে হাতের ত্বকে রিংকেল পড়ার। সেগুলো হলো-
- বয়স বৃদ্ধি
- ডিহাইড্রেশন
- অত্যাধিক পরিমাণে হাত ধোয়া
- ক্ষতিকর কেমিক্যালযুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করা
- সানস্ক্রিন ছাড়া রোদে যাওয়া
- ডেইলি ডিশওয়াশিং ও ক্লিনিংয়ের ফলে
- স্মোকিং
কীভাবে হাতের স্কিনে রিংকেল হওয়া প্রতিরোধ করবেন?
১) সান প্রোটেকশন
আপনি জানেন কি, সান প্রোটেকশন ছাড়া বার বার রোদে গেলে সেটি আপনার হাতের স্কিনে পিগমেন্টেশন, রিংকেল এবং স্পটের সৃষ্টি করতে পারে? আপনার হাতের স্কিন যখন সূর্যের আলোতে এক্সপোজ হয় তখন, আপনার ত্বকে থাকা কোলাজেন ও ইলাস্টিন ভাঙতে থাকে। যার ফলে স্কিন লুজ হয়ে যায়। সূর্যের আল্ট্রাভায়োলেট রেডিয়েশনই কিন্তু ৮০% স্কিন এজিং এর কারণ। তাই সান প্রোটেকশন কিন্তু একদমই মাস্ট। এজন্য অবশ্যই দিনের বেলা সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে আলসেমি করবেন না। সানস্ক্রিন আমাদের স্কিনের উপর একটা প্রোটেকটিভ শিল্ড হিসেবে কাজ করে এবং ক্ষতি থেকে স্কিনকে বাঁচায়।
২) হ্যান্ড ক্রিম
হাতের সুরক্ষা ও ময়েশ্চারাইজেশন এর জন্য হ্যান্ড ক্রিমের ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, রুক্ষ আর মলিন হাতে সহজেই রিংকেল পড়ে যাবার চান্স থাকে। হাতের স্কিনে হাইড্রেশন এবং ময়েশ্চারাইজেশন দু’টোই জরুরি। আর এজন্য হ্যান্ড ক্রিম বেস্ট কাজ করে। এটি হাতের স্কিনকে ময়েশ্চার দেয় এবং সেটি লক করে রাখে দীর্ঘসময় ধরে। চেষ্টা করবেন glycerin ও alpha-hydroxy acids (AHA) যুক্ত হ্যান্ড ক্রিম ব্যবহার করতে। এই ইনগ্রেডিয়েন্টগুলো ত্বকের জন্য বেশ ভালো। প্রতিবার হাত ক্লিন করার পর হ্যান্ড ক্রিম ব্যবহার করবেন। যারা পানির কাজ বেশি করেন, তারাও প্রতিবার কাজের শেষে হ্যান্ড ক্রিম লাগাতে ভুলবেন না।
৩) রেটিনলযুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার
Retinoid এমন একটা ইনগ্রেডিয়েন্ট যেটা অ্যান্টি এজিং এর জন্য খুবই জনপ্রিয়। এই Retinoid বেসিক্যালি ভিটামিন-এ থেকে আসে। রিংকেল দূর করতে Retinoid এর জুড়ি মেলা ভার! তাই এই ইনগ্রেডিয়েন্টটা আমার খুবই পছন্দের। Retinoid স্কিনের কোলাজেন প্রোডিউস করতে সাহায্য করে। এছাড়া এটি ব্লাড সার্কুলেশন বাড়ায় এবং স্কিনকে সফট ও স্মুথ রাখে। রিংকেল দূর করতে রেটিনল যুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে পারেন। তবে অবশ্যই সেটা রাতের বেলা ব্যবহার করবেন।
৪) এক্সফোলিয়েশন
এক্সফোলিয়েশন শুধুমাত্র মুখের ত্বকের জন্য নয়। হাতের ত্বকের জন্যও এক্সফোলিয়েশন খুবই জরুরি। কারণ বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের স্কিনের ন্যাচারাল এক্সফোলিয়েশন প্রসেস স্লো হয়ে যায়। যার ফলে, ত্বকে ডেড স্কিন সেলস জমতে থাকে। তাই ভালো মানের একটা স্ক্রাব দিয়ে হাতের ত্বক এক্সফোলিয়েট করা কিন্তু মাস্ট। এতে করে হাতে রিংকেল বা ফাইন লাইন কম পড়বে এবং এগুলো কম বোঝা যাবে।
৫) প্রচুর পানি পান করা
আমাদের বডির সেলস ও টিস্যুগুলো রিফ্রেশড রাখতে এবং বডি থেকে টক্সিক উপাদান দূর করতে আমাদের বডিকে অবশ্যই হাইড্রেট রাখতে হবে। স্কিন ও বডি ডিহাইড্রেটেড হলে ত্বক শুষ্ক, মলিন এবং রিংকেল পড়ার প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে। তাই দিনে ৮ গ্লাস পানি পান করা আবশ্যক।
রিংকেলমুক্ত হাতের জন্য কিছু ঘরোয়া রেমেডি
উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো তো মেনে চলবেনই। এছাড়া বাসায় বসেই হাতের স্কিনের যত্ন নিতে কিছু হোম রেমেডি ট্রাই করতে পারেন। চলুন জেনে নেই হোম রেমেডিগুলো সম্পর্কে-
১) লেমন জুস ও চিনির স্ক্রাব
উপরেই বলেছি এক্সফোলিয়েশন কতটা জরুরি। হাতের স্ক্রাবিং এর জন্য ব্যবহার করতে পারেন লেবুর রস ও চিনি। দুটো উপাদান মিলিয়ে নিয়ে হাতে কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। লেবুর রস ত্বকের এক্সট্রা ময়লা দূর করবে, দাগ ও এজিং স্পট দূর করতে হেল্প করবে। হাতের কনুইয়ে এই স্ক্রাবটা অ্যাপ্লাই করলে ভালো ফল পাবেন। তবে ফেইসে কিন্তু এটা ইউজ করা যাবে না, কারণ ফেইসের স্কিন অনেক নরম ও সেনসিটিভ হয়ে থাকে।
২) অয়েল ম্যাসাজ
জোজোবা অয়েল, অলিভ অয়েল ইত্যাদি হাতের ত্বকে ময়েশ্চার জোগাতে বেশ ভালো কাজ করে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে হাত পরিষ্কার করে অয়েল ম্যাসাজ করুন। সকালে কুসুম গরম পানি দিয়ে হাত ক্লিন করে নিন। এতে হাতের ত্বক সফট ও ময়েশ্চারাইজড থাকবে।
৩) অ্যালোভেরা জেল
অ্যালোভেরা জেল অ্যান্টি এজিং এর জন্য বেশ কার্যকরী। অ্যালোভেরাতে থাকা Malic acid কে বলা হয় ইলাস্টিসিটি এজেন্ট। এটি রিংকেল, স্কিন পাতলা হয়ে যাওয়া ইত্যাদি রোধ করতে সাহায্য করে। অ্যালোভেরা জেল নিয়ে আপনার হাতের স্কিনে লাগিয়ে নিন ১৫ মিনিটের জন্য। এরপর ধুয়ে ফেলুন।
৪) দুধের সর
দুধের সর কিন্তু হাতের ময়েশ্চার ফিরিয়ে দিতে দারুণ ভালো কাজ করে। দুধের সরে রয়েছে ফ্যাটি এসিড, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা হাতের ত্বককে কন্ডিশনিং করে। দুধের সর ব্লেন্ড করে নিয়ে হাতের ত্বকে কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করেন। চাইলে ১০ মিনিট রাখতে পারেন। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
এই তো জেনে নিলেন, হাতের ত্বকে রিংকেল পড়া প্রতিরোধের সহজ উপায়। আশা করছি, আপনাদের কিছুটা হলেও হেল্প হবে। অথেনটিক স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট কিনতে আমার সবসময়ই ভরসা শপ.সাজগোজ.কম। অনলাইনে অর্ডার করে ঘরে বসেই প্রোডাক্ট হাতে পেয়ে যাই। সাজগোজের ৪টি শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, উত্তরার পদ্মনগর ( জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) ও সীমান্ত সম্ভার থেকেও বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি।
ছবি- সাজগোজ